মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

বাজারের ব্যাগ

মুগ্ধতা.কম

১৪ এপ্রিল, ২০২০ , ৪:৪৭ অপরাহ্ণ ;

বাজারের ব্যাগ

-স্যার এটা রাখেন।

চোখের সামনে একটা বড় বাজারের ব্যাগ দেখে চমকে উঠলেন রফিক সাহেব। কী,  কী আছে এতে?

-তেমন কিছু না স্যার, এই সামান্য সাক পাতা, কিছু সবজি, আর…… থেমে যায় রহিম মিয়া। কথা শেষ করতে পারে না।

রফিক সাহেব তখনো চোখ বড় করে তাকিয়ে আছেন। মুখটা বেশ মলিন। বয়স হলেও এখনো সুঠাম দেহের অধিকারী। চাকরি থেকে অবসর নেয়ার দশ বছর হতে চললো। এখনো নিয়ম করে ফজরের পর এক ঘন্টা আর মাগরিবের পর এক ঘন্টা হাঁটেন। রেল লাইনের পাশ দিয়ে নিয়মিত হাঁটার সময় বস্তির মানুষের খবর নেন। কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যান। কারো ঘরে খাবার না থাকলে বাজার করে দেন। তিনি অবশ্য কারো হাতে টাকা দেন না। অনেকবার দেখেছেন টাকা দিলে বস্তির লোকগুলো সেই টাকা অন্য কাজে ব্যয় করে।

প্রায় বিশ দিন হতে চললো দেশে অঘোষিত লক ডাউন চলছে। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের আক্রমনণ মহামারি শুরু হয়েছে। ইউরোপ আমেরিকার মত ধনি রাষ্ট্র গুলো হিমশিম খাচ্ছে মহামারি ঠেকাতে। প্রতিনিয়ত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রাজ পরিবার সরকার প্রধান থেকে বস্তির মানুষ কেউ রেহাই পাচ্ছেনা। তাই বাংলাদেশ সরকার আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে।

গত ছাব্বিশে মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি চলছে। গণ পরিবহণ, কল কারখানা, হাটবাজার সব বন্ধ। তারপরও দেশে দিন দিন করোনা রোগির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আর সরকারও সাধারণ ছুটি বাড়িয়েই চলেছে। রেল বস্তির লোক গুলো তখন থেকেই গৃহবন্দি হয়ে আছে। কাজ নেই। পেটে খাবারও নেই।

সরকার অবশ্য বারবার ঘোষণা দিচ্ছেন আপনারা ঘরে থাকুন আপনাদের ঘরে আমরা খাবার পৌঁছে দেব। কিন্তু সবাই জানে সরকারের পক্ষে সবার ঘরর ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়া সম্ভব নয়। তাই শুরু থেকেই বস্তির অসহায় মানুষের ঘরে নিজ উদ্যোগে খাবার পৌঁছে দিয়ে আসছিলেন রফিক সাহেব। নিজের যা সঞ্চয় ছিলো তার পুরোটা বিতরণ করে ফেলেছেন। এখন আর তার ঘরে অবশিষ্ট কিছু নেই। এমনকি নিজের দুবেলা খাবারেও টান পড়েছে।

বাইরে গেলে বস্তির মানুষের খাদ্যের জন্য সীমাহীন হাহাকার দেখতে হয়।  অন্যদিকে নিজের ঘরেও খাদ্যাভাব।  তাই গত তিন দিন হল তিনি বাইরে বের হন না। অবশ্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ঘরেই থাকতে পরামর্শ দিচ্ছেন সবাই।

আজ সকালে রহিম মিয়ার হঠাৎ আগমন তাকে ভাবিয়ে তুললো। তিনি বস্তির এই লোকটিকে বেশ কয়েকবার নানাভাবে সাহায্য করেছেন। কিন্তু আজ এই লোকটির নিজের  কিছু চাওয়ার নেই। সে যেন কিছু দিতেই এসেছে।

-জানি আপনাকে কিছু দিতে চাওয়া অন্যায়। যে মানুষটি নিজের সর্বস্ব দিয়ে দিনরাত আমাদের সাহায্য করেছে। তাকে কিছু দেয়ার সাধ্য আমার মত ক্ষুদ্র মানুষের নেই।

আজ পহেলা বৈশাখ। এমন কোন  বৈশাখ যায়নি যে বৈশাখে আপনার বাড়িতে পোলাও ইলিশ খাইনি। সেই আপনি গত তিন দিন হল বাসা থেকে বের হন না। কেন হন না তাও আমাদের অজানা নয়। আমরা গরিব মানুষ, অভাবে পড়লে খুব সহজে আপনাদের মত মানুষের কাছে চাইতে পারি কিন্তু পৃথিবীতে এমন হাজার হাজার মানুষ আছে যারা সব সময় দিয়েই যায়। নিজের কোন কিছু না থাকলেও তারা কারো কাছে যায় না। আপনার মত মহৎপ্রাণ মানুষ আছে বলেই সৃষ্টিকর্তা আমাদের ভালো রাখেন। কিন্তু আমরা কখনো আপনাদের জন্য কিছু করতে পারি না। তাই আপনার জন্য এই সামান্য….  কথা শেষ না করে অঝোরে কাঁদতে শুরু করলো রহিম মিয়া।

রফিক সাহেব রহিম মিয়ার মহত্বে হতবুদ্ধি হয়ে গেলেন। তার মুখ দিয়ে কিছুই বের হলো না। এভাবে কতক্ষণ চলে গেল বুঝতে পারলেন না।  কিছু বলার জন্য চোখ তুলে দেখেন সামনে কেউ নেই। পায়ের কাছে বাজারের ব্যাগটি রেখে রহিম মিয়া কখন চলে গেছে টের পাননি। নিচে মুখ খোলা ব্যাগটির দিকে তাকিয়ে দেখেন সেখানে কিছু শাক সবজির নিচে চিক চিক করছে একটি মাঝারি ইলিশ। নিজের অজান্তেই টুপ করে কফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো তাতে।

 

মুস্তাফিজ রহমান 
লেখক ও উন্নয়নকর্মী, রংপুর

 

এই লেখাটি #মুগ্ধতা_সাহিত্য প্রতিযোগিতার অন্তর্ভুক্ত। প্রতিযোগিতার নিয়ম জানতে ক্লিক করুন এখানে

 

2 responses to “বাজারের ব্যাগ”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *