রোযার নিয়ত নিয়ে সমাজে একটা ভুল প্রচলন আছে। রোযার নিয়ত মুখে, প্রচলিত আরবি নিয়ত বলতে হবে অন্যথায় নাকি রোযা হবে না। তাদের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। অবশ্য রোযার নিয়ত করা ফরয, তবে মুখে বলা ফরয নয়। নিয়তের সম্পর্ক অন্তরের সাথে, অন্তরে রোযার সংকল্প করাই যথেষ্ট ,যেমন মনে মনে এ সংকল্প করবেন, আমি আল্লাহর সন্তু’ষ্টির জন্যই আগামীকালের রোযা রাখছি। হাদীস শরীফে আছে, ‘সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল”। সাহারি খেলেই তো স্বাভাবিক নিয়াত হয়ে যায়।
অনেকে আবার সাহারি না খাওয়ার অজুহাতে রোযা রাখেন না। যদি বলা হয় ভাই আজ রোযা নেই কেন ? : সাহারি খেতে পারিনি তাই। অবশ্যই রোযার সাথে সাহারির সম্পর্ক আছে। তবে রোযা হওয়ার জন্য সাহারি খাওয়া শর্ত নয়। সাহারি খাওয়া সুন্নত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
تسحروا فإن في السحور بركة
‘তোমরা সাহারি খাও। কেননা, সাহারিতে বরকত রয়েছে।’-সহীহ মুসলিম ১/৩৫০
অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, ‘সাহারি খাওয়া বরকতপূর্ণ কাজ। সুতরাং তোমরা তা পরিত্যাগ করো না। এক ঢোক পানি হলেও খেয়ে নাও । কারণ যারা সাহারি খায় আল্লাহ তাআলা তাদের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা তাদের জন্য রহমতের দুআ করেন।’ -মুসনাদে আহমদ ৩/১২; )
সুতরাং সাহারি না খাওয়ার অজুহাতে রোযা না করলে গোনাহগার হবে।
কিছু লোকের ভুল ধারণা, নিজ মুখের লালা বা থুথু গলাধঃকরণ করলে রোযা নষ্ট হয়। শরিয়াতে এর কোন ভিত্তি নেই। এটি স্বাভাবিক একটি শারীরিক প্রক্রিয়া, এতে অবশ্যই রোজা ভাঙবে না, বিধায় যত্রতত্র থুথু ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবেন না। বেশি থুথু আসলে আপনি মেসওয়াক করতে পারেন। এতে থুথু কম আসবে।
গাছের কাঁচা ডাল দ্বারা বা পানিতে ভেজানো ডাল দ্বারাও মিসওয়াক করা জায়েয।-(মুসান্নাফে আ:রা:৪/২০২ )
অনেক রোযাদার বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে গিয়ে ইফতার করতে বিলম্ব করেন বা আযানের অপেক্ষা করে থাকেন যা শরিয়তে অপছন্দনীয়। ইফতার করতে শরিয়াহ সূর্যাস্তের সাথে সাথে নির্দেশ দিয়েছেন। আযান হোক বা না হোক। সাহাবায়ে কেরাম দ্রুত ইফতার করতেন এবং সাহারি বিলম্বে খেতেন ।
বিধায় দেরী না করে সূর্যাস্তের সাথে সাথেই ইফতার করা মুস্তাহাব। হাদীস শরীফে আছে,
لا يزال الناس بخير ما عجلوا الفطر.
যতদিন মানুষ দেরি না করে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করবে ততদিন তারা কল্যাণের উপর থাকবে।
অনেকের মধ্যে আরেকটি বিযয় দেখা য়ায়, সর্ব প্রথম ইফতারটা লবন বা পানি দিয়ে করেন। এখানেও একটা শরিয়াতের পছন্দ- অপছন্দের ব্যাপার রয়েছে ।
খেজুর দ্বারা ইফতার করা মুস্তাহাব। খেজুর না পেলে পানি দ্বারা ইফতার শুরু করবেন।
من وجد تمرا فليفطر عليه ومن لا يفطر على ماء فإن الماء طهور
আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যার কাছে খেজুর আছে সে খেজুর দ্বারা ইফতার করবে। খেজুর না পেলে পানি দ্বারা ইফতার করবে। কেননা পানি হল পবিত্র।’ -সুনানে তিরমিযী হাদীস : ৬৯০)
অনেকে মনে করে রক্ত,পুঁজ-পানি বের হলে বা বমি আসলে রোযা নষ্ট হয়ে যায়। এটাও একটি ভুল প্রচলন। শরিয়তের মূলনীতি হলো ,শরীর থেকে কোনো কিছু বের হলে অযু করতে হয় এবং শরীরের স্বাভাবিক রাস্তা দিয়ে পেটে কোন কিছু প্রবেশ করলে রোযা নষ্ট হয়। তবে বীর্যপাতের প্রসঙ্গটি ভিন্ন।-সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৪/২৬১)
তাই রক্ত, পূঁজ, পানি বের হলে বা রক্ত দানে অযু নষ্ট হবে, রোযা নষ্ট হবে না। অনিচ্ছাকৃত বমি হলে (এমনকি মুখ ভরে হলেও) রোযা ভাঙবে না। তেমনি বমি মুখে এসে নিজে নিজেই ভেতরে চলে গেলেও রোযা ভাঙবে না।-জামে তিরমিযী ১/১৫৩,
ইনজিক্শনে অযু নষ্ট হয় না এবং স্বাভাবিক রাস্তা দিয়ে পেটে কোন কিছু প্রবেশ না হওয়ার কারণে রোযারও সমস্যা নেই ।
অনেক কে দেখা যায়, রোযা স্মরণ না থাকায় ভুলে কোন কিছু খেয়ে ফেলে এবং পরে রোযাটা নষ্ট করে । এমনটা কখনো করবেন না। এতে কোন সমস্যা নেই। এমনকি কেউ যদি ভুলে পেট ভরেও খায়। তবে রোযা স্মরণ হওয়ামাত্রই পানাহার ছেড়ে দিতে হবে। হাদীস শরীফে এসেছে-
من نسي وهو صائم فأكل أو شرب فليتم صومه، فإنما أطعمه الله وسقاه
যে ব্যক্তি ভুলে আহার করল বা পান করল সে যেন তার রোযা পূর্ণ করে। কারণ আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন।-সহীহ মুসলিম ১/২০২
আল্লাহ তাআলা কবুল করুন ।
আয়াতুল্লাহ রাসেল
মুফতি ও মুহাদ্দিস
জামিয়া গাফুরিয়া ইসলামপুর, মোমেনশাহী।
প্রতিদিনের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি জানতে ক্লিক করুন এখানে