আজ বিকালে জন্মাষ্টমীর জোগাড় করতে গেলাম। মাঝরাতে শ্রী কৃষ্ণের পুজো হবে তো। তা হঠাৎ করেই আমার আদরের বিশাল শ্রী কৃষ্ণের রজত মূর্তির পিছন দিক থেকে একটি প্লাস্টিকের বাক্স পেলাম। এটির ব্যাপারে একদম ভুলেই গেছি। বিরাট মূর্তি তাই খুব একটা নড়াচড়া করি না। আজ – এই বছরের একদিনই এদিক ওদিক করে চকচকে ঝকঝকে করি।
হ্যাঁ, ওই বাক্সটি খুলে এক গোছা নানান ধরণের হাতে লেখা, কালি পেনের চিঠি পেলাম। পোস্টকার্ড, নীলচে খাম, হলদেটে খাম, সাদা খাম। কোনোটায় আবার স্ট্যাম্পও আটকানো আছে। হাতে নিয়ে চোখ ঝাপসা হয়ে গেল। ওই লেখাগুলোর ওপরে হাত বললাম। যেন যাদের হাতের লেখা তাদের স্পর্শ পেলাম। আমার স্বর্গত ছোট ভাইয়ের, বাবার ও স্বর্গতা মায়ের। আমি যেন ওদের মধ্যেই এখন বসে আছি, এরকম মনে হচ্ছিল। কিছু সময় আমি বর্তমানে থাকতে পারলাম না। পৌঁছে গেলাম সেই কম বয়সে। যখন ওরা সকলেই আমার মতই বেঁচে ছিল।
পড়লাম-
শ্রদ্ধেয়া দিদি,
তুই অনেক মাস হল, আমাদের এখানে আসিস নি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আয়! আমাদের সবার তোর জন্য মন কেমন করছে। কি রে দিদি! আসবি তো? সেই যে বিয়ের পর গেলি আর তোর আসার নামটি নেই। আমাদের জন্য কি তোর মন কেমন করে না, নাকি রে? দিদি!
তোর বসানো চন্দন গাছ তিনটি অনেক বড় হয়ে গেছে। মা খুব যত্ন করে তোর ওই গাছগুলোকে।
আমি তোর জন্য ধনেখালী থেকে তোর প্রিয় লাল পাড়, সাদা তাঁতের একটি শাড়ি কিনে এনে রেখেছি। তা ছাড়াও আরও অনেকগুলি শাড়ি রেখে দিয়েছি। এসে ওগুলি পড়!
মা, বাবা ও আমি ভালো আছি। তুই ও জামাইবাবু আশা করি ভালোই আছিস।
চিঠির উত্তর না দিয়ে সোজা এখানে নিজেই চলে আয়!
আজ আর নয়। নমস্কার নিস! জামাইবাবুকে নমস্কার দিলাম।
ইতি-
তোর ভাই।
জল আর চোখে সামলাতে পারলাম না। গড়িয়ে পড়ছে। অন্য চিঠিগুলো রেখে দিলাম। ওতে মা ও বাবার লেখা আছে।
বাক্সটা বন্ধ করে তুলে রাখলাম।
অতীত থেকে বর্তমানে ফিরে এলাম। শ্রী কৃষ্ণের পুজোর জোগাড় করলাম।