রংপুরের জনপ্রিয় লেখক ও চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশের জন্মদিন আজ। কবিতা, গল্পসহ সাহিত্যের অনেক শাখায় তিনি লিখছেন। প্রকাশিত হয়েছে তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘তুমি অন্য কারো ছাতিম ফুল’ এবং প্রথম উপন্যাস ‘নির্জন স্বাক্ষর’। এছাড়া চিকিৎসা বিষয়ক দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে: ‘নবজাতক ও শিশুর যত্ন’ এবং “Ward Management of Common Pediatrics Problem.”
এখন একাধিক উপন্যাস লেখার কাজে হাত দিয়েছেন প্রতিভাধর এই লেখক। ঘুরতে ভালোবাসেন। সহজ ভঙ্গিতে লেখার জন্য তিনি পরিচিত। জীবনকেও তিনি সহজভাবেই নিতে চান। প্রিয় মানুষগুলোর দেওয়া সামান্য আঘাত কষ্ট দেয় সংবেদনশীল এই মানুষটিকে। নিজেকে জাহির করতে একদমই পছন্দ করেন না। পড়তে খুব ভালোবাসেন। বিভিন্ন সাহিত্য ও সামাজিক সংগঠনে জড়িত আছেন। অনলাইন ম্যাগাজিন মুগ্ধতা ডট কমের তিনি উপদেষ্টা সম্পাদক।
সবার প্রিয় এই মানুষটির জন্ম ২০ মে, ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে রংপুর শহরে নানা বাড়িতে। পেশায় শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ।
জন্মদিনে ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশের প্রতি অজস্র শুভকামনা রইল।
মাটির রং ঠিক ঘিয়েও না আবার সাদাও না। এমনও হয় নাকি? অথচ এমন মাটির পথ দিয়েই তো হেঁটে যাচ্ছি। শালবন, মেঠো পথের দুধারে কত নাম না জানা ঝোপঝাড়। বুনোফুল, একটা দুটো প্রজাপতি উড়ছে ইতিউতি। বাতাসে জলের ঘ্রাণ। সামনে তোমার শরীরের মতো নদী। নদীর নাম জলঢাকা।
একদিন আমার খুব অভিমান হবে। সেদিন ফোন বের করেও ফোন দেবো না। তোমার কন্ঠস্বর শোনার আকুলতাকে গলা টিপে মেরে ফেলবো। আমাকে সন্ধ্যা বেলা তুলসীতলায় ডাকলেও যাব না। তোমার উলুধ্বনি এড়িয়ে যাব হেডফোনে অনুপম শুনে। কোনদিকে না তাকিয়ে সোজা হেঁটে যাব। লিখবো না হাবিজাবি। জগৎশেঠ হবার চেষ্টা করবো। দেখো একদিন আমি ঠিক নিজেই নিজেকে জিতিয়ে দেবো।
বাবা কবুতর ভালোবাসেন আর আমি মানুষ,
কবুতরপ্রেমি বাবা কবুতরের ছানাকে খাওয়াতেন নিজ হাতে। তারপর উড়িয়ে দিতেন।
আমি ভয়ে ভয়ে বলতাম, আর যদি না আসে?
বাবা হেসে বলতেন, যতœ করেছি,আসবে ফিরে।
আমাদের বাসায় এখন আঠারোটি কবুতর।
শুধু এখন জানি মানুষ ফেরে না,যতœ করলেও
পথে তাদের দেখা হয়ে যায় অন্য কারো সাথে। মানুষ বড়ই সামাজিক জীব।
আপনি ঘুমিয়ে,
নিঃসঙ্গ ছায়াপথে আপনি
কোনকিছুতেই কিছু যায় আসে না
ঘুমের ঘোরে আপনি
পাশ ফিরলেন মায়ের দিকে,
আপনার শরীরে মায়ের হাত
মমতায় ছোঁয়া যেন হাজরে আসওয়াদ,
আপনি স্বপ্ন দেখছেন আপনার মেয়েবেলা
স্কুল থেকে ফিরলেন বেণী দুলিয়ে
বাবা আপনার ফ্রক ধুয়ে দিচ্ছেন কলপারে।
মা উনুনে চড়িয়েছে ভাত।
আপনি মায়ের পিঠে মুখ গুঁজে
এমন কবরের ঘুম,
পাশের ঘরের শিশুটা কেঁদে উঠলো
আপনি চমকে মায়ের বুকে মুখ রাখলেন।
আপনার নাকে মায়ের দুধের গন্ধ
আপনি ঘুমের ঘোরে ঠোঁট নাড়ালেন
আপনার তেষ্টা পেয়েছে
আপনি এখন জেগে উঠবেন
মা চলে যাবে
আপনি দুয়ারে দাঁড়িয়ে মাকে বিদায় জানাবেন
আপনি মা হয়ে এ সংসার সামলাবেন।
সব দোষেতে দোষী আমি
স্বীকার করি-
তবে, তুমিও কেন আঁকলে বলো
কপাল জুড়ে অমন ছবি।
পরলে কেন যতœ করে
অমন সাধের নাকছাবিটি।
আমার কি আর সাধ্য আছে
কাব্য করি, তোমায় নিয়ে?
কাব্য করুক, তোমার প্রেমিক।
হাজার খানেক পদ্য লিখুক
তোমায় নিয়ে
আর যদি সে না পারে তা
তবে সে তোমার
কেমন প্রেমিক?
এখানে সূর্যের আলো আসে না। শুয়োরের মতো গাদাগাদি করে থাকি। যে পাহারাদার মোতালেব টিপ্পনী কাটে বিপ্লবী বলে চোখ টিপে দিয়ে,
আজ সে নরম স্বরে বললো আপনাকে দেখতে এসেছে। আমার কৃষক বাবা, যিনি কিনা শহরে তেমন আসেনই না আজ এসেছেন আমাকে দেখতে,
পরনে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি চোখে হতাশা।
আমার শিক্ষক বোন, যে আজীবন সততার বীজ বপন করে চলছে।
আর প্রিয়তমা তুমি, রায় হলে আমার ফাঁসি হবে নিশ্চিত। সবাই বললো তুমি অপরাধ স্বীকার করো, যারা অপরাধ স্বীকার করে তাদের ফাঁসী হয় না। আমি তাকালাম তোমার চোখের দিকে। আমার চোখে চোখ রেখে তুমি দীপ্ত কন্ঠে বললে, বিপ্লবীরা কখনও অপরাধ করে না।
জন্মদিনে বৃষ্টি পড়ে
টুপ।
জন্মদিন মহিপুরে
ডুব।
জন্মদিনে জন্ম জারুল
ফুল।
জন্মদিনে রিকসা করে
ঘুর।
জন্মদিনে কেনা হলো
নাকফুল।
[কবিতাগুলো নেওয়া হয়েছে সম্প্রতি চন্দ্রবিন্দু থেকে প্রকাশিত কবিতার বই ‘তুমি অন্য কারো ছাতিম ফুল’ থেকে]