মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

বর্ষায় বৃষ্টি

তাজনিন মেরিন লোপা

১৪ জুলাই, ২০২০ , ১২:১৬ পূর্বাহ্ণ

যখন লিখছি বাইরে বৃষ্টি পড়ছে । এখানে শীতকাল; ঠান্ডা আর বৃষ্টির সখ্যতা আমাদের পছন্দ হওয়ার কথা না অবশ্য । বর্ষা মানেই আমাদের কাছে সাদা হলুদ কদম ফুল, ভুনা খিচুরি, গরম চা আর রবীন্দ্র সংগীত । পাশে রোমান্টিক বউ-স্বামী-বন্ধু থাকলে তো সাথে গরম চা-কফির মজাই আলাদা । মজার বিষয় হলো, খুব শখ করে একটু খিচুরি খাওয়া আর বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে প্রকৃতির গান শোনা ছাড়া আর কিছুই আমার জন্য না । ঠান্ডা এলার্জির কারণে বৃষ্টিতে আমার জন্য অপেক্ষায় থাকেন একমাত্র বন্ধু আমার হাঁচি-কাশি । আর আমার সুজন বৃষ্টি নিয়ে আমার পাগলামির কারণেই এর মাঝে রোমান্টিকতা খুঁজে। তা না হলে বৃষ্টি মানে হয়তো তার কাছে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকা, বৃষ্টি মানে রিকসাচালক দিনমজুরদের মতো বাধ্য হয়ে বৃষ্টিতে ভিজে রিকশা চালানোর নিষ্ঠুরতা, রাস্তার পাশে, বস্তির মানুষের, গ্রামের গরীব মানুষের ভাঙ্গা চাল, ভাঙ্গা বেড়া দিয়ে বৃষ্টির পানির সাথে বাধিত সখ্যতা । বন্যা তো আছেই এর সাথে এক পানির দৈত্য হয়ে । সত্যিই তাই এইসব দিক থেকে বৃষ্টি আসলেই নিষ্ঠুর ।

কিছু মানুষ নাকি বৃষ্টি কপালি হয় । প্রায় বাইশ বছর আগে এই জুলাইয়ের এক বিকেলে বাবা আমাদের ছেড়ে চলে যান । বৃষ্টি পড়ছিল সারাটাক্ষণ ধরে । তার জন্মও নাকি হয়েছিল বৃষ্টির গান শুনে । বাবার সাথে বসে বৃষ্টির গান শোনা হয়নি কখনোও, ঝাল মুড়ির সাথে চায়ের গরম ধোয়ায় ফুঁ দিয়ে নানান আকারের দৈত্য বানানো হয়ে উঠেনি । আরও একটু সময় পেলে বুঝি ভালো হতো, অতো কম বয়সে অনুভুতিগুলো আসলে প্রখর হয় না । তাই এখন ওসব ভাবলে শুধু চোখেই বৃষ্টি আসে ।

আমার ছেলে জন্মের সময় শুধু বৃষ্টি না, ঝড়-তুফানও তান্ডব দেখালো । ব্যাথা, চিৎকার আর অস্থিরতায় যেভাবে হাসপাতাল ভরিয়ে তুলেছিলাম, তাতে বাইরের ঝড়ের কথা জানতেই পারিনি । পরিবার, আত্মীয়, বন্ধুরা খুব ঝামেলায় পড়েছিল । তবে মজার ব্যাপার হলো, ছেলেকে ডাক্তার দেখানো, ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, যতো পরিকল্পনাই করি না কেন, বৃষ্টি বা ঝড় এরাসব সাথী হয়েই থাকে । গত বছর আমরা বাংলাদেশ থেকে এলাম, তখন এখানে গ্রীষ্মকাল । অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় বৃষ্টি খুব কম হয় । নতুন বাসায় উঠলাম, পরের দিনই বৃষ্টি এসে হাজির । আমার ছেলে আনন্দে আত্মহারা, বৃষ্টি ভীষণ পছন্দ তার । ভীষণ রোমান্টিকতা ভর করে ওনাকে ।

ভেজার খুব ইচ্ছে; কিন্তু ক্যানবেরার বৃষ্টিতে কিছু উপাদান থাকে যা এডিস এর মতো, খুব ক্ষতিকর । তাই মা-ছেলে লিকার চা হাতে নিয়ে বৃষ্টিতে হালকা একটু ছুঁয়ে দিতাম হয়তো । বছর শেষে আমাদেরকে নিউ সাউথ ওয়েলস, আরমিডেল, আমার বোনের বাসায় চলে আসার সিদ্ধান্ত নিতে হয় । এখানে বৃষ্টি কম হয়; যেটুকু হয় শীতকালে । তাই ’দাবানল’ এর তান্ডব বেশ ভয়ঙ্কর রুপেই আসে । তারপরও ছেলে যেহেতু প্রিস্কুল শুরু করবে তাই রেইনকোট কিনলাম । তা দেখে আমার বোন খুব আক্ষেপ করে বললো, এখানে বৃষ্টিরই দেখা নেই ! খুব মজার বিষয় হলো জানুয়ারিতে স্কুল শুরু হওয়ার কিছুদিন পর ঠিকই বৃষ্টি শুরু হলো ।

আমার ছেলের প্রিয় বৃষ্টি; না এসে কি আর পারে ! অস্ট্রেলিয়া তখন ‘দাবানলে’ জলছে চারিদিক । এই এড়িয়ায় মাঝে মাঝে আগুন আর ধোয়ায় শ্বাস কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল । আর গরমও খুব বেড়ে গেছিল । কিছু কিছু এড়িয়োতে মানুষজন পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে উদ্ধারের জন্য অপেক্ষা করছিল । এই সময়ই বেশি অনুভব করেছি, বৃষ্টি আল্লাহর এক বিশেষ রহমত । চারদিকের এতো উন্নত প্রযুক্তি, এতো চেষ্টা কোনকিছুই ‘দাবানল’ শুনছিল না । সবাই প্রার্থনা করছিল বৃষ্টির । এইদিকে বৃষ্টি হলো; দাবানল এড়িয়াগুলো চোখে পড়লো তখন’ কালো ছাই শুধু মাইলের পর মাইল জুরে । অদ্ভুত শক্তি প্রকৃতির, এক দুইদিনের মধ্যে ঘাস আর গাছের পাতা বের হতে থাকলো সেই কালো ছাইয়ের মাঝ থেকেই ।

আমাদের দেশে বর্ষাকালের সময় পাল্টে যাচ্ছে ; আর এই দেশে বর্ষাকাল বলতে কোন কালই নেই । তবে বৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা সব জায়গায় প্রায় অনেক বেশি । এখানেও ফসলের জন্য বৃষ্টিই বড় আশীবাদ হয়ে আসে । তবে আমরা বৃষ্টিকে যে রোমান্টিক জায়গায় বসিয়ে প্রিয়র সঙ্গ আর প্রিয়ার চোখে খুঁজি, এখানে সে বিষয়টা খুব অচেনা।

তাজনিন মেরিন লোপা
Latest posts by তাজনিন মেরিন লোপা (see all)