সত্তরোর্ধ্ব সলিমের মা বয়সের ভারে ন্যুব্জ। দারিদ্র্যের কষাঘাত আর অযত্ন অবহেলায় আরো বেশি বয়সী লাগে। সলিমের জন্মের তিন বছরের মাথায় স্বামীহারা। সলিমের জন্মের পর নিজের নাম আম্বিয়া বেগম ভুলেই গেছেন।
মোঃ সলিম উদ্দিনকে যেমন সবাই সলিম ডাকে। তেমনি সলিমের মাকে আম্বিয়া বেগম নামে এখন কেউ চেনেনা।
পঞ্চাশোর্ধ্ব সলিম রিক্সা চালিয়ে আট সদস্যের পরিবার চালাতে গলদঘর্ম। মায়ের ভাত জোটাতে সে ব্যর্থই বটে। এর ওর বাড়িতে খেয়ে, হাত পেতে, ভিক্ষা করে চলে সলিমের মা।
দেশজুড়ে লকডাউনের কারণে এবার ঈদে যাকাত ফিতরাও জোটেনি তেমন। ঈদের পর থেকে শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না। হয়ত এবার সলিমের বাপের ডাকে সাড়া দেবার সময় এসেছে। তবুও সলিমের মন মানে না। নিজের সামর্থ্য না থাকলেও মা বলে কথা। নিজের রিক্সায় করে মাকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে পা বাড়ায় সলিম। রাস্তায় পুলিশ আটকায়, সলিমের মায়ের মুখে মাস্ক নেই। সলিম রাস্তায় চলাচলের কারণে দশ টাকা দিকে কিনেছিল একটা মাস্ক। সেটা মুখে থাকায় এ যাত্রা রক্ষা পায় সে। কিন্তু তার মাকে ছাড়েনা পুলিশ। হয় ছয়মাস জেল না হলে একলাখ টাকা জরিমানা। পেটের ভাত জোগাতেই মাঝে মধ্যে ব্যর্থ হয় তারা। রেডিও টিভি কেনা তাদের বিলাসিতা, আইন জানবে কখন? করোনা মহামারিতে পুলিশও আইন প্রয়োগে কঠোর। সলিমের সমস্ত সহায়সম্বল বেচেও একলাখ টাকা হবে না। মনে না মানলেও সলিম মায়ের জেলের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য। সলিমের গলা ধরে আসে আর চোখের জলও আটকাতে পারেনা। ওর মাও কেঁদে ফেলে আর বলে, “বাবা, জেলত মোক ভাত খোয়াইবে তো?”