1st January, 2025
Mugdhota - June 16, 2025, 3:57 p.m.
57 Views
158 Comments
বিজয়ের ৫২ বছর। প্রতিবারের মতোই সকালে রংপুর মডার্ণ মোড়ের অর্জন, স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে যাই। শীতকাল বলেই এবার কলেজ থেকে সিদ্ধান্ত হয় সকাল আটটায় ফুল দেওয়া হবে। নিয়মিত কলেজ বাসে করে যাওয়া হয়। বাসে শিক্ষক, চিকিৎসক, ইন্টার্ন, ছাত্র আর কলেজ স্টাফ থাকে। বেশি না হলেও বিশজন হয়েই যায়। এবার চিত্র আলাদা। সিনিয়র ছয়জন চিকিৎসক ছাড়া আর কেউ নেই। কোনও ছাত্র, ইন্টার্নকে দেখা গেল না।
এটা আমার বারো বছর এই কলেজে থাকা অবস্থায় প্রথম। ddcddceefe
শেষে নার্সিং কলেজ থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে বাস পূর্ণ করে রওনা দেওয়া হলো। অর্জন স্মৃতিসৌধে কয়েকজন পুলিশ ডিউটিতে আছে, লোকজন তেমন নাই। স্মৃতিসৌধ বেদীতে বিশটার বেশি ফুলের তোড়া নাই। অন্যবার ফুলে-ফুলে ঢেকে যায় বেদী। আমরা থাকা অবস্থাতেই পুলিশের বড় কর্তা গোছের কেউ আসাতে ডিউটিরত পুলিশরা ছোটাছুটি করা শুরু করলো ওনাদের নিয়ে। ফুল দেবার সময় ফটোসেশন অবশ্যিক। ছবি তোলার পর কলেজ থেকে আপ্যায়ন করার জন্য নিয়ে গেল শহরের নামকরা হোটেলে খিচুড়ি খাওয়াতে। মেডিকেল মোড় কেন্দ্রিক এসব হোটেলে জাতীয় দিবসগুলোয় অনেক ভীড় থাকে। খাবারের অর্ডার দিয়ে বসে থাকতে হতো পূর্বে। এবার বসার সাথে সাথেই খাবার চলে এল। লোকজন নাই বললেই চলে। পরে বাসা থেকে রংপুর টাউনহলে এসে মোটামুটি হতভম্ব। সকাল ১০.৩০,শহিদ মিনারের সামনে স্টেজের সামনে পনেরও জনের বেশি শিশু নারী নাই। কবিতা পাঠ হবে সম্ভবত। উপস্থাপক বার বার মাইকে ডাকছে, যারা কবিতা পড়তে চান, এখানে এসে কবিতা জমা দেন। শহিদ মিনারের গোড়ার কাছে বেশ কিছু ফুলের তোড়া। রাত বারোটার পর প্রশাসন, বিভিন্ন সংগঠন, রাজনৈতিক দল ফুল দেবার পর সাধারণ মানুষের তেমন উপস্থিতি নাই। ডিসির মোড়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ফুলে ডুবে যায়,এবার অনেক কম। হুট করে কমে যাবার কারণ ভাবছিলাম। একজন বলল, রাতে ফুল দিতে আসলে ছাত্রদের পাওয়া যায় কারণ তারা রাত জেগে অভ্যস্ত। সকালে তারা উঠতে পারে না। বিষয়টা ভাবার মতো। তরুণরা বিজয় দিবসকে হালকাভাবে নিয়ে ফেলেছে। তারা ভাবছে এসব করে কোনও লাভ নাই। এরচেয়ে ছুটির দিনে শুয়ে ঘুমানো ভালো। ছাত্ররা রাজনীতি করছে সুযোগ-সুবিধা আদায়ের উদ্দেশ্যে। গণমাধ্যমের সৌজন্যে জানতে পারি, মাঝারি গোছের ছাত্র নেতার নাকি কয়েকটা বাড়ি, গাড়ি। টেন্ডারবাজি,দালালি করেই চলছে এদের দিন। যারা টেকনিক্যাল সাইডে আছে তাদের ধান্দাই হচ্ছে একটা বিসিএস অথবা সরকারি চাকরি জোগাড় করা। যারা রাজনীতিতে জড়িত না, তারা দেশ ছাড়ছে। বিশ্বের বৃহত্তম ভিসা আউটসোর্সিং ভিএফএস এবং অন্যান্য সূত্রে প্রকাশ, বাংলাদেশ হতে সাম্প্রতিক সময়ে ভিসা আবেদন বেড়েছে প্রায় ১৭০ শতাংশ, যার সিংহভাগ স্টুডেন্ট ভিসার। বর্তমানে স্টুডেন্ট ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বব্যাপী দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সপ্তম স্থানে রয়েছে। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারের(বিওয়াইএলসি) করা ইয়ুথ ম্যাটার্স সার্ভে ২০২৩ শীর্ষক জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৪৩ শতাংশ তরুণ-তরুণী দেশের বাইরে চলে যেতে চান। বিদেশে যাবার ক্ষেত্রে শীর্ষে আছে বুয়েট। এখান থেকে পাশ করে প্রায় আশি ভাগই বিদেশে পাড়ি জমায়। মেডিকেল থেকে পাশ করাদের বিদেশে কাজ করার সুযোগ না থাকায় তারা বিশেষ কোর্স করে সেখানে টিকে থাকার চেষ্টায় আছে। তরুণদের দেশপ্রেম কমে গেছে এটা আমি বিশ্বাস করি না কিন্তু ভরসা যে কমে গেছে সেটা নিশ্চিত। তরুণরা ধরেই নিয়েছে শহিদ মিনারে যাওয়া, ফুল দেওয়া একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের কাজ, তাই সেখানে তাদের না গেলেও চলবে। তরুণদের এই ধারণা দূর করতে এগিয়ে আসতে হবে সরকার ও সুশীল সমাজকেই। ……………………….…………………
ডা.ফেরদৌস রহমান পলাশ
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও লেখক drferdous33@yahoo.com