মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

রেজাউল ইসলাম হাসুর কবিতাগুচ্ছ

মুগ্ধতা.কম

২৭ জুন, ২০২০ , ৮:২৩ অপরাহ্ণ

রেজাউল ইসলাম হাসুর কবিতাগুচ্ছ

বিবিধ কান্না সাঁতরে

বিবিধ কান্না সাঁতরে

পার হচ্ছে জানুয়ারি… ফেব্রুয়ারি…মার্চ…

তারপর দীর্ঘ এপ্রিল!

 

এপ্রিল মানে মুছে যাওয়া বিপুল বিকেল।

মার্চের শ্লেটে লিখে যাওয়া তোমার অন্তিম ইশারা।

ফেব্রুয়ারির নৈঃশব্দে সেলাই করা নীল শার্ট

অথবা জানুয়ারির আকাশে শাদা কামিজের ফরফর হাওয়া,

কোনো অযাচিত করলারঙ!

 

করলা রঙে ডুবছে জীবনজোনাক।

করুকফুল ঝরছে বেবুনের বনে।

বিবিধ ভঙ্গির ভেতর-

কেবল রঙের রিহার্সাল

 

দূতহীন

দ্যুতিহীন…

তাঁবু

আমি কোনো এক নির্জনতম তাঁবু,

তোমাকে আমার সুনসানে স্বাগত;

বিবিধি অ্যাজমাক্রান্ত মনোগহন,

থাক না। হে অনুরাগের আঙুলাগত—

 

রাস উৎসবে আষাঢ় শরীরে এসো,

আগুনের মদে দেবতারা বুদবুদ;

বিবাদে-বিষাদে ফুর্তি ফুড়িয়ে গেলে

ভেবো না আমাকে আগুনের দেবদূত;

 

আয়নার মাঝে তোমাকে তাকাও—দেখো,

ভষ্মের ফুলে সুঘ্রান অভ্যাগত;

এই তাঁবু ছেড়ে কোত্থাও যাবো না,

তোমাকে আমার সুনসানে স্বাগত।

আমিষ

মেঘাভিঘাতের রেলিঙ বেয়ে

চুইয়ে পড়ছে ঝিলিক,

অদম্য রক্তাভ,

নারকেল পাতায় ব্যালেরিনার ঝর্ণা;

 

ছুরি ও সাঁতার

তুমুল হলে

বাতাসের বাঁধন

ছিঁড়ে ছিঁড়ে

উড়ুক্কু বেলকোনি,

দরজা-জানালা;

 

দম ও ডুমরুর বাগান

ভিজে ভিজে আমিষ।

পাতারাও একদিন

পাতা :  শীতের জরায়ুতে আমাদের বিচ্ছেদ বেড়ে ওঠে বিবিধ রঙের সঙ্গে।

রঙ : গাছেরা বোধ হয় জানে না পাতাদের নিনাদ।

হাওয়া : কিন্তু পাতারা ঠিক বুঝে নেবে ধুলোদের ধ্যান।

পাতা : কুয়াশাকুহক হেঁটে—যেসব দিবস—গানের ক্লাসে এসে ভুলে যায় স্বরলিপি—সেসব দুপুরের বিষোদগার শুনতে শুনতে আমরা ঝরে পড়ি হাওয়াদের শ্বাসে—ধুলোদের ধ্যানে।

রঙ : গাছেরা পাতার শোকে কেনো তাকিয়ে থাকে ফাল্গুনের চোখে?

ধুলো : মর্মরে পাতারাও একদিন শিখে যাবে—মরুর প্রান্তরে কীভাবে খুঁজে নিতে হয় রঙিন গন্তব্য।

কুরুক ফুলের বন

প্রবল প্রতিকূলতা উপচে পড়ছে

ব্যালেরিনার প্রান্তরে।

 

পাখিদিনের স্বপ্ন

কোয়ারেন্টিনে থাকা

ক্যালেন্ডারের পাতা।

 

নিঃসঙ্গ দিনতারিখগুলো

নিঃশব্দ ঝুলছে বিকেলের রেলিঙে।

বিপুল আঙুল খসে

ঝরছে ঘাসের ক্রোন্দন।

 

দূরে কোথাও-

চন্দনের ফুলকি ওড়ছে,

বড়ই পাতায় শিদ্ধ হচ্ছে জল;

 

অথবা

 

নিকটতম অন্তরীণ ঘেঁসে

কাঁপছে কচি কচি পাতা,

জোনাকজঙ্গল!

 

সুদীর্ঘ শবযাত্রা শেষে

চুম্বন গৃহী হলে

হেসে উঠতে পারে

 

সম্ভাব্য কুরুক ফুলের বন…

অন্ধ

অনারোগ্য দিনের দীর্ঘ কড়িডোরে হাঁটছে

কোনো এক অনন্তর অন্ধ।

ঈশ্বরের ইচ্ছায় যে অন্ধ হয়েছিলো

অমৃতের জঙ্গলে

একটি জ্বাজল্যমান পতঙ্গ দেখে।

পতঙ্গ

নতজানু পৃথিবী থেকে

উদগত পতঙ্গ

বেলে মাটির সুঁড়ঙ্গ ভেঙে

খোঁজে কাঠবাদামের বন,

 

থোকা থোকা জামরুলের লাল;

 

আতরকালে,

আয়ুষ্মান হতে চায়

কতিপয় আগুনের ডানা!

ডিম্বাকৃতির ছায়াজাত

আমরা কোনো এক ব্যাঞ্জণা ফসকে বেড়াচ্ছি

আঙুলের পর আঙুল পাড়ি দিয়ে

অনাদিকাল।

 

কান্নার কালিতে

তুমি লিখে যাচ্ছো

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ড্যাফিনেশন।

 

এরিস্টটলের সমাজব্যাগে অবরুদ্ধ

আমাদের ইহকাল-পরকাল।

অযাচিত রোদের ফ্লাশে

পুড়ে যাচ্ছে

গান ও গন্ধম।

আয়নায় পৃথিবীকে তুলে ধরলে

সমতল-ছায়া বোধ হয়।

মূলত—আমরা ডিম্বাকৃতির ছায়াজাত

দৌড়

দৌড় জানো না বলেও

দৌড়াচ্ছো।

 

তবু

দৌড়ের ঘোরে ডুবছে

তোমার বেড়ি পড়া ঝিলিক।

 

তোমার মেঘেরা

পাখিকালের কাঙ্ক্ষায়

সান্ধ্য পালকে লুকোচ্ছে

প্রাচীন প্রদাহ।

 

পথ হারানো গন্তব্য

প্রপাতের মতো পথে পথে ভাসছে,

দূতহীন

দ্যুতিহীন

সম্ভাব্য সৈকত ফিরছে

ফিরিয়ে দিতে

সেসব লবণ ও অন্তরের আবর্জনা

 

তোমার রেডিমেড ছায়া,

রেখাময় শরীর

ফিরতে চেয়েছিলে যেসব অনির্ণীত ঋতু থেকে।

 

লেখক : তরুণ সাহিত্যিক। 
জন্ম : রংপুর, ১৯৮৭সাল।

প্রকাশিত বই দুইটা। 
এক. ওকাবোকা তেলাপোকা (২০১৬) -শিশুতোষ 
দুই. এলিয়েনের দেশ পেরিয়ে (২০১৭)-শিশুতোষ।