আদিল ফকিরের একগুচ্ছ কবিতা
ভালোবাসা
ঝিঙেটা নুয়ে,
হলদে ফুলটা শুয়ে,
সবুজ পাতায় কাদামাখা-
চেয়ে থাকা পিপীলিকা,
তোমার অযত্নে,
বেঁচে থাকা অচেনা-
আমি ঝিঙে লতা।
কার সাথে বলি কথা-
আমি এক ভালোবাসা ।
সব ঝিঙে ফুল-
গগন সমান ভুল,
ভেসে থাকা মেঘমালা-
অযত্ন এক ভালোবাসা।
বসে থাকা কুকুরটা-
বিয়ে বাড়ির হাড়টা-
আজও হয়নি চোষা,
চেয়ে আছে দুই চোখ-
মুখে শুধু লালা।
তোমার অযত্নে –
তবুও ফুটে ওঠে-
প্রকৃতির এক ভালোবাসা।
প্রজাপতির পাখা মেলা,
কাঠঠোকরার কাঠ কাটা-
ঠক্ ঠক্ শব্দে-
চেয়ে আছে অযত্ন,
ছোট্ট একটা ভালোবাসা।
—————–
বাসন্তী
আজ থেকে তোমার নাম দিলাম বাসন্তী
যখন আকাশ ডাকবে, ঝড়বৃষ্টিতে জানালার পর্দা উড়বে
আমি ডাকবো- বাসন্তী—, ও বাসন্তী—
যখন উঠানের বকুল ফুলে গন্ধ-
আমি ডাকবো- বাসন্তী—, ও বাসন্তী—
খোলাকাশে যখন একটা আবাবিল
দেখা যায়, যায় না-
আমি ডাকবো-বাসন্তী, ও বাসন্তী
হয়তবা তুমি তখন বসে- বাবুর আঁকা ছবিতে-
রং করা ব্যস্ত….
আমি ডাকবো- বাসন্তী—, ও বাসন্তী—
তুমি একদিন, না একদিন – বলবে তো
কি- ডাকছো কেন?
আমি বলবো- এসো জমি চাষ করি
লাল শাকের বীজ বুনবো, সবুজ শাকের বীজ বুনবো।
ঐ ক্ষেতের আইলে তুমি বসে থাকবে-
আমি ডাকবো-বাসন্তী—, ও বাসন্তী—
– কী হয়েছে, দেখছো না-
ঐ বনের পাখিসব অঙ্কুরিত বীজগুলো খেয়ে সাড়া।
বাসন্তী, ও বাসন্তী- যাক্ না খেয়ে
তবু-তো পাখিরা ভালো থাকবে
পাখিরা উড়বে…
পাখিরা কিচিরমিচির করবে
বাসন্তী, ও বাসন্তী……..!
দুজনা মিলে পাখির উড়াল দেখবো।
ময়ূরাক্ষী
ভালবাসবি আমাকে? আয় চলে আয়। ফাগুন শিমুল বনে দুজনের চলা। স্পিড বোটে ভেসে যাওয়া,তোর লম্বা চুল উড়ে আসা। এক রেখার দুই প্রান্তে সেলফি তোলা। ফুচকার ঝালে এক সাথে আ-উ করা। ট্রেন পথে হেঁটে চলা। জ্যোৎস্নায় দুজনের ছায়া। দুই ছাদে দুজনের উড়িয়ে দেওয়া ঘুড়ি, আকাশের বুকে কথা বলা। তোমার মা রেগে যাবে বলে- কফির ধোঁয়ায় তোমাকে ছদ্মনামে ডাকা, ময়ূরাক্ষী।যখন তুমি দূরে- এক- সময়ে আকাশের চাঁদ দেখা। সেই চাঁদের বুকে কততো কথা আঁকা।
ময়ূরাক্ষী- ভালবাসবে আমায়? তাহলে একটা কবিতা নিয়ে এসো। বসো, এই দিঘিপাড়ে। গোলাপের পাপড়িগুলো দিঘির জলে ভেসে দাও। আমি স্নান দিবো- সেই গোলাপ ধোয়া জলে। রাঁজহাসের মতন ডুব ডুব। তোমার হিহিহিহি হাসি। দিঘির জলরাশি, মেতিয়ে উঠবে। আকাশ বাতাসে ফাগুনের মাতাল- তুমি সেই ময়ূরাক্ষী।
ময়ূরাক্ষী, যাবে মোর গ্রামে? দেখবে সেই মেঠোপথ। মাঠের পর মাঠ। এক্কাগাড়িতে উঠবে! ঘোড়ার টগবগে তোমার সেই মন মাতানো হিহিহিহি হাসি।
কিষাণ ধরবে আবার সেই ধান চারা লাগানোর গান।
ময়ূরাক্ষী, এসো।
এবেলা সে বেলা
শীতকালে এনায়েতপুর গ্রামে মিষ্টি রোদের রশ্মিতে – মাদুরে বসে পড়তাম-
হাঁটু ভাঙা – দ
কান মুচরি- ধ
পেট কাটা – ষ
বয়ে শূণ্য – র
ঢয়ে শূণ্য – ঢ়
হিলিবিলি-ল
ব-এ আঁকড়ি- ক
পাশে বসে থাকা ছোট বোন- কুমকুম, টালাতে মুড়ি ও গুড় খাচ্ছিলো। সেই গুড়ের লোভ সামলাতে না পেরে- টুপ করে ওর টালা হতে মুখে দিতাম… ও ভ্যা করে কাঁদতো…’মোর গুড় খাইলি ক্যান’! মা এসে থ-পাশ থ-পাশ করে দু’একটা পিঠে লাগাতো… আর বলতো- পড়্ পড়্
আবার পড়া শুরু…
নিজের হাত-টা সোজা করে বলতাম-
হাত সই- ই
হাত সই- ই
হাত সই- ই
আজও সব আছে। বর্ণমালা আছে। এনায়েতপুর আছে। আমার মা আছে। শীতকাল আছে। কুমকুম আছে। মাদুর আছে। আমি আছি।
তবে – আমি দূরে, মা গ্রামে।কুমকুম স্বামীর বাড়ি। শীতের সেই মিষ্টি রোদ- এনায়েতপুরে। এক টুকরো সেই গুড়- ঘাঘটের চরে!… আর কুসার (আখ) মাড়া হয় না…
বর্ণমালাও আছে, তবে সে বেলার মতো নেই! ওরা পাথরের বর্ণগুলো- এখন ভাঙে…
নারী
আমার মাথায় হাজার নারীর গহনা – কারণ আমি একজন ফেরিওয়ালা!
ত্রিশের ঘরের জোড়া সংখ্যা বারবার- আমাকে শুনতে হয়-
কারণ আমি একজন ছোট কাপড় বিক্রেতা!
সেইদিন বাহিরের খোলা দরজায় এক নারীপ্রেম তাকিয়েছিল! ভাবছি তাকে একটা উপহার দিব-
আমি বলেছিলাম-
বত্রিশ?
তিনি বলেছিলেন-
না!
আমি বলেছিলাম-
চৌত্রিশ?
তিনি বলেছিলেন-
না!
আমি বলেছিলাম-
ছত্রিশ?
তিনি বলেছিলেন-
না!
আমি বলেছিলাম-
আটত্রিশ?
তিনি বলেছিলেন-
আমি একজন ধর্ষিতা নারী-
আমার জীবনে কোনো সংখ্যা… গহনার প্রয়োজন নেই!
স্বাধীনতা
আমার একটা প্রেম আছে-কাঁদে এবং হাসে।আমার একটা কয়েন আছে, হারিয়ে, এবং খুঁজে পাওয়া যায়।আমার একটা আয়তকার আছে।তুমি চাইলেই মাঝে একটা বৃত্ত দিতে পারো।
কয়েন
আমি সেই পঁচিশ পয়সা। ক’বছর হয় দুষ্টু বাবুর হাত থেকে, শহরের এক ডাস্টবিনে আছি।
তবে আমার বিশ্বাস- সহজে আমি পচে যাব না। একদিন যাব তোমাদের হাতে…! ও! কী আনন্দ – এই ডাস্টবিন সংস্করণ হবে, কোথাও না কোথাও আমি যাব– আমি সেই পঁচিশ পয়সা। শুনেছি, কোন কালের পঁচিশ পয়সা বর্তমান জাদুঘরে।
বেহেস্তি
আপনি ধরলায় কেন?
মেঘ…
আপনি…?
এইতো রিমঝিম বৃষ্টি…
শুধু- মেঘের জন্য…?
না,… আকাশ!
জল স্রোত!
আপনি… শুধু বৃষ্টি?
না,না…
বেহেস্তি!
বেহেস্তি! বেহেস্তি কে?
আমার বেহেস্তি! কথা বলে,
কখনো উড়ে… ধবধবে মন-
এক্কেবারে মেঘের মতন-
পরিচয় করে দেবেন?
হুম! অবশ্যই…
আসুন-
নৈঋত এর দিকে দেখুন…
হুম- কই?
ঐ- তো দেখুন না- কীভাবে বসে আছে-
শাদা! এক্কেবারে শাদা-
দেখুন না, কীভাবে তাকিয়ে আছে- কাজল রেখা!
হুম, দেখছি- বাহ্!
শুনুন – উনাকে কষ্ট দিবেন না…
নচেৎ কাজলরেখা- কাজল জল হবে-
না! না! না!….. এভাবে বলবেন না-
কাজল জল- অসম্ভব…
এই শাদা মেঘে- কাজল জল…
না! না!- আমার বেহেস্তি
একটা সুখ
একটা উপলব্ধি
একটা অনুভব
আমার বেহেস্তি – আমার বেহেস্তি
আমার বেহেস্তি- আমার বেহেস্তি!
বেশ্ তো- আর কয়েকবার – ‘আমার বেহেস্তি’ বলুন তো…
আমার বেহেস্তি, আমার বেহেস্তি।
-কী ব্যাপার- আপনি চোখের জল ফেলছেন কেন-?
না! রিমঝিম বৃষ্টি…
চলুন! এক সাথে কিছুক্ষণ ধরলার বুকে….
চলুন….!
আদিল ফকির