মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

মনের আধাঁর পেরিয়ে

পল্লব শাহরিয়ার

১৭ জুলাই, ২০২০ , ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ

মনের আধাঁর পেরিয়ে

(পর্ব-৩)

সেন্টের শিশিটা নিয়ে নেড়েচেড়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে বলল- কোথায় পেলে? ভাইয়া কিনে দিয়েছে?

রাগ চাপতে হয়েছিল রাত্রিকে- না, বাপের বাড়ি থেকে এনেছিলাম, বিয়েতে দিয়েছিল।

একটু হেসে মিথ্যে করে বলতে হয়েছিল, ভুলে গিয়েছিলাম। আজ হঠাৎ পেয়ে গেলাম।

নিশি বিশ্বাস করেনি বোধহয়। ভেবেছিল ওর ভাই ভালবেসে কিনে দিয়েছে। রাগ সে কারণেই। বিদেশী? খুব দাম তাই না? একটু থেমে বলেছিল, তবে আজকাল চেনার উপায় নেই, এত জাল বেরিয়েছে এসব।

মনে মনে রাত্রি তখন বলছে, আমার বাপের বাড়ি থেকে দেয়া জাল তো হবেই। ড্রেসিং টেবিলে দুতিনটে সেন্টের শিশি পড়েই থাকতো, কিন্তু তার পর থেকে নিশি মাঝে মাঝেই এসে বলতো, তোমার সেই বিদেশীটা কই!

দিতে হত। ঢেলে নিয়েছিল কোন শিশিতে, নাকি যথেচ্ছ ব্যবহার করেছিল, হঠাৎ একদিন ফেরত দিয়ে গেল, তলানি একটুখানি পড়ে আছে। দেখেই অবাক হয়ে ও নিশির মুখের দিকে তাকিয়েছিল,  তারপর বেশ রাগের গলায় বলেছিল, ওটা আর ফেরত দিচ্ছ কেন, তুমিই নিয়ে নাও।

নেয়নি, ঠিক করে শব্দ হল, ওটা নিশির রাগ, টেবিলে রেখে চলে গিয়েছিল সে। আর রাত্রির চোখে তখন জল এসে গিয়েছিল। মনে পড়ে গেছে হাত খালি হওয়া, বাবার চোখেও যেন জল এসে গিয়েছিল, মার্কেটিং করতে গিয়ে মা-মেয়ে সব টাকা খরচ করে এসেছে শুনে। তখনও কত কি বাকি, বিয়ের রাতটাও।

এখন রাত্রি নিশির ব্যবহার পছন্দ করে না ঠিকই, দুজনের মাঝখানে একটা দূরত্ব গড়ে উঠছে। মাঝে মাঝে নিশির জন্য রাত্রির মায়া হয়। ও তো একটা সাধারণ মেয়ে, না রূপ না গুণ। চেষ্টা করলেও চাকরি পাবে কোথায়। যথেষ্ট বয়স হয়ে গেছে। জীবনটা কাটাবে কিভাবে? নিশি আগে ক্যাসেট ছেড়ে গান শুনতো, আজকাল শোনে না। সবকিছুই যেন ওর কাছে বিষাদ হয়ে গেছে।

রাত্রি হঠাৎ একটা স্বপ্ন দেখতে চাইলো। ওর অনেক টাকা হয়েছে। অনেক টাকা। আঃ সত্যি সত্যি যদি তা হত, ও মনে মনে ভাবলো, তা হলে আর টাকার জন্য নিশির বিয়ে আটকাবে না। ওর বিয়ের জন্য যা লাগে রাত্রি দিয়ে দেবে। নিশির জন্য মায়া, নাকি নিজেই পরিত্রাণ চাইলো? বিয়ে দিতে পারলে একটু নিশ্চিন্ত হওয়া। শাশুড়ি একদিন বলেছিল, তোমাদের কোন চিন্তা নেই, শ্বশুরের না হয় বয়স হয়েছে তোমরা তো একটু চেষ্টা করতে পারো।

যেন দোষ রাত্রির।  দেখতে তো পাচ্ছে ছেলেকে নিয়ে ও কি রকম নাজেহাল। নিলয়কে যে অফিস যাওয়ার সময় নিজের হাতে খেতে দিবে তারও উপায় নেই। রান্নার লোকের ওপর ছেড়ে দিয়ে ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যেতে হয়। আর নিলয় ন’টার মধ্যে অফিস, ফেরে ক্লান্ত হয়ে সন্ধ্যার পর।

দুয়েকবার বিজ্ঞাপন দিয়েছিল নিশির জন্য। কিছুই তো হলো না। কখনো পছন্দ হয় না, কখনো টাকা পয়সায় আটকায়। দুয়েকজায়গায় নিশি কিংবা শাশুড়ির আপত্তি।

নিশির বিয়ে দিতে পারলে ও নিজেই তো নিস্তার পেত। বিয়ের পর সব মেয়েরই ভেতর একটা স্বপ্ন থাকে, স্বামী পুত্র নিয়ে একটা পৃথক সংসার। রাত্রিরও ছিল। ভেবেছিল কোন একদিন নিলয়কে নিয়ে অন্যত্র উঠে যেতে পারবে। এখন আর ভাবে না। আর্থিক অসুবিধে নেই, কিন্তু জেনে গেছে নিলয় কোনদিনও এই সস্তা ভাড়ার বাড়িটা ছেড়ে যেতে চাইবেনা। রাত্রি নিজেও বোধহয় কেমন একটা মায়ায় জড়িয়ে গেছে। কিংবা মায়া নয়, অভ্যাস।

প্রথম যেদিন নিলয়ের বেতনের টাকা রাত্রির সামনেই শ্বাশুড়ির হাতে তুলে দিয়েছিল সেদিন বুকের কোণে একটু খিচ করে লেগেছিল ঠিকই, তবু মনকে সান্তনা দিয়ে বলেছিল, আমি তো তখন নতুন বউ, এতদিনতো মাকেই দিয়ে এসেছে, হয়তো লজ্জা। ভেবেছিল কোন একদিন বলবে, কিংবা নিলয়ই ওর হাতে তুলে দিয়ে বলবে, যা লাগে মাকে দিয়ে দিও।

বলেনি, স্বামীর উপার্জনের টাকাটা রাখার অধিকারটুকু না থাকলে ভিতরে ভিতরে নিজেকে কত ছোট লাগে ওরা বোধহয় বোঝে না। আর সেজন্যই রাতুলকে গোসল করাতে গিয়ে সাবান ফুরিয়ে গেছে দেখে নিশিকে ডেকে নতুন সাবান চাইতে হয়। প্রথম প্রথম চাইতেও লজ্জা হত, শ্বাশুড়ি না বলে বসে, এইতো সেদিন বের করে দিলাম একটা। সে কথা ওরা বলেনি কোনদিন, তবু একটা আশঙ্কা ছিলই। তাই চাইতে ভয় পেত, এখন আর পায় না। এখন আর ওসব ভাবে না। ও জেনে গেছে এই বাড়িটাই ওর বর্তমান, এটাই ওর ভবিষ্যৎ।

দুই

রাত্রি জানে নিলয় এ সময় বাড়ি ফিরবে না। বেশ রাত করেই ফিরবে, এবং কিছু একটা অজুহাতও দেখাবে। সেটা বিশ্বাসযোগ্য না ঠেকলেও রাত্রির ভ্রু কুচকে উঠবে না, আবার ঠোঁটে একটা অবিশ্বাসের মৃদু হাসিও ঝিলিক দিয়ে যাবে না।

আসলে এই একটি দিন রত্রির কাছে বড় অস্বস্তিকর। সমস্ত ব্যাপারটাকে নিলয় যদি স্বাভাবিক করে নিতে পারতো তাহলে অস্বস্তি থাকতো না। কিন্তু নিলয়ের  এই ইচ্ছাকৃত অনুপস্থিতি শুধুই যে অস্বস্তিকর তাও নয়। নিলয় থাকলে ওকে কেমন একটা জড়তা যেন পেয়ে বসে। নিজেকে ঠিক তেমন স্বাধীন মনে হয় না।

দরজার বেল শুনেই বুঝতে পেরেছিল, শ্রাবণ।

বসো, পাঠিয়ে দিচ্ছি।

রাতুলকে ডেকে নিয়ে রান্নাঘরে চলে এসেছে। এ সময়ে কাজের মেয়েটা থাকে না। তাই চা নিজেই বানাতে হয়। নিলয় চা পছন্দ করে, কফি একেবারেই নয়। রাত্রি নিজেও চায়ের ভক্ত, তবে খুব শীত পড়লে কখনও সখনও যে কফি খায় না তাও নয়। একটা ছোট প্যাকেট কফি এনে রাখে মাঝে মাঝে, নিলয়ের হয়তো চোখেও পড়েছে। কী ভেবেছে কে জানে।

না, ওটা মাসকাবারি বাজারের লিস্ট করার সয়ম ও ইচ্ছে করেই লেখে না। কেন লেখে না সেটা ওর কাছে রহস্য। ‘কফি’ শব্দটা দেখলেই কি নিলয় অবাক হবে? কিছু প্রশ্ন করবে? আর করলেই বা! শুনে নিশ্চয়ই মুখ গোমড়া করবে না। তবু ওই ছোট একটা প্যাকেট ও নিজেই কিনে আনে। সকালেই নিলয়কে বলেছে, আজ শ্রাবণের আসার কথা।

খবরের কাগজ থেকে মুখ না তুলে নিলয় শুধুই বলল- ও।

রাত্রি তখনই রান্নাঘরে এসে দেখে নিয়েছে খোলা প্যাকেটে কতটা কফির গুড়া আছে। আছে। দুধ? হ্যাঁ, তাও। রান্নাঘরে স্টোভ জ্বেলে দুধ গরম করতে করতে শ্রাবণ আর রাতুলের অস্পষ্ট গলার স্বর শুনতে পাচ্ছিল ও। ওরা এখন সামনের ছোট্ট গ্রীল বারান্দায় বসে মশগুল হয়ে গল্প করছে। কী এত গল্প করে কে জানে।

এখন আর তেমন ভয় হয় না। প্রথম প্রথম একদিকে লজ্জা আর সংকোচ, আরেকদিকে ভয়। এই রাতুলকে নিয়েই। ভেতরে ভেতরে একটা চাপা রাগও কী ছিল না।

কফির কাপটা শ্রাবণের সামনে নামিয়ে রাখতেই শ্রাবণ রাত্রির দিকে মুখ তুলে এক পলক তাকিয়ে কফির কাপটার দিকে চোখ নামিয়ে বলল, বসো।

– আসছি। বলেই রাত্রি সরে গেল, যেন ওদিক কোনও সাংসারিক কাজ পড়ে আছে। অথচ একেবারে যে বসার ইচ্ছা হল না তাও নয়।

মাকে চলে যেতে দেখে রাতুল বলে উঠলো, বসো না মা।

– আসছি, আসছি। ফিরে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করল রাত্রি। কিছু একটা কাজ নিয়ে নিজেকে তো ব্যস্ত রাখতে হবে, তা না হলে ওখানে গিয়ে না বসার কোনও যুক্তি থাকে না। তাই দড়িতে টাঙানো জামা-কাপড় তুলে এনে ইস্ত্রি করতে শুরু করবে কিনা ভাবল।

একবার মনে হল শ্রাবণ নিশ্চয়ই সোজা অফিস থেকে এখানে চলে এসেছে। ওকে কী একটা ওমলেট করে দেবে? কী আশ্চর্য, এটা তো সাধারণ ভদ্রতা, এতক্ষণ ওর মনে হয়নি কেন। এর আগে যখন এসেছে কফির সঙ্গে যে কিছুই দেয়নি তা তো নয়। তবে?

ওই যে সকালে খবরের কাগজ পড়তে পড়তে শ্রাবণের আসার কথা শুনে নিলয় মুখ না তুলেই শুধু একটা ছোট্ট ‘ও’ বলেছিল সেটাই কী ওর মাথায় সারাদিন ঘুরছে? ওকে সঙ্কোচে টেনে রেখেছে! প্রথম প্রথম শ্রাবণ যখন আসত, নিলয় বাড়িতে থাকলে রাত্রির বড় অস্বস্তি হত। কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারতো না। কিন্তু আজ সে না থাকলেও সকালবেলায় তার নিতান্ত উদাসীন ও উপেক্ষার একটা ছোট্ট ‘ও’ শব্দ রাত্রির হাতে পায়ে বেড়ি পরিয়ে দিচ্ছে কেন। নাকি ওই ছোট্ট ‘ও’ শব্দটার আড়ালে অন্য কোন অর্থ আছে! না, থাকার কথা নয়। আসলে সবই হয়ত ওর নিজেরই মনগড়া সন্দেহ।

নিলয় ভাল করেই জানে যে এখন ওর জীবনে শ্রাবণের কোন অস্তিত্ব নেই। ওর আর শ্রাবণের মধ্যে যে ক’টা বছরের তিক্ত সম্পর্ক ছিল তাও আজ রাত্রি প্রায় ভুলে যেতে বসেছে। কিন্তু এমন একটা দিন ছিল, এই সেদিনও যখন ছোট ছোট দুয়েকটা ঘটনা বা কথা মনে পড়ে গেলেই রাত্রির সারা শরীর কিড়বিড় করে উঠত, অক্ষম রাগে জ্বলে উঠত ওর ভেতরটা। সে সময় এই নিলয়ই সান্তনা হয়ে এসে হাজির হল। রাত্রি সান্তনা খুঁজছিল, না শ্রোতা, ওর ঠিক মনে নেই।

কত ছোট ছোট কথা এক এক সময় কত বড় হয়ে দেখা দেয়। একটা মানুষের পছন্দ-অপছন্দ আরেকজনের যদি ভাল না লাগে, একটু একটু করে গোটা মানুষটাকেই দূরে সরিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। হয়তো একটু একটু করে নিজেই সরে আসে। এমন কী প্রচন্ড ভালবাসার মানুষের কাছ থেকেও।

রাত্রির সেদিনের বিষণ্ন বিবর্ণ মুখের দিকে তাকিয়েই কী নিলয় কোন সমবেদনা বোধ করেছিল, করুণা করে এগিয়ে এসেছিল। না, রাত্রির যদ্দুর মনে পড়ে ও তখন ভেঙ্গে পড়া চেহারাটায় শিরদাড় সোজা করে মুখে হাসি আনতে পেরেছে। তবে ভেতরে ভেতরে বোধহয় নিজেকে নিঃস্ব ভাবতে শুরু করেছে। শিশু বয়সের রাতুলের দিকে তাকিয়ে যেমন উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা, তেমনই বড় বেশি অসহায়।

রাত্রির হয়ত এক একদিন ইচ্ছে হত একজন কেউ ওর পাশে এসে দাঁড়াক। অকৃত্রিম কোনও বন্ধু, একখানা বাড়ানো হাত যার নাম সহায়। যার কাছে অকপটে মনের সমস্ত দুঃখের কথা বলা যায়। পিঠে হাত রেখে কেউ সান্তনা দেক তা চায়নি, শুধুই চেয়েছে অসীম ধৈর্য নিয়ে ওর সব কথা কেউ শুনুক। একজন কাউকে তো মানুষের বিশেষ করে দুঃখী মানুষের সব কথা বলতে ইচ্ছা করে। সব কথা শুনে কেউ বলুক তুমি কিছু ভুল করোনি।

আর সকলেই শুধু একটা কথা শুনিয়েছে, তুই ভুল করছিস, ভুল করছিস। এখনও সময় আছে ফিরে যা।

কেউ বলেনি, এখনও জীবন আছে, ফিরে আয়।

নিলয়কে তখন কত টুকরো টুকরো কথাই না বলেছে। এইসব ছোট ছোট ব্যাপার কেন লাগে, কোথায় লাগে, আর কেন তা এত বড় হয়ে দেখা দেয় রাত্রি নিজেও বুঝতে পারে না। শ্রাবণ কফি ভালবাসে, চা একেবারেই নয়। এদিকে বাপের বাড়িতে ছোটবেলা থেকে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা রাত্রির চা না হলে চলে না। এটা এমন কিছু একটা বিপর্যয় নয়, রাত্রি নিজেও জানে।

নিজর দুঃখের প্রসঙ্গ টেনে এনে একদিন সে সব কথা নিলয়কে শোনাতে গিয়ে বলেছিল, কোথায় লাগত জানেন, এই যে আমি মনে করে রেখেছি, ওর কফিতে কতটা দুধ, ক’চামচ চিনি, ক’টার সময় ওর কোথায় কোথায় প্রোগ্রাম, অথচ ও আমার জন্য ….

নিলয় শুধু হেসে চুপ করে গেলেও ভাল ছিল, তার বদলে ও বলে উঠল, আসলে রাত্রি, তুমি আগে থেকেই তোমার ভালবাসার মানুষকে, তার সবকিছুকে অপছন্দ করে ফেলেছো। সে কারণেই ছোটখাটো জিনিসগুলো বড় হয়ে দেখা দিত।

কথাটা হঠাৎ যেন একটা নাড়া দিল রাত্রিকে। ঠিক এভাবে ও কোনদিনও ভেবে দেখেনি। খুঁজে দেখার চেষ্টা করল ঠিক কবে থেকে ও শ্রাবণকে অপছন্দ করতে শুরু করেছিল। ভালবাসার পর মানুষটাকেই কী ও অপছন্দ করতে শুরু করেছিল, নাকি ওর ওপর অধিকার খাটাতে চাইতো সেই ব্যাপারটাকেই ও পছন্দ করতে পারতো না। শ্রাবণকে রাত্রি এখন আর তেমন সহ্য করতে পারে না, না পারারই কথা, কারণ এখন ওর মনে হয় এই লোকটা ওর স্বপ্নই ভেঙে  দেয়নি, জীবনটাই নষ্ট করতে চেয়েছিল। কিন্তু এখনকার ব্যাপারটা পুরোটাই ভদ্রতা।

তখন রাত্রির মধ্যে আর কী বা ছিল, শুধু নিঃসঙ্গতা ছাড়া।

না, তখন আর বাবা-মা বলত না তুই ভুল করছিস। স্পষ্ট করে ওরা না বললেও, মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারত ওরা বলতে চাইছে, তুই ভুল করেছিলি, এখন বুঝতে পারছিস তো! জীবনে এর চেয়ে আর বড় লজ্জা কি হতে পারে। কী ভুলই না করেছিল ও।

তখন ওর যে কী হয়েছিল কে জানে। শ্রাবণের নেশায় পড়ে গিয়েছিল হয়ত। মানুষটাকে আদৌ চিনতে পারেনি। নাকি নিজেকেই চিনতে পারেনি! বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধব সকলেই বারণ করেছিল। কারও কথা কানে নেয়নি। মনে হয়েছে ওর চারপাশের সকলেই শত্রু।

শেষ অবধি বাবা বলেছিল, যা ভাল বুঝিস।

কত কি রঙিন স্বপ্ন দেখেছিল। বিয়েটা যে শেষ অবধি এভাবে, এত সহজে ভেঙে যাবে কল্পনাও করিনি। এক ছাদের নিচে না থাকলে কোন মানুষকেই চেনা যায় না। যত দিন না ডিভোর্স হয়ে গেছে, রাত্রির মনে হয়েছে ওকে কে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। তখন শুধুই রাগ আর ক্ষোভ তীব্র ঘৃণা। জালে আটকে যাওয়া পাখির মত ছটফঠটানি। কেমন একটা অনিশ্চয়তা আর ভয়। কোন দিক থেকে অচেনা একটা জটিলতা এসে দেখা দেবে সেই আতঙ্ক। ছাড়া পাওয়ার জন্য কি অধৈর্য ব্যাগ্রতা। এক একটা দিন যেন এক একটা বছর। যেন কতকাল রাত্রি বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পায়নি। অথচ ওদের বিয়েটা এক মাসও টেকেনি।

বাবার কথাটা কানে গেল- যাঃ সব পিছুটান শেষ।

দূরে দাঁড়ানো শ্রাবণের দিকে একবারেই চোখ পড়েছিল, দ্বিতীয়বার ফিরে তাকায়নি রাত্রি। তখন ওর মনে শুধুই ঘৃণা। একটু আগে পর্যন্ত ছিল একটা দুর্বোধ আতঙ্ক। শেষ মুহূর্তে না কোনও আইনের ফাঁকে সব ভেস্তে দেয় ওই লোকটা।

(চলমান…)

মনের আধাঁর পেরিয়ে, পর্ব-১

মনের আধাঁর পেরিয়ে, পর্ব-২

মনের আধাঁর পেরিয়ে, পর্ব-৪

মনের আধাঁর পেরিয়ে, পর্ব-৫

মনের আধাঁর পেরিয়ে, পর্ব-৬

মনের আধাঁর পেরিয়ে, পর্ব-৭

মনের আধাঁর পেরিয়ে, পর্ব-৮

 

 

পল্লব শাহরিয়ার
Latest posts by পল্লব শাহরিয়ার (see all)