উর্দু সাহিত্যের একজন শ্রেষ্ঠ গল্পকার সাদাত হাসান মান্টো। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময়কার মর্মান্তিক ঘটনা, হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা ফাসাদ, ছিন্নমূল মানুষের চিৎকার, অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে মান্টো যা লিখে গেছেন তার মৃত্যুর পর তা যেন সকলের চোখে ধারালো ছুরির মতো ভয়ানক হয়ে আছে। আপনার স্বাভাবিক চোখে তার লেখাগুলো অশ্লীল মনে হতে পারে তবে এ প্রসঙ্গে মান্টো বলেন-
“আমার গল্পগুলো অশ্লীল নয়, তোমার চিন্তাভাবনা অশ্লীল। আমার গল্পগুলো শুধু নগ্ন।”
তাঁর গল্পে আপনি তাওয়া’এফ, বেশ্যা এদেরকে বার বার খুঁজে পাবেন। সে সময় সমাজে এদের অবস্থান আপনাকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিবে। কখনও ফতোয়া এসেছে, লেখায় অশ্লীলতার জন্য ছয়বার মামলা হয়েছে তার উপর। তাঁকে ছোট গল্পের ঈশ্বর বললেও হয়তো কারও কোনো বিরোধ থাকবে না। চার লাইন পাঁচ লাইনের মধ্যে এমন কিছু লেখা লিখে গিয়েছেন যা অভাবনীয়।
তবে দুঃখের বিষয় এই প্রতিভাবান চাবুকধারী লেখক বেঁচেছেন মাত্র ৪৩ বছর। মৃত্যুর এক বছর আগে লেখা নিজের এপিটাফে তিনি বলে গেছেন, ‘এখানে সমাধিতলে শুয়ে আছে মান্টো এবং তাঁর বুকে সমাহিত হয়ে আছে গল্প বলার সব কৌশল আর রহস্য।’
১১ মে ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে পাঞ্জাব লুধিয়ানার পাপরউদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সাদাত হাসান মান্টো। তাই তাঁকে স্মরণ করে হৃদয় থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
‘আমি লোকটার গলায় ছুরি ধরলাম, ধীরে ধীরে পোচ দিয়ে জবাই করলাম।’
‘এ তুই কী করলি!’
‘কেন?’
‘জবাই করলি কেন?’
‘এভাবেই তো মজা!’
‘মজার বাচ্চা, তুই কোপ দিয়ে মারলি না কেন? এইভাবে…’
আর জবাই করনেওয়ালার গলা এক কোপে আলাদা হয়ে গেল।
আগুন লাগল যখন, সারা মহল্লা জ্বলে ছাই হলো…কেবল একটা দোকান বেঁচে গেল, সেই দোকানের ওপরে সাইনবোর্ডে এই তখনও পড়া যাচ্ছিল…‘এখানে বাড়ি বানানোর মাল-সামান পাওয়া যায়।’