মূল: রিচার্ড হেন্ড্রিক
ভূমিকা ও অনুবাদ: রেজাউল ইসলাম হাসু
রিচার্ড হেন্ড্রিক
রিচার্ড হেনড্রিক হলেন একজন রোমান ক্যাথলিক। আয়ারল্যান্ড করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোরভাবে কতিপয় পদক্ষেপের ঘোষণা দেয়। এরই ফলশ্রুতিতে গত ১৩ মার্চ ফেসবুকে হেনড্রিক কবিতাটি শেয়ার করেছিলেন, যাতে এটি বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য সংকটের ‘ভয়’ এবং ‘বিচ্ছিন্নতা’ সমন্ধে মানুষকে সম্যক ধারণা দিতে সক্ষম হয়। কবিতাটি বার বার আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, ‘হ্যাঁ ভয় আছে, তবে থাকবে না কোনো ঘৃণা সেজন্য। বিচ্ছিন্নতা আছে তবে থাকবে না কোনো একাকীপনা’। এবং ‘আবার উহানে/পাখিদের কলতানে/মুখখরিত হবে,/স্বচ্ছ হবে আকাশ/আসবে ফাগুন,/এবং আবার হৃদয়ের অন্ধকারে/জ্বলে উঠবে প্রেমাগুন।/হৃদয়ের জানালা খুলে দাও/এবং প্রত্যুষের গান গাও/যদিও সইতে না পারো/গৃহের শূন্যতা কারো… বলে কবিতাটি শেষ করেছেন। এ যেন লকডাউন পৃথিবীরই হৃদপিন্ড থেকে উঠে আসা উৎকণ্ঠা আর উপাসানার অভিব্যক্তি।
হ্যাঁ ভয় আছে।
আছে বিচ্ছিন্নতা।
আতঙ্ক আছে।
আছে অসুস্থতা।
আছে মৃত্যুও।
তবুও
আমরা বলছি
উহানে
আবার পাখিদের কলতানে
ভাসবে
আমরা বলছি
নৈশব্দ্যের দিনলিপি শেষে
ধোঁয়াশার আকাশে
রোদের পাণ্ডলিপি হাসবে।
আমরা বলছি
অ্যাসিসির রাস্তা-ঘাটে
ধূধূ মাঠে
মানুষ মেতে উঠবে
বসন্তের কবিতা পাঠে।
খুলে দাও বদ্ধ জানালা
রিক্ত যারা
স্বজনদের ডাক শুনত পাক
চারপাশে তারা।
আমরা বলছি
বিনামূলে খাবার আসছে
আবদ্ধ গৃহগুলোতে।
বিচ্ছিন্নতার বিষাদ ভুলাতে
জানি আজ সেবক-সেবিকারা
শোভাকাঙ্ক্ষী,
প্রেমিক-প্রেমিকারা
ব্যাস্ত আর যেন নিষ্প্রভ তারা।
আজ মসজিদ-মন্দির
গীর্জার নীড়,
উপাসনায়-প্রার্থনায়
প্রবল অধীর।
এমত সময়ে
হে হৃদয়, হৃদয়ে
থেকো না বধির।
আর গৃহহীন,
অসুস্থ-ক্লান্ত
ক্লেদাক্তদের ছাদ দিন
ছাউনি দিন।
পৃথিবী লকডাউন হচ্ছে,
আমরা লকডাউন হচ্ছি।
যেন পুনর্জন্ম হবে আমাদের,
নতুন চোখ হাতড়াচ্ছি
চারপাশ দেখার!
দাঁড়িয়ে আছি নিবদ্ধ চোখে
কোনো এক শ্রীহীন
সত্যাভিমুখে।
হায়
সত্যিই, আমরা কতো অসহায়!
কতো অসহায়!
অন্তত
সামান্য নিয়ন্ত্রণ থাক আমাদের।
সামান্য ভালোবাসা থাক হৃদয়ের।
অতএব
আসুন আমরা প্রার্থনা করি,
এবং ধারণ করি
হ্যাঁ, ভয় আছে।
তবে থাকবে না কোনো ঘৃণা।
আছে বিচ্ছিন্নতা।
তবে থাকবে না একাকীপনা।
আতঙ্ক আছে।
তবে থাকবে না নীচতাযোগ।
অসুস্থতা আছে।
তবে থাকবে না মনোরোগ।
হ্যাঁ, আছে মৃত্যুও।
প্রণয় পুনর্জন্ম নেবে
তবুও।
কীভাবে বাঁচবো
হে প্রাচীন সন্ধ্যা?
বের করো সেই পথ,
আর প্রজ্জ্বলিত পন্থা।
পেছনে ফেলে
আতঙ্কের শোরগোল,
করুণ কান্নার রোল;
আবার নেবো নিশ্বাস।
আবার উহানে
পাখিদের কলতানে
মুখখরিত হবে,
স্বচ্ছ হবে আকাশ।
আবার আসবে ফাগুন,
এবং হৃদয়ের অন্ধকারে
জ্বলে উঠবে প্রেমাগুন।
হৃদয়ের জানালা খুলে দাও,
এবং প্রত্যুষের গান গাও;
যদিও সইতে না পারো
গৃহের শূন্যতা কারো…
অনুবাদক : তরুণ সাহিত্যিক। প্রকাশিত বই দুইটা। এক. ওকাবোকা তেলাপোকা (২০১৬) -শিশুতোষ ও এলিয়েনের দেশ পেরিয়ে (২০১৭)-শিশুতোষ।