দু’ভাই।
এক সংসার।
বিয়ের ছয় মাসের মধ্যে বাড়ির ছোট বউ বুঝলেন তার বড় জা সংসারে বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। কারণ, তার তিনটি সন্তান। তাদের খাওয়া-পরা আর লেখাপড়ার পিছনে সংসারের অনেক টাকাই খরচ হয়ে যাচ্ছে।
ছোট বউ মানতে পারেন না সেসব।
তার গা জ্বলে।
সহ্য হয় না সেসব।
রাতে তার স্বামী বাড়ি ফিরে খাওয়াদাওয়া সেরে বিছানায় উঠলে বউ পান সাজিয়ে দিতে দিতে স্বামীকে বোঝালেন, “এই সংসারে আমরা ঠগছি।”
“কিভাবে?” জর্দাপান মুখে দিতে দিতে স্বামী জিজ্ঞেস করলেন।
“বোঝ নাই?” ছোট বউও জর্দাপান মুখে দিয়ে কসর কসর করে চিবাতে চিবাতে বললেন।
“না।” ছিলিমচিতে পানের পিক ফেলে দিয়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে বললেন। “বুঝাই কও।”
“শোন, বড় ভাই-ভাবির কয়টা বাচ্চা?”
“রহিম, করিম আর সখিনা…” গুনছেন তিনি।
“কয়টা হইল?” ছোট বউ জিজ্ঞেস করলেন।
“তিনটা।”
“আর তারা দুই মানুষ মিলে কতজন হইল?”
“পাঁচ জন।”
“ভাব, খেয়াল কর, একটু হিসেব কষ।” থেমে বললেন, “সেসবের পিছনে কত খরচ?”
“হুমম, অ-নে-ক যায়…”
“আমাদের তো বাচ্চা নাই। আমরা ঠগছি না-কি?” ছোট বউ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন।
“হুমম। তাহলে?”
“আমাদেরও বাচ্চা দরকার।”
“আচ্ছা! আচ্ছা! না, আর ঠগাঠগি নাই। বাতি নেভাও। আসো। ”
কিছুদিন পর ছোট বউয়ের জমজ সন্তান হলো।
এখন,
বড় বউ তিন।
ছোট বউ দুই।
হলো, তিন ইস্টু দুই।
কিছুদিন যায়।
তখনও ছোট বউ মানতে পারেন না। ভাবেন, তিনি ঠগছেন সংসারে।
তার গা জ্বলে।
সহ্য হয় না সেসব।
বুকে নিমপাতা ঘষে ছোট বউ। সন্তান দু’টি আস্তে আস্তে বুকের দুধ ছাড়ে।
তার পর এক রাতে বিছানায় সুযোগ বুঝে ছোট বউ স্বামীর কানের কাছে মুখ বাড়িয়ে বলেন, “তাদের তিন। আমাদের দুই।”
“মানে?”
“তাদের তিনটা বাচ্চা আর আমাদের দুইটা বাচ্চা। সমান হইল কি?”
“না।”
“তাহলে আমরা ঠগছি।”
“হয় হয়।”
“শোন, আমাদের আরও একটা বাচ্চা দরকার। তাহলে সমান সমান হবে। এই সংসারে সবার সমান অধিকার থাকবে, হিসাব বরাবর, না-কি?”
স্বামীকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে ছোট বউ আরও বললেন, “তিনি তার বড় জায়ের সমান হবেন।”
স্বামী তার স্ত্রীর কথা বুঝলেন।
বললেন, আচ্ছা!
পরের বছর ছোট বউ আবারও জমজ সন্তান জন্ম দিলেন।
এখন,
বড় বউয়ের তিনটা।
ছোট বউয়ের চারটা।
হলো, তিন ইস্টু চার।
তার পর সংসারে চুলোচুলি বাড়ল।
রান্নার চুলা বাড়ল। তার পর বাড়ির মাঝ বরাবর প্রাচীর উঠল।