কবি ও সম্পাদক আদিল ফকিরের জন্মদিন আজ ১২ আগস্ট। মুগ্ধতা ডট কমের একজন নিয়মিত লেখক আদিল ফকিরের জন্মদিনে আমাদের পক্ষ থেকে অজস্র শুভেচ্ছা।
জন্ম ১২ই আগস্ট, ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে। বাবা মো. গোলজার হোসেন এবং মা আলেয়া বেগম। তাঁর নাম মো. আতিকুর রহমান হলেও লেখক হিসেবে আদিল ফকির নামে পরিচিত। রংপুরের ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
তিনি মূলত কবিতায় সিদ্ধহস্ত। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ সমূহ ‘কবিমনের বঙ্গানুবাদ’ (২০১০), ‘জীবনের ধারাপাত ও নামতা’ (২০১৫), ‘কারাগারে ঘাসফড়িং’ (২০১৬), ‘আয়নার বুকে লালটিপ’ (২০১৭), ‘পাথর জন্মের ইতিহাস’ (২০১৮), এবং ‘পেরেকে টাঙানো দিনপঞ্জিকা’ (২০১৯)। এছাড়াও তাঁর প্রকাশিত গবেষণাধর্মীগ্রন্থ ‘ছোটদের ধ্বনিতত্ত্ব’ (২০১৭) এবং প্রকাশের অপেক্ষায় ‘চর্যাপদে ব্যাকরণ’। তিনি বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। কবি তাঁর কৈশোরে সম্পাদনা করেছিলেন সাহিত্যপত্র ‘প্রতিভা’ এবং ২০০৫ সাল থেকে ‘সবুজ বাংলা’ নামে একটি সাহিত্যপত্র সম্পাদনা করে আসছেন।
সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ আদিল ফকির অর্জন করেন বেশকিছু পুরস্কার ও সম্মাননা। সাত বীরশ্রেষ্ঠ সাহিত্য সম্মাননা ২০১৯, আন্তর্জাতিক কবি সমাবেশ সম্মাননা ২০১৯, কাব্যচন্দ্রিকা সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
সংকলন: শিস খন্দকার
আমার একটা প্রেম আছে—কাঁদে এবং হাসে। আমার একটা কয়েন আছে—হারিয়ে যায় এবং খুঁজে পাওয়া যায়। আমার একটা আয়তকার আছে; তুমি চাইলেই মাঝে একটা বৃত্ত দিতে পারো।
প্রিয় বন্ধু, শুভেচ্ছা নিস। মনটা ভালো নেই। কারে বলি মনের কথা, সবাই ব্যস্ত। যদিও গাড়ির আসনে পাশে পাই—তখন সে মোবাইল বা এফবি নিয়ে ব্যস্ত। বন্ধু সাম্প্রতিক খবর পেয়েছিস কি—অতিশীঘ্র ‘ভালোবাসা’ শব্দটা উঠে যাবে? যখনি ভালবাসা উঠে যাবে, তখনি স্নেহ-শ্রদ্ধা উঠে যাবে। জানিস বন্ধু—মানুষগুলো এখন খটমটে, কেমন জানি হয়ে গেছে। আগে মনের আনন্দে, প্রাণের টানে একটু-আধটু গ্রামের বাসায় যেতাম। ও বাবা তারাও এখন ব্যস্ত, ধান কাটা নিয়ে না—মানুষ কাটা নিয়ে।
ঘরের ওপর ঘর, তারপর ঘর আর ঘর।
লিফটে চড়ে তোমার ঘরে
যেতে হয় দাস-দাসির ভিড়ে
এমন স্বপ্ন তুমি দেখিও না।
দুশতক জমিতে ছোট খড়ের ঘর
বাঁশের ফালিতে ছোট তোশকে
রাত্রি যাপন।
হয়তোবা আসবে প্রকৃতির সমীরণ
কাঁথা জড়িয়ে দুজনে জমাবো আলাপন।
সকাল হবে, অফিসে যাব
মাস শেষে বেতন পাব
সেই বেতন যোগ-ভাগ করব
পাড়া-প্রতিবেশী-দুঃখীরা কত করে পাবে?
তুমি এমন স্বপ্ন দেখিও না—
ফ্রিজে খাবার, খাসি-দেশি মুরগির রান,
লাল-নীল রঙ-বেরঙের নতুন শাড়ির ঘ্রাণ।
তোমার-আমার স্বপ্ন হবে- অর্ধ পেটে ভাত,
কচু পাতার ভর্তা, লাউ শাকের আগা।
হয়তোবা ক্ষুধার জ্বালায় গভীর রাতে
ভেঙে যাবে ঘুম—
সেই মুহূর্তে পাণ্ডুলিপি উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে
ক্ষুধার্তের ক্ষুধা উপলব্ধি করব, আর…
আমার মাথায় হাজার নারীর গহনা—আমি একজন ফেরিওয়ালা।
ত্রিশের ঘরের জোড়া সংখ্যা বারবার আমাকে শুনতে হয়—আমি একজন ছোট কাপড় বিক্রেতা।
সেইদিন বাহিরের খোলা দরজায় এক নারীপ্রেম তাকিয়েছিল! ভাবছি তাকে একটা উপহার দিব—
আমি বলেছিলাম—বত্রিশ?
তিনি বলেছিলেন—না!
আমি বলেছিলাম—চৌত্রিশ?
তিনি বলেছিলেন—না!
আমি বলেছিলাম—ছত্রিশ?
তিনি বলেছিলেন—না!
আমি বলেছিলাম—আটত্রিশ?
তিনি বলেছিলেন—
আমি একজন ধর্ষিতা নারী,
আমার জীবনে কোন সংখ্যা এবং গহনার প্রয়োজন নেই!
আকাশটা এখন আর সময় মত কাঁদে না
আষাঢ় আসে, শ্রাবণ আসে, তবুও কাঁদে না।
তাই বলে যে সুখে আছে এমনতো নয়
আকাশটা দুঃখে কষ্টে অতিষ্ট।
কাঁদতেও জানে না, হাসতেও জানে না
শুধু তার বুকে দিবালোকের স্বপ্ন।
শখ করে আগের মতো আর সাজে না।
একসময় মনে হয়েছিলো, বিদ্যৎ চমকানো মানেই—চোখ ইশারা,
চাঁদনি রাতটাকে মনে করেছিলাম, আকাশ রানীর উজ্জ্বলতা
অমাবস্যাটাকে মনে করেছিলাম, হয়তোবা সুখের সাথে অভিমান।
মনেহয় পাষণ্ড আকাশের বয়স হয়েছে
তাই আগের মতো হাসতেও জানে না, কাঁদতেও জানে না।
রাধার কুন্তল ময়ূরের পেখম মেলবার মতন,
টিপ ছাড়া ললাটে, নয়নের ঘাটে ঘাটে কালো কালো ঘাস,
কিছু আভাস। নাড়া দেয় সাড়া দেয় দোলা দেয়
কাচভাঙা হাসি, মুখ ফোলানো অভিমান
নিয়ে যায় আমাকে স্বর্গ থেকে স্বর্গের রাজ্যে
কল্পনা থেকে অভেদ কল্পনায়—
সাত পরীর দেশ থেকে আনা নাম অজানা শাড়ি
ঘোমটা দেয় কথা কয় রাধার ওষ্ঠদ্বয়
শুরু হয় কল্পনার রাজ্যে ফুলসজ্জা
পরতে পরতে শাড়ি খুলতে খুলতে প্রভাত
সত্য-সুন্দর স্পর্শ করে আমাকে—
মনে হয় ঘুমিয়ে আছি সবুজ পাতার উদরে
শান্তি ওম শান্তি, মুক্তি অজস্র সময়ের মুক্তি—
উত্তর: খাবার না খেলে বাঁঁচবো কেমনে! পেটের খাবার যেমন প্রয়োজন – মনের খাবার তেমনই প্রয়োজন। তবে সবার রুচি এক নয়- রুচির ভিন্নতা হতে পারে। আমার রুচিতে- কবিতা এবং কবিতা- তাই লিখি।
উত্তর: আপনার/আপনাদের কাছে কী- তা জানি না। তবে আমার কাছে- জীবন ও কবিতা- একে অপরে পরিপূরক। জীবনকে বাঁচাতে হলে- ছন্দ/কবিতার প্রয়োজন- আবার কবিতা/ছন্দকে বাঁচাতে জীবনের প্রয়োজন।
উত্তর: আমি বললাম লিখবো না- কিন্তু আমি বলার কে? তারপরেও – সময় এলে ডালিম ফাটবে, বাঙ্গি ফাটবে- এই তো……।
উত্তর: সংসার-জীবন! স্পষ্ট করে বলবো না সাংঘর্ষিক। কারণ এ সাক্ষাৎকার কাকতালীয়ভাবে আমার সংসারের মানুষটা পড়তে পারে- হা হা হা। এতটুকুই বলবো- ট্রাকের পিছনে যেমন লেখা থাকে একশো গজ দূরে থাকুন। সম্ভবত আমার সংসারের মানুষটার সামনে,পিছনে, ভিতর, বাহির- লেখা – কবি ও কবিতা থেকে একশো গজ দূরে থাকুন।… সেই দূরে থাকার স্লোগান সম্বলিত মানুষটার সাথে- আমাকে বসবাস করতে হয়, নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন ব্যাপারটা!
উত্তর: কী কী- তার ব্যাখ্যায় যেতে চাচ্ছি না। এক কথায় বলবো- বেঁচে থাকার জন্য একজন মানুষের- ‘সত্য’ খুবই প্রয়োজন। অনেকে বলবেন- মিথ্যা নিয়ে তো অনেকে বেঁচে আছেন- তবে এ বাঁচা, বাঁচা নয়-। সত্য-ই বাঁচা।
উত্তর: আমি মনে করি- মানুষ এই পৃথিবীতে সব কিছুর সাথে দায়বদ্ধ। এই দায়বদ্ধতা পরিশোধ করতে হবে- এমন ভাবনা নিয়ে বেঁচে থাকা দরকার।
উত্তর: রফিক আজাদ, জীবনানন্দ দাশ, হেলাল হাফিজ।
উত্তর: গদ্য কবিতা।
উত্তর: কবিতার বাইরে কবিতা পড়তেই ভালো লাগে! যাকে আমার ভালো লাগে- তার ভিতর -বাইরে-সবকিছুই ভালোই লাগে। হা হা হা। তবে কবিতার পাশাপাশি – প্রবন্ধ পড়তে ভালোই লাগে।
উত্তর: আপনি আমাকে যে ভাবে প্রশ্ন করলেন- সত্যি বলতে কি- ছোট থেকেই আমি প্রশ্নকে ভয় করি- অর্থাৎ পরীক্ষা আমার জীবনের বিষ। এই সাক্ষাৎকারও কিন্তু পরীক্ষা না-হলেও – প্রশ্নের বাইরে নয়। -হা হা হা।
যাই হোক – নিজেকে তিনটি উপদেশ দিয়ে শেষ করছি: আদিল ফকির- প্রেমকে কখনো কষ্ট দিওনা, প্রেম আরও বাড়াও। হৃদয়, মন, বুকে- প্রেম যেন উপচে পড়ে।
উপদেশ দুই- দিনে একবার হলেও ‘সত্য’ শব্দটাকে বানান কোরো।
উপদেশ তিন- শরীরের সব চুল বড় রাখতে হয় না, কিছু চুল কাটতে হয়, কিছু চুল কাটতে হয় না, আবার কিছু চুল স্টাইল আকারে রাখা যায়।
মুগ্ধতা: আপনাকে ধন্যবাদ।
আদিল ফকির: আপনাকেও ধন্যবাদ। মুগ্ধতাকেও ধন্যবাদ। শেষে একটা কথা না বললেই নয়- আমার ঘরের মানুষটা নিয়মিত ‘মুগ্ধতা ‘ পড়ে।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: মজনুর রহমান