২১ ফেব্রুয়ারি, আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে সারা বিশ্বে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে পালিত হয়। সেই সাথে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর লেখা “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী , আমি কি ভুলিতে পারি ” গানটি আলতাফ মাহমুদের সুরেই নিজ নিজ ভাষায় অনুবাদ করে গীত হয় সারা বিশ্বে।
১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন ইউনেসকো একান্তই আমাদের গৌরবের অহংকারের ২১ ফেব্রুয়ারী তথা শহিদ দিবসকে এ মযার্দা দিয়েছেন। কিন্তু এরও পেছনে রয়েছে ছোট্ট একটি ইতিহাস যা শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর সব দেশের সব মানুষের জানা উচিত ।
ছোট্ট হলেও এ ইতিহাস গৌরবের ও অহংকারের। ১৯৯৮ খিষ্টাব্দেন ২৯ মার্চ কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশি ও একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম জাতিসংঘের তৎকালিন মহাসচিব কফি আনান সমীপে লিখলেন একটি চিঠি । তাতে তিনি লিখলেন , “It is a basic right of all human being to be able to practice their mother language in their day to day life . But alas! Millions of people had been forced not to practice their mother language , many were forced to forget their mother language , many unique languages are still in serious crisis for their existance ” । বাংলা ভাষার দুরবস্হার বিষয়টিও তিনি কফি আনানকে অবগত করালেন , “ Once upon a time Bangla was also facing serious crisis , In early fifties , the then regime dominated by different language spoken leaders decided that the Bangalis will not be allowed to use their mother language as official language .” । আবেদনপত্রটি মহাসচিবের দৃষ্টিগোচরে এলে তিনি গ্রহণ করলেন এবং লেখককে উত্তরও লিখলেন । তিনি লিখলেন , “ According to the policy of the UNESCO a formal proposal has to be submitted by one of the member states through their national commission . ” । এরপর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম ও তার বন্ধু আব্দুস সালাম সুদূর কানাডা থেকে বাংলাদেশের তৎকালীন এবং আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর করতে সমর্থ হন । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কালবিলম্ব না করে বিষয়টি যথাযথ পদ্ধতির অনুসরণে জাতিসংঘের যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্হাপন করেন। যারই ফলশ্রুতিতে একুশে ফেব্রুয়ারী আজকের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও তার বন্ধু আব্দুস সালাম আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পরে যে পত্র লিখেন তাও নিম্নরুপঃ “ জেনেছি আপনি সংবাদটি অবগত হয়ে কালবিলম্ব না করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাশ করার সিদ্ধান্ত নেন। ফলশ্রুতি সম্ভব করে তোলে বিশ্বশান্তির পক্ষে এক মহা অগ্রযাত্রা। আপনাকে ধন্যবাদ। বাংলাভাষাকে বিশ্বে এত উচু স্হান করে দিতে আপনার ঐতিহাসিক ত্বরিৎ সিদ্ধান্তের জন্য ধন্যবাদ।” বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৪ মার্চ, ২০১৬ খ্রিঃ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করেন তাদের।
১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ ফেব্রুয়ারি করাচির ভরা পার্লামেন্টে উর্দ্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও সংসদের ব্যবহার্য ভাষা করার প্রস্তাব করেছিলেন কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত সাংসদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত । ঐ অধিবেশনেই তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খাঁন তাকে ভারতের চর, দেশদ্রোহী , পাকিস্তানের শত্রু আখ্যা দিয়ে তীব্র বাক্যবাণে জর্জরিত করেছিলেন । ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পুত্র দিলীপ কুমার সহ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে নিজ বাসভবন থেকে ধরে নিয়ে যায় ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে—আর ফেরত দেয়নি । ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত জন্মেছিলেন ১৮৮৬ খ্রিঃ ২ নভেম্বর কুমিল্লায় । কানাডা প্রবাসী সদ্য প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম জন্মেছেন ১৯৫৩ খ্রিঃ ঐ কুমিল্লাতেই।
রেজাউল করিম মুকুল, প্রাবন্ধিক ও সংগঠক।