বর্তমান পৃথিবীর জন্য একটি বড় ধরণের সংকট হলো পৃথিবীব্যাপি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। এই সংকট শুধুমাত্র যে একটি রোগ তা নয় বরং এর প্রভাব রয়েছে সমাজ ও অর্থনীতিতে।
এমনকি যে বিষয়টি এখনও কেউ তেমন আলোচনা করছেন না তা হলো আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যেও বড় ধরণের চাপ তৈরি করছে এই ভাইরাস। এ ধরণের যে কোন সংকটে মানসিক চাপ ও কষ্ট অনুভব করা, ভীত হওয়া, আতংকিত হওয়া, বিভ্রান্ত হওয়া, রাগান্বিত হওয়া ইত্যাদি আবেগীয় ঘটনা একজন মানুষের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।
তবে এসব আবেগীয় প্রতিক্রিয়া কোন ব্যক্তি অতিমাত্রায় অনুভব করলে এর নেতিবাচক প্রভাব তার দৈনন্দিন কাজকর্ম ও আচরণের উপর পড়তে থাকে। এর ফলে ব্যক্তি সংকট/সমস্যা মোকাবেলার প্রতি মনোযোগী না হয়ে আরও অতিরিক্ত দুঃশ্চিন্তা করতে থাকে যা তার মানসিক চাপের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে জীবনমান কমিয়ে দেয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছু ছোট খাটো পদক্ষেপ এই সংকট মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করতে পারে। পাশাপাশি মানসিক চাপ কমাতেহও সাহায্য করবে। মানসিক চাপ কমাতে যা করতে হবে:
১. স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অনুসরণ করা যেমন: যথাসম্ভব বাসায় অবস্থান করা, সঠিক সময়ে সুষম খাদ্য গ্রহণ করা, পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম, কাছের মানুষজনের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্য, ইমেইল এর মাধ্যমে যোগাযোগ রাখা। পাশাপাশি পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা।
২. সতর্কতা মূলক কাজকর্মের (যেমন পরিষ্কার পরিছন্নতা) প্রতি উদাসীনতা না দেখিয়ে বরং মেনে চলা বাঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে নেতিবাচক মনোভাব দেখালে তা শুধু নিজের জন্য ঝুঁকি বয়ে আনবে তা নয় আমাদের পরিবার ও সমাজকেও ঝুঁকিতে ফেলে দিবে। তাই আপনি সঠিকভাবে মেনে না চললে আপনার পরিবারের লোকজন আপনাকে সতর্কতা মূলক কাজগুলো করার জন্য চাপ দিলে আবেগিয় প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে কেন বলছে সে বিষয়ে ভাবা এবং মেনে নেয়া।
৩. আবেগ নিয়ন্ত্রণের জন্য ধুমপান বা কোন মাদকদ্রব্য গ্রহণ না করা।
৪. অতিমাত্রায় মানসিক চাপ, দুঃশ্চিন্তা অনুভব করলে লুকিয়ে না রেখে এ ব্যাপারে কথা বলা। আলোচনা করা এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা।
৫. ভুল তথ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং সত্য ও বিজ্ঞান নির্ভর তথ্য সংগ্রহ করা। তথ্য সংগ্রহের জন্য নির্ভরযোগ্য সূত্র (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে খুঁজুন)থেকে নিতে হবে এবং সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে।
৬. মানসিক অস্থিরতা কমানোর জন্য করোনা ভাইরাস সম্পর্কে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সম্প্রচারিত সংবাদসমূহ অতিমাত্রায় পড়া, দেখা বা শোনার মাত্রা কমিয়ে দেয়া।
৭. অতীতেও আপনি হয়তো আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া নানা সংকট দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করেছেন। সেই অতীত অভিজ্ঞতাগুলো থেকে আপনার দক্ষতাগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। এই দক্ষতাগুলোই বর্তমান সংকটে আপনার আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।
এখন আমরা আলোচনা করবো উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে শিশুদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় নিয়ে।কারণ শিশুরা এ সকল সংকট ও চাপে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, যেমন: উদ্বিগ্নতা, রাগান্বিত হওয়া, উত্তেজিত হওয়া, সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া, ঘ্যানঘ্যান করা বা কাছের মানুষের সাথে আঠার মতো লেগে থাকা ইত্যাদি।
এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হলো-
১. শিশুদের আবেগীয় পরিবর্তনের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং তাদের সমস্যা সম্পর্কে শোনার চেষ্টা করা। তাদের প্রতি মনোযোগ দেয়া এবং আদর করা।
২. শিশুদের সাথে কথা বলা এবং তাদের আশ্বস্ত করা।
৩. শিশুদের সাথে কথা বলা এবং তাদের আশ্বাস্ত করা।
৪. শিশুদেরকে তাদের পিতামাতা ও পরিবারের সাথে রাখা। যদি কোন কারণে আলাদা করতে হয় তবে সে ব্যাপারে খুলে বলা এবং নিয়মিত যোগাযোগ করা।
৫. একটি নির্দিষ্ট রুটিন অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর উপায়ে চলতে উদ্বুদ্ধ করা।
৬. শিশুর বয়স অনুযায়ী তাকে সঠিক তথ্য প্রদান করা এবং আশ্বস্ত করা।
সর্বোপরি সবার উদ্দেশ্যে একটি বার্তা-অপ্রয়োজনে ভুল তথ্য নিয়ে আতংকিত না হয়ে শান্ত থাকার চেষ্টা করুন।
নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অন্যকে সচেতন করুন।
সবাই মিলে শারিরীক ও মানসিকভাবে ভালো থাকুন।
তথ্যসূত্রঃ বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার ওয়েবসাইট
সিরাজুম মনিরা
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, রিজিওনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর।
চেম্বার: রিদম ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টার (ধাপ আট তলা মসজিদের পশ্চিমে)
সিরিয়াল: ০১৭৭৭৩৩৭০৮৯