শিমুল-শালিকের যুগলবন্দী। রংপুরের নব্দিগঞ্জ এলাকা থেকে সম্প্রতি ছবি দুটি তুলেছেন সাহিত্যিক ও সংগঠক রানা মাসুদ।
ফটোগ্রাফি রানা মাসুদের একটি বিশেষ শখ, যেখানে তিনি মানুষের চেয়ে প্রকৃতিকে অথবা প্রকৃতির প্রেক্ষিতে মানুষকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
………………………………………………………..
গাঢ় লাল রঙের পাপড়ি আর সবুজ রঙের বোঁটায় শোভিত এক অপরূপ ফুলের নাম শিমুল। শীতের পরেই বসন্তের আগমন বার্তা বয়ে আনে এই ফুল।
শিমুল ফুল বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে দেখা যায়। বাংলার মাঠে ঘাটে রাস্তার পাশে অনাদর অবহেলায় বেড়ে উঠে শিমুল গাছ।
শীতের শেষে এই গাছের পাতা ঝরে যায়, ফাল্গুন মাসে ফুলের কুড়ি আসে এবং চৈত্র মাসে লাল ফুল ফোটে৷ এরপর গাছের পাতা গজানো শুরু হয়। ফুলের পাপড়ি ১০-১২ সে. মি. লম্বা হয়। শিমুল (Silk cotton tree) এর বৈজ্ঞানিক নাম Bombax ceiba পরিবার Bombaceae. বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ। বাংলাদেশ, ভারত, চীনসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে জন্মে থাকে লম্বায় প্রায় ১৫-২০ মিটার হয়। পাঁচটি প্রজাতির শিমুল দেখা যায়: রেশমি শিমুল, লাল শিমুল, কাপোক শিমুল, পাহাড়ি শিমুল ও মোজাম্বিক শিমুল। এর মোচাকৃতি ফল হয়। চৈত্র বৈশাখ মাসে ফল পাকে এবং ফল পেকে বীজ ও তুলা বের হয়ে আসে। লেপ তোষক, বালিশ ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। মাঝারি আকৃতির গাছ থেকে প্রায় ১৫-১৮ কেজি তুলা হয়।
অন্যদিকে শালিক বা শালিখ Sturnidae (স্টার্নিডি) গোত্রের অন্তর্গত একদল ছোট ও মাঝারি আকারের বৃক্ষচর পাখি।
এগুলো বেশ কয়েক ধরনের হয়। সাদা-কালো শালিককে ডাকা হয় গো-শালিক বা গোবরে-শালিক নামে। এদের ঠোঁটের রং গাঢ় কমলা-হলুদ এবং চোখের মণি হালকা হলুদ রঙের। অন্যদিকে ঝুঁটি-শালিকও সাদা-কালো রঙের হয় কিন্তু এর মাথায় একটি ঝুঁটি রয়েছে। গাঢ় বাদামি শালিককে বলা হয় ভাত শালিক। এদের ঠোঁট ও পা উজ্জ্বল হলুদ রঙের। এর বাইরেও রয়েছে গাঙশালিক, বামন-শালিক ইত্যাদি।
শালিকের স্বরতন্ত্রী বেশ জটিল হওয়ায় এদের ডাক বিচিত্র ও বিভিন্ন স্বরে ওঠানামা করে। এরা খুব সহজেই আশেপাশের আওয়াজ আর মানুষের কথা অনুকরণ করতে পারে। এরা মানুষের গলার স্বর শুনে নির্দিষ্ট কাউকে চিনতে সক্ষম এবং বর্তমানে এরা মানব ভাষা বিষয়ক গবেষণার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে।
গায়ক পাখি হিসেবেও শালিকের সুনাম রয়েছে, তবে কাঠ-শালিক সবচেয়ে ভালো গাইতে পারে। প্রায় সব প্রজাতির শালিকই বিভিন্ন স্বরে ডাকতে পারে এবং অন্য শালিকের কণ্ঠ নকল করতে পারে।
সামাজিক পাখি হিসেবে শালিকের সুনাম রয়েছে। এরা দলবেঁধে ডাকে ও ঝগড়াঝাঁটিও করে।
সাধারণত শালিকের বাসা বাঁধতে সময় লাগে ৫-৭ দিন। তবে গো-শালিক ১০-১৫ দিন সময় নেয়। শালিক একবারে ৩-৭টি ডিম পাড়ে এবং ডিম ফুটতে বাচ্চা মালিক জন্ম নিতে সময় লাগে ১৫-২১ দিন। বাচ্চা শালিকগুলো সাধারণত ১৯-২৭ দিন সময় হয় উড়তে শেখার জন্য।