আহমেদ অরণ্যের কবিতা যেন রাতের ঘুম জড়ানো চোখের ঘোর। এই ঘোর এমনই এক ঢুলুঢুলু স্বপ্নের জগতে নিয়ে যায় যেখানে কবিতা হয়ে ওঠে ব্যথার উপশম, আর ব্যথা হয়ে ওঠে ব্যথারই প্রতিশব্দ।
তার এইসব কবিতা পড়লে ধীরে ধীরে তলিয়ে যেতে থাকা যায় পার্থিব ও অপার্থিবতার মিশ্রণে গঠিত অন্য এক জগত সংসারে।
সব লেখকের আলাদা লেখার ঢং আছে। কবি আহমেদ অরণ্যর ক্ষেত্রে সেই নিজস্বতা আরও গাঢ়। তার কবিতা পড়লেই বলে দেওয়া যায় যে এটি আহমদ অরণ্যের কবিতা- যেখানে ঘুম আর ব্যথা মাখানো চোখ নিয়ে আধো স্বপ্নের জগতে ঘুরে বেড়ানো যায়। এখানেই কবির সার্থকতা।
সময়ের বিচারে যদি তার কবিতা নিয়ে বলতেই হয়, তাহলে সামান্য নেতিবাচকতার কথা না বললেই নয়। আর তা হলো কবির কবিতা পড়লে ভালো লাগা যেমন আবেশ তৈরি করে, তেমনি মাঝে মাঝে দুর্বোধ্যতা এসে সামান্য ছুঁয়ে দিয়ে যেতে চায়। আজ কবি আহমেদ অরণ্যর জন্মদিন। জন্মদিনে তার জন্য এবং তার কবিতার জন্য অজস্র ভালোবাসা।
আসুন আজকের আনন্দ-দিবসে ঘুরে আসি কবির জগৎ থেকে।
**
আহমেদ অরণ্য
আমার কবিতা-ভাবনা
.
কবিতার সাথে আমার প্রেমের গল্প।. ..
❑
কবিতাতো ঘোর। মায়ায় জড়ানো, নারী।
(কবিতার আসা যাওয়া একান্ত গোপন। নতুন প্রেমিক—প্রেমিকার মতো চুপি—চুপি সহস্র চোখের আন্তরালে) আমি বকা—ঝকা করি খুব, এই অসময়ে আসলি কেন? মধ্যরাত এখন। তাছাড়াও ক্লান্ত ইন্দ্রিয়গুলোকে একটু আরাম দিতে চাই। না, সে হট্টগোল করতে থাকে-মস্তিস্কে। চিৎকার করে বলে—ভালোবাসি। পিতার সর্বোচ্চ সম্মানে আখ্যায়িত করতে চায়—এই ধরায়। তার অপ্রকাশিত কথার চিত্রপট সাজিয়ে দিতে বলে, চশমার ভূমিকায়! . ..
আমি বোকা—সোকা মানুষ। কারও কথায় না বলতে পারি না। একাধিক নারীর প্রেমের প্রস্তাবেও না! আর তুমিতো ‘কবিতা’, বিশ্বসুন্দরীর খেতাবপ্রাপ্ত হুর। তোমাকে কী করে না বলি, বলো?
খুব রহস্যের ভিতর দিয়ে হেঁটে যাই। আর পথের কথা ভাবি। কত শত সহস্র চিৎকার, এবং মাটির মুখ, গড়াগড়ি দেয়—এই পথে।. ..
আমি আমার মায়ের কথা ভাবি। তিনি দ্যাখেন; শুভেচ্ছা, অভিনন্দন, মাখামাখি শেষে—একটি হরিণ ছানার, পালিয়ে যাওয়া দৃশ্য! কোনো—এক—কার্বনসন্ধ্যায়!
আমি কাঁদতে—কাঁদতে মঞ্চে উঠলাম
সবাই অবাক। কৌতুক করবে, লোক হাসাবে—আর সে কি না কাঁদছে?
আমি হেসে উঠলাম। বললাম; আমার দুঃখে আপনারাও দুঃখি। এটাও কৌতুক!
ধরুন, আমি একজন কৌতুক অভিনেতা। মানুষ হাসাই—
ধরুন!
আজ আমার মৃত্যুর তৃতীয় দিন। শোকসভা চলাকালিন, পূর্বের অনুষ্ঠিত আমার ফানি—ভিডিও—ফুটেজ চলছে।. ..
আর আপনি। আপনার বান্ধবীর কোলে—হাসতে—হাসতে ঢলে পরছেন। আপনি হালকা হয়ে যাচ্ছেন। আপনার নিজস্ব মাঠ থেকে অরণ্যশোক হারিয়ে যাচ্ছে।. ..
ধরুন!
আপনি হালকা হতে—হতে. .. বান্ধবীর প্রেমে মেখে যাচ্ছেন। আপনার সুখ এখন অরণ্যশোক মাড়িয়ে কি দারুণ দৌড়ায়। শোকসভায়!
একপ্লেট ক্ষুধার মতো—যদি ভালোবাসি; হয়তো কুকুরের মতো কষ্ট গিলে খেতে হতো না অনিচ্ছায়। বৃষ্টির মতো করে হয়তো—রক্তবৃষ্টি হতো না, আর শাদা পৃষ্ঠায় কষ্ট বিষয়ক শিরোনাম হয়তো মিউজিয়াম হতো।. ..
আমি সাগরের সাঁতারু না হয়ে যদি তার সুন্দর হতাম, হয়তো সেও আমার। রাতের তারা নয়, যদি মানুষ হতাম! হয়তো দিনের সুন্দর আমার নামে লিখে দেয়া হতো। আমি ঘাসের শিশির নয়—যদি কবি হতাম, হয়তো আমাকেও পৃথিবীর সুন্দর বলা হতো।. ..
যদি একপ্লেট ক্ষুধার মতো—সুন্দর চেয়ে থাকি, আমি সুন্দর। তারপরও তুমি অপার্থিব স্বপ্ন চেয়ো না।
ছায়ার গলপে আমি সুখী উচ্চারণ। তথা, তুমি লুকায়িত কথা। সাধক এবং ছায়া কথা!
মাঝে—মাঝে পুরোনো ব্যথা, চিন—চিন করে ওঠা— ভালো। তোমার মুখ মনে পড়ে। আর ছিটকে পড়ে বর্তমান এবং ফর্মালিন যুক্ত আপেল!
তোমার হয়তো—বালাশির কথা মনে আছে, মনে আছে কী?
—কথা ছিলো, শুধু পাশাপাশি বসে থাকবো। হাত, কিংবা ঠোঁটের খুব কাছে দিয়েও হাঁটবো না—আমরা। কিন্তু কে শোনে কার কথা! আমরা নৌকায় ছিলাম। জলের উপর। নির্জন রঙের জল আর আফিম মেশানো—বিকেলে—যেনো—প্রেমের সিম্ফনি। . .. আহা প্রেম!
কিন্তু। আমার যে—মাছের জীবন প্রিয়?
সারাদিন—জলে সাঁৎরায়, গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ডেটিং-এ- যায়, আর জীবনের পাঠ শিখিয়ে—সঙ্গম শেষে, ভুলে যায় অতিত!
আর, তুমিতো পুরোনো ব্যাথার মতো চিন-চিন করে ওঠো—আইরিন!
মাটি থেকে বীজের জরায়ু ছিঁড়ে—একটি গোলাপের চারা বের হলো। তার দেহের শাখা—প্রশাখায় গুটি—গুটি কাঁটা। এমন কি, তার কিছু মিনিট—কিছু ঘণ্টা অথবা কিছু দিন পর, শাখার কুনুই চিরে—একটি কলি, একটি রক্তাক্ত গোলাপের জন্ম।
তারপর। তাকে ছিঁড়ে, ফাঁসির মঞ্চে রেখেই কোনো কণ্ঠে—উচ্চারিত হলো, “গোলাপ আমার প্রিয়”!
আফিম মেশানো ঘোর। দেখো, তুমি—আমি’র গল্পে, কচ্ছপ কি দ্রুত দৌড়ায়!
স্বপ্ন জলসায়, মৃত্যুকে—বোকা দেখায় ভেবে,—শুকনো পাতার গহীনে আর উপকরণ খুঁজি না।
নতুন পাঠ্য বই—আর সংবিধানের গল্পে—
তোমরা আপেলকে সুন্দরী বলো—শুনে, মুক্তমনা হয়ে উঠি। এবং মুচকি হেসে, তোমাদের ভুলে যাই!
বিনিময় বিশেষণে শুধু কয়লা পাওয়া যায়। সাথে, সাঁতারহীন মাছ, রাবার বিশেষ মন, আর উলঙ্গ আয়নায়, বিশ্রি একটি কবিতা।
তারপর—পথে, কুকুরটির ব্যাস্ত সময় কাটে ইতিহাস রচনায়!
মৃত্যুর কোন রঙ নেই, তাই—মানুষ ভুলে যায়, প্রিয়জন!
*
মৃত্যু শান্তির সঙ্গিত, সঙ্গম বোঝে না!
*
মৃত্যুতেই জীবনের মানে আটকে যায়!
*
মৃত্যু আমার চূড়ান্ত প্রেম!
*
আপনি না আগামীকাল মরে যাবেন! তবু—এত খিদে পায় আপনার? (ক্ষমতা ফ্যাক্ট)
পথে ব্যাকরণগত ভুল করে ফেলি। ভয় পেয়ে যাই। যেন আমার ছায়ার মতো ছড়িয়ে না ওঠে চোরাবালি ক্ষেত।
খণ্ড সময়। অমরত্ব যদি পেয়ে যাই। বিষাক্ত সাপের মন্ত্র, যদি পথভ্রষ্টের সূত্র শিখে যাই। আমাকে ভাবিয়ে উঠবো না আর পাখির জীবনীতেও দুঃখ থাকে। কুকুরের প্রসব বেদনায় মাতৃত্বের সুখ থাকে। বৃষ্টি, শূন্য বেয়ে মৃত্তিকায় আছড়ে পড়ায় শিল্প থাকে।
আমাকে ভাবিয়ে উঠবো না আর নারীর শরীর চিমটি কাটায় কষ্ট থাকে। ভালোবাসায় অসীম সাগর ছন্দ থাকে। চারাবৃক্ষেও—বেড়ে ওঠায় স্বপ্ন থাকে।
আমাকে ভাবিয়ে উঠবো না আর মৃত্যুর মাঝেও বেঁচে থাকায়—জীবন থাকে। শুকনো পাতার গহিন বনেও গল্প থাকে।
আমাকে ক্ষমা করো, হে ভুল। আমাকে ক্ষমা করো, হে পথভ্রষ্ট পথ। আমাকে ক্ষমা করো, হে তুমি। —চলো, অবুঝ মনের দ্যাশে যাই!
তোমার ঠোঁটে
প্রেমিক কবি আমি
বোকার বন!
রহস্য খামে
তোমাকে ভরে রাখি
তুমি জীবন!
আমাকে উচ্চারণ করতে দেয়া হোক, ভালোবাসি!