‘লাইলাতুল কদর’ অত্যন্ত ফজিলত পূর্ণ বরকতময় রাত। আল্লাহ তা’আলা ‘মহাগ্রন্থ আল কুরআন’ এ রাতই নাজিল করেন। ঘোষণা করেন এ রাত হাজার মাস হতে উত্তম।
হাদিসে শরীফে আছে:
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
নবী সা. বলেছেন: যে ব্যক্তি লাইলাতুল ক্বদ্রে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রাত জেগে ‘ইবাদাত করে, তার পিছনের সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করা হবে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৯০১)
এমন ফজিলতের প্রত্যাশী কে না হতে চায়। কিন্তু কিছু ভুলের কারণে এই মহামান্বিত রাতের ফজিলত থেকে আমরা অনেকে বঞ্চিত।
প্রথমত: নির্দিষ্টভাবে সাতাশের রাতকে শবে কদর বলা প্রচিলিত ভুল বা চরম অজ্ঞতা।
‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
আল্লাহর রসূল সা.বলেছেনঃ তোমরা রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল ক্বদ্রের অনুসন্ধান কর। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০১৭)
কোন কোন হাদিসে বেজোড় উল্লেখ নেই , রমযানের শেষ দশকে লাইলাতূ্ল কদর অন্বেষণ করতে বলা হয়েছে। তাই শেষ দশকের সব রাতেই যথাসম্ভব বেশি বেশি ইবাদাত করা শ্রেয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। এতে শবে কদর সহজেই আপনার ভাগ্যে জুটবে।
সুতরাং সাতাশ তারিখই লাইলাতুল কদর, শুধু এ রাতেই ইবাদত করা, অন্য নয় দিন নফল ইবাদতে ব্রতী না থাকাটা বড়ই অজ্ঞতা।
দ্বিতীয়ত: এই মহামান্বিত রাতে মনগড়া পন্থায় রাত জাগা। বিভিন্ন অনির্ভরযোগ্য বই-পুস্তকে নামাযের যে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানূন লেখা আছে : এত রাকাত হতে হবে, প্রতি রাকাতে এই এই সূরা এতবার পড়তে হবে-এগুলো ঠিক নয়। হাদীস শরীফে এ ধরনের কোনো নিয়ম নেই, এগুলো মানুষের মনগড়া পন্থা।
এবং এ রাতে বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামায নেই। সব সময় যেভাবে নামায পড়া হয় সেভাবেই পড়া অর্থাৎ দুই রাকাত করে যত রাকাত সম্ভব হয় আদায় করা এবং যে সূরা দিয়ে সম্ভব হয় পড়া। তদ্রূপ অন্যান্য আমলেরও বিশেষ কোনো পন্থা নেই। কুরআন তেলাওয়াত, যিকির-আযকার, দুআ-ইস্তেগফার ইত্যাদি নেক আমল যে পরিমাণ সম্ভব হয় আদায় করা।
শবে কদরের নফল আমলসমূহ, বিশুদ্ধ মতানুসারে একাকী করণীয়। ফরয নামায তো অবশ্যই মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার প্রমাণ হাদীস শরীফেও নেই আর সাহাবায়ে কেরামের যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না। (মারাকিল ফালাহ পৃ. ২১৯)
সুতরাং শুধু সাতাশ রমযান নয়, রমযানের শেষ দশকেই এই মহামান্বিত রাত প্রাপ্তির আশায় সঠিক পন্থায় ইবাদতে মশগুল থাকি। আল্লাহ তাআলা সবাই কে কবুল করুন।