রানা মাসুদ সাহিত্য সংস্কৃতি জগতে একটি সুপরিচিত নাম। রংপুরের নিউ সেনপাড়া এলাকায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই মানুষটি একাধারে লেখক, সংগঠক ও সফল ব্যবসায়ী। সাহিত্যের অনেক শাখায় তিনি অবাধ বিচরণ করেন। রংপুরের আলো-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা এই মানুষটির রংপুরের মাটি ও মানুষের জন্য রয়েছে অগাধ মমতা। কবিতা, গল্প, থ্রিলার, উপন্যাস লেখার পাশাপাশি রংপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা এবং গুণীদের নিয়ে লেখালেখির কাজ করছেন নিয়মিত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হলো: কবিতা: ভালোবাসার নীলনকশা, জীবনের চার লাইন; উপন্যাস: দূর কোন দূর ঠিকানায়, কিশোর অ্যাডভেঞ্চার ও থ্রিলার: দার্জিলিংয়ের ডোবারম্যান, কক্সবাজারের মাছলি বাবা; গল্প: যুবকটা একটা পাপ আছে, আলোকিত মানুষদের জীবনকথা: আলোর দীপ। চলতি বছর বইমেলায় প্রকাশিত হবে ‘একাত্তরের উত্তাল মার্চ: রংপুরের দিনগুলি ও অন্যান্য। এছাড়া আরও কয়েকটি বইয়ের কাজ করছেন।
রানা মাসুদ একজন দক্ষ সংগঠক। তিনি অভিযাত্রিক সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংসদ এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, লায়ন্স ক্লাব অব রংপুর, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন রংপুর বিভাগীয় কমিটির সহ-সভাপতি, আর এ এম সি শপিং কমপ্লেক্সের যুগ্ম আহ্বায়ক, রঙ্গপুর গবেষণা পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক, বিভাগীয় লেখক পরিষদের উপদেষ্টা, কমিউনিটি পুলিশিং রংপুর মেট্রোপলিটন কমিটির সহ-প্রকাশনা সম্পাদকসহ আরও বেশ কিছু সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন। তিনি সাংবাদিকতার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকা অবস্থায় সর্বশেষ দৈনিক যুগের আলো পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন।
বহুমুখী প্রতিভাধর এই মানুষটির জন্মদিন আজ ৪ ফেব্রুয়ারি। জন্মদিনে মুগ্ধতা ডট কমের পক্ষ থেকে তার জন্য রইল শুভেচ্ছা।
বিশেষ এই জন্মদিন সংখ্যায় থাকছে তাঁর সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার, তাঁর লেখা কিছু কবিতা এবং তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক একটি লেখা।
মুগ্ধতা ডট কম : কেন লেখেন? মানে ঠিক কোন প্রেরণাটি আপনাকে দিয়ে লিখিয়ে নেয়?
রানা মাসুদ : যে অব্যক্ত কথা মুখে বলতে পারি না তা প্রকাশ করি কখনও সরাসরি আবার কখনও ইঙ্গিতে লেখালেখির মাধ্যমে।
মুগ্ধতা: লেখালেখি আপনাকে কী দিয়েছে? নিয়েছেই বা কী?
রানা মাসুদ: লেখালেখি আমার মনে অনেক আনন্দ দেয়। আর পরিবারের সদস্যদের কিছু সময় কেড়ে নিয়েছে।
মুগ্ধতা: সাহিত্য সংস্কৃতির এই দুনিয়ায় প্রবেশ করলেন কখন, কীভাবে?
রানা মাসুদ: কলেজ জীবন থেকে। বাংলায় পড়া আমার এক বন্ধু খুব নিজের লেখা কবিতা কপচাতো। এক সময় মনে হলো আমিও তো লিখতে পারি। শুরুটা এভাবেই। তবে ক্লাস থ্রি থেকেই আমার বই পড়ার অভ্যাস ছিল সেটাও কাজে লেগেছিল।
মুগ্ধতা: ব্যবসা, সংসার, অনেকগুলো সংগঠন – সব সামলে আবার লিখতে বসতে হয়-এত শক্তি কোথায় পান? কীভাবে সব সামলান?
রানা মাসুদ: গোপন রেসিপি। বলা যাবে না! শুধু এটুকুই বলব যে, নিয়ম করে ও রুটিন করে চললে অনেক কাজ করা সম্ভব।
মুগ্ধতা: যদি আপনাকে লেখালেখি অথবা ব্যবসা যে কোন একটা বেছে নিতে বলা হয়- তখন কী করবেন?
রানা মাসুদ: দুটা ভিন্ন দুই মেরুর। ব্যবসা আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের পেটের জন্য। ভবিষ্যতের জন্য। আর লেখালেখি একটা কমিটমেন্ট থেকে আমার মনের জন্য। মানুষের জন্য। দেশের জন্য। সমাজের জন্য।
মুগ্ধতা: ছাত্রজীবনের বা পরবর্তী জীবনের প্রেম আপনার লেখাকে কতটা তাড়িয়ে নিয়ে চলে?
রানা মাসুদ: তোমাকে তো আমার বন্ধু বা মিত্র বলেই জানতাম!
মুগ্ধতা: কতদিন বাঁচতে চান?
রানা মাসুদ: আল্লাহপাক যতদিন হায়াত রেখেছেন।
মুগ্ধতা: কী করবেন এতদিন বেঁচে?
রানা মাসুদ: কিছু কাজ করে যেতে চাই ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য।
মুগ্ধতা: ভাষার মাস চলছে। বাংলা ভাষার শুদ্ধতা রক্ষার ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?
রানা মাসুদ: ভাষা অনেকটা প্রবাহিত ধারার মতো। এ নিয়ে সংক্ষিপ্তসার বলা সম্ভব না।
মুগ্ধতা: আপনার চলমান কাজগুলো নিয়ে বলুন। আগামীর পরিকল্পনাও বলুন।
রানা মাসুদ: রংপুরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ ও গুণীজন নিয়েই আছি। অনেক দীর্ঘ কাজ। সময় লাগবে বেশ।
মুগ্ধতা: তরুণদের সাথে আপনি অত্যন্ত স্বচ্ছন্দ। বিষয়টি দেখতে ভালো লাগে। তাদের উদ্দেশে কিছু বলুন।
রানা মাসুদ: বেশি বেশি পড় আর বেশি বেশি আলোচনা করো। লিখবে খুব ভেবে চিন্তে। লেখার জন্য কমিটমেন্ট থাকতে হবে মাস্ট।
লিসাবেলা কেমন আছো এই শরতের দিনে ?
তোমাদের ওখানে কি এখন নীলাকাশ ছুঁয়ে
খেলা করে হতাশার সাদা সাদা মেঘ ?
এখনও কি প্রার্থনা করো জল ভরা মেঘের?
অথচ দেখো আমার চোখের জলে ভরে আছে
বাংলার মেঘ; শুধু বর্ষাতেই নয় ঝরে টুপটাপ
শরৎ কি হেমন্ত, শীত কি বসন্ত, সুখ কি দুখে।
লিসাবেলা তোমাদের গ্রামটা কি আমাদের মতো ?
ছায়া ঢাকা মায়া ভরা ,শিমুলের লাল ছুঁয়ে
পলাশের মাদক মহুয়ার রক্তাভ চোখে ।
তুমি কি দেখো তোমার গ্রামের সবুজ পথ-ঘাট ?
অবশ্য সজীবতা কি আছে এখনো তোমার মনে ?
চেয়ে দেখো আকাশ মনির হলুদে ছেয়েছে পথ প্রান্তর
গগন শিরীষের সম্ভ্রান্ত ঘ্রাণের লাজুক দোলা,
ওই দেখো প্রেমহীন বুকের প্রান্তরে দাঁড়িয়ে ছাতিম
তীব্র দারুচিনির গন্ধে আজ মাতাল চরাচর,
লিসাবেলা তোমার উন্নাসীক নাকে যাবে না সে ঘ্রাণ।
তোমার মনে পড়ে টাইগার হিলের সেই ভোরের কথা ?
তখনও সূর্যটা আলো ছড়ায়নি অথচ তুমি কি অদ্ভুত
দ্যুতি নিয়ে মুখটা রেখেছিলে কাঞ্চনজঙ্ঘা দিকে
মনে হচ্ছিল তুমি ছোঁয়াচ্ছিলে ঠোঁট সোনালী কাঞ্চনে,
আমি দেখছিলাম না সূর্যোদয়; দৃষ্টিতে তখন তুমি।
লিসাবেলা কি চমৎকার আপন করেই না বললে, ‘হ্যালো’
আহ্ বেটোভেন কি মোসাৎ বাজছিল যেন কানে !
ক্ষণিকেই তুমি করে নিলে আপন যেন চেনা বহুদিন
নেহায়েতই অনেক বড় মন নাহলে কি হয় ওরকম!
আমার ‘দূর দ্বীপ বাসিনী’ এরপর একাকী তুমি
আপন থেকে আপনার দার্জিলিঙের পাহাড়ী পথে
হাত ছুঁয়ে হাত ধরে তারপর চলে এলে বুকের কাছে।
বিদায়টা ছিল তীব্র কষ্টের যেমনটা সব হারানোর,
আবারও সুখ ছুঁয়ে গেল যখন তুমি এলে সমুদ্র স্নানে।
লিসাবেলা আমার ঠিক মনে আছে বঙ্গোপসাগরের জলে
নীল ঘন কষ্ট ছড়াচ্ছিল ডুবন্ত তোমার পা
চুল ছড়িয়ে যখন শয্যা নিলে জলের ওপর
পানকৌড়ির ভেসে চলা দেখছিলাম আমি তীরে,
বিদায় বেলা দু’চোখের জল যখন গড়িয়ে পড়লো মুখে
নিজেকে আড়াল করে বললে,সমুদ্রের জল নোনা বড়।
লিসাবেলা নোনা জলতো তোমার চোখে-মুখে নয়
আমার বুকে জমে বুকটাকেই করেছে সাগর
এখন দু’ চোখে নোনা জলের জোয়ার ভাটা অহর্নিশ
এ বুক আর কতটা জল ধারণ করে হাহাকারের!
লিসাবেলা এক বছর হলো চলে যাবার যেন অযুত কাল
সূর্যের দিকে চেয়ে দহন আমার যেন অনাদিকাল।
তোমার হঠাৎ আগমনে চমকিত হলাম; কিছুটা বেচইন
সব ঠিক আছে তো নাকি এমনি আগমন লিসাবেলা ?
এসব ভাবতে ভাবতে শুনলাম তুমি ছুটে গ্যাছো টেকনাফ।
তোমার গাড়ির নম্বর প্লেটটা এখন হরিদ্রাভ, অক্ষরে কালোর রেখা
ঠিক যেন সর্ষের ক্ষেতে পথভুলো কোন ময়লা গায়ের রাখাল বালক।
লিসাবেলা তুমি ভীষণ উদগ্রীব, উৎকন্ঠা ছুঁয়েছে তোমার কন্ঠ।
তোমার গাড়ির সামনে পেছনে অনেক গাড়ি, ক্যামেরাম্যানও আছে
এসব কিছুই দেখছিলে না , তোমার চোখ ছিল অসীমে,
তুমি জানালা গলে যেই মাথা বের করে দিলে উড়লো তোমার চুল;
তুমি শ্বাস নিলে, বাংলাদেশের বিশুদ্ধ নিঃশ্বাস,
মেরিন ড্রাইভের আকাশমনির হলুদ ছোঁয়া ফুলের দুলুনি
তুমি খুলে দিলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ির সব জানালা।
এভাবেই তুমি চলে এলে অসংখ্য মানুষে ভরা ছোট ছোট ঘরের সামনে
লিসাবেলা তুমি কঁকিয়ে উঠলে, হায় ওরাও তো মানুষ!
হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ ওরাও মানুষ; রোহিঙ্গারা নয় কোন আজব প্রাণী।
চেয়ে দেখো মানবতার দূত, গরিব বাংলাদেশ বলে যাকে করো তুচ্ছ
কি সীমাহীন মমতায় হাত বাড়িয়েছে, বুকে তুলে নিয়েছে মানবতা।
জাতিসংঘ বলো আর বিশ্বের তামাম মোড়লদের কথা বলো
ছলনা ও ছলনায় ভরা চরাচর। লিসাবেলা তুমি ভাষাহীন
দু’ চোখ ছুঁয়ে মমতা তোমার নেমে যাচ্ছে নাফ নদীর জলে,
তোমার কন্ঠ এক হিমালয় সমান বরফ করেছে রুদ্ধ।
ক্যাম্পের পথ থেকে নোংরা গায়ের এক শিশুকে নিলে তুলে
তোমার মাতৃত্ব তোমাকে কাঁদায়। শিশুটা খোঁজে বুকে মায়ের ছোঁয়া
শুষ্ক বুকে তোমার স্তন ছুঁয়ে চেপে ধরো তুমি এক মানব শিশু।
লিসাবেলা চেয়ে দেখো বাংলাদেশ কাঁদছে আজ তাদের জন্য,
সীমাবদ্ধ সম্পদ দিয়ে কতোটাই বা আগলে রাখতে পারবে তাদের?
বিশ্ব মোড়লরা রোহিঙ্গা সমস্যার কথা শুনলেই যেন বোবা-কালা,
গোপন আন্তর্জাতিক বেনিয়াদের কৌশলের কাছে বিপন্ন মানবতা,
টেকনাফ-উখিয়ার পথের কালো পিচের ছাল ওঠা শরীরের ওপর
সাহায্য সংস্থার ঝা চকচকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ির নিত্য চলাচল,
মানবতা বাঁচানোর চেষ্টায় ঘাম ও অর্থ ঝরায় অনেকেই।
লিসাবেলা মায়ানমারের জানোয়াররা কি এতটাই শক্তিশালী ?
নাকি কোন গোপন মন্ত্রবলে তারা বিশ্ব মোড়লদের
বোবা-কালা অথবা নপুংসক করে ছেড়েছে ?
চেয়ে দেখুন সভাসদ নাফ নদীর তীরজুড়ে বিচারের দাবি।
সবাই সব জানে সবাই সব বোঝে শুধু রোহিঙ্গাদের বোঝে না।
লিসাবেলা মানবতা কি বিশেষ কিছু ধর্ম, বর্ণ ও দেশের জন্য ?
লিসাবেলা তোমাকে ধন্যবাদ জানাই সংহতি প্রকাশের জন্য ।
যদিও তোমার প্রোফাইল নিকষ কালো অন্ধকারে
লাগছে একদম বেমানান;যেমনটা লাগছে অনেকের।
তুমি বন্ধু আমার, আমার বৃদ্ধা মা,আমার বোন
আমার স্ত্রী,আমার কন্যা,আমার শিক্ষক অথবা প্রান্তিক জন
সাধারণ মানুষ আজ জাগ্রত হয়েছে সোচ্চার সকল।
লিসাবেলা তুমি উদ্বিগ্ন হয়ে সেই সুদূরে বসে নিচ্ছো খোঁজ
শিউরে উঠছো তুমি বিবস্ত্র এক মায়ের নির্যাতন দেখে
তুমি শুনে আতঙ্কিত, স্বামীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে
পিতা-মাতার ওমে ভরা কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে
বাড়ির নিরাপদ আশ্রয় থেকে নিরাপত্তাহীন করে
চাকরি দেবার কিম্বা পথ দেখিয়ে দেবার কথা বলে
প্রেমিক সেজে প্রেমিকাকে নির্জনে ডেকে নিয়ে
বন্ধু সেজে বন্ধু বলে গোপনে ডেকে নিয়ে গিয়ে
একের পর এক হায়েনার কদর্য লোলুপ থাবা
মানচিত্রে ধর্ষিতার ক্রন্দন ও চিৎকারে বিদীর্ণ আকাশ।
আমাদের মা,মাটি, দেশ কোন দোষী নয়
আমরাই অপবিত্র করছি এই পবিত্র ভূমি।
সেই সুদূর অতীত কাল থেকেই চলছে লিসাবেলা
তোমরা নারীরা যেন কতিপয় পুরুষের শিকারীর সামনে শিকার
সৃষ্টির অনিন্দ্য সুন্দর নারীদেহ যেন কতিপয় পুরুষের
কামাক্রমণের চিরকালীন লক্ষ্যবস্তু;প্রতিহত করলেই মৃত্যু।
দেবরাজ জিউস যেন খুলেছিল গ্রীকপুরাণে ধর্ষণের খাতা
পরাশর কর্তৃক সত্যবতীকে ধর্ষণের উপাখ্যান কুখ্যাত।
অ্যাপোলোর কামক্ষুধা থেকে বাঁচতে নারী হয় তরুলতা
ইতিহাস বলে ধর্ষণের বয়স পৌরাণিকতাকে ছাড়িয়ে মানুষ সমান।
পৃথিবীতে পৌরাণিক কাল নেই; নেই কথিত দেবতাদের বাস
বিচারহীনতার কঠিন দৃষ্টান্তের অভাবেই পুরুষ আজ রাক্ষস।
প্রতিবাদে প্রতিবাদে ফেসবুক জুড়ে প্রিয় মুখগুলো অন্ধকার
প্রতিবাদে উত্তাল রাজপথ, প্রতিবাদ পত্রিকা ও টিভিতে
বিচারের দাবিতে সরব প্রতিবাদ; ধর্ষিতা কাঁদে নিভৃতে
বিচার চাইতে গিয়ে আরও বহুবার ধর্ষিত হয় প্রশ্নবানে
আর স্বগতঃ উচ্চারিত হয়’ এর চেয়ে মরে যাওয়া ছিল ঢের ভালো’।
লিসাবেলা তোমাদের জাতিসংঘ কি পারে না
অথবা নতুন কোন বিশেষ আন্তর্জাতিক ফোরাম
বিচার বহির্ভূতের বদনাম ঘুঁচিয়ে নতুন কোন বিচার?
ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড কিংবা তাৎক্ষণিক ক্রসফায়ার চাইনা
চাই ধর্ষকদের ধরে ধরে করা হোক নপুংসক দ্রুত
বলবান শরীর নিয়ে তারা বেঁচে থাক পুরুষত্বহীন ভাবে
বেঁচে থেকে প্রতিদিন বারবার মরুক ধর্ষক পুরুষ।
লিসাবেলা হঠাৎ তুমি চেয়ে বসলে কাঠগোলাপের গাছ
এমন করে বললে যেন চাইলে তুমি সাত আসমানের চাঁদ
নিয়ে যেতে চাও তোমাদের শীত প্রধান সুদূর দেশে
ঠিক তখুনি স্মৃতি পটে ভেসে উঠলো এক প্রাচীন ইতিহাস।
তোমাকে আমন্ত্রণ রংপুরের এক নিভৃত পল্লীতে
শীবচন্দ্র নামের এক সিংহ পুরুষ জমিদার একদিন
গর্জে উঠেছিলেন ইংরেজ শাসকদের জুলুমের বিরুদ্ধে
ঐতিহাসিক সেই বাড়ির কাঠগোলাপের গাছটা এখনও জীবন্ত ইতিহাস
বাকলের পরতে পরতে বয়সের ছাপ,তেমনি পাতায় পাতায়
লুকিয়ে আছে রংপুরের কৃষক-প্রজার বীরত্বের কথা।
লিসাবেলা, জানি তুমি হাসছো; চাইলে গাছের চারা
আর বকে যাচ্ছি আমি ইতিহাসের খেড়োখাতা থেকে।
ইতিহাস সেতো আমাদের মেরুদণ্ডে লাগানো ইস্পাত,
শোষিত হতে হতে ক্ষয়ে গেছে আমাদের কোমরের হাড়,
শোষিত হতে হতে আমরা হয়েছি বিদ্রোহী বীর।
দুর্বল ভেবে বৃহদাকার প্রতিবেশীর নানাবিধ শোষণ
জলে শোষণ, আসমানে শোষণ, বাণিজ্যে শোষণ
কাঁটাতার কি সীমান্তে সাধারণ মানুষের রক্তের কালো দাগ;
শোষণে শোষণে তিস্তা ও পদ্মা হয়ে গেছে মৃত,মরুপ্রায়।
শোষিত হতে হতে ক্ষয়ে গেছে আমাদের কোমরের হাড়,
পিঠের ওপর সাহায্যের নামে চাপিয়ে দেয়া চুক্তির বোঝা বাড়ে
সাহায্যের নামে ঋণের সুদ বাড়তে থাকে যেন কচুরিপানার ঝাঁক,
লিসাবেলা ক্ষুদ্র ও গরীব হবার অনেক কষ্ট এই বুকে।
তারপরও তুমি চেয়ে দেখো তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ
সবুজে সবুজে ভরে গেছে ফসলের অনাবিল হাসিতে,
মানুষের বুক দেখো আশা ও সাহসে স্ফীত অধিক
স্বদেশ জেগেছে আজ; মানুষ দাঁড়িয়েছে মানুষের মতো।
আজকাল প্রতিদিন এমনকি প্রতি বেলা
একেকটি মৃত্যুর খবরে শোক থেকে গভীর শোকার্ত হই
ফেসবুকের ওয়াল পত্রিকার পাতা অথবা টিভির স্ক্রলে
আপন কী পর চেনা কী অচেনা গুণী কী সাধারণ
মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে আসমান ছুঁই ছুঁই
এই যে এতো মৃত্যু এতো শোক এতো হাহাকার
লিসাবেলা তোমাকে কি ছোঁয় না নীলের দংশন ?
জীবন যেন থমকে আছে তিস্তার জমাট বিশাল চর
দুঃখরা সেচ দেয় শুষ্ক বালুতে,লাঙ্গল ঠেলে আসেনা জল
বীজ ফুটে স্বপ্নগুলো সেচহীন নিরব নিথর
এই যে জীবনের এতো বাঁক; এক পথ থেকে চৌ-পথ।
ক্ষেতে আসে উদোম পেটের কৃষানী; ব্যাপারীর চোখ
কচি লাউয়ের চকচকে ছাল থেকে উঠে যায় বুকে।
জীবনের তোলপাড় মরা গাঙ শূন্য সড়ক ছেড়ে ঘরে,
এই যে এতো মৃত্যু এতো শোক এতো হাহাকার —।
হাটে যাই,মানুষ, গরু-ছাগল গুড়ের জিলেপি গরম
হাসপাতাল ভর্তি রোগী, রোগ ও কাতর ধ্বনিচিত্র চারিধার
প্রেসক্রিপশন, ওষুধ, সুস্থ-অসুস্থ-মৃতদেহ, ছোটাছুটি
আজকাল সভাও হচ্ছে, মাস্ক স্যানিটাইজাসহ গরম বক্তব্য
শ্মশান অথবা গোরস্তানে যেতে যেতে ধরে পেশিতে টান,
মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হয় কবিতা হয়ে আসে ক্ষীণ।
লিসাবেলা তোমরাও নিরাপদ নও নয় নিরাপদ প্রান্তজন
আমি খুব কাছ থেকে নিত্য আমার মৃত্যুর ছায়া দেখি
ভীষণ কষ্টের সে মৃত্যু,একটু নিঃশ্বাসের জন্য বিদীর্ণ পৃথিবী
অচ্ছুৎ হয়ে ভীষণ অসহায় একাকী এক অন্ধকার কোণে
তারপর বাজে সাইরেন, সরকারি ব্যাগে ঢুকে যায় নিথর দেহ,
অথচ আপন ছাতার নিচের অনেকেই থাকে নিরাপদে।
ঘাসের শিশির মারিয়ে পৌষের হীম শীতের ভোরে
আমি অথবা আমার দেহ ঢুকে যায় মাটির নিচে।
‘ আসসালাতু খাইরুম মিনার নাউম’ আমার ঘুম ভাঙে না।
এই যে এতো মৃত্যু এতো শোক এতো হাহাকার
এই যে এতো কাজ এতো সংগ্রাম এতো ছোটাছুটি
আজ মৃত্যুর শীতলতা ছুঁয়ে আগামীকাল হয়ে যাবো অতীত।
মাসুদ বশীর
মাসুদ রানা। বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স ব্র্যাঞ্চের একজন দুঃসাহসী স্পাই ম্যান। পদে পদে যার ভয়ানক বিপদ কিন্তু তিনি তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে সর্বদা অটল। একের পর এক জয় করে চলেছেন ভয়ানক অভিযান। শত্রুপক্ষ সর্বদাই তার দক্ষ নিপুন বুদ্ধিদীপ্ত চতুর মুন্সিয়ানায় ঘায়েল। পাঠক, আপনারা এতক্ষণ ধরে হয়তো ভাবছেন আমি কাজী আনোয়ার হোসেনের কিংবদন্তি বাংলাদেশী থ্রিলার চরিত্র “মাসুদ রানা” নিয়ে বলছি। না পাঠক একদমই তা নয়। তবে, তিনিও “মাসুদ রানা” চরিত্রের মতোই অমলিন। আজ আমি বলছি একজন কবির কথা। যিনি কমবেশি সকল সাহিত্যানুরাগী পাঠকের কাছেই পরিচিত মুখ, তিনি হলেন আমার সাহিত্য সহযোদ্ধা বন্ধু মাসুদ রানা। মূলত রানা মাসুদ নামেই তিনি ব্যাপক পরিচিত। তিনি একাধারে কবি, লেখক, গল্পকার, উপন্যাসিক, সংগঠক, আলোকচিত্রী এবং একজন সফল ব্যবসায়ী।
আমার সাথে রানার পরিচয় হয় মূলত সাহিত্যঙ্গনে। প্রথম কবে পরিচয় হয়েছিল তা আমার ঠিক মনে নেই তবে সম্ভবত অভিযাত্রিকের সাপ্তাহিক সাহিত্য আসরেই হয়তো তার সাথে প্রথম সাক্ষাত হয়েছিলো। সে যাক, প্রথম পরিচয়ের পর থেকেই আজ অবধি প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর আমাদের দুজনের বন্ধুত্বের মাঝে এতটুকুও ফারাক ঘটেনি। আমরা সবসময়ই সাহিত্য নিয়ে একসাথেই পথ চলেছি এবং এখনও চলি। মাঝে রানা প্রায় আঠারো বছর সাহিত্য থেকে লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল এবং আমিও প্রায় কুড়িটি বছর তার মতোই ব্যক্তিগত রুজির কারণে সাহিত্যাঙ্গন থেকে দূরে ছিলাম। আবারও আমরা দুজনেই এপথে একসাথে হাঁটতে শিখছি।
রানা এবং আমার মধ্যে একটা বিষয়ে সবসময়ই মিল ছিল ও আছে, আমরা সর্বদাই সত্য ও সুন্দরকে সাথী করে পথ চলার চেষ্টা করি। আমরা সর্বদাই শিখতে চাই। মন্দকে নিঃসংকোচে মন্দ বলি, নতুনদের উৎসাহিত করি, ভুলত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি যাতে করে তাদের লেখা উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ হয়। এতে করে সাহিত্যমহলে আমাদের সমালোচকেরও কোনদিন অভাব ছিল না এবং এখনও নেই। আর সবচাইতে বড় কথা হলো আমরা দুজনেই সর্বদা নিজের সমালোচনা করতে ভালোবাসি যাতে করে নিজেদের সমৃদ্ধ করে তোলা যায়। রানা মাসুদ এবং মাসুদ বশীর এর বন্ডিংটা এজন্যই এখনও অনেক দৃঢ় এবং সর্বদাই অমায়িক।
রানাকে নিয়ে আমার অনেক স্মৃতি আছে। যেমন ওর প্রথম কবিতার বই “ভালোবাসার নীলনকশা”, ঢাকাতে একসময় ও “খোঁজ” নামে একটি অ্যাড ফার্ম দিয়েছিল, লিটল ম্যাগ “অ-বর্গ”, আমরা ক’জন (কামরুল হাসান সরকার[জিপসী শাহিন], ইঝন আহমেদ, রানা এবং আমি) একসময় “বহ্নিতনিমা” নামে হাতে লেখা লিটলম্যাগ নিয়মিত বের করতাম। প্রথমদিকে জিপসী শাহীন ভাই এটি সম্পাদনা করতো। পরবর্তীতে আমি দীর্ঘদিন এটির সম্পাদনা করেছিলাম। এরপর রানা যুগের আলোতে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করা শুরু করল আর আমিও চাকরিতে চলে গেলাম।
রানা মাসুদ সত্যিই একজন বিরল প্রতিভারধর এবং আধুনিক মনমানসিকতা সম্পন্ন একজন অতীব সুন্দর মনের সৃষ্টিশীল মানুষ। ক্যামেরা হাতেও তার দক্ষতা অনেক। আমার মনে আছে যুগের আলোতে সে কাজ করবার সময় তার “বন্দী মানুষ মুক্ত স্বদেশ” শিরোনামে একটি একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী রংপুর গণগ্রন্থাগারে সফলতার সাথে প্রদর্শিত হয়ছিল। আমি তখন আমার সম্পাদিত লিটল ম্যাগ “ভাঙ্গন” বের করতাম এবং সেটিতে তার আলোকচিত্র প্রদর্শনীর রিভিউ প্রকাশ করেছিলাম।
বন্ধু হিসেবে রানা মাসুদ খুবই আন্তরিক এবং প্রাণোচ্ছল। সবচাইতে বড় কথা তার মাঝে আমি কখনোই অহংকার ও হিংসে মনোভাব দেখিনি। সর্বদাই সে মানুষকে সাহস দিয়ে উৎসাহিত করে থাকে। এটি তার চরিত্রের একটি অন্যরকম ভালো দিক। আর সাহিত্য, লেখালেখি নিয়ে কী বলবো, তাতো কমবেশি সবারই জানা। তার একটি ভালো কাজ- সম্প্রতি রংপুরের আলোকিত মানুষদের নিয়ে “আলোর দীপ” শিরোনামে তার একটি বই প্রকাশিত হয়েছে যা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য এবং আমার যতটুকু জানা রংপুরের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়েও সে এখন গবেষণা করছে যা হয়তো পুস্তকাকারে একদিন প্রকাশিত হবে। বন্ধু রানা মাসুদ এর সাহসী সুন্দর প্রকাশকে আমি সাধুবাদ জানাই।
বন্ধু তুমি দীর্ঘজীবী হও আরও সুন্দর সুন্দর কর্ম সম্পাদন করো, তোমার শুভ জন্মদিনে এই অকৃত্রিম শুভকামনা ও নিরন্তর ভালোবাসা রইলো আমার।