মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

হায়রে হাওরে-২

মজনুর রহমান

৪ আগস্ট, ২০২১ , ৯:২০ অপরাহ্ণ ;

হায়রে হাওরে-২

যাত্রার শুরু তো ভালোই হয়। আনন্দদায়ক হয়। আমাদেরও হলো। সাগরিকা নামের বাসে উঠে বসেছি সন্ধ্যা সাতটায়। বিচিত্র তাদের যাত্রী। আরও বিচিত্র তাদের যাত্রাবিরতির জায়গাগুলো। সবচেয়ে বিচিত্র সুপারভাইজারের ব্যবহার। সেসব অন্য আলোচনা। তবে আমাদের আশা ছিল গাড়িতে সুপারভাইজার হিসেবে থাকবেন সবসময়ের প্রিয় বাবলু ভাই (কবি সরকার বাবলু)। বিধিবাম, পূর্ণিমারাতের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে বাবলু ভাইকে তার ডিউটির দিনে মিস করেছি ( বাবলু গেলে বাবলু পাওয়া যাবে, হাওরে পূর্ণিমা মিস হলে তো পাওয়া যাবে না)।

টাঙ্গুয়ার হাওর

বিচিত্র অভিজ্ঞতা, জ্যাম ইত্যাদি পেরিয়ে সিলেট শহরের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছলাম সকাল ৯ টার দিকে। সেখানে অপেক্ষা করছিল ঢাকা থেকে যাওয়া পল্লব ও জাহিদ। কোনমতে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে উঠে বসলাম সুনামগঞ্জের বাসে। সারারাত সহ্য হলেও এবার আর ধৈর্য কুলাচ্ছে না। খারাপ রাস্তা। তার উপরে বেলা দ্রুত মাথার উপরে উঠে যেতে চলেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আজ সকাল ৯ টার দিকে আমাদের নৌকায় থাকবার কথা। একটা দিন নষ্ট হলে অনেক ঝক্কি। হোটেল ভাড়া, নৌকার ডবল ভাড়াসহ আরও মেলা খরচ। বাজেট ট্যুরে এগুলো হিসাব করতে হয়। ১২ টার দিকে সুনামগঞ্জ শহরে নামা গেল। সেখানে লেগুনা ওয়ালাদের বহুবিধ টানাহেঁচড়া ব্যাপার থাকে। এদের প্রতিযোগিতা এবং সিন্ডিকেট দেখার মতো। কথায় বনে না বলে এক লেগুনা চালকের সাথে রাগ করে হেঁটে বেশ কিছুদূর সামনে আসি। সেখানে আরেকজনের সাথে দরদাম করে চড়ে বসেছি, এবার দেখি এ তো সেই আগেরজনই! আমাদের পাশ কাটিয়ে সামনে গিয়ে আরেকজনকে দিয়ে আমাদের আটকে ফেলেছে।

এই লেগুনায় আমরা চললাম তাহিরপুর উপজেলা সদরে। বর্ষায় যে রাস্তাগুলো কিছুদিন আগেই জলমগ্ন ছিল সেগুলো জেগে উঠেছে। ফলে প্রচণ্ড এবড়োখেবড়ো। লেগুনা চলেও ঝড়ের গতিতে। জীবন আঁকড়ে ধরে বাম্পারে ঝুলে থাকতে হচ্ছে। ফলে দুইদিকের বিস্তীর্ণ সুদৃশ্য জলাভূমি দেখার ফুরসত মেলে না।

দুপুর দেড়টার দিকে লেগুনাচালক বহু দয়া করে আমাদের তাহিরপুর বাজারে নামিয়ে দিলেন। মাঝির সাথে সারাক্ষণই কথা হচ্ছিল। এবার দর্শন পাওয়া গেল। ব্যবহার অবশ্য খুবই চমৎকার।

তবে সেই যে শুনেছিলাম আগে থেকে নৌকা বুক্ড না করলে সর্বনাশ, কথা দেখলাম সত্যি। তবে সর্বনাশটা ট্রাভেলারদের না, হবে মাঝিদেরই। কারণ গণ্ডায় গণ্ডায় মাঝি শুকনা মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের নৌকা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে। অথচ ছোট একটা নৌকা পড়েছে আমাদের ভাগ্যে! আবেগে বুকিং দিয়ে এই অবস্থা। কিন্তু কী আর করা, উপায় নেই।

মাঝি দ্রুত বাজার করে নৌকায় ওঠার তাড়া দিচ্ছেন। আমাদের দ্রুত জোহরের নামাজ আদায় করে, দুপুরের খাবার সেরে নৌকায় ওঠার কথা। দেখা গেল এমনিতে যার নামাজের ঠিক ঠিকানা থাকে না সেও সেদিন মসজিদে উপস্থিত! ওজু করে নামাজ পড়লে ফ্রেশ লাগবে!

দুপুরের খাবার সারা হলো হাওরের টাটকা মাঝের ঝোল আর ডাল দিয়ে। ক্লান্ত শরীর নিয়ে আমরা বারো জন নৌকায় উঠলাম তিনটায়।

(সময়কাল: ১২-১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯)

 

Latest posts by মজনুর রহমান (see all)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *