ছেলেটাকে শেষ পর্যন্ত মেরেই ফেললো? রক্তে পুরো দেহ চোখের পাশ দিয়ে পিঁপড়া ওঠানামা করছে। মেইন রোডের ধারে সামান্য জঙ্গলের নিচে ফেলে রেখেছে। রকির নামটা কে রেখেছিলো কেউ জানে না। রকির মা আধা পাগল রমা। রকির বড় মামা জলিল মিয়া দোকানের পুরোনো কর্মচারি মনুমিয়াকে ধরে এনে বিয়ে দিলেন আধাপাগল বোনটাকে। বিয়ে সাত মাস না যেতেই রকির জন্ম। রকির জন্ম নিয়ে নানা কথা উঠেছিলো আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে। মনু মিয়ার ছেলে নয় অন্য কারো সন্তান রকি।
রমার মানে রকির মায়ের তিনভাই। রংপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রেই রকির নানাবাড়ি। রকির মেঝো মামা বিয়ে করেনি। মেঝো মামা মারা যাওয়ার আগে তার ভাগের পাঁচ শতাংশ জমি রকির নামে লিখে দিয়ে গেছেন। মায়ের আছে আড়াই শতক। এই মোট সারে সাত শতক জমির মালিক রকি। কিন্তু বাকি দুই মামা এটা মানতে রাজি নয় তারা কোনোভাবেই রকিকে মেঝো মামার দেওয়া পাঁচ শতক জমিতে দিতে দিবে না বা দখল করতেও দেয়নি। রকির জন্মের পর মনু মিয়াকে দোকানের মালামাল চুরির অপবাদে বের করে পুলিশে দেবার পর আর মনু মিয়ার কোনো খোঁজ কেউ করেনি। এ শহরে সারে সাত শতক জমির দাম তিন কোটি টাকার উপরে। এ জমি অন্য দুই মামার দখলে।
পাশের বাড়ির ভাড়াটিয়ার বোন ফাতেমাকে বিয়ে করে নিয়ে আসার পর মামিদের আরও অত্যাচার বেড়ে গেল। ফাতেমা গার্মেন্ট কর্মী এ নিয়ে অশ্লিল ভাষায় গালাগাল। গরীবের মেয়ে ফাতেমার দোষ। নীরবে সেও সব কাজ করে যায়। রকির স্ত্রী পরিচয় নয় যেন বাসার গৃহকর্মী।গ বড় মামার ছেলে যেদিন ফাতেমার ঘরে যায় সেদিন ফাতেমা বাসা থেকে রকিকে নিয়ে বের হয়ে যায়।
অল্প সময়ে ফাতেমা বুঝেছে যার কিছু নেই সেই ভালো থাকে যার অনেক আছে তারা ভালো থাকার ভান করে। জমজ ছেলেমেয়ে নিয়ে ফাতেমার দিন কোনরকমে যাচ্ছিলো। রকি বড় একটি হোটেলে দিন হাজিরার কাজ করে। ফাতেমা ফেইসবুক চালায়। ছুটির দিন চিড়িয়াখানা, ওয়াটার পার্কে যায় ফেইসবুকে ছবি আপলোড করে।
প্রতিশোধ নিবে, পরিকল্পনা করে। সে স্বামীর ন্যায্য পাওয়া উদ্ধার করবেই।সোজা পথে না হলে বাঁকা পথে এগুবে।মাঝে মধ্যে বড় মামার ছেলের সাথে ফোনে কথা বলে। ম্যাসেঞ্জারে কথা আদান প্রদান হয়।
রকির ক্লান্ত দেহটার বুকে মাথা রেখে বলে তুমি চিন্তা করো না আমি তোমার সব নিয়ে দেবার বুদ্ধি করছি। রকি শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
ভীড়ের মধ্যে গিয়ে রকির লাশ দেখে ষ্টাচুর মত দাঁড়িয়ে যায় ফাতেমা। চোখে কোন পানি নেই।একবার শুধু বড় মামার ছেলের দিকে তাঁকিয়ে ছিলো। সে চাহনীতে প্রতিশোধের আগুন দাউ দাউ করছিলো—
পাশ থেকে শুনতে পেলো এই বউটাই মেরেছে সম্পত্তির লোভে—-।