মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

সৌমেন দেবনাথের কবিতাগুচ্ছ

সৌমেন দেবনাথ

১৪ এপ্রিল, ২০২১ , ১:০৩ পূর্বাহ্ণ ;

শুভ নববর্ষ ১৪২৮

নববর্ষ ও করোনা

আসলো আবার পয়লা বৈশাখ

নতুন একটা সকাল,

বৈশাখী মেলা বসবে না

কারণ করোনাকাল।

 

শোভাযাত্রা না হলে তাই

হবে না ভাই ক্ষতি,

জটলা করলে বাড়বে কোভিড

দুর্ভোগ বাড়বে অতি।

 

ঘর থেকে বের হতে মানা

করোনা ভয় মনে,

পান্তা-ইলিশ খাবে ঘরে

বাবা মায়ের সনে।

 

সেজেগুজে বাইরে যাওয়া

বন্ধ থাকবে এবার,

করোনা খুব ভয়াবহ

এ্যাটাক করছে সবার।

 

মুখোশ এবার নাইবা পরলে

নাইবা কিনলে পুতুল,

বাইরো যেয়ে একটু ঘুরে

করো না মহাভুল।

 

মুখচিত্র এঁকো না এবার

কিনো নাতো বাঁশি,

ঘরের মাঝেই ভর্তা খাবে

অটুট থাকুক হাসি।

 

কোভিড কেটে গেলে আবার

নতুন আশায় ভাসবো,

নতুন বছর কোভিড কাটবে

নতুন করে হাসবো।

নববর্ষে প্রত্যাশা

আসলো আবার নববর্ষ

উঠলো নতুন আলো,

সকল জীর্ণ যাবে কেটে

নিপাত যাবে কালো।

 

বাঁধনহারা সুখে সবাই

ভাসবে সুখের ভেলায়,

আর ভুল ভ্রান্তি করবে না কেউ

ভেসে হেলায় খেলায়।

 

দুঃখ যত ঝরে যাবে

থাকবে না আর ক্ষরণ,

রঙে রঙে জীবন জাগবে

নতুন করে বরণ।

 

কষ্ট স্মৃতির কাটবে ইতি

নতুন যাত্রায় সামিল,

বর্ণিল জীবন সবার আসবে

কেটে যাবে অমিল।

 

দুঃখ ভোলার দিনে সবার

মনে থাকবে রঙিন,

যত গ্লানি যাবে ডুবে

হবে না কেউ সঙিন।

 

নতুন বছর নতুন আলোয়

বাঁচবো নিয়ে আদর্শ,

সুখে দুখে শক্ত রবো

শুভ নববর্ষ।

আল্পনায় বৈশাখ

নববর্ষ ঘিরে মনে

থাকে যে জল্পনা,

নতুন বর্ষ বরণ করতে

আঁকা হয় আল্পনা।

 

উঠানে তাই ঝাড়-পোছ-লেপন

নান্দনিক উঠান সাজ,

তারপর উঠানে চিত্রাঙ্কন

আহ রঙিন কারুকাজ।

 

দেয়াল জুড়ে শৈল্পিক আঁকা

দেখলেই করি শংসা,

পিচঢালা ঐ সড়ক জুড়েও

আঁকা রঙিন নকশা।

 

নকশায় থাকে কত কিছু

লতা-পাতা ফুল ফল

ঢোল-তবলা হাতপাখা কুলা

চোখের পড়ে না পল।

 

আঁকিবুকি দিয়ে আমরা

দেশটা করি বিন্যাস,

পয়লা বৈশাখ ঘিরে দেশ মা

হয় রং-তুলির ক্যানভাস।

নতুন বর্ষের নব আশায়

নতুন বছর নতুন আশায়

ভাসবো স্বপ্ন ভেলায়,

ভুলে যাবো হানাহানি

মাতবো রঙের মেলায়।

 

নতুন বছর বাঁচার মানে

খুঁজবো নতুন করে,

নতুন সাজে নতুন ভাবে

বাঁচবো চরাচরে।

 

হৃদয় থেকে হিংসা উড়ুক

জাগুক প্রাণে জোয়ার,

ভরুক হৃদয় ভালোবাসায়

খুলুক বদ্ধ দুয়ার।

 

নবরূপে সাজুক জগৎ

থাকবে না কেউ মন্দে,

বেদনার রং মুছে যাবে

বাঁচবো নব ছন্দে।

 

স্বপ্নিল সৃষ্টি ঘটুক ভবে

কাটুক নিকষ কালো,

নতুন সূর্য নতুন ভোরে

ঢালুক নতুন আলো।

হালখাতা সমাচার

বাংলা সনের প্রথম দিনে

খোলা নতুন খাতা,

দেনা-পাওনার হিসাব নিকাশ

তাই তো হয় হালখাতা।

 

হালখাতার কার্ড ক্রেতার বাড়ি

পৌঁছে দেয় পাওনাদার,

ক্রেতা দেনা শোধ করে দেয়

পহেলা বৈশাখ বার।

 

নিজে সাজে দোকান সাজায়

খুশী খুশী মেজাজ,

পড়ে থাকা টাকা উঠে

ফাঁপে বুকের দ্বেরাজ।

 

দোকানদার  যে খুশী হয়ে

এক পোটলা দেয় মিষ্টি,

ক্রেতা-মালিক উভয় খুশী

অনন্য সে কৃষ্টি।

 

পুরাণ হিসাব পুরাণ খাতা

বিক্রেতা করে বাদ,

নতুন খাতায় নতুন হিসাব

হিসাব হয় হালনাগাদ।

নববর্ষ ও পান্তা ভাত

মাটির মালশায় নিয়ে পান্তা

নববর্ষের দিনে-

স্বাদ না লাগলেও খেতে হবে

খায় যে মানুষ কিনে।

 

পহেলা বৈশাখের দিনে

পান্তার জন্য ঘোরে,

যে কখনো খায়নি পান্তা

খায় পান্তা পেট ভরে।

 

সাথে থাকে কাঁচা মরিচ

আর ইলিশ মাছ ভাজি,

এ সঙ দেখে কৃষক ভাবে

দেখছি কি সব আজি।

 

গরম ভাতে ঢেলে পানি

হয় তৈরি পান্তা ভাত,

তাদে কি পান্তার স্বাদ মেলে

অবোধ বাঙালি মাত্।

 

সানকি ভরা পান্তা নিয়ে

ছবি তুলে পোস্ট,

তারপর রেস্তোরাঁতে গিয়ে

খাবে সে মুরগির রোস্ট।

নববর্ষ ও ইলিশকাণ্ড

সারাবছর তেলাপিয়া

কেজি একশত বিশ,

নববর্ষে খেতেই হবে

পান্তায় ফেলে ইলিশ।

 

ইলিশ কিনবে টাকা কোথায়

বৌ তো নেয় না মেনে,

শখের গরু বিক্রি করে

ইলিশ একটা কেনে।

 

নাগরিক কল্পনা বিলাস

খেতেই হবে ইলিশ,

শহর ছেড়ে গ্রামেও এখন

চলছে এই অপ-বিষ।

 

চড়া দাম হাঁকে বিক্রেতা

শতক ছুঁড়ে হাজার,

তবু মুহূর্তে বিক্রি শেষ

ইলিশ-শূন্য বাজার।

 

এ হলো শহুরে ফ্যাশন

ভ্রান্তির এক বেড়াজাল,

ইলিশ-পান্তা বর্জন করি

ধরি ঐতিহ্যের হাল।

নববর্ষ ও মুখচিত্র

নববর্ষের দিনে পুবে

উঠে রঙিন রবি,

মেলায় আসে নারী-শিশু

গালে আঁকে ছবি।

 

শিল্পী ঘোরে তুলি নিয়ে

সাথে থাকে ঢের রং,

গালে নারী এঁকে ছবি

হাসে দেখিয়ে ঢং।

 

শিশুর গালে ঢোল-একতারা

দারুন ফুঁটে থাকে,

শিশুর গালে হাসি ফোঁটে

দেখায় ডেকে মাকে।

 

কারোর গালে লেখা থাকে

শুভ নববর্ষ,

গরম চরম শরীর ঘামে

কমে না তাও হর্ষ।

 

কেউ গালে হাতপাখা আঁকে

কেউবা আঁকে নিশান,

ঈশাণ কোণে মেঘের দেখা

মঞ্চে গাইছে কেউ গান।

 

গালে গালে রঙের ক্যানভাস

থাকে সাথে মিত্র,

নজর থাকে গালে পড়ে

অপূর্ব মুখচিত্র।

পয়লা বৈশাখে

পয়লা বৈশাখে ছেলে-মেয়ে

সাজে নতুন সাজে,

সবাই সাজে সবার সাধ্যে

দেখে পুড়ি ঝাঁঝে।

 

পয়লা বৈশাখে আড্ডা জমে

মেলা প্রাঙ্গণ ঘিরে,

সবার ফূর্তি করা দেখে

হৃদয়টা যায় চিরে।

 

পয়লা বৈশাখে নতুন পোশাক

দেশজ ধারা লুকে,

কেউ সাজে সাবেকি ঢঙে

দহন জ্বলে বুকে।

 

সাদা রঙের শাড়ি, লাল পাড়

কালো টিপ কপালে,

খোলা চুল, কানে দুল -ছিমছাম

রঙের চিত্র গালে।

 

ছেলে-বাবা পাজামা পরে

বেড়ায় ঘুরে মেলায়,

মার পরনে হ্যান্ডলুমের শাড়ি

ভাসে খুশীর ভেলায়।

 

চরম গরম তিক্ত কেউ

দেখছে ডানে বামে,

ঘুরতে ঘুরতে স্যান্ডেল ছেঁড়ে

মেকআপ নষ্ট ঘামে।

নববর্ষের মিষ্টি আশা

আসলো আবার নতুন বছর

বাঁচবো নতুন আশায়,

জীবন জুড়ে থাকবে শান্তি

বাঁচবো ভালোবাসায়।

 

হৃদয় জ্বালার বিনাশ হবে

পাবো নতুন আলো,

কাটবে জীবন নন্দে গন্ধে

থাকবে সবাই ভালো।

 

হানাহানি যাবো ভুলে

ভুলবো সব ভেদাভেদ,

মিলেমিশে বাঁচবো সবাই

রাখবো না মনে খেদ।

 

নতুন ছন্দ জাগুক প্রাণে

স্বপ্নেরা সত্য হোক,

অতি আশার রঙের ভেলায়

ভাসার কমে যাক ঝোঁক।

 

দুঃখ ব্যথা ভুলে যাবো

বিনাশ করবো রাগ ক্ষোভ,

ইঁদুর দৌঁড়ে না দৌঁড়িয়ে

সংবরণ করবো লোভ।

 

নতুন দিনের নতুন ভোরে

থাকুক মুখে হর্ষ,

স্বপ্নিল সৃষ্টির মিষ্টি স্বপ্নে

শুভ নববর্ষ।

 

Latest posts by সৌমেন দেবনাথ (see all)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *