রমযান মাসের গুরুত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ও ফজিলত অজানা কিছু নয়। যে যত বেশী ইবাদতে ব্রতী হবে, সে তত বেশি ভাগ্যবান। অন্য মাসের তুলনায় রমযানে আমলের প্রতিদান বহু গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয় । তাইতো রাসূল সা. দুমাস আগে থেকেই রমযান নাগালের দোয়া করতেন । অথচ কিছু মানুষ এই মহিমান্বিত মাস পেয়েও প্রান্তিকতার শিকার। যে কোন বিষয়ে বাড়াবাড়ি ছাড়াছাড়ি যেন আমাদের নিয়তি। কথিত আহলে হাদিস নামের একটি মহল তারাবিহর অস্তিত্ব মানতে নারাজ। তাদের আবার অনেকে জনরোষ এড়ানোর জন্য তাহাজ্জুদের আট রাকাত কে তারাবিহ বলে চালিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর।
সাহাবা কেরাম, তাবেয়িন, তাবে তাবেয়িন, চার ইমাম, আওলিয়া কেরাম কেউ হাদিস বুঝেনি, চৌদ্দশ বছর পর এসে তারাই যেন হাদিস বুঝলো ! তাহাজ্জুদ আর তারাবিহ কে গুলিয়ে ফেললো । অথচ দুটির অস্তিত্ব ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। তাহাজ্জুদের বিধান হিজরতের আগে সূরায়ে মুযযাম্মিলে অবতীর্ণ হয়, রমযানের রোযা ফরয হওয়ার অনেক আগে। আর রমযানের রোযা ফরয হয়েছে হিজরতের পর। আর তখন রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
‘আল্লাহ তাআলা এই মাসের রোযা তোমাদের উপর ফরয করেছেন এবং এই মাসে রাত জেগে নামায পড়াকে সুন্নত করেছি।-নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ।
এবং তাহাজ্জুদের বিধান বার মাসেই, রোযা ফরয হওয়ার আগ থেকেই । রাসূলে করীম সা. ও সাহাবায়ে কেরাম রোযা ফরয এবং তারাবিহ সুন্নাত হওয়ার আগেও তাহাজ্জুদ পড়তেন ।
তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ যে ভিন্ন ভিন্ন নামায তা আরো অনেক দলিল দ্বারা প্রমাণিত। বিস্তারিত জানার জন্য ফকীহুন নফস হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহীর ফাতাওয়ায়ে রশীদিয়া পৃ. ৩০৬-৩২৩ দেখা যেতে পারে ।
তারাবিহ বিশ রাকাত। এটি সুবিদিত মিমাংসিত বিষয় । এটির পারম্পরিকতা এতটাই ব্যাপক যা অস্বীকারের সুযোগ নেই। তবে তারাবিহতে আমাদের কিছু বাড়াবাড়ি আছে। বিশেষ করে চার রাকাত পরপর প্রচলিত দোয়া আর মুনাজাতে। অনেকে এটা অপরিহার্য মনে করি । মনে হয় যেন না জানলে নামাযেই হবে না। অথচ দোয়া কুনুত, তাশাহ্হুদ অপরিহার্য বিষয় এ গুলোর খবরই নেই।
অথচ চার রাকাত পর পর নির্দিষ্ট কোন দুআ দরূদ পড়া বিশুদ্ধ সূত্রে হাদীসে বর্ণিত হয়নি। হাঁ, চার রাকাত পর এতটুকু সময় বসা মুস্তাহাব, যতক্ষণ সময় চার রাকাত নামায পড়তে সময় লাগে। সেই সময় নফল নামায পড়া, তাসবীহ পড়া, দরূদ পড়া, জিকির করা, কুরআন তিলাওয়াত করা, কিংবা চুপ করে বসে থাকা, মক্কায় হলে তওয়াফ করা সবই বৈধ ।-
واما سننها: وَمِنْهَا أَنَّ الْإِمَامَ كُلَّمَا صَلَّى تَرْوِيحَةً قَعَدَ بَيْنَ التَّرْوِيحَتَيْنِ قَدْرَ تَرْوِيحَةٍ يُسَبِّحُ، وَيُهَلِّلُ وَيُكَبِّرُ، وَيُصَلِّي عَلَى النَّبِيِّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – وَيَدْعُو وَيَنْتَظِرُ أَيْضًا بَعْدَ الْخَامِسَةِ قَدْرَ تَرْوِيحَةٍ؛ لِأَنَّهُ مُتَوَارَثٌ مِنْ السَّلَفِ (بدائع الصنائع، كتاب الصلاة، فصل فى سننها والتراويح-1/648
মক্কাবাসী চার রাকাত পর পর বিরতিকালীন তাওয়াফ করতেন, মদিনাবাসী বিশ রাকাত তারাবিহতে চারটা বিরতিতে চার রাকাত করে ষোল রাকাত নামায পড়তেন।
যেহেতু যেকোন দুআ ও দরূদ এ সময়ে পড়া যায় ,তাই অনেকে প্রচলিত দোয়াটি পড়েন ।
سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ، سُبْحَانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظَمَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ ——–:(رد المحتار، كتاب الصلاة، باب الوتر والنوافل
কিন্তু সুন্নত-মুস্তাহাব বা জরুরী মনে করলে ছেড়ে দেয়াটাই যৌক্তিক । তাইতো ফকীহুন নফস আল্লামা রশিদ আহমাদ গাঙ্গুগী রহ. উল্লেখিত দোয়াটি না পড়ে এই দোয়াটি পড়তেন ।
(سبحان اللہ والحمد للہ ولا الہ الا اللہ واللہ اکبر)
সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার । (۔[فتاوی دار العلوم دیوبند4/24
হাকিমুল উম্মাত আল্লামা আশরাফ আলী থানবী রহ. কে কেউ জিজ্ঞেস করলে , উত্তরে বলেন: আসলেই তো এ সময়ে নির্দিষ্ট কোন দোয়া শরিয়াতে উল্লেখ নেই ,তবে আমি পঁচিশ বার দরুদ পড়ি । تحفئ رمضان) 111)
এবং তারাবিহ নামাযের নির্দিষ্ট কোন মুনাজাতও শরিয়াতে পাওয়া যায়না। অবশ্য গোনাহমুক্ত জীবন লাভে তাওবা ইসতেগফারের বিকল্প নেই। যে কোনো দোয়া দিয়ে তা করা যেতে পারে। মনের একান্ত কথাগুলো যেভাবে ইচ্ছা আল্লাহর কাছে তুলে ধরাটাই দোয়ার উদ্দেশ্য। তবে তারাবিহর ব্যাপক প্রচলিত দোয়াটিও পড়া যায়। এটি শরিয়াহ কর্তৃক নির্ধারিত এমন ধারণা পোষণ না করা। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
আয়াতুল্লাহ রাসেল
মুফতি ও মুহাদ্দিস
জামিয়া গাফুরিয়া ইসলামপুর, মোমেনশাহী।
প্রতিদিনের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি জানতে ক্লিক করুন এখানে