মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

হেই সামালো ধান হো-৩

ডা.ফেরদৌস রহমান পলাশ

১৩ জানুয়ারি, ২০২১ , ৮:৫৩ অপরাহ্ণ ;

ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশের - হেই সামালো ধান হো

পর্ব – ৩

সকাল থেকেই এলাকায় চাপা উত্তেজনা। মুখে কেউ কিছু না বললেও সবাই বিষয়টা জানে। আজ উঠান বৈঠক হবার কথা গেন্টুর বাড়িতে। উপস্থিত থাকার কথা ঠাকুরপ্রসাদ, আসিমুল্লাহ, জীতেন দত্তদের। সূর্য হেলে পড়লো পশ্চিম আকাশে। অন্যদিন দেরি করে মাঠ থেকে ফিরলেও আজ সবার তাড়া দ্রুত ফেরার। গ্রামের মফিজ, মন্টু, রিয়াজুল মুন্সি, হরেণ, কানাই তো এসেছেই। উপস্থিত হয়েছে সোনাবালা, মিনুরাণী, মালতীরাও । সভার শুরুতে জীতেন দত্ত শুরু করেন তার কথা। কৃষকের কষ্টের কথা, বঞ্চনার কথা, শোষণের কথা। বলেন, আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে। সবাই একসাথে থাকলে আর এভাবে না খেয়ে থাকতে হবে না।

ঠাকুরপ্রসাদ যখন কথা বলা শুরু করলেন তখন চারিদিক অন্ধকার। গেন্টুর বৌ একটা কুপি জ্বালিয়ে পায়ের কাছে রেখে দেয়। যতটা না আলো তারচেয়েও বেশি আঁধারে কথা শুরু করেন ঠাকুরপ্রসাদ। সভা শেষে বাতাসন রায়ত সমিতির নেতৃত্বে খাজনা বন্ধ আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয় এরপর ফসল কাটলে আর জোতদার  টেল্লা বর্মণের ঘরে তোলা হবে না। সবাই শ্লোগান দেয়-

ধান কেটে ঘরে তোল

নিজ খুলিতে ধান তোল।

কৃষক সমিতি জিন্দাবাদ

ইনকিলাব জিন্দাবাদ।

জোতদার টেল্লা বর্মণের বাড়িতে ঢুকতে হলে দুইটা গেট পার হতে হয়। প্রায় দুই বিঘা জমির উপর বাড়ি। আছিরউদ্দিন কাঁচুমাচু হয়ে ভেতরে ঢুকে। গেটে লাঠি হাতে দুইজন পাহারাদার। তাদের পেরিয়ে ভিতরে ঢুকতে একটা পিঁপড়াও পারবে না। কাচারিঘরে বসে চিন্তিত ভঙ্গিতে হুকা টানছে জোতদার। আছিরউদ্দিন দূর থেকে আদাব বলে ভিতরে ঢুকে। আছিরউদ্দিনকে দেখে নড়েচড়ে বসে টেল্লা বর্মণ।

কি খবর আনলা?

হুজুর এবার হামার কিষাণেরা নাকি আর খাজনা দিবার নয়।

নড়েচড়ে বসে টেল্লা। মাথার উপর ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ তারপর বলে, মহারাজ বাহাদুর সিং খাজনা আদায় বাড়িয়ে দিলে আমি কী করবো?

-মুই তো জানো হুজুর, কিন্তু ঠাকুর ব্যাটা সবাকগুলাক জটলা কইরবার নাগছে।

– ঠাকুরকে কীভাবে ঠাণ্ডা করতে হয় সেটা আমি দেখবো বলে একতোড়া টাকা ছুড়ে দেয় আছিরউদ্দিনের দিকে।

আছিরউদ্দিন চলে যাবার পর টেল্লা ডেকে পাঠায় তার লাঠিয়াল বাহিনীর সর্দার নজরউদ্দিনকে।

নজরউদ্দিন এলাকার নামকরা গুণ্ডা। তার দলে আরও পঁচিশ জন রয়েছে যাদের কাজ এলাকায় গণ্ডগোল করা আর টেল্লা বর্মণের হয়ে কৃষকদের জুলুম করা।

-তো ঐ কথাই রইলো বলে হুঁকায় টান দেয় টেল্লা বর্মণ।

দীর্ঘদেহী নজরউদ্দিন হাতজোড় করে বলে, হুজুর আপনি আমার মা বাপ আপনার আদেশ পালন করা আমার জন্য ফরজ।

-টাকার একটা পুটলি ছুঁড়ে দেয় টেল্লা। শূন্যেই সেটা লুফে নেয় নজরউদ্দিন। তারপর মাথা নিচু করে সালাম দিয়ে কাচারিবাড়ির বাইরে আসে।

সদরগেটের দারোয়ানের কাছ থেকে লাঠিটা ফেরত নেয় নজরউদ্দিন। লাঠি নিয়ে টেল্লার সাথে দেখা করা যায় না। হারামজাদা বলে থুথু ছিটায় নজরউদ্দিন। ডাকাতি করার পর মাল নিজের বাড়িতে রাখা যায় না বলে টেল্লার বাড়িতে রাখে সেই মালের অর্ধেক নিয়ে নেয় টেল্লা বাকি অর্ধেক নিজেরা ভাগ করে নেয়। পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য টেল্লাকে ভাগ দিতেই হয়। আজ কৃষকদের দাবির সাথে নিজেও টান অনুভব করে। উপায় নাই টেল্লার জাল থেকে বের হবার। বের হলেই পুলিশ তাকে জেলে পুরবে। লম্বা পা ফেলে টংকুর বাড়ির দিকে হাঁটা দেয় নজরউদ্দিন। মাথার উপর সূর্য। সে নিজের ছায়াকে মাড়িয়ে হেঁটে যায় উত্তরদিকে।

Latest posts by ডা.ফেরদৌস রহমান পলাশ (see all)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *