মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

শপথ 

মুস্তাফিজ রহমান

২৪ ডিসেম্বর, ২০২২ , ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ

গল্প - শপথ

মজনুরে…. এ….এ……এ…… মজনু, কোনটে গেলু বাবা। এই আন্দার আইতোত মুই আর কোনটে উটকিবার যাও। সেই সাত বিয়ানায় একনা পন্তা মোকত দিয়া ব্যরে কইল, বাড়ি আসতে দেরি হইবে, য্যান চিন্তা না করো। দিন য্যায়া আইত হইল অ্যালাও দ্যাকা নাই। ছওয়াটাক ধরি আর পওচুন না। ও….. মুকুলের মাও মুকুলকি বাড়িত আলচে। 

 নাই আইসে যে, ছাওয়াগুলা যে এই রাইত বিরাইতে কোটে কোটে ব্যরায় আল্লায় জানে। দ্যাশোত বেলে গন্ডোগোল নাগছে। স্যাক মজিব্যার বেলে দেশটাক স্বাদিন কইরবার কতা কইছে। 

 আরে ওই তকনে তো মোর মাতা বিরবিরাওচে। বুক খ্যান মোচরে ওটোচে। কোটে যে গ্যাল ছওয়াটা।

আসপে আালা মজনুর মাও।গাবুর ব্যাটা তোমার, বিয়াও দেলে কাইলে ছওয়ার বাপ হইবে। উয়াক নিয়া ওতো চিন্তা করার দরকার নাই। সময় হইলে ঠিকে বড়ি আসপে। তোমরা বাড়ি য্যায়া শোত।

 নিন কি ধরে বইনো। ওয় ছারা মোর আর এই দুনিয়াত কায় আছে কওতো। ওয়েতো মোর আন্দার আইতের ন্যামপো। যাও আর একনা উকটি বারি যাও। মজনুরে….এ…..এ…..এ……।

নির্জন আধাঁর রাত। ঝিঝি পোকার ডাক ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছেনা। ধোরার পাড় যুব সংঘের ভিতরে থমথমে নিরবতা। দশ বার জন যুবক গোপন বৈঠকে বসেছে। নিরবতা ভেঙেছে কথা শুরু করলো মজনু

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষনেই আমরা ইঙ্গিত পেয়েছি কি করতে হবে। ২৫ মার্চ নিরীহ বাঙ্গালীর উপর নির্মম হত্যাযোগ্য চালিয়েছে হায়নারা। বিভিন্ন স্থানে একের পর এক হত্যাযগ্য চালিয়ে যাচ্ছে পাক বাহিনী। বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে  গতকাল ২৬ মার্চ চুড়ান্ত ঘোষণা এসেছে স্বাধীনতার। আমাদের মহান নেতাকে পাক বাহিনী গ্রেফতার করেছে। এ অবস্থায় আমাদের হাত গুটিয়ে বসে থাকলে হবে না। দেশ মাতাকে যে কোন মূল্যেই আমাদের স্বাধীন করতে হবে। আসুন সবাই হাতে হাত রেখে শপথ করি, যত দিন না আমরা আমাদের মাতৃভূমিকে শত্রু মুক্ত করতে পারছি ততদিন বাড়ি ফিরবো না।  জীবন দিয়ে হলেও দেশকে স্বাধীন করেই ছারবো ইনশা আল্লাহ। দুনিয়ার কোন বাধা আমাদের রুখতে পারবেনা।

বন্ধুগণ, গত কয়েকদিনে আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে রংপুরের বিভিন্ন এলাকার মানুষকে একত্রিত করেছি। আজ রাতেই আমরা নিসবেতগজ্ঞে ঘাঘট নদীর তীরে সমবেত হব।এবং সমন্বিতভাবে ক্যান্টোনমেন্ট ঘেরাও করে অস্ত্র লুট করব। দেশকে শত্রু মুক্ত করতে আমাদের এই অস্ত্র খুব প্রয়োজনমত।

রাতেই মজনুরা রওয়ানা হয়। সাথে নেয় বল্লম, খুনতি, শুরকি, দা, ছোড়া, কোদালের মত দেশি অস্ত্র। অন্ধকারে তাদের তেজদ্বীপ্ত শরীরে হিংস্রোতা খেলা করে। ভোরের আধো আলোতে তারা ঘাঘট তীরে পৌছায়। সেখানে তাদের মত আরও অনেক মুক্তিকামী মানুষ সমবেত হয়েছে। সবার হাতেই দেশীয় ব্যবহারিক অস্ত্র। কিছু আদিবাসীর হাতে তীর ধনুক। ভোরের আাবছা আলোয় আসলে মানুষের সংখ্যা কমেই মনে হচ্ছিলো। যতই আকাশ পরিষ্কার হচ্ছে ততই মানুষের ঢলও পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। দশ, বিশ, একশত, পাঁচশত, এক হাজার দশ হাজার এভাবে মানুষ বারতেই আছে। সূর্যের আলো ফুটবার আগেই ঘাঘট তীর জন সমুদ্রে পরিণত হয়েছে। সবার চোখে মুখে ক্রোধ ঝড়ে পরছে। সবার মুখেই একই বুলি বীর বাঙ্গালী অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর। 

 সমবেত জনতা সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের মত অগ্রসর হতে থাকে সেনা ছাউনির দিকে। সবার উদ্দেস্য একটাই ক্যান্টোনমেন্ট ঘেরাও করে অস্ত্র লুট করা। 

অগ্রসরমান জন সমুদ্র দেখে ভয়ে আতকে ওঠে সেনা সদস্যরা। সবাই দিক বিদিক ছুটতে শুরু করে। পাকিস্তানী সেনারা অস্ত্র তাক করে জনতার দিকে। নির্বিচারে মেশিন গান দিয়ে গুলি চালাতে থাকে বাঙ্গলীদের উপরে। প্রাগঐতিহাসিক আমলের অস্ত্র নিয়ে হায়নাদের কাছে পৌছানোর পূর্বেই তারা ঝাকে ঝাকে মাটিতে পরতে থাকে। মেশিন গানের বিকট শব্দে মানুষ দিশেহারা হয়ে যায়। পাখির মত মাটিতে ঝরতে থাকে মানুশের লাশ। আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠে আহত মানুষের প্রাণান্ত চিৎকারে। মানুষের রক্তে ঘাঘটের বুকে রক্তস্রোত নামে।

বেয়োনেট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে আহত মানুষের। মূহুর্তেই ঘাঘটের বিস্তির্ণ এলাকা পরিণত হয় হাজারো লাশের স্তুপে।

সূর্যের আলোয় যেন লেলিহান শিখা ঝরে পড়ে। বাহিরে তাকাতে পারেনা মজনুর মা। বুকের ভিতরটা প্রচন্ডভাবে মোচড় দিয়ে ওঠে। অসজ্য যন্ত্রনায় কাতরাতে থাকেন। নিজেকে খুব একা মনে হয়। চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে। ছেলের চিন্তায় সারা রাত দুচোখের পাতা এক করতে পারেন নি। যন্ত্রনায় ঢলে পরতে পরতে মুখ ফসকে বেরিয়ে আসে মজনুরে…..এ…….এ…….এ…….এ