৪ মার্চ ১৯৭১। ৩ মার্চের ঘটনার পর শহরজুড়ে অস্বাভাবিক থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। সান্ধ্য আইন যথারীতি আজ সন্ধ্যা থেকে পুনরায় বলবদ থাকবে। শহরের বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনের টহল অব্যাহত রয়েছে।
মানুষ জেগেছে পাকিস্তানি হানাদারের বিরুদ্ধে। জেগেছে বীর রংপুরবাসী। প্রশাসনের টহল কিংবা রক্তচক্ষু তাঁদের কি এতো সহজে দমাতে পারে !
এ প্রসঙ্গে কথা বলি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেনের সাথে। জনাব আকবর একজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা। তাঁকে নিয়ে আমার ‘আলোর দ্বীপ ‘সিরিজে বিস্তারিত লেখা আছে। তিনি ৪ মার্চ ১৯৭১-এ রংপুর শহরের অবস্থা নিয়ে জানান,পাকিস্তান প্রশাসনের রক্তচক্ষু দমাতে পারেনি রংপুরের বীর মানুষদের। শহরের বিভিন্ন এলাকায় যে যেভাবে সম্ভব মিছিল করতে থাকে। কোন নির্দিষ্টভাবে বা কেন্দ্রীয়ভাবে নয় এলাকায় এলাকায় স্থানীয়ভাবে সংগঠিত হয়ে এসব মিছিল বের হয়েছিল। কয়েকটি জায়গায় বক্তব্য রাখার খবরও তিনি জানতে পেরেছিলেন।
কথা হলো রংপুরের বিশিষ্ট প্রবীণ সাংবাদিক জনাব আবদুস সাহেদ মন্টু ভাইয়ের সাথে । তিনি তখন পি পি আই- এর রংপুর প্রতিনিধি ছিলেন। মন্টু ভাই জানালেন, ৪ মার্চ রংপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে খন্ড খন্ড মিছিল চলছিল। শহরের পরিস্থিতি থমথমে এবং কড়া প্রশাসনিক তৎপরতার পরেও শহরের সি ও বাজার থেকে লালবাগ পর্যন্ত বিভিন্নস্থানে হুট-হাট করে মিছিল হচ্ছিল।
রঙ্গপুর গবেষণা পরিষদ থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধে রঙ্গপুর গ্রন্থের ২৭ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘ ৩ মার্চের ঘটনার পর শহরের অনেক বিহারী পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। বেশ কয়েকটি পরিবার ইতিমধ্যে সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য অবাঙালি সেনা কর্মকর্তারা খুব বিচলিত হয়ে উঠলো। এই কাজে তাদের কারো কারো উদ্বেগ ও ব্যতিব্যস্ততা কখনও কখনও প্রয়োজনের সীমা ছাড়িয়ে গেল। তারা রেজিমেন্টের খাদ্য ভান্ডার থেকে আশ্রিত বিহারী পরিবারগুলোর জন্য রেশন সরবরাহের ব্যবস্থা করলো।
‘( যুদ্ধে যুদ্ধে স্বাধীনতা- মেজর নাসির উদ্দিন)# [লেখক: সাহিত্যিক ও ইতিহাস গবেষক]