মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

বাবা এবং বর্ষাকাল   

প্রমথ রায়

১৩ জুলাই, ২০২০ , ১১:৪৭ অপরাহ্ণ ;

আমাদের বর্ষাকাল বলতে কদমফুল বোঝায় না। বরং আমরা বুঝি কচি ধানের আগা, মানপাতা কিংবা কলাপাতা। যদিও এই তিন বস্তুই এখন বর্ষাকালের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত নয়; কিন্তু বর্ষাকাল বলতে আমার সামনে বয়ঃসন্ধিকালের সময়টাই ভেসে ওঠে। তখনও এখনকার মতো সারাদিন বৃষ্টি হতো। অভাবি সংসারে মানুষ, পশু কারোরই খাবার থাকতো না। আমার পরিবারও সেরকম হওয়ায় আমার মা ধান সেদ্ধ করে রোদে শুকোতে না পারায় সে ধান আবার ভেজে চাল করে ভাত খেতাম। পশু বলতে গরু ছাগল; টানা বৃষ্টির কারনে তারাও গৃহবন্দি। এখনকার মতো তখন এতো ফিড বের হয়নি। আমার পরিবারে ছাগল ছিলো। আমার বাবা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে দোগাছি ধানের কচি ডগাগুলো কেটে নিয়ে আসতো। বর্ষার কথা আসলেই এই দৃশ্যপটটি সবসময় চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

এক বর্ষায় বাবাসহ আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফিরছিলাম। তখন সবার হাতে ছাতা থাকতো না। আমাদের হাতেও ছিলো না। হঠাৎ করে ঝুম বৃষ্টি এসে গেলো। তখন বাবা নিজে ভিজে একটি মানকচুর পাতা দিয়ে আমাকে ভেজা থেকে রক্ষার চেষ্টা করছিলো। বাবার অনেক স্নেহ আমাকে আবর্তিত করে রাখলেও এই স্নেহের ঘটনাটি আমার জীবনে বিশেষ কিছু। তারপর বাবা আমাকে একটি বাঁশের ছাতা বানিয়ে দিলো। তারপর কিনে দিলো কাঠের হাতলওয়াল, টিনের হাতলওয়াল অতঃপর ফোল্ডিং ছাতা। পরে আমি নিজেও অনেক ফোল্ডিং ছাতা কিনেছি। বর্তমানে আমি রেইনকোট ব্যবহার করি। বর্ষা উপভোগ করার জন্য আমার একটি শখের গোলাপি রঙের ডাবল ফোল্ডিং ছাতা আছে। চীন হতে আমদানিকৃত। আমি আগে যে স্কুলে চাকরি করতাম, সে স্কুলের মালিক গিফট করেছে। এতদিন ছাতাটির যত্ন নিইনি; এ লেখা লিখতে গিয়ে মনে হলো ছাতাটির যত্ন নেয়া দরকার।

কলাপাতার বিষয়টিও মানকচু পাতার মতো। আমরা কলাপাতা কিংবা প্লাস্টিকের বস্তা উল্টে ভাজ করে স্কুলে যেতাম। এটার মধ্যেও মুগ্ধতা থাকতো।

অবশেষে আমার সাঁতার কাটতে পারার অর্জনটিও এই বর্ষাকালেই। যদিও এসময় পুকুরে অনেক জল থাকতো, তবুও অন্যান্য জলপাগল বাচ্চাদের মতো আমিও বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে পুকুরে চলে যেতাম। দু ঢোক ঘোলা পানি গেলার পরে আমার এই অমিয় সাধনটি সফল হয়েছে। অন্যান্য মায়ের মতো আমার মাও আমার সফলতাকে গুরুত্ব না দিয়ে,পানি খেলাম কেন, সেটাকে ইস্যু করে দীর্ঘ সময় ব্যাপী প্রহার করেছিলো। যাহোক বর্ষা সবসময় আমার কাছে একটি আবেগের ঋতু। যদিও এটা অনেক কিছুর জন্য বিরক্তিকর; কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, এটাই আমার প্রিয় ঋতু। যখন টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শুনি, তখন এমনি এমনি আমার মাথায় কবিতার লাইন চলে আসে।

হে বৃষ্টি, তুমি আমার শিরায় উপশিরায় রও

হে বৃষ্টি, তুমি আমার নক্ষত্র জমিন হও।

 

Latest posts by প্রমথ রায় (see all)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *