মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

রেজাউল ইসলাম হাসুর ছড়াগুচ্ছ

মুগ্ধতা.কম

২৭ জুন, ২০২০ , ৮:২৩ অপরাহ্ণ

স্যার—স্যার, সরি স্যার

স্যার—স্যার, সরি স্যার,

সালামটা দিতে বুঝি হয়ে গেলো দেরি স্যার।

জাপানি রোবট নই, ইনফ্যাক্ট মানুষ তো, ডন্ট অ্যাম লেজি স্যার।

হোয়াই ইউ ক্রেজি, স্যার?

স্যার—স্যার, সরি স্যার;

জাপানি রোবট নই, ইনফ্যাক্ট মানুষ তো, আর কতো পারি স্যার!

 

সকাল সে ছয়টায় চোখমুখ ঘষেটশে তড়িঘড়ি ব্রাশ করি,

ফ্রেশ হই, দুটো রুটি ডাল খেয়ে আল্লার নাম জঁপে অফিসের রোড ধরি।

বাসে উঠে গাদাগাদি, বাদাবাদি, রাস্তার জ্যাম যেন জ্যাম নয়, সিরাতের পুল,

পাড় হতে ঘেমে যায়, ভিজে যায়, ফ্রেশনেস মুছে যায়, ক্লান্ত দেহ যেন ভাঙা মাস্তুল।

 

ইচ্ছের পায়ে বেড়ি, ক্যামনে ক্যামনে যেন ঘটে যায় এইসব কিম্ভুতকিমাকার,

লেট হলেই লাল কালি কঠোর সে কালিমা গায়ে লেপে দিবেন না দয়া করে আর।

স্যার—স্যার, সরি স্যার;

জাপানি রোবট নই, ইনফ্যাক্ট মানুষ তো, আর কতো পারি স্যার!

 

জ্বি স্যার, গতরাত একটায় কল দিয়ে রেসপন্স পান নাই,

সরি স্যার, বিষয়টা—চার্জ দিতে মন নাই—ঘুমঘোরে প্রান নাই—

ইনফ্যাক্ট জ্ঞান নাই।

তাড়াহুড়ো করতেই ফোনটাও ছেড়েছুড়ে এসেছি বোধ হয়,

স্যার—স্যার, সরি স্যার, এক রতি মিথ্যে না, সে কি হিম্মত হয়!

 

হাদাগাধা—বোকাসোকা—গবেট যা—কিছু যদি থাকে আর,

সব অ্যাডজেক্টিভে বিশেষত করুন না—কান মলে ধরুন না—ধরুন না, স্যার।

স্যার—স্যার, সরি স্যার;

জাপানি রোবট নই, ইনফ্যাক্ট মানুষ তো, আর কতো পারি স্যার!

 

গালিমালি—ঝাড়িবাড়ি যা আছে দেন স্যার,

আমাদের ঘামে ভেজা অর্জিত মুনাফাটা মাস শেষে মাইনেতে নেন স্যার।

আমাদের ভুল হয়—আপনাগো মিসটেক, আমাদের ভীতি আছে—কর্মের  রীতি আছে;

আপনাগো ভীতি নাই—কর্মের রীতি নাই—মনগড়া শোষণের নীতি আছে—

ভূতভাত গীতি আছে।

 

থাক না, বলুন না কী খাবেন—মাটন—চিকেনকারি—ফিস আর অমলেট,

সাথে দধিমিষ্টি—কোল ড্রিংকস—মিনারেল—চকলেট—কাটলেট

সন্দেশ—সিঙ্গাড়া—চাকফি—সমুচা—স্যান্ডউইজ—বার্গার,

যা চাবেন এসে যাবে, ডন্ট অরি—জানবে না কাকপাখি—কুত্তা বা জানোয়ার!

 

লিস্টিটা বড় হলে হোক না—হবে না তো এইসব নামে কোনো বিল কিবা ভাউচার,

এইটুকু বিশ্বাস করতে পারেন স্যার।

স্যার—স্যার, সরি স্যার;

জাপানি রোবট নই, ইনফ্যাক্ট মানুষ তো, আর কতো পারি স্যার!

 

ফ্রাইডে অফিস আছে, ডন্ট অরি—ওকে স্যার,

অফিসটা আগে স্যার , বউ বেবি আফটার, এসে যাবো, এমন কি এ আর।

এভাবেই খেটেখুটে মরে গেলে কাঁদবো না শোকে, স্যার।

 

নো নো, নো স্যার, কিছু মনে করি নাই, আপনার কাজ মানে অফিসের কাজই তো,

বাজারের ব্যাগ আনা—স্কুল ছুটি হলে বাবুটার ঘানি টানা—

ব্যাংকিং—এনাদার করে যাই রোজই তো।

 

ছিঃ ছিঃ স্যার! আমি আছি ক্রীতদাস, টেনশন কিছু নাই,

পারলে এ জীবনটা আপনাগো জন্যে কোরবানি দিতে কভু পিছু নাই।

 

লন্ডিং—জুতো কালি—চুলছাঁট—শপিং বা দাঁড়িটাও কামে দেবো,

বিদ্যুৎ চলে গেলে পাতপাখা ডানে আর বামে দেবো।

আপনি তো ঈশ্বর—ভগবান—দেবদূত—যা মহান সব স্যার,

আশা করি, ফারদার ভুল আর হবে না, সাডেনলি হয়ে  গেলে এসকিউজ মি, স্যার!

 

স্যার—স্যার, সরি স্যার;

জাপানি রোবট নই, ইনফ্যাক্ট মানুষ তো, আর কতো পারি স্যার!

 

জাদুকর বুমেরাং

ফুঁ দিলেই খালি হাত ভরে যায় কতো কিসে,

চকলেট—চানাচুর—বিস্কুট—কিশমিশে।

বার্গার—ফিশকারি—পিৎজা ও ললিপপে,

মানা নেই যত খুশি খাওদাও গপগপে।

 

ফুঁ দিলেই ধুকপুক বুক করে ধরফর,

স্কেল পাখি হয়ে উড়ে যায় ফরফর।

ফুঁ দিলেই ফুল ফোটে, ফুল—পাখি পলকেই,

লা-পাত্তা হয়ে যায় এক ফুঁর ঝলকেই।

 

জাদুর বাক্সটাও ফুঁ দিলেই খুলে যায়,

সাপ আর বিল্লিরা সাঁতরাতে পুলে যায়।

ফুঁ দিয়েই আস্ত সে লোকটার গলা দিয়ে

চকচকে তলোয়ার সোজা দেয় চালিয়ে।

 

দেহ থেকে মস্তক হয়ে যায় ডিভিশন,

টুগেদার হয়ে য়ায় ফুঁ দিলেই রিভিশন।

অদ্ভত কতোসব টাশকি তো লাগবেই,

ফুঁ দিলেই ভয়ে কেউ ই-গতিতে ভাগবেই।

 

চোখ দুটো বড়সড়—নাটাগুলো লাল তার,

বাদশাহী গোঁফ আছে ডনছাঁট চুল তার।

ফুঁ দিয়েই রোজগার, নয় কোনো ভুঙভাং,

লোকটা এ এলাকার জাদুকর বুমেরাং।

 

ভূতের দাঁত ছয়শ

ভূতের দাঁত কয় শ,

বলতো তো দেখি—রয়সো?

রয়সো ভাবে—কয় কী!

লোকটা পাগল নয় কি?

 

লোকটা হাসে—হিঃ হিঃ,

রয়সো ভাবে—হলো কী!

ভূতের দাঁত ছয় শ,

আঁৎকে উঠে রয়সো!

 

লোকটা এসব কয় কী,

এত্ত দাঁত হয় কী!

লোকটা বলে—রয় শোন,

একটা দাঁতই নয় মণ!

 

ভারি এবং মজবুত,

দেখতে সে কী অদ্ভুত!

বিশ্রী আর কয়লাটে,

মাংস চাবায় ময়লাটে।

 

হাড় করে দেয় গুঁড়ো,

কয় কী এসব বুড়ো!

লোহা—তামা হলে তো,

কথা নেই—গলে তো

 

জল হয়ে ঝরবে,

হাড়গোড় খেতে খালি

কটমট করবে!

 

লোক

ডানে লোক, বায়ে লোক,

টাউন—সিটি—গাঁয়ে লোক।

আগে লোক, পাছে লোক,

দূরে লোক, কাছে লোক।

 

শাদা লোক, কালো লোক,

আলো লোক, ভালো লোক,

ফুল লোক, আধা লোক,

আর সিধাসাদা লোক।

 

লেজি লোক, বেজি লোক,

মেকি লোক, ক্রেজি লোক।

দেশি লোক, বেশি লোক,

দূর ভিনদেশি লোক।

 

বেঁটে লোক, মেটে লোক,

দাঁত খিটমিটে লোক।

উঁচু লোক, নীচু লোক,

ফাঁকিবাজ—বিচু লোক।

 

সুখি লোক, দুখি লোক,

পরমুখোমুখি লোক।

দ্বীনি লোক, ঘৃণি লোক,

বড় লোক, মিনি লোক।

 

বোকা লোক, শোকা লোক,

ভোতা লোক, চোখা লোক।

জ্ঞানী লোক, মানি লোক,

দানি—ইনছানি লোক।

 

কতো লোক, শতো লোক,

তবু মনমতো লোক—

লোক নেই, লোক আছে,

যেতে চাই তার কাছে।

 

এনআইডি

ঘরে যান—ঘরে যান,

অতিমারি ছড়াছড়ি—যদি তাতে মরে যান;

তার চেয়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে সোজা ঘরে যান।

 

কটা দিন কুয়োব্যাঙ—ঘরকুনো হয়ে যান,

অবরুদ্ধতা সয়ে যান।

অনাহারে ঘরে ঘরে ক্ষয়ে যান,

মর্মরি রোল তুলে ঝরে যান।

 

আরে আরে মাস্ক নেই—পিপি নেই—সরে যান—সরে যান,

ধুর মিয়া! বোঝেন না—ঘরে যান—ঘরে যান।

 

আমগো তো ঘর নেই—অতিমারি ডর নাই ,

হাঁচি নাই—কাশি নাই—গলা ব্যথা-জ্বর নাই।

ওগ নাই—শোগ নাই,  আমগো তো ইস্পাত পাথরের জান,

রাগ নাই—ক্ষোভ নাই—নাই সম্মান।

 

আকাশটা ছাদ আর ফুটফাত ঘর,

খুড়েকাড়ে খাইদাই উড়ি ফরফর।

মরলে মরবো নি—তর তাতে কী,

আমগোর মৃত্যুতে কিছু হয় কি!

আমগো তো কবি না—বরকত—শফি না,

সিনেমার ববিতা, নাটকের অপি না।

নামি দামি শিল্পী—আমলা বা নেতা না,

অ্যাথলেট—ক্রিকেটার—কোনো ট্রফি জেতা না।

 

র‌্যাব—পুলিশ বা ডাক্তার—তাও না,

ধুত্তেরি! অই মিয়া—যাও না—যাও না।

আমগোর মৃত্যু খবরেও কয় না,

রাষ্ট্রীয় সম্মানে দাফনও হয় না।

 

পেপারেও ছাপে না,

শোকে তাপে কারো মন অ্যাকডুকু কাঁপে না।

আমগোর বিপদে কেউ ডরে চাপে না।

 

বিউগেলও সকরুণ সুর তুলে বাজে না,

আমগো কুত্তা—শেয়াল, লাগি কোনো কাজে না—

লোক আজেবাজে না!

 

পরিচয় দেওয়ার মতো আছে খালি এনআইডি,

তাও লয়ে গ্যাচে কাল আসি সিআইডি।

কতো ঘাত সইছি কঙ্কালা এ পিডে,

মরলে মরবো নি মহামারি কোভিডে!

 

 

রেজাউল ইসলাম হাসু
জন্ম : ১৯৮৭ সাল, রংপুর।

প্রকাশিত বই দুইটা।
এক. ওকাবোকা তেলাপোকা (২০১৬) -শিশুতোষ
দুই. এলিয়েনের দেশ পেরিয়ে (২০১৭)-শিশুতোষ।