রাত ১১.৪৯। কন্যাসম মেয়েটির ফোন।
স্যার! টেস্টে আমারও পজেটিভ…! আর কিছুই বলতে পারে না নবীন মেধাবী ডাঃ সুমনা রহমান। চাপা কান্নায় অস্পষ্ট কথাটার মানে বুঝতে; দেরি হয়না আমার। এতটুকু দেরি হবারও কথা নয়!
বিধবা মায়ের একমাত্র সন্তান। ছোট বেলা থেকেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন যার হৃদয়ে লালিত। অসুস্থ মায়ের সেবা করার শপথ যার, না বোঝার বয়স থেকেই। সফলও হয়েছে সে, তার অদম্য চেষ্টা ও খোদার অপার মহিমায়।
মাত্র এক বছরের ডাক্তারি পেশায়ও পেয়েছে অনেক; স্যারদের স্নেহ, স্টাফদের সম্মান, মানুষের ভালোবাসা; সম্মাননা স্মারক, পদক সবই। মেডিসিন শাস্ত্রেও রেখেছে নিজস্ব মেধার স্বাক্ষর।
কী বলে সান্ত্বনা দিবো তাকে! আমি তো তার অফিসিয়াল অর্ডারে স্বাক্ষর করেছি নিজেই। আমি কী জানতাম না? করোনা হতে পারে সুমনারও মৃত্যুদূত!
নিজেকে সংযত করে নিয়ম মাফিক অভয় দিয়ে; টেনশন না করতে বলি। নিজেকে আপাতত হোম কোয়ারেন্টাইনেই রাখতে বলি। আর নিজেকে শক্ত রেখে কী কী করতে হবে, খেতে হবে, সবই জানা সুমনাকে মনে করিয়ে দেবার চেষ্টা করি। কথা গুলো বলার সময়, আমি পুরোটাই প্রফেশনালই ছিলাম। কিন্তু আমার ভিতরের আমিটার যে রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো; তা কারো অনুভব করার কথা নয়। হয়তো সুমনাও অনুভব করতে পারেনি!
সুমনা! আমরা ডাক্তার, আমাদের ভেঙে পড়তে নেই। আমরাই হতাশ হলে সাধারণ মানুষগুলো কী করবে, কোথায় যাবে? কে দেবে তাদের সান্ত্বনা! বেঁচে থাকার স্বপ্ন! চিকিৎসাহীন কোন মানুষ মারা যাক, এটা একজন ডাক্তারের প্রত্যাশা হতে পারে না। আমি জানি, সুমনাও একজন ডাক্তার। তথাকথিত কসাই নয়।
ফোনের ওপ্রান্তের সুমনার পুলকিত জবাব ‘হু স্যার’; আমাকে আবেগে আপ্লুত করে। কোন এক অজানা শক্তি; আমার নিজের ভিতরের আমিটাকেও একজন সুমনা বানিয়ে দেয়।