মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

করোনা সময় অস্ট্রেলিয়া: লকডাউন ও শিথিলতা

তাজনিন মেরিন লোপা

১৬ মে, ২০২০ , ৮:১৭ অপরাহ্ণ

করোনার সময় অস্ট্রেলিয়া-তাজনিন মেরিন লোপা

এখন পর্যন্ত আরমিডেল নিরাপদে আছে। দুটোর পরে আর নতুন কোন পজিটিভ পাওয়া যায়নি। অনেককিছুই একটু শীথিল করে দিলো। কোভিড-১৯ এর জন্য মোবাইল অ্যাপস্ বানালো। যেখানে কোভিড-১৯ উপস্থিতি নির্ণয় করাসহ আরো নানান সহযোগিতা পাওয়া যাবে। ১১ মে এর পর থেকে একদিনের জন্য বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে। যাতে করে একদিনে একই সময়ে কম সংখ্যক বাচ্চারা উপস্থিত থাকে। ২৫ মের মধ্যে সকল স্কুল খুলে দেয়ার কথা ভাবছে নিউ সাউথ ওয়েলস গভঃ। তবে বেশিরভাগ মানুষ, যে কাজগুলো সম্ভব, তারা বাসা থেকেই অফিস করবে।

রাজধানী ক্যানবেরা প্রথম দিক থেকেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। গত দুই মাসে নতুন কোন সংক্রমণ হয়নি। এখানে এখন শরৎকাল। খুব বেশি ঠাণ্ডা এখনও পড়েনি। বাইরে বেড়ানোর জন্য খুব ভালো একটা সময়। ক্যানবেরার পরিচিত, বন্ধু-বান্ধবরা তাই বাইরে বেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্কুল এখনও খোলেনি। সব অফিস খোলেনি। আর সবখানে সোস্যাল ডিসটেন্স মেনে চলছে সবাই। বাইরে বের হয়ে দেখি রাস্তায় কতশত গাড়ি; প্রামে, স্ট্রলারে করে বাচ্চাদের নিয়ে বেড়িয়েছে, কেউ আবার পরিবারের সবাই সাইকেল চালাচ্ছে; কেউ হাঁটতে বেড়িয়েছে।

মুসলিমদের রমজান মাস শুরু হয়ে গেছে। প্রাইম মিনিস্টার সবার উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা জানালেন। আর বললেন সবাই যেন বাড়িতে বাড়িতে তাদের রমজান পালন করেন। সোস্যাল গ্যাদারিং না করার জন্য। এই ইস্টারে সোস্যাল গ্যাদারিং সামলানো নিয়ে বেশ চিন্তায় ছিলো সবাই। তবে সবাই সবজায়গায় বেশ ভালো মেনে চলেছে । এক বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিল, তখন জানলাম, শুধু তাজমানিয়াতে দুটো পরিবার জরিমানা দিয়েছে । তিনজন মানুষের এক পরিবারে দুজন অতিথি আসলে; প্রতিবেশি একজন সাথে সাথে পুলিশকে খবর দেয়।

পুলিশ এসে সবার জন্য পাঁচ হাজার ডলার জরিমানা করে । এর মধ্যে একজন পনেরো বছর বয়সের নিচে ছিল বলে সবাই অনেক অনুরোধ করে। কিন্তু না পুলিশের বক্তব্য ছিল, বয়স কম বলেই তো ওকে আরও ভালো করে আইন-কানুন, জানতে এবং শিখতে হবে। আমরাও সোস্যাল ডিসটেন্স মেনেই চলছি। ছোট জায়গা, ছোট কমিউনিটি বলে আরমিডেলে বাংলাদেশীদের যোগাযোগ ভালো।

উৎসবের, আয়োজনের কোন ঘাটতি নেই। এই রমজানে সেটা আরও বেড়ে যেত। তবে এ বছর সবাই সব মেনে বাসায় বাসায় দরজায় দাঁড়িয়ে ইফতার দিয়ে, খোঁজ নেয়া হচ্ছে। মসজিদে ইফতার রেখে দিয়ে সবাইকে বলা হচ্ছে, নিয়ে যাওয়ার জন্য। পরিচিত একজনের খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম। দরজার সামনে দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলছি। আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। পুলিশ না এসে পড়ে! যাক সেরকম কিছু হয়নি। সংক্রমণ থেকে যেমন বাঁচতে হবে; তেমন যারা বেঁচে আছি সামাজিকতাও রক্ষা করতে হবে।

শপিংমলগুলোতে প্রযোজনীয় কয়েকটা সুপারস্টোর প্রথম থেকেই খোলা। ফ্যাশন হাউজ, খাবারের দোকান, অন্যান্য দোকান বন্ধ। কে এফ সি, ম্যাকডোনাল্ড, ডমিনোজ টাইপ শপে শুধু ড্রাইভ থ্রু খোলা। মানে গাড়ি ড্রাইভ করে অর্ডার দিয়ে, পে করে খাবার নিয়ে যাবে। কেউ নামবে না, ইন্টারেকশন হবে না। তাই নিরাপদ। এখনও তাই চলছে।

দেশে আমাদের সবাই। সেখানকার পরিস্থিতি শুনেই দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যাচ্ছি। কে কোথায় কী নিয়ন্ত্রণ করছে, তা কেউই বুঝতে পারছে না।  এখানে এরকম লকডাইনে ইস্টার পার হলো। সব ঠিক না হলে হয়তো ক্রিসমাসও চলে যাবে। কিন্তু আমাদের ঈদ পার হয় না। খুব খারাপ লাগে, আমরা বুঝি আসলেই পারি না।

এখানেও অনেক কিছুই হয়। কিন্তু তা বাড়াবাড়ির আগেই নিয়ন্ত্রণের চিন্তা আসে। সিডনিতে এক অজি ভদ্রলোক এশিয়ানদের দেখে বেশ গালিগালাজ করেছিল; এশিয়ানরাই নাকি কোভিড-১৯ নিয়ে এসেছে তাই। কিন্তু এই ঘটনার আর কোন ধরণের প্রভাব পড়েনি। এরকম আরও ঘটনা ঘটেছে অনেক জায়গাতেই। কিন্তু তারপরও এখানে কেউ অসুস্থ বোধ করলে নিজেই যাচ্ছেন টেস্ট করাতে।

আমাদের বাসার বিল্ডিং এরও একজন টেস্ট করালেন। নিজেই আমাদের জানালেন। এরপর নেগেটিভ আসলো। আর আমাদের দেশে কেউ কেউ পজিটিভ আসার পরেও লুকিয়ে রাখছেন। কেউ পালিয়ে যাচ্ছে। নিজের, নিজের আপনজন কারোও কথাই ভাবছি না আমরা। পরিবারের নাকি মান-সম্মান যাবে পজিটিভ জানলে। যেখানে জান নিয়ে টানাটানি সবার সেখানে হায়! আমরা মান-সম্মান নিয়ে কতটা চিন্তিত। এর দায়ভার হয়তো আমাদেরই। কখনোও আমরা একজন আরেকজনের জন্য জান-প্রাণ দিয়ে দেই; আবার কখনোও সামান্য কারণেই কোণঠাসা করে ফেলি।

বড় অদ্ভুত আমরা। ‍ঈদে বা প্রতিমাসে, বা প্রতিদিন আমাদের নতুন পোষাক পড়া নিয়ে আমরা যতো ভাবি; লেখাপড়া, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের ভাববার সময় কম। কিন্তু আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। অস্ট্রেলিয়াতে সরকার জুলাই পর্যন্ত লকডাউন শিথিলতাসহ, সকল প্রতিষ্ঠান খোলা, বন্ধ, ও অন্যান্য বিষয়ে বেশ গঠনমূলক পরিকল্পনা করেছে। এবং তা জনগণেকে জানিয়েছে।

প্রতিদিন নিজ নিজ স্টেটের প্রিমিয়ার ও সরকারি অন্যান্য ব্যক্তিরা সংবাদ সম্মেলনে তা নিয়ে কথা বলছেন। এরপরও এখানকার মানুষগুলো নিজে থেকে খুব সাবধান থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা বাংলাদেশে শুধু এগিয়েই যাচ্ছি; যাচ্ছি তো যাচ্ছি; কীসের দিকে কোন দিকে তা কে জানে?

 

চলবে

 

তাজনিন মেরিন লোপা

জন্ম রংপুরের এক সাহিত্যানুরাগী পরিবারে। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র, রংপুরের জনপ্রিয় মুখ। ’যুগের আলো’ পত্রিকায় নিয়মিত লেখক হিসেবে লিখেছেন ছড়া, কবিতা, সায়েন্স ফিকশন, ছোট গল্প, লিখেছেন কলাম। ঢাকায় ‘ছোটদের কাগজ’ এ লেখক হিসাবে সক্রিয় ছিলেন। শিশু-কিশোর সাহিত্য নিয়ে ২০১৯ একুশে বইমেলায় আত্মপ্রকাশ করছেন ‘ডাইনীর ফলবাগান’, ২০২০ এ ‘অস্ট্রেলিয়ার রূপকথা’ বই নিয়ে। নৃবিজ্ঞানের ছাত্রী হিসাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে  স্নাতক আর স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। বাংলাদেশে কলেরা হাসপাতালে সামাজিক গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন অনেকদিন। খুব সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল সরকার এর অনুদানে পরিচালিত ’হিপ্পি অস্ট্রেলিয়া’ নামে একটি সংস্থায় টিউটর হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। সংস্থাটি  মূলত তাদের নিজেদের কারিকুলামে কমিউনিটির ছোট শিশুদের মানসিক ও ইতিবাচক সামাজিক উন্নতির জন্য কাজ করে। বর্তমান নিবাস আরমিডেল, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া ।

 

তাজনিন মেরিন লোপা
Latest posts by তাজনিন মেরিন লোপা (see all)