মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

যেভাবে এলো হিজরী সন

মুগ্ধতা.কম

১০ আগস্ট, ২০২১ , ৯:৫১ অপরাহ্ণ

যেভাবে এলো হিজরী সন

হিজরী সন মূলত চন্দ্রনির্ভর একটি বর্ষপঞ্জি। পৃথিবীর মুসলিম দেশসমুহ এই হিজরী সন বা পঞ্জিকা অনুসরণ করে থাকে। এটি ইসলামী বর্ষপঞ্জি বা মুসলিম বর্ষপঞ্জি হিসেবে বিবেচিত। এই বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করে বিশ্বব্যাপী মুসলমানগণ ইসলামের পবিত্র দিনসমূহ উদযাপন করে থাকেন। হিজরী সনের সাথে বিশ্বমুসলিম উম্মাহ’র আদর্শ ও ঐতিহ্যের এক সুমহান ভিত্তি সম্পৃক্ত। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনাদর্শ ও কর্ম এবং তাঁর প্রিয় মাতৃভূমি মক্কা ত্যাগ করে মদিনায় গমণের ঐতিহাসিক তাৎপর্য।

নবুওয়াত প্রাপ্তির পর রাসুল (সাঃ) মক্কাবাসীকে ইসলামের প্রতি তথা এক আল্লাহ’র প্রতি আহ্বান জানাতে লাগলেন। অনেকটা গোপনেই তিনি তিন বছর ধরে ইসলামের প্রতি মানুষকে আহ্বান জানাতে থাকলেন। কিন্তু স্বীয় কোরাঈশ বংশের লোকেরাও তাঁর বিরোধীতা করতে লাগলেন। এক সময় তিনি ঐশী নির্দেশে সাফা পাহাড়ে প্রকাশ্যে একাত্ববাদের উপর ঈমান আনার জন্য মক্কাবাসীর প্রতি আহ্বান জানালেন। ঠিক তখন থেকেই মক্কাবাসী নানাভাবে তাঁকে নির্যাতন, লাঞ্চিত, অপমান ও আহত করতে লাগলেন। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) অত্যন্ত ধৈর্য ও পরম মমতায় এবং সাহসিকতার সঙ্গে ইসলাম প্রচার করতে থাকেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে ইসলাম ধর্মের আখেরী নবীকে স্বীয় কোরাঈশ বংশের লোকেরাই মক্কা ছেড়ে মদিনায় যেতে বাধ্য করেন। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর এই জন্মভূমি ত্যাগ করার ঘটানাকে ইসলামের ইতিহাসে ‘হিজরত’ নামে অভিহিত করা হয়।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর নির্দেশে ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১২ সেপ্টেম্বর মোতাবেক ২৭ সফর মক্কা মুকাররামা থেকে মদিনার উদ্দেশে হিজরত করেন। তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর ৬২২ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ৮ রবিউল আউয়াল কুবায় পৌঁছেন। ২৭ সেপ্টেম্বর ৬২২ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ১২ রবিউল আউয়াল মদিনা মনোয়ারায় পৌঁছান।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যেই হিজরী সন গণনার শুভ সুচনা। হিজরী সনের প্রচলন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সময়কাল থেকে। তবে তা ছিল বিক্ষিপ্তভাবে।

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ)-এর সময়কালে হিজরী সন সুনির্দিষ্ট রূপে প্রকাশিত ও বাস্তবায়িত হয়। সে সময় রাষ্ট্রীয় কাজে সন তারিখ ব্যবহৃত হতো না। ফলে প্রশাসনিক কাজে নানান জটিলতার সৃষ্টি হতো। এসব সমস্যা সমাধানকল্পে ১৭ হিজরী অর্থাৎ রাসুল (সাঃ)-এর ইন্তেকালের সাত বছর পর ১০ জমাদিউল আউয়াল বসরার গভর্নর হযরত আবু মুসা আল আশয়ারি (৬০২ – ৬৭২খ্রি.) খলিফা ওমর (রাঃ)-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। খলিফা ওমর (রাঃ)-সাহাবায়ে কেরামগণের মজলিসে শুরায় সবার পরামর্শক্রমে রাসুল (সাঃ)-এর হিজরতকে ভিত্তি করে হিজরী সন গণনার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। সেই সম্মেলনের শ্লোগান ছিল-‘হিজরতের ঘটনা মিথ্যা থেকে সত্যের পার্থক্য করেছে,মক্কার অবিশ্বাসীদের ওপর ইসলামের বিজয় এসেছে।’ শুধু ইসলামের ইতিহাসেই নয় বরং বিশ্ব ইতিহাসে মুসলমানদের উন্নতি, অগ্রগতি, বিজয় ও সাফল্যের ভিত্তি ছিল এই হিজরত।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মদিনায় আসেন রবিউল আউয়াল মাসে। হিজরতের পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছিল নবুওয়াতের ১৩তম বর্ষের হজের সময় মদিনার আনসারী সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে আকাবার দ্বিতীয় শপথ সংঘটিত হওয়ার পর। সময়টি ছিল জিলহজ মাস। মুসলমানদের হিজরতকারী প্রথম দলটি মদিনা মনোয়ারায় পৌঁছেন মহরম মাসে। এটি ছিল মহানবী (সাঃ)-এর মদিনায় হিজরতের শুভ সূচনা। হিজরতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হযরত ওমর রাদিয়াল্লা তালা আনহু হিজরী সনের প্রথম মাস ধরেন মহরমকে। উল্লেখ্য যে, দশম হিজরীতে অবর্তীণ একটি আয়াত দ্বারা আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআন শরীফে হিজরি সনের ১ম মাস মহরম, সপ্তম মাস রজব, ১১তম মাস জ্বিলকদ এবং ১২তম মাস জিলহজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রিয় মাতৃভূমি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত ছিল ইসলামের ইতিহাসে একটি অনন্য ঘটনা। এই হিজরতকে কেন্দ্র করেই ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) হিজরী সন প্রবর্তন ও বাস্তবায়ন করেন।

লেখক: কবি ও ছড়াকার,রংপুর।

মোবাইল নং ০১৭১৬৩৩৪২৬৭