মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

রেজাউল ইসলাম হাসুর চারটি কবিতা

মুগ্ধতা.কম

২৭ জুন, ২০২০ , ৮:২৩ অপরাহ্ণ

রেজাউল ইসলাম হাসুর চারটি কবিতা

একা থাকার দিনগুলিতে

অবশেষে

নৈঃশব্দ্যের ঋতুতেই ফিরতে হলো আমাদের।

 

দরজা-জানালা বন্ধের নোটিশ কি পৌঁছেছে ঘরে ঘরে?

 

আমাকে বিশ্বাস করো না,

অবিশ্বাসকে দয়া করো,

আর করুণা করো।

 

যাতে তাদের ঠোঁটের মাঝখানে গড়ে উঠে

কোয়ারেন্টাইন দেয়াল!

 

প্রত্যেক জন্মই যেন জন্মগতভাবে একা

এবং আমিও।

 

একা থাকার কৌশল ফাঁস হবার পরেও কি

নিঃসঙ্গতার ভয় দেখাবে আমাকে…

 

আজ আমার একা থাকার দিনগুলিতে

শুধু তোমাকে নিয়ে ত্রস্ততা,

তুমি কি একা থাকতে পারবে?

 

 

কারণ তুমি বাঙালি

বাঙালি,

প্রস্তরকাল থেকে তুমি মরতে শিখেছো;

বায়ান্নে তুমি মরেছো কৃষ্ণচূড়ার মতো।

উনসত্তরে তুমি মরেছে প্রেমিকের মতো।

একাত্তরে তুমি মরেছো বীরের মতো।

ছিয়াত্তরে তুমি মরেছো দুর্ভিক্ষের মতো।

 

মরে যাবার জন্যই তুমি জন্মেছো।

 

এটা তোমার জন্মগত অধিকার।

এটা তোমার সাংবিধানিক অধিকার।

 

তুমি কি সংবিধান পড়োনি?

 

বাড়িতে একটা সংবিধান রেখো

যাতে তুমি কোয়ারেন্টাইন মানে কী বুঝতে পারো।

বুকপকেটে একটা সংবিধান রেখো

যাতে তুমি ক্ষুধার যন্ত্রণা কী বুঝতে পারো।

 

আটাশিতে তুমি জলোচ্ছ্বাসে ডুবে মরেছো

একানব্বইয়ে তুমি বুলেটের স্বৈরাচারীতায় মরেছো।

 

মিছিলে মরেছো তুমি।

সমাবেশে মরেছো তুমি।

হরতালে মরেছো তুমি।

ধর্মঘটে মরেছো তুমি।

 

মরে যাবার জন্যই তুমি জন্মেছো

 

কারণ তোমার অপরাধ তুমি বাঙালি।

কারণ তুমি গরীব গার্মেন্টস শ্রমিক।

কারণ তুমি ছা-পোষা মুচিওয়ালা।

কারণ তুমি দু পয়সার বাদামওয়ালা।

কারণ তুমি সামান্য রিক্সাচালক।

কারণ তুমি ক্ষুধার্ত চা বিক্রেতা।

 

 

ইয়াম

সমূহ সর্বনাম উড়ে যাচ্ছে মৃত পালকের মতো কোনো এক বেগানা দুঃখের ঋতুতে। কতোটা দূরে গেলে দূরত্ব একটা ফ্রেশ নিঃশ্বাস ফেলবে, জানি না। তবু, চলো দূরে চলে যাই। আমাদের গ্রামের নাম পাল্টে রাখা হয়েছে ইয়াম। আমরা এখন প্রাচীন ইয়ামের নাগরিক। এখানে আমি রোলান্ড টরে আর তুমি ইমোট সিডল। আমাদের কখনো দেখা হবে না, কথা হবে না। কোনো একদিন কেবল মৃত্যুর পর পরস্পর জানতে পারবো- ভালোবাসাই অমর, মহামারি নয়।

 

 

ফের যদি দেখা হয়

ফের যদি দেখা হয় করোনার শেষে

ক্লেদাক্ত! রক্তাক্ত! বিশ্বাস এসে-

থামাবে কি হৃদয়ের হাঁচি, কাশি, জর

আলোতে ডাকবে কি অন্তরস্বর?

 

কালচে পাতার চোখে ঢালবে কি রঙ,

চুম্বনে লীন হবে ওষ্ঠের জঙ?

আঁধারে জ্বলবে কি স্বপ্নের মোম,

দহনের ব্যকুলতা, আকাঙ্খাক্রম?

 

কফি থেকে উঠবে কি গল্পের ধোঁয়া,

অবয়বে জাগবে কি শিহরণ-ছোঁয়া?

সিক্ত কাপড়ে ফের বেলকোনি দড়ি

ভরবে, দুলবে তাতে বাতাসের তরী?

 

অফিস গমনকালে ভুলে যাবে নিতে

দরকারি ডকুমেন্ট, চিরুনি বা ফিতে?

পথ ভুলে যাওয়া কি পথ পাবে এসে

ফের যদি দেখা হয় করোনার শেষে?

 

লেখক : তরুণ সাহিত্যিক। প্রকাশিত বই দুইটা। এক. ওকাবোকা তেলাপোকা (২০১৬) -শিশুতোষ ও এলিয়েনের দেশ পেরিয়ে