মার্চের উত্তাল দিনগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের বর্ণনায় এক ভিন্ন মাত্রা পায়। নিজেরা সম্মুখ বা গেরিলা যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছেন তাঁরাই আবার লিখেছেন সেইসব দিনের বর্ণনা। নির্মোহ দৃষ্টিতে এরকমই বর্ণনা দিয়ে একাত্তরের উত্তাল মার্চের অনেক তথ্য তুলে ধরেছেন মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন। আজ থেকে আগামী এক সপ্তাহ প্রতিদিন এই লেখাটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে।
…………………………………………………………
পর্ব-১
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অনেকাংশেই ছিলাে জনযুদ্ধ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে বাঙালি জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন এই জনযুদ্ধের জন্য। তিনি পাকিস্তানি শাসনতান্ত্রিক কাঠামাের মধ্যে থেকেই তাঁর রাজনৈতিক কৌশল ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের গুণে গােটা বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ শক্তিতে পরিণত করেছিলেন। পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠি
বঙ্গবন্ধুকে একজন দেশদ্রোহী বা বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে টিহ্নিত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের কোনাে ষড়যন্ত্রই সফল হয়নি। বরং বাঙালি জাতি বঙ্গব্ধুর প্রতি এতােটাই আস্থাশীল হয়ে উঠেছিলেন যে, তাঁর আহ্বানে জীবন বিসর্জন দিতেও সবাই
প্রস্তুত ছিলেন।
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি রচিত হয় দীর্ঘ ২৩ বছরের শােষণ, বঞ্চনা ও বাঙালি দমনে পাকিস্তানি শাসক চক্রের নীলনকশার কারণে। পাকিস্তানে পাঞ্জাবিরা সংখ্যালঘু গােষ্ঠি হলেও মূলত: তারাই নিয়ন্ত্রণ করতাে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন, সেনাবাহিনী, শিল্প কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য। তারা কেবল বাঙালিদেরকেই বঞ্চিত করেনি, পাকিস্তানের বেলুচ, সিদ্ধিসহ অন্যান্য জনগােষ্ঠিও
অবহেলার শিকার হয়েছে। জনসংখ্যার দিক থেকে বাঙালি জাতি সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে বাঙালির অংশগ্রহণের সুযােগ ছিল খুবই সীমিত। সেনাবাহিনীতে মাত্র এক শতাংশ নিয়ােগ দেয়া হতাে বাঙালির মধ্য থেকে। অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করতাে
২২ পরিবার নামে খ্যাত পাকিস্তানি শিল্পপতিরা। ব্যাংকের ঋণ পেতে বাঙালি শিল্পপতিদের জন্য কড়াকড়ি আরােপ করা হতাে। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তান শীর্ষ অবস্থানে থাকলেও উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের অর্ধেকেরও কম।
এর ওপর শুরু হয় বাংলা ভাষা কেড়ে নেয়ার চক্রান্ত। আইয়ুব খান ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বুদ্ধিজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন,
“আপনারা রবীন্দ্র সংগীত রচনা করতে পারেন না”। মূলত: বিশ্ব পরিমণ্ডলে বাংলার সাংস্কৃতিক প্রিয়তা উর্দু ভাষীদের ঈর্ষার
কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পাকিস্তানি শাসকাচক্র যখন এদেশের মানুষকে কোনভাবে দমিয়ে রাখতে পারছিল না, এমনকি জাতীয়
পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত হলে তারা মরিয়া হয়ে ওঠে যে কোনাে মূল্যে শাসন ক্ষমতা ধরে রাখতে।
১৯৪৭ এর পর ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬র ৬ দফা আন্দোলন এবং ৬৯’ এর গণআন্দোলন
এসব আন্দোলন-সংগ্রামে রংপুরের মানুষের ব্যাপক সম্পৃক্ততা ছিল। রংপুরের মানুষের ইতিহাস ত্যাগ তিতীক্ষা আন্দোলন,
সংগ্রাম বিদ্রোহের ইতিহাস। এখানে সংঘটিত হয়েছে সিপাহী বিদ্রোহ, প্রজা বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ, কৃষক বিদ্রোহ। সবগুলাে বিদ্রোহে রংপুর অঞ্চলের মানুষ নেতৃত্ব দিয়েছে, অংশ নিয়েছে এবং জীবন দিয়েছে। আর সর্বশেষ ১৯৭১-এ পাকিস্তানি জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে অবিস্মরণীয় ইতিহাস রচনায়। আজকের প্রজন্ম যারা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানে না তারা ধারণা করতে পারবে না পাকিস্তানিরা কতটা নির্মমভাবে হত্যা করেছে এদেশের লক্ষ লক্ষ নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে। পাকিস্তানি জান্তা বাঙালিকে বলতাে-হিন্দু। সৈনিকদের মগজে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল যে, বাঙালিরা বিধর্মী-হিন্দু। তাদেরকে খতম করে পাকিস্তানের পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে। তাদেরকে সহযােগিতা দিয়েছিল এদেশের কিছু কুলাঙ্গার। এই বেঈমানরা এখনাে সিনা টান করে চলে। ১৯৭১ এর গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, লুষ্ঠন, অগ্নিসংযােগের মত মানবতা বিরােধী অপরাধের দায় এড়িয়ে যেত চায়। এদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে লালন পালন করছে দেশিয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াশীল গােষ্ঠি। আজকে সময় এসেছে এই বিষধর সাপের বিষদাঁত ভেঙ্গে জাতিকে কলংকমুক্ত করা। শত বাঁধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে এব্যাপারে সােচ্চার ভূমিকা রাখতে হবে মুক্তিযুদ্ধের ধারক-বাহক স্বাধীনতাপ্রিয় প্রতিটি বাঙালিকে। আশার কথা দেরিতে হলেও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দৃঢ় সিদ্ধান্ত মানবতা বিরােধী অপরাধীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অনেকের ফাসি কার্যকর হয়েছে।
দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় রংপুর শহর পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে। ১ মার্চ জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চের গণপরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘােষণা করলে জনগণ প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠির বিরুদ্ধে অসহযােগ আন্দোলনের ডাক দেন। কার্যত পাকিস্তানি শাসন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মতােই দেশের কল-কারখানা, ব্যাংক-বীমা, ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত চলতে থাকে। ৩ মার্চ মিছিলের উপর অবাঙালি সরফরাজ খানের গুলিতে কিশাের শংকু সমজদার নিহত হলে গােটা রংপুর অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ৩ মার্চ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ ১২ বছরের কিশাের শংকু। সেদিন আরও দু’জন অবাঙালিদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন। এদের একজন মিঠাপুকুরের ছেলে রংপুর কলেজের ছাত্র আবুল কালাম আজাদ ও একজন কর্মচারী ওমর আলী। ৩ মার্চের ঘটনার পর গােটা রংপুর অঞ্চল উত্তাল হয়ে ওঠে। নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা মহকুমা তখন রংপুর জেলাধীন ছিল। রংপুরের ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে ঐসব এলাকায় দুর্বার আন্দোলন গড়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণেও রংপুরের শহীদানদের কথা উল্লেখ করা হয়। ৩ মার্চ গণপরিষদের অধিবেশন আহবান করেও ভূট্টোর চাপে ইয়াহিয়া খান সে অধিবেশন স্থগিত করে দেন। ফলে বুঝতে বাকী থাকে না যে, পাকিস্তানিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামীলীগ নেতা শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে রাজী
নয়। ডাকসুর নেতৃত্বে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে চাপ দিতে থাকে। জেলায় জেলায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবানে মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশ জোরদার হয়ে ওঠে। স্থানীয় এমএনএ, রাজনৈতিক নেতারা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কর্মসূচিতে পূর্ণ সমর্থন দেয়।
রংপুরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ডােমারের কৃতি সন্তান আব্দুর রউফের নেতৃত্বে ছাত্র নেতারা ১১ দফা আন্দোলনের স্বপক্ষে ছাত্র-জনতার দুর্বার আন্দোলন গড়ে তােলে। এসময় রংপুরের নেতৃত্বে ছিলেন: রফিকুল ইসলাম গােলাপ, জাকির আহমেদ সাবু, হারেস উদ্দিন সরকার, অলক সরকার, মুকুল মােস্তাফিজ, ইলিয়াছ আহমেদ, আবুল মনসুর আইমেদ,
মাহবুবুল বারী, মুখতার এলাহী, জিয়াউল হক সেবু, জায়েদুল হক, নুরুল হাসান প্রমূখ। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ছিললেন
সিদ্দিক হােসেন এমপি, মতিয়ার রহমান, আব্দুল আউয়াল, গাজী রহমান, হামিদুজ্জামান সরকার, গােলাম কিবরিয়া, মতি মিয়া, ডাঃ আফতাব তালুকদার, এ্যাড. আলতাফ হাসেন, ইসাহাক চৌধুরী, তৈয়বর রহমান, লােকমান হােসেন, বন্দে আলী মিয়া,
কাজী এহিয়া, ন্যাপ নেতা শহীদ এওয়াই মাহফুজ আলী জররেজ, শাহ তবিবর রহমান প্রধান, নাজমুল আলম হােবন, হালিম খান, সৈয়দ আবু জাফর মুকুল, রহমত কবীর, সেলিম চৌধুরী, শেখ শাহী, নুর আহমেদ টুলু, নুরুল রসুল চৌধুরী, শাহ বারা মিয়া, তৃপ্তি রায় চৌধুরী, কমিউনিস্ট নেতা মনিকৃষ্ণ সেন, শংকর বসু, ছয়ের উদ্দিন, জিতেন দত্ত, এ্যাড. আব্দুস সালাম প্রমূখ।
১৯৭১ সাল পর্যন্ত রংপুর অঞ্চলে অবাঙালিদের (বিহারি) প্রভাব ছিলাে বেশি। তাদের ঘাঁটি ছিলাে রংপুর, সৈয়দপুর,
লালমনিরহাট, পার্বতীপুর ও ইশ্বরদীতে। এছাড়া প্রত্যেক জেলায় যেখানে রেল ষ্টেশন আছে সেখানেই ছিলাে তাদের বসতি। এই
বিহারিদের অধিকাংশ রেলওয়েতে চাকুরী সূত্রে এসব এলাকায় প্রাধান্য বিস্তার করে। বিহারিরা এতটাই বেপরােয়া হয়ে ওঠে যে,
তারা এক সময় রংপুর অঞ্চলকে বিহারিস্থান ঘােষণা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। তাদের পেছনে মদদ যুগিয়েছিল এখানকার কিছু
রাজনীতিক যারা মূলতঃ ইসলামী রাষ্ট্রের নামে একক পাকিস্তানে বিশ্বাস করতাে। রংপুরে আলমনগর কলােনী, জুম্মাপড়া ও
চাউল আমােদ এলাকায় অবস্থিত বিহারিরা স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সাথে ঘনিষ্ঠ যােগাযােগ রক্ষা করতাে এবং ক্ষেত্র
বিশেষে তাদের প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ মদদে সমাজে প্রভাব বিস্তার করতাে। রংপুরে এমন কয়েকজন বিহারিনেতা ছিলেন যারা
১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর রংপুরের অনেক হিন্দু সম্পত্তি শত্ৰু সম্পত্তি হিসেবে দখল করে নিয়েছেন। এমনকি
এক বিহারি নেতা লােকনাথ হাই স্কুল নামে একটি স্কুল ভবন পর্যন্ত দখল করে নিয়েছেন যে স্কুলটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। রংপুরে
বিহারিদের শক্তিশালী অবস্থানের আরেকটি উদাহরণ হলাে ৩ মার্চ শংকুর ওপর গুলি বর্ষণ এবং আবুল কালাম আজাদ ও ওমর
আলীকে ছুরিকাঘাতে খুন করা। ওইসময় রংপুরে আরও কয়েকজন ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন যাদের একজন মকবুল আলী এমপিসহ পরে মারা যান।
স্বাধীনতার পর কিছু বিহারি দেশ ত্যাগ করে পাকিস্তানে চলে যায়। আর বেশির ভাগ ভােল পাল্টিয়ে বাঙালি নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুনরায় তাদের অবস্থান পাকাপােক্ত করে ফেলেন। এখনও কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষ করে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে এসব বিহারিদের প্রাধান্য দেখা যায়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে যারা মদদ যুগিয়েছে এবং নিরীহ বাঙালিকে ধরে নিয়ে যেতে সহায়তা করেছে তাদের অন্যতম দোসর ছিলাে এই বিহারি, মুসলিম লীগার ও জামাতে ইসলামীর নেতা ও তাদের মদদপুষ্ঠ রাজাকার, আলবদর, আল শামসরা। আজকে যখন তাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে নেতৃত্বের ভূমিকায় দেখি তখন একজন মুক্তিযােদ্ধা হিসেবে ঘৃণা জন্মে নিজের ওপর, সমাজের ওপর, দেশের ওপর। এজন্যই কী ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছিল। ২ লক্ষ মা-বােন ইজ্জত হারিয়েছিল। সবচেয়ে বড় আঘাতটি আসে
যখন স্বাধীনতা বিরােধী জামাত নেতারা সরকারের মন্ত্রী হয়ে তাদের গাড়ি-বাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা ব্যবহারের সুযােগ লাভ
করে।
৪ মার্চ রংপুরে কার্ফু জারী করা হয়। ১৯৫৮ সালের মার্শাল ল এর পর এই প্রথম কার্ফু জারী হওয়ায় অনেকের এই আইন সম্পর্কে খুব একটা ধারণা ছিল না। জনগণকে কার্ফু চলাকালে রাস্তায় বা ঘরের বাইরে বের হতে বিধি-নিষেধ আরােপ করে জেলা তথ্য অফিসের উদ্যোগে সরকারী ফরমান জারী করা হয়। এই ফরমানটি মাঝে মাঝে সেনাবাহিনীর গাড়ীতে উর্দুতেও প্রচার করতে দেখা যায়। বয়স্করা সান্ধ্য আইনের বিষয়টি জানার কারণে বাড়ির বাইরে যেতে বারণ করলেও কম বয়সের তরুণ- যুবকরা উৎসাহ, উত্তেজনা, উদ্দীপনায় বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে নেতাদের সাথে যােগাযােগ রক্ষা করতে থাকে। অলিতে গলিতে ঝটিকা মিছিল বের করে। এসব মিছিলের স্লোগান ছিলঃ বীর বাঙালি অস্ত্র ধরাে, বাংলাদেশ স্বাধীন করাে। তােমার নেতা-আমার নেতা, শেখ মুজিব-শেখ মুজিব। ইয়াহিয়ার মুখে লাথি মারাে, বাংলাদেশ স্বাধীন করাে।
৫ মার্চ সকালে ৪ ঘন্টার জন্য কার্ফু প্রত্যাহার করা হলে শহরে মানুষের ঢল নামে। স্বত্ফুর্তভাবে রাস্তায় রাস্তায় চলে খণ্ড মিছিল। সবার মুখে বজ্কণ্ঠে আওয়াজ ওঠে “তুমি কে- আমি কে, বাঙালি-বাঙালি, তােমার আমার ঠিকানা-পদ্মা, মেঘনা, যমুনা’, তােমার নেতা-আমার নেতা-শেখ মুজিব-শেখ মুজিব।
১৯৭১ এর ৭ মার্চে সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক পট- পরিবর্তনের সূচনা হয়। গােটা পূর্ব পাকিন্তানের মানুষ তথা বিশ্বের দৃষ্টি পরে বঙ্গবন্ধু জনসভায় কী বলেন তা জানার জন্য। বঙ্গবন্ধু যখন দৃপ্ত কষ্ঠে ঘােষণা দেন এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। “রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইশাআল্লাহ। বঙ্গবন্ধুর এই ডাকে নতুন করে জেগে ওঠে মুক্তিপাগল জনতা। বঙ্গবন্ধুর শেষ কথাটি ছিলাে “আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি তােমরা তােমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করবে।” এ ঘোষণার পর আর বুঝতে বাকী রইলো না যে, পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছাড়া বাঙালি জাতির মুক্তির আর কোন পথ খোলা নাই।