১১
রাত যত গভীর হয় এ পল্লীর লোকজন ততই কর্মতৎপর হয়ে ওঠে। প্রবেশপথে একদুজন মাতাল বিশ্রী গালাগালি করে। ভিতরে সারিবদ্ধ টিনের ঘর। ঘরগুলোর সামনে দিয়ে মাটি কেটে অগভীর ড্রেন। ভেসে যাচ্ছে পল্লীর সব আবর্জনা পাশের চিকলি নদীতে। সেই পল্লীর মর্জিনার ঘরে বসে আছে নয়মুদ্দিন সহ আরও কয়েকজন। নয়মুদ্দিন কথা বলা শুরু করে।
– হামাক এইলাক এইভাবে অপমান কইরবার পারিল না হয় মহিলাগুল না থাইকলে। এর একখান বিহিত কইরবার নাগবে।
– চলেন ওমারগুলার বাড়িত আগুন নাগে দেই বলে কানাই।
– না, ওগুলো করা যাবার নায়। ওমার ধান এলাও ডাংগায় নাই। হাটো সগলে ওইল্যা চুরি করি আনি।
দ্রুতপায়ে মর্জিনার ঘর থেকে বের হয়ে আসে সবাই। রাতের আঁধারে দুইটা গরুর গাড়ি এসে দাঁড়ায় খগেনের বাড়ির সামনে। খগেনের বাড়ির সবাই তখন গভীর ঘুমে মগ্ন। যত দ্রুত তারা এসেছিল তারচেয়েও দ্রুত গরুর গাড়ি বোঝাই করে ধান চলে যায় জোতদারের বাড়ির দিকে। অপরাধকে ঢাকতেই কিনা, সেদিন চাঁদও ঢাকা ছিল ঘন মেঘে।
১২
মানুষটাকে দেখলে এ অঞ্চলের মনে হয় না। মনে হয় আরব দেশের কেউ। লম্বা, ফর্সা বুক পর্যন্ত দাড়ি। মনে হয় যেন কোন সুফি দরবেশ। তিনি আর কেউ না। জনদরদী বিপ্লবী আসিমুল্লাহর সুযোগ্য পুত্র দারাজউদ্দিন।
এলাকার সবাই তাকে চিনে জনদরদি সমাজসেবক হিসেবে। কৃষকের পাশে এসে দাঁড়াতে গিয়ে দেখলেন শুধু এলাকায় সচেতনতা বাড়িয়ে লাভ নাই। সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সংগঠনের সাহায্য নেয়াও জরুরি। কমরেড সতীশ পাকড়াশী ১৯৩৬-৩৭ সাল বদরগঞ্জে আত্মগোপন করে ছিলেন। আজ তার আসার কথা গোপনে। কাচারিতে বসে আছেন। এমন সময় একজন জেলে কাঁধে জাল নিয়ে দরজায় উঁকি দিল। শরীরে কাঁদা মাখা, হাতে একটা মাটির হাঁড়ি। সম্ভবত মাছ আছে তাতে। বাবু মাছ নিমেন? কন্ঠস্বর শুনে তাকায়। চেনাই যাচ্ছে না সতীশ পাকড়াশীকে। ভিতরে এসে বসে। কিছুক্ষণ পর বিজয় রায়, শচীন রায় উপস্থিত হন ফকিরের বেশ ধরে। জমিদারদের অত্যচার আর কৃষক আন্দোলন নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়।
সতীশ পাকড়াশী মাথার গামছা খুলতে খুলতে বলেন, জিতেন কে দায়িত্ব দেয়া হোক সংগঠনটাকে শক্তিশালী করতে। যেহেতু আমরা বের হতে পারছি না।
দারাজউদ্দিন তার দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন, কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারলেন?
মুজফ্ফর আহমেদের সাথে কথা হয়েছে। মার্কসবাদ পাঠচক্র গড়ে তুলতে হবে।
পৌষের বদরগন্জের মেলায় অনেকলোক আসে সেসময় যদি আমরা একটা শোভাযাত্রা করতে পারি তবে সাধারণ মানুষ জানবে।
তবে সে কথাই রইলো মাছের ভান্ড দারাজউদ্দিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো ভালো পুইয়া মাছ পাওয়া গেছে। পিঁয়াজ দিয়ে তরকারি রেঁধে খাইও। তিন কমরেড দ্রুত চলে গেল কোন চিহ্ন না রেখে।