মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

হৃদয় সমীকরণ

মাসুদ বশীর

১৪ মে, ২০২০ , ৫:২৬ অপরাহ্ণ ;

হৃদয় সমীকরণ - মাসুদ বশীর

ধরুন, দেয়াল ঘড়ি এবং আমার ছবিটা উল্টো করে যদি টাঙানো হয় দেয়ালে- তাহলে, মনে এবং চোখে কি রকম প্রতিক্রিয়া হবে? দু’পায়ে দু’রকম কেডস্ পড়লে কেমন দেখা যাবে? শার্ট-প্যান্ট উল্টো করে পড়লে কেমন লাগবে? এরকম অদ্ভুত উল্টাপাল্টা যতসব হিজিবিজি ভাবনা সর্বদা খেলা করে হৃদয়ের মনে এবং বাস্তবিকই সে করেও ফেলে তা নিজেকে জানতে। দেখতে চায় মানুষ কতটা নিজেকে নিতে পারে নিজের মতোন করে।

হৃদয় এপ্লাইড ফিজিক্সের ছাত্র, লেখাপড়ায়ও সে বেশ ভালোই, তবুও তাকে পারিবারিকভাবে পাগলাটে বলেই জানে সবাই।

বন্ধুদের মধ্যে কার কি সমস্যা, কার অর্থের প্রয়োজন, কার পড়া বিষয়ে বুঝতে কি সমস্যা, সবকিছুই হৃদয় তার মেধা ও মনন দিয়ে আন্তরিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করে থাকে, তাই বন্ধু মহলেও সে আবার অনেক জনপ্রিয়, তাই তো বন্ধুরা তাকে হ্যালো মিঃ হৃদয় খান বলেই ডাকে। মানে তার আকিকা করা নাম ‘হৃদয় রহমান’ হারিয়ে গিয়ে এখন হয়ে গেছে হৃদয় খান।

জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী হৃদয় খানের পরিচিত গানের কলি প্রায়শই তার চঞ্চল মনে দোলা দিয়ে যায়-

“মন তোরে বলি যতো, তুই চলেছিস তোর-ই মতো… “।

আকাশটা ঘণ-মেঘে ঢেকে গেছে, থেকে থেকে মেঘের গর্জন, বিজলি চমকাচ্ছে, মাঝে মাঝে বাতাসের সাথে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। এমন বিরুদ্ধ অবস্থায় কলেজ ক্যাম্পাসে নীলা হন্তদন্ত হয়ে হৃদয় কে খুঁজছে।

নীলা, সাথী, সাগর, শাওন, আগুন এরা আবার সকলেই হৃদয়ের খুব ভালো বন্ধু, “একের জন্য সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে” এমন একটা গাঁটছাড়া অমায়িক আদর্শিক বন্ধুত্ব তাদের। তাদের মধ্যে হৃদয়টা একটু আলাদাই, মানে, যে কোন কঠিন সমস্যারও সে  একটা সুন্দর সমাধান দিয়েই দেয় অনায়াসে।

নীলা, ক্যাম্পাসে হৃদয় বাদে সকল বন্ধুদের পেয়ে গেল। সাথী বলছে- কিরে নীলা, তোর একি অবস্থা! কি এমন হয়েছে যে চোখ মুখ সব একরাতেই বসিয়ে ফেলেছিস? বাকী সব বন্ধুরাও বলে- হ্যাঁ তাইতো দেখছি আমরাও কি হয়েছে রে নীলা? নীলা বলে- তোরা চুপ করতো, আগে বল্ হৃদয় কোথায়? সাগর বলে- কি আশ্চর্য, নীলা! এই বিরুদ্ধ আবহাওয়াতেও তো আমরা তাকেই  খুঁজছি নাকি? নীলা বলে- হ্যাঁ তা তো ঠিকই, আসলে আমার মাথাটাই কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেছে।

কি এমন হলো সোনা তোমার, যে ছটফট করে শুধু হৃদয়কেই খুঁজছো, কাহিনী কি? এই কথা বলেই আগুন বলে- ও.. হৃদয় তো আবার দার্শনিক মানুষ, তারে তো খুঁজবাই! আমি একবার ঐ ঝিলের ধারে তারে একা বসে থাকতে দেখেছিলাম, একটা অন্যকাজে ব্যস্ত ছিলাম তাই হৃদয়ের সঙ্গে তখন চোখাচোখি হয়েছে কিন্তু কোন কথা হয়নি। চলতো দেখি ভাবুক সাহেব হয়তো ওখানেই আছেন…

যথারীতি হৃদয় কে ওখানেই পেয়ে গেল তারা। আবহাওয়ার দিকে হৃদয়ের যেন কোন মালুমই নেই! সে শুধু অসীম আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে থেকে হাত তুলছে আর নামাচ্ছে আর বিরবির করে মনে মনে কি যেন বলছে!

শাওন পেছন থেকে হৃদয় কে ধাক্কা দিয়ে বলে- এই যে খান সাহেব, হয়েছে আর উপরে তাকাতে হবেনা, আমার দিকে তাকান, আমরা আপনারে সেই কখন থেকে হন্যে হয়ে খুঁজছি, মানে আপনারে নীলা ম্যাম খুঁজছেন, আর আপনি এখানে বসে বসে কি গুনছেন? সম্বিত হৃদয় পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে নীলাসহ সবাই দাঁড়িয়ে। নীলার চোখেমুখে বিষন্নতার ছায়া, যেন বুকের মধ্যে তুমুল ঝড় বয়ে যাচ্ছে। হৃদয় তার স্বভাবসুলভ মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে কি এমন হলো যে আমার খোঁজ? আমিতো আকাশ গুনছিলাম, ভাগ করছিলাম, বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর ভাগে কতটা হিস্যে পড়লো। নীলা বলে- এই, হেয়ালি রাখ্, আমি বড্ড সমস্যায় পড়েছি। সাথীসহ সবাই নীলাকে বলে- তখন থেকে শুধু সমস্যা সমস্যাই করছিস, কি হয়েছে তাতো একবারও আমাদের বললি না, এখন তো হৃদয় কে পেয়েছিস ওকে বল্, আমরা না-হয় যাই…

নীলা, সকল বন্ধুদের বলে- দোস্ত, তোরা মাইন্ড করছিস কেন্? আমি চেয়েছি হৃদয়সহ সকল বন্ধুরা একসাথে মিলিত হয়ে কথাটা শেয়ার করতে। হৃদয় বলে- এই তোরা থাম্ তো। নীলা বলতো কি হয়েছে বল্? নীলা অশ্রুসিক্ত নয়নে কান্না ভেজা কন্ঠে হরহর করে বলতে থাকে- আমার না বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে, কয়েকদিন ধরেই আবছা আবছা শুনছিলাম, কিন্তু গতরাতে মা ভালোভাবেই জানালো। ছেলে, বাবা’র পরিচিত একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার কানাডায় থাকে, এই ঈদে দেশে আসবে বিয়ে করতে। হৃদয় মনোযোগ সহকারে নীলার কথাগুলো শুনে বলে উঠলো- এতে আমিতো সমস্যার কিছুই দেখছিনা, কি সমস্যা, বিয়ে করে ফ্যাল্। নীলা বলে- এটা কোন সমাধান হলো? আমার পড়া এখনো শেষ হয়নি, তা ছাড়া আমি নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে এখন বিয়ে করবোনা। হৃদয় স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হৃদয়ে ব্যথাভরা অট্টহাসিতে বলে ওঠে- হা – হা – হা! তাহলে তুই কার পায়ে দাঁড়িয়ে আছিস্ রে। শোন, একটা কথা বলি- আমিওনা এতক্ষণ বসে বসে ওই দাঁড়িয়ে থাকা নিয়েই ভাবছিলাম, মানে পৃথিবীটা তো কমলালেবুর মতো চ্যাপ্টাসহ গোল, তাই আমি কিছুতেই সমাধান আনতে পারছিনা আমাদের ভূখণ্ডে আমার অবস্থান কি রকম? মানে, আমি কি দাঁড়িয়ে আছি নাকি বাদুড়ের মতো ঝুলে আছি, এই তোরা কেউ কি জানিস কিছু, একটু বলবি আমায়…

নীলা রেগেমেগে হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে বলে- তুই কি কোনদিন সিরিয়াস হবি না হৃদয়? আমি মরি আমার জ্বালায় আর সে আছে ফান্ নিয়ে! নীলার সঙ্গে অন্য বন্ধুরাও বলে ওঠে- ঠিক-ই তো, এটা তো ঠিক হলোনা হৃদয়। হৃদয় বলে- আমি কি সমাধান দিবো? সাথী তৎক্ষনাৎ বলে ওঠে- নীলার জন্য তো আমাদের একটা কিছু করতেই হবে। সাগর, আগুন, শাওন ওরাও বলে- একটা কাজ করলে কেমন হয় আমরা খালাখালুকে বুঝিয়ে বললাম যে, নীলা তো এখন বিয়ের জন্য প্রস্তুত নয়, সামনে ওর ফাইনাল পরীক্ষা, পরীক্ষাটা শেষ হোক, তারপর নাহয়…

নীলা বলে- আমার বাবা-মা রে তোমরা চেনো না, ওগুলো করে কিছুই লাভ হবেনা। হৃদয় নিরবতা ভেঙে বলে- শোন্ নীলা ছেলেটাকে আগে দেশে আসতে দে, তারপর তার সাথে আমরা মিট্ করবো, তোর পড়াশোনার ব্যাপারে তুই তাকে বলবি যে, বিয়ের পরেও পড়তে দিতে হবে, নাহলে এ বিয়েতে তুই রাজি নস। আর বিয়ের পরেও তো পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া যায়, কেন এই যে, আমাদের সাথী করছে না। সাথী বলে- হ্যাঁ একটু তো সমস্যা হয়-ই, তবে কথায় বলে নাঃ “ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়”। হৃদয় বলে- ঠিক তাই, তারপরেও যদি বর ব্যাটারে তাড়ানো না যায় তখন দেখবো নে কি করা যায়। নীলা বলে – তোরা যে কি শুরু করলি, আপসোস আমার মনের কথাটা তোরা কেউ-ই ঠিকভাবে বুঝলি না।

হৃদয় বলে- তোমার মনের কথাটা কি বন্ধু, একটু খোলাসা করে বলে ফ্যালো দেখি। নীলা অনুচ্চারিত কন্ঠে মাটির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে- “এ.. ন্যাকা, যেন কিছুই বোঝেন না”। এদিকে আকাশ ভেঙে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। সবাই বলছে এই হৃদয়-নীলা আমরা কি এভাবে বৃষ্টিতে ভিজবো, তাহলে তোরা থাক আমরা যাই, এই বলে- ক্যাম্পাস বিল্ডিংয়ের দিকে তারা দে দৌড়। হৃদয়-নীলাও বলে ওঠে- আমরা থাকবো মানে, কি বলছিস তোরা? এই বলে তারা দু’জনও দৌড়তে যাবে এমন সময় হৃদয়ের আংগুলে থাকা নীলা-পাথরের আংটিতে নীলার ওড়না জড়িয়ে যায়, তখন তারা একে অপরের দিকে অপলক চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ! এদিকে মাটিতে অঝোর ধারায় বৃষ্টি গান গাইছে, যেন উভয়ের চোখস্নাত দৃষ্টিতে বেজে উঠছে অমলিন সুরঃ তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম…

 

মাসুদ বশীর
Latest posts by মাসুদ বশীর (see all)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *