মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

বেসরকারি চাকরিজীবী: যাদের কথা কখনও বলা হয় না

ডা.ফেরদৌস রহমান পলাশ

১ মে, ২০২১ , ১১:২৯ অপরাহ্ণ

বেসরকারি চাকরিজীবী যাদের কথা কখনও বলা হয় না

যারা শ্রম দেয় তারাই শ্রমিক।  সে অর্থে দুনিয়ার সবাই শ্রমিক। তবে শ্রমিক দিবস এলে আমরা শুধু ছবি দিই ইট ভাঙা, ভ্যানগাড়ি চালক বা কৃষকের। আসলে জগতে সবকিছুই শ্রমের ফসল।

যে হাসপাতাল দেখছেন সেখানে শুধু চিকিৎসক, নার্স থাকেন না সেখানে থাকে চেম্বার সহকারী, আয়া, সুইপার, মালি, ক্যাশিয়ার, দারোয়ান, ড্রাইভার। একইভাবে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাতেও উপর থেকে নিচে শ্রম দেবার লোক নিয়োজিত। এসব কর্মজীবীদের অর্থনৈতিকভাবে মূল্যায়িত হয় গ্রেড অনুসারে। সরকারি চাকুরিতে যারা নিয়োজিত তাদের শ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন হলেও বেসরকারি চাকুরিজীবীরা অবহেলিত। তাদের নেই কোনো বেতন স্কেল,পেনশন সুবিধা।

একটা প্রতিষ্ঠানে সারাজীবন কাটানোর পর শেষ বয়সে বিদায় নিতে হয় শূন্য হাতে। ফেয়ারওয়েল নামক লোকদেখানো অনুষ্ঠানে হাতে তুলে দেয়া হয় তসবিহ, জায়নামাজ আর কোরআন শরীফ। ভাবখানা বহুত কাজ করেছ বাকি জীবন ধর্ম করে দিন পার করো,খাওয়ার দরকার নাই। শ্রম ঘন্টা যদিও বা নির্ধারিত হয়েছে কিন্তু শ্রমমূল্য এখনো অবহেলিত। পাড়ায় পাড়ায় গড়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেনে উচ্চ শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের শিক্ষক নিয়োগ করে বেতন দেওয়া হয় ২০০০ থেকে ৪০০০ টাকা। তারপরও দেশে বেকার সমস্যা প্রকট হওয়ায় এখানে চাকরি পেতেও প্রতিযোগিতায় নামতে হয় আমাদের সন্তানদের।

ক্লিনিক হাসপাতালে আয়াদের বেতন ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। এসব চাকরিজীবীদের বেদনা লুকায়িত থাকে। তারা না পারে চাকরি ছাড়তে না পারে চাকরি করে ভদ্রভাবে জীবন যাপন করতে। করোনার এ দুঃসময়ে সবচেয়ে ভোগান্তিতে এসব চাকরিজীবী । স্কুল বন্ধ ফলে বেতন নাই।

১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকেরা ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ওই দিন তাঁদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে শ্রমিকশ্রেণির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে সে অধিকার এখনো পরিপূর্ণভাবে  প্রতিষ্ঠিত হয় নি। করোনা শুরুর দিকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শুরু হয় শ্রমিক ছাঁটাই উৎসব। তারপর অর্ধেক বেতন। পূর্বে দুইটা ঈদ পার করেছে এসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা বোনাস ছাড়াই। এবার ঈদেও তাদের বোনাস পাবার সম্ভাবনা কম। এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘মালিক-শ্রমিক নির্বিশেষ মুজিব বর্ষে গড়ব দেশ’। আসলে মালিক- শ্রমিক একহতে পারছে না ফলে শ্রমিকরা পাচ্ছে না তাদের ঘামের মূল্য। দেশে শ্রমিক অধিকার বিষয়ক আইন থাকলেও প্রয়োগ তেমন নাই। এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে। সরকার যদি আইন করে শ্রম অধিকার নিশ্চিত করতে পারে তবেই নিশ্চিত হবে শ্রমিকদের অধিকার।

 

ডা.ফেরদৌস রহমান পলাশ
Latest posts by ডা.ফেরদৌস রহমান পলাশ (see all)