কোনো এক কালে
কোনো এক ভাবুক কুমার
তার কল্পিত নারীর বুকের
অমৃত সুধার কথা ভাবতে ভাবতে
নির্মাণ করেন আমায়।
পদ্যকারেরা পদ্য-পয়ারে ভজেন –
আমি সুঠাম নারী কামনাহারের লীলা দুধসাগরের ঢেউ
হাতের তালুতে তুলে নেয়া – দুই পাহাড়ের চূড়া।
আবার তারা অন্ত্যমিলে ছন্দ কেটে বলেন –
আমি
উষ্ণতা ছড়ানো জাদুর ভাণ্ড
কোমলতা ধরানো ক্ষীরের বাটি
শিহরণ জাগানো ঘনো ননীর আধার।
আমি চাষা-ভূষাদের নজরকাড়া সুখ।
গাঁও-গ্রামের প্রান্তিক বধূরা আমায় ভালোবেসে সযত্ন করে
শিকেয় তুলে রাখেন।
আমি কল্পনার আল্পনাময় স্তনরূপী
লালচে চিটে মাটির ডোগা।
আমি
কুমারপাড়ার তরুণ নগেনেশ্বরপালের
হাতে গড়া বরেন্দ্রমাটির বাঙালি বাসনা
বিশুদ্ধ জল
পেটে ধরে রাখি
রোদঝরা দিনের ছাতিফাঁটা দুপুরে
আমার পেটে ধরা জল
পান করিও
পান করে
শীতল করিও পরান
আমার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে
খাঁটি বাঙাল হইও
খাঁটি ঘটি হইও
আমি
খাঁটি লাল চিটকে মাটির খাঁটি কলসি।
বাংলার বাংলাগানে আছে —
কে যাও গো –
কলসি কাঁকে,
সখী সনে জল আনিতে ; পুকুরঘাটে..
অঙ্গনার কাঁকই আমার সংসার,
কাঁঁকই আমার প্রেম ;
কাঁকই আমার সম্বন্ধ আধার।
আবার, ললনাবতীর ছলনা গানে
পূর্ণাঙ্গ নবযৌবনা ভালোবাসার পূুর্ণ যৌবনে বলে —
পরানের কলসি রে, তুই যে মোর কৃষ্ণলীলা, তোরে লয়ে যাবো যমুনা ; তোরে লয়ে খেলবো খেলা স্রোতমত্ত জলে।
আমি কলসি – কাঁকবরেণ্য মাটির শিল্প।
আমি
খাঁটি মাটির
এ দেশি খাঁটি ঘটি
ঘটিরা এক হও, এক হও।
মানুষ –
মাটিকে ভালোবাসো, মাটিকে কাছে টেনে নাও ; মাটির ভালোবাসা সর্বত্র বিলাও।
মাটির ঘড়া-
তুমি যদি হও বাসনার মেঘ
ঝরে পড়ো দেখি আমার বুকে।
মাটির ঘড়া-
বৃষ্টি পড়ে, পাতা নড়ে ; বন-বাদাড়ে।
দেহে দেহে ঘর্ষণে,
দেহদ্বয়ের বত্রিশ নাড়ীর রক্তমেঘে
হঠাৎ চমকায় বিদ্যুৎ ।
বুকে বুকের সংগম, শীতল জলবীজের তরঙ্গ, উষ্ণতার তাপ কী অদ্ভুত ; শিহরণে !
জাদুর ঘড়া ছত্রিশ গড়ে ,
ঘড়ার দেহ প্রথম নজর কাড়া ধন ,
অমৃত ঘাম অঝোরে ঝরে ;
ঘামের স্রোতে উদাস কুমারের জগৎ প্লাবন।
হায়! সময়ের ব্যবধানে, পালবংশীয়রা আর-
মাটির প্রেম, মাটির ভালোবাসা;
ভালোবাসতে বাসতে পুড়ে না আগুনে।