গল্প Archives - মুগ্ধতা.কম

গল্প Archives - মুগ্ধতা.কম

মুগ্ধতা.কম

২৫ জুন, ২০২৩ , ৮:২৩ পূর্বাহ্ণ

সুবাসে ওড়ে ঘুড়ি 

মারা যাওয়ার পর লাশটা দেশে আনা গেল না। জার্মানিতেই দাফন করা হলো। বৃন্দাবনের মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল। দেশে তার বউ আর টিনেজ মেয়ে। হঠাৎ স্বাভাবিক মৃত্যু হওয়ায় হঠাৎ করে অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পড়ল ইসমত জাহান। সবগুছিয়ে নিতে বছর দুয়েক লাগল। ততদিনে মেয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে গেছে। তাই ইসমত হাফ ছেড়ে বাচঁল। সুখের নিশ্বাস নিতে পারছে। সুখের বিরহটাও জমেছে যে তা টের পেতে শুরু করেছে।

মেয়ে নিজে নিজেই চলাফেরা করতে পারে। তাকে নিয়ে চিন্তা নেই। বরং মেয়ে তার মাকে নিয়ে এখন ভাবছে। আর কত এভাবে একলা?

কবিতা ক্যাফেতে নিয়মিত ইসমতের যাতায়াত বেড়েছে। ভালো লাগে। এর মধ্যে এক ছেলের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে তারা বেড়াতে যায়। বয়স এবং ইতিহাস ভুলে তারা প্রেমে মশগুল। ছেলেটার সাথে যে সম্পর্ক তা প্রেম কি না বলা মুশকিল। তবে ইসমতের মাথায় সবসময় ছেলেটাই। ছেলেটার বয়স বেশি নয়- ভার্সিটির স্টুডেন্ট সে। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা নাই বলে বর্তমানটা দারুণ মুগ্ধময় যাচ্ছে।

সেক্স করার জন্য ইসমত হোটেলে যায়। তার নিজের বাড়িতে লজ্জা পায়। যদিও তার মেয়ে এ ব্যাপারে কিছু জানে না। মেয়ে জানে মা বইপাগল, বইয়ের প্রেমে মত্ত। আর কারো সাথে সম্পর্কে জড়ালে সে খুশিই হবে।

বছরখানেক হলো। এক পর্যায়ে প্রেগন্যান্ট হয়েছে বুঝতে পারল ইসমত। বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেল। মেয়ের কাছে লুকোতে চাইলেও পারল না। মেয়েই তাকে বলল-নো প্রবলেম।

 ইসমত কেঁদে ফেলল মেয়ের সহানুভূতি আর সমর্থনে। সারা দিনরাত মায়ের পাশে মেয়ে। কখনও বিব্রতকর কোনো কথা বলেনি। ইসমত অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিলো- অ্যাবরশন করবে।

মেয়ে এই বিষয়ে এইবার মাত্র হাসল। বলল, কেন?

-তুই বুঝবি না।

-একটা প্রাণ নষ্ট করছ তা কি ঠিক?

-ঠিক না তা জানি।

-তাহলে কেন সেই পাপ করছ? তাকে পৃথিবীতে আসতে দাও।

-আমি এ নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। 

-ওকে। তোমারটাই ঠিক, তাই হবে। আমি তোমার সাথে আছি।

 হসপিটালে গিয়ে অ্যাবরশন করা হলো।   

ইসমত একটা নতুন প্রাণ নষ্ট করায় অনুতপ্ত। কিন্তু কী করবে? তাকে পৃথিবীতে আনলে তার সামনে বেড়ে ওঠা প্রাণবন্ত মেয়েটার কী হবে? সমাজে তার মেয়েটা কোথায় দাঁড়াবে? যতই মানুষ জীবনের কথা বলুক আসলে জীবনকে বিষিয়ে তুলতে তো সেই মানুষকেই দেখেছে ইসমত। সে এখন শোক কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। এবং এক পর্যায়ে সব স্বাভাবিক হয়ে গেল।

ইসমতের মেয়ে একদিন বলল, মা তুমি কার সাথে প্রেম করছ?

আগে এসব বিষয়ে কিছু জানতে চায়নি তার মেয়ে। ইসমতের পাল্টা প্রশ্ন, তাতে তোর কী?

-এমনি জানতে চাইছি।

-দরকার নাই।

-পরিচয় করাবা না?

-বেশি পাকনামি করিস না।

-একটা কথা বলব?

-কী?

-আমি কিন্তু প্রেমে পড়েছি।

-তাই! দেখাবি ছেলেটাকে?

-না।

‘তোমারটাকে আগে দেখাও’ বলে মেয়েটা পালাল।

মেয়ে প্রেমে পড়েছে-এ নিয়ে ইসমতের ভয় শুরু হলো। কোন ছেলে, কেমন ছেলে ইত্যাদি ইত্যাদি…

ইসমত রাতে মেয়ের রুমে এসে বলল, তোর বয়ফ্রেন্ড কী করে?

-এসব নিয়ে কিছু বলতে পারব না। তোমার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে আমি গবেষণা করি না। সো, তুমিও আমারটা নিয়ে গবেষণা করবা না।

-কতদিনের সম্পর্ক?

-সম্পর্ক নয়। আমি ছেলেটাকে পছন্দ করি ছেলেটা আমাকে করে না। সে সিনিয়র কারো সাথে রিলেশনে জড়িয়েছে।

    ২॥

ইসমতের মেয়ে বিবিএ শেষ করে জব শুরু করেছে। ইসমত মেয়ের বিষয়ে আশাবাদী। তবে একটা বিষয়ে ভয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে মেয়ে যে ছেলেকে পছন্দ করে সে ছেলে তো মেয়েকে পাত্তা দিচ্ছে না। এর ফলে মেয়ের জীবন কোন দিকে যে মোড় নেয় তা বোঝা কঠিন। ওদিকে ইসমত আর তার বয়ফ্রেন্ডের মধ্যে সময়ের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ছেলেটা জব করছে। সেও আর তাকে সময় দিতে পারছে না। শুধু সেক্সের অফার দিলে ছেলে এখুনি দৌড়ে আসবে কিন্তু  মায়ার টানে আসবে না। ইদানীং সেক্সের চেয়ে বন্ধুত্বটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং উপভোগ করে সে। ছেলেটার প্রতি একটা মায়ার কারণে এই দূরত্বটা মেনে নিতে কষ্ট। হৃদয়ে একটা জায়গা তৈরি করেছে ছেলেটা।  সম্পর্কটা বেশ উপভোগ্য। তাকে ছাড়তে পারছে না। দিনকে দিন মরিয়া হয়ে যাচ্ছে মায়ার  টানে আর ছেলের টান অন্য দিকে…

নতুন করে দুর্ভোগ হিসেবে ইসমতকে ভোগাচ্ছে মেয়ের একাকিত্ব। সে চায় মেয়ের একাকিত্ব ঘোচাতে। নিজের একাকিত্ব ঘোচানোর চেয়ে মেয়ের একাকিত্ব ঘোচানোকে অগ্রাধিকার দিলো।

মেয়েকে বলল, ওই ছেলের সাথে আমি যোগাযোগ করে দিই তোর। চেষ্টা করে দেখি।

মায়ের এই অফারে বিস্ময়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল মেয়ে। এই উপকারটুকু করার কেউ ছিল না।

মেয়ের মুখে ছেলেটার মোবাইল নম্বর শুনে থ হয়ে গেল ইসমত। এটা যে তার বয়ফ্রেন্ডের নম্বর! ইসমত অনেক সাহস সঞ্চার করে মেয়েকে তা জানাল। মেয়ে কষ্টে কুঁকড়ে উঠল। মেয়ে নিশ্চল বোবা হয়ে গেছে। ইসমত বুঝতে পারল ব্যাপারটা।  

ইসমত কষ্ট চেপে ধীরে সুস্থে জানাল, ওর সাথে বয়সের কারণে দূরত্ব বেড়েছে আমার। এই বয়সে ওই ছেলের দরকার তোর মতো সঙ্গী।  

 ইসমতের মেয়ে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে।

নিজের কথা ভুলে ছেলেটাকে তার মেয়ের জন্য রাজি করাতে কবিতা ক্যাফে’র পথে নামল।

গল্প - সুবাসে ওড়ে ঘুড়ি - জাকির সোহান
Comments Off
13 Views

এস এম সাথী বেগম

২৫ জুন, ২০২৩ , ৮:২৩ পূর্বাহ্ণ

বাবা থাকেন গ্রামে

সুমনের গান গাইতে ইচ্ছে করছে। ছাদ বাগানে ফুল ক্যাকটাস সবাই সুমনের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। ঘরে ভালো লাগছিল না, এসির বাতাসেও যেন মনে হচ্ছিল তাপদাহ গরমে পুড়ে যাচ্ছিল। কেন এমন হচ্ছিল সুমনের? এটা ভাবতেই  ছাদে গেল। জীবনে কী চাইবার ছিল, কী পেয়েছে। সন্তানের স্বার্থে নিজের বাবা-মাকেও শহরের এই বাসায় স্থায়ীভাবে রাখা হয়নি। স্ত্রী সীমা খুব ভালো মনের মানুষ, সে একটি কলেজে পড়ায়। ছেলেটা গান শেখে, কারাত শেখে, আরবি পড়ে। এতটুকুন সময় নেই আট বছরের বাচ্চা যেন বড়দের মতো হয়ে গেছে। তারও সময় নিয়ে শিডিউল করতে হয় পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হয় অগ্রিম কর্মসূচী বানাতে হয়। গ্রাম থেকে শহরে এসে আজকে সুমন তার নিজের অবস্থান তৈরি করেছে এ অবস্থান তৈরি করতে তাকে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। পোড়াতে হয়েছে জীবনকে। যেমন পুড়ছে প্রচণ্ড গরমে ছা-পোষা মানুষগুলো, কোথাও শান্তি নেই গরম বারবার লোডশেডিং জীবন অসহ্য হয়ে গেছে। এই প্রচণ্ড গরমের ফেসবুকটা খুলতেই চোখে পড়ে তাপদাহের খবর কে কীভাবে জীবন যাপন করছে ভালো লাগে না সুমনের। মনে পড়ে যায় গ্রামে বাবা মার কথা। মা ফোন করেছিল বাবা সুমন তোমার বাবার শরীরটা ভালো নেই প্রচণ্ড গরমে শ্বাসকষ্ট বেড়েছে।

কেন আমি তো পুরো দু’মাসের ইনহেলার দিয়ে এসেছি ।

বাবা তবুও তোমার বাবা ভালো নেই অসুস্থ কিছু খেতে পারে না, চারপাশে গরম কারেন্ট থাকে না অস্থির তোমার বাবারে নিয়ে চিন্তায় আছি।

সুমন বাসায় এসে সীমাকে বলে চলো বাড়ি যাই বাবা-মাকে একটি আইপিএস কিনে দিয়ে আসি ।সীমাও খুব আন্তরিকতার সাথে বলে দেখো এখন তো আমাদের বাবুর কোচিং প্রাইভেট প্রচুর পড়া, এসময় যদি আমরা বাড়ি যাই তাহলে ওর অনেকটা ক্ষতি হবে। তার চেয়ে বরং গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে আমরা গ্রামের বাড়ি যাব। সুমন চুপ হয়ে যায় আর কথা বলতে পারে না।

একটু আগে মা ফোন দিয়ে বলেছে তোমার বাবা তো খুব অসুস্থ তুমি বাড়ি আসো। ছাদে দাঁড়িয়ে সুমনের  মনে পড়ছে একদিন বাবার হাত ধরে হাঁটছিল সামনের রাস্তায় ,ইটের খোঁচা পায়ের সাথে লাগতেই উহ বলতেই বাবা আট বছরের সুমনকে ঘাড়ের উপর নিয়ে দৌড়াতে শুরু করে, বাবা তুমি ব্যথা পাইছো বাবা তুমি ব্যথা পাইছো—-।

গল্প - বাবা থাকেন গ্রামে - এস এম সাথী বেগম
15 Views

মুগ্ধতা.কম

২৫ জুন, ২০২৩ , ৮:২৩ পূর্বাহ্ণ

অপরাধী

-দোস্ত, জানিস মানুষ কখন আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়?

-কখন? কবিরের প্রশ্নে পাল্টা  প্রশ্ন করে তমাল।

সিগারেটে লম্বা একটা টান দিয়ে একটু বেশি সময় নিয়ে ধোঁয়া ছাড়ে কবির। উদাস ভঙ্গিতে বলে, যখন দুনিয়াটা তার কাছে বিষাক্ত আর তিতা লাগে।

তমালের সরল প্রশ্ন, কীভাবে?

শুষ্ক হাসে কবির। তমালের পিঠ চাপড়ে সবলে, দোস্ত তোর মতো মানুষের জন্যই এই দুনিয়াটা। এই দুনিয়া মূলত বোকাদেরই পছন্দ করে। আর বোকারাই দুনিয়াতে সবচেয়ে সুখী হয়।

আবারও সিগারেটে টান দেয় কবির। তমাল কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তারপর বলে, দোস্ত তুই কি আমাকে অপমান করছিস?

-না, সত্যটা বললাম। দেখ, তোকে সবাই কেন পছন্দ করে? কারণ তুই একজন নিপাট ভদ্রলোক। কারো সাতেও না, পাঁচেও না। মানুষকে স্পেস দিতে পছন্দ করিস। তোকে সহজেই বশে আনা যায়। এমন মানুষকে মানুষ পছন্দ করবে না তো কী করবে বল।

-তাই বলে আমি বোকা?

-হয়তো বোকা, নয়তো না। আচ্ছা তোর কি মনে হয়, মাহির কি বোকা ছিল না চতুর?

-কী আজগুবি সব কথাবার্তা বলছিস। পাগল হয়ে গেছিস না কি!

-সত্যি আমার পাগল পাগল লাগছে। মাহিরটা আমাদের ছেড়ে চলে গেল এক পৃথিবী অভিমান নিয়ে। আমরা কিছুই করতে পারলাম না ওর জন্য। কতজনে বলছে কী দরকার ছিল আত্মহত্যা করার। তার বাবা-মা আজ কান্নায় বুক ভাসাচ্ছেন। কিন্তু বেঁচে থাকতে তারা যার যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিল। মাহিরের চেয়ে তাদের ইগো, জিদ এসবের গুরুত্বই বেশি ছিল। একটু আগে বললাম না, দুনিয়াটা বিষাক্ত হয়ে গেলে মানুষ আত্মহত্যা করে। মাহিরের দুনিয়াটা বিষাক্ত হয়ে গিয়েছিল। তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার মতো কেউ ছিল না, তার সাথে দুটো কথা বলার মতো বা তার দুটো কথা শোনার মতো কেউ ছিল না। এই যে তার মানসিক কোনো আশ্রয় ছিল না, এর কারণে তার দুনিয়াটা তিতা হয়ে গিয়েছিল। বিষাক্ত হয়েছিল কখন জানিস?

-কখন?

– যখন আমাদের বন্ধু মহলে তাকে নিয়ে হাসাহাসি হতো, তার সামনেই তার বাবা-মাকে নিয়ে রসালো আলাপ হতো, তার আত্মীয়-স্বজন তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করত। আমাদের মহান শিক্ষকগণ তাকে উপহাস করত। তারপরও ছেলেটা বাঁচতে চেয়েছিল রে, আমরা ওকে মেরে ফেললাম। গত পরশু সে যখন আমাকে জড়িয়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদল তখন আমি ওকে কোনো শান্ত্বনা দিতে পারিনি। ভেবেছিলাম কেঁদে মনের কষ্ট একটু হালকা করুক, আপনা-আপনি সব ঠিক হয়ে যাবে।  ওর শেষ বলা কথাগুলো আমাকে অনেক দিন ঘুমাতে দেবে না। তার কাছে আমরা সবাই অপরাধী হয়ে রইলাম।

কাতরকণ্ঠে তমাল জিজ্ঞাসা করল, কী বলেছিল মাহির?

মাহির বলেছিল, দোস্ত আমি তো আমার দোষে একা নই। একা থাকার কারণে সবাই আমার সাথে এমনভাবে কথা বলে মনে হয় আমি কোনো মানুষ নই, জন্তু। একা মানুষ বলে আমাকে অফিসে বেশি শ্রম দিতে হবে, বন্ধুদের আড্ডায় অতিরিক্ত সময় দিতে হবে, শরীর ক্লান্ত থাকলে ও রাত করে বাড়ি ফিরতে হবে। কেননা আমার জন্য তো কেউ অপেক্ষা করে নেই ঘরে। কার জন্য তাড়া করে ঘরে ফিরব? “বাসায় গিয়ে তো একাই থাকা লাগবে, এত তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরে কী লাভ’ এই কথাটা শুনতে শুনতে আমার কান পচে গেছে। তারা কি জানে, দরজার ওপাশে কেউ একজন না থাকার কী কষ্ট, ঘর থেকে বেরোনোর সময় হাসিমুখে বিদায় দেওয়ার একজন মানুষ না থাকার কী যাতনা, ঘরে ফিরে বোবার মতো থাকা একজন মানুষের হাহাকার? তারা কিছুই জানে না দোস্ত। তারা শুধু দুঃখ দিতে জানে। আমার কাছে দুনিয়াটাই দিন দিন জাহান্নাম হয়ে উঠছে।

চোখ দিয়ে অঝোরে গড়িয়ে পড়া জল মুছে নিয়ে কবির আবার বলে, একা একা বেড়ে ওঠা মাহিরকে আজ অনেকে কাপুরুষ বলছে। ও তো আত্মহত্যা করেনি। আমরা সবাই মিলে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছি। আমি নিজেও কতদিন ওকে বলেছি, বাসায় গিয়ে কী করবি একা একা। আমি বুঝতে পারিনি আমাদের হাসি-ঠাট্টা ওর বুকে কাঁটার মতো বিঁধবে। মাহিরকে কবরে নামানোর সময় মনে হয়েছিল আমি ওর সাথে থেকে যাই। ওর সাথে সহমরণে গেলে বুঝি মুক্তি পেতাম। 

কবিরকে জড়িয়ে ধরে তমাল।

-এমন কথা বলিস না, দোস্ত।

কবিরও তমালকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। গত পরশু মাহির যেমন করে কবিরকে জড়িয়ে ধরেছিল।

eid - গল্প - অপরাধী - অঙ্কনা জাহান
24 Views

মুগ্ধতা.কম

২৫ জুন, ২০২৩ , ৭:৫১ পূর্বাহ্ণ

যখন দেশের বিভিন্ন জেলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত। তখনই আরেকটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেল খোদ রাজধানীতে। আগুনে পুড়ে অনেক প্রাণ গেছে সিদ্দিক বাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায়ও। তার কদিন পরই এক ভোরে যখন মোয়াজ্জেন আজান শেষ করল, এর একটু পরেই রাতের নৈঃশব্দের স্তর ভেদ করে আগুনের লেলিহান শিখায় দুমড়ে মুচড়ে সর্বশান্ত হয়ে গেল বঙ্গবাজারসহ পার্শ্ববর্তী আরো ছয়টি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। চোখের জলে নরম হলো এই এলাকার মাটি-পাথর-ধুলিকণা। মানুষের দীর্ঘশ্বাসে ভরপুর হলো আশপাশ। 

এসব দুর্বিসহ আগুনের প্রসঙ্গ বর্ণনা করলেই চোখে ভাসে বাজারেও চলছে এখন দ্রব্যমূল্যের আগুন। মূল্য বৃদ্ধির আগুনের তাপে এখন মানুষের মন পুড়ছে যা দৃশ্যত নয়। আগুনে পোড়া মানুষের হৃদয় পুড়তে পুড়তে এমন অবস্থা বিরাজ করছে যে মানুষ তার প্রতিবাদের ভাষাও প্রকাশ করতে পারছে না। দেশে দৃশ্যত আগুন আর বিদগ্ধ মানুষের অন্তরের ভেতর ধিকিধিক জ্বলে থাকা ছাইপোড়া অদেখা আগুনের বিহিত কারা করবে? এভাবেই এক অদৃশ্য আগুনে পুড়ে ছারখার হলো রাশেদার জীবন।

আগুনের এই তাণ্ডবে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা মেটাবার চিন্তা ব্যবসায়ীরা ভাবতে গেলে একেবারে মূক হয়ে যাওয়া ছাড়া বা কান্নায় ভেঙে পড়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকে না। এর প্রভাবে যানজট, ভেতরের গ্যাস লাইন ফেটে বিস্ফোরিত কু-লির ধোঁয়া, টিনের শেড পুড়ে ছোট বিল্ডিং জ্বলে পুড়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। ফায়ার সার্ভিসের তাৎক্ষণিক কার্যক্রমের বিঘ্ন ঘটে। মানুষ দিকশূন্য হয়, অস্থিরতায় ভেঙে পড়ে ব্যবসায়ীদের মনোবল। হেলিকপ্টার, সেনা-নৌ-র‌্যাব-বিজিবি-পুলিশ সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে আসে সম্পদ রক্ষায়। পত্রিকার তথ্যমতে কেবলমাত্র বঙ্গবাজারের ক্ষয়ক্ষতিই হতে পারে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি। এত যে ক্ষতি হয়ে গেল তারপরও মানুষ সচেতন নয়। আগুন লাগলেই ক‘দিনের মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় যার কার্যকারীতা সহজে আর আলোর মুখ দেখে না। আলোর মুখ দেখে না বলতে প্রকৃতপক্ষেই এসবের জন্য কার্যকরী প্রতিকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। দেখা গেছে এসবের জন্য প্রথমেই মানুষের সচেতনতাকে দায়ী করা হয়। তারপর কিছু দোষ চলে যায় চলে যায় সিটি কর্পোরেশন এর ঘাড়ের ওপর, কিছুটা যায় ফায়ার সার্ভিসের ব্যর্থতা ওপর, আর সবশেষে যত দোষ নন্দ ঘোষ ওই মাকের্ট কর্তৃপক্ষের ওপর। রিপোর্টে প্রকাশ হয় ওদের অবেহলার গল্প। অনেক ক্ষেত্রেই মার্কেটগুলোতে আগুন নেভানোর যন্ত্রপাতির কথাও পর্যাপ্ত নয় বলে উল্লেখ করা হয়।

এই যে সব কারণ তা আসলে সময়ক্ষেপণ করারই নামান্তর। আসলে উন্নত দেশে থেকে আরও বিশেষজ্ঞ বা যন্ত্রাপাতি বা নগর পরিকল্পনাবিদদের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক যা দেশে বিদ্যমান যথাযথ অথরিটি গ্রহণ করে না। আগুন কি শুধু ব্যবসায়িদের ক্ষতি সাধন করছে নাকি ভোক্তা পর্যায়ে যারা আছেন তাদেরও ক্ষতি হচ্ছে? সরবরাহ কম হবার কারণে গ্রাহক পর্যায়েও পরবর্তী সময় মূল্য বৃদ্ধির চাপ পড়ে। যে ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্থ হলো সে যে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা লোন নিয়েছে তাতে ব্যাংকের ভেতরও খেলাপি ঋণের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ফলে ব্যাংকেও তারল্যর ওপর প্রভাব পড়ে। আবার ব্যক্তিগত ধারদেনার ফলে সমাজের অনেক বিত্তবানের ওপর তার প্রভাব পড়ে। এভাবে একটি ঘর, আরেকটি ঘর করে করে এসবের প্রভাব বিভিন্নভাবেই বিভিন্ন সংস্থায় আঘাত করে। ক্ষতির বর্ণনায় আসতে পারে বিভিন্ন মার্কেটে খেটে খাওয়া হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষের গোপন কথা। যোগ হতে পারে তাদের সংসারের মর্মান্তিক অভাব আর দায়দেনার গল্প।

এই আগুনে শেষ হয়ে গিয়েছিল হাজার হাজার শ্রমিকের সংসারও। এখানে আরও প্রায় পাঁচ হাজার কর্মীর জীবন নির্বাহ হতো, ছিল আরো সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও কর্মী।  কর্মীরা বেঁচে ছিল তাদের সন্তান-সন্ততি নিয়ে। এমনি রাশেদাও।

রাশেদাকে নিয়ে যখন তার বৃদ্ধা মা সিদ্দিক বাজারের ঘিঞ্জি এক রুমের একটি কক্ষে থাকতে লাগল আরও তিন বছর পূর্বে, তখন থেকেই ওদের কাজ ছিল বঙ্গবাজারের দশটি দোকানে খাবার সাপ্লাই করা। রাশেদার মা সকালে গুলিস্তানের কাপ্তান বাজারে চলে যেত হাতে প্লাস্টিকের একটি ব্যাগ নিয়ে, সাথে ষোল বছরের রাশেদাও। বাজার থেকে কোনো দিন ডিম, শাকসবজি, ছোট মাছ বা গরুর কলিজা বা হিসাব মেলাবার জন্য কোনে কোনে দিন শুটকিও যোগ করত রুটিনে। এভাবেই বঙ্গবাজারের দোকানিদের জন্য বাসা থেকে খাবার পাঠানোর ব্যবস্থা করত ওরা। দুপুর আর রাতের খাবার দোকানিরা দোকানে বসেই খেত। প্রতিজনের বিল আসত দুপুরের আশি টাকা আর রাতের ষাট টাকা করে। রাশেদার হাতে পাঁচ বাটির দুটো টিফিন ক্যারিয়ার দিয়ে পাঠানো হতো বাজারে দোকানিদের কাছে। দোকানিরা এই ‘হোম মেইড’ খাবার খেয়ে শান্তি পেত এবং অপেক্ষমান রাশেদার হাতে নগদ টাকা ও বাটি ফিরিয়ে দিত।

রাতের খাবার একটু আগেই পাঠানো হতো, রাত আটটার মধ্যে। রাশেদা খাবারের মাঝের আধ ঘন্টা বিরতিতে বাজারের এখানে ওখানে ঘুরে ঘুরে দেখতো আর স্বপ্ন বুনতো কোনো একদিন হয়তো এই বাজারেই ছোট্ট একটি ঘরে কাপড়ের ব্যবসা করতে বসবে। তিন বছরে তার অভিজ্ঞতায় অনেক ভাবনা জড়ো হয়ে আছে। সে ভাবে একদিন দোকান হলে মাকে আর খাবার রান্নার জন্য আগুনের পাশে বসে থাকতে হবে না। সে মায়ের শরীরের ঘামের ভেজা নোনা গন্ধ পায়। মা যে ক্লান্ত হয়ে জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে অভিশাপ পাঠান এবং অহরহ মৃত্যু কামনা করেন তার অবসান হবে একদিন। রাশেদা তার স্বপ্নের নকসি কাঁথার গল্প মাকে বলে না। সব মনের ভেতর গোপন করে রাখে আর ঘরে ফিরে মায়ের সাথে রান্নার এন্তেজামে মগ্ন হয় আর অবশিষ্ট শাকসবজি উচ্ছিষ্ট ময়লা হাঁড়ি পাতিল পরিস্কার করার কাজে লেগে যায়। কোনো কাজই তাকে দমাতে পারে না। শুধু এই ষোল বছরের শরীরটা মাঝে মাঝে ইকির বিকির করে ওঠে যখন মহল্লার বদ ছেলেরা তাকে দেখে শিস মারে, অসভ্য শব্দ উচ্চারণ কর। সে তখন বুকের ওড়না ঠিক করে শরীরের সব উত্তেজক অংশকে ঢেকে রাখে। তবে মাঝে মাঝে সে-ও খিস্তি বলে ছেলেদের জবাব দিতে ভয় করে না।

ঢাকা শহরের অনেক মহল্লার খবর সে রাখে। মায়ের কাছে শোনে আর বাড়ির মালিকের বউয়ের কাছেও শোনে। দশ-বারো স্কয়ার ফিটের বাসাটি ছোট্ট চিলতে এক ঘর। তবু চলে যাচ্ছে কিন্তু বাড়ির মালিকটির অসভ্য দৃষ্টি থেকে রাশেদা মুক্তি পায় না। প্রতিদিনই প্রায় সন্ধ্যা হলেই লোকটি মদের বোতল নিয়ে বসবে আর চানাচুর বাদাম মুখে নিতে নিতে বউয়ের সাথে নোংরা ভাষার গালাগালি বা নিজের বউকে অর্ধ-উলঙ্গ করেই যা-তা করে বসবে। প্রায়ই সেসব অস্বাভাবিক দৃশ্য রাশেদাকে দেখতে হয়। নেশায় পড়ে একদিন লোকটি রাশেদাকেও জড়িয়ে ধরেছিল কিন্তু মা মা বলে চিৎকার করে রক্ষা পেয়েছিল।

মাস তিনেক হলো রাশেদার মা চলে গেলেন পৃথিবী ছেড়ে ওখানে, রাশেদাকে ছেড়ে। রাশেদা কোথায় যাবে তা নিয়ে সে উদ্বিগ্ন হয়নি খুব। সে জানত মায়ের ব্যবসা বা ‘হোম মেইড’ খাবারের ডেলিভারির সব নিয়ম কানুন। তা-ই সচল রাখল। নিজের হাতে আরও কিছু রান্নার আইটেম বাড়িয়ে দোকানের মালিক কর্মচারিদের কাছে খাবার পাঠানো হলো। এবার সে নিজে আর বঙ্গবাজারে গেল না। মহল্লার একটি ছেলেকে রাখল এই কাজে।

মাসের খরচ গিয়ে বেশ ভালো উপার্জন তার। বাসা বদলও তার করতে হয়নি। বাড়িওয়ালাও তার উপর বেশ সদয় হয় এবং মাঝে মাঝে প্রয়োজন হলে টাকা ধার দেয়ার আগ্রহের কথাও প্রকাশ করে। প্রয়োজনে রাশেদাকে আরও বড় ব্যবসার কথা বলে অনুপ্রেরণা যোগায়। কিন্তু সমস্যা বাঁধে যখন তার বউ ঘরে থাকে না, তখন বাড়িওয়ালা নিজেই রাশেদার ঘরে উঁকিবুকি দেয়, কাছে আসে, গায়ে হাত স্পর্শ করতে চায়। রাশেদার বয়স আর শরীরের উত্তাপকে চাগিয়ে দেয় লোকটি। গভীর রাতে ঘুম না এলে রাশেদা যেন দেখতে পায় একজন পুরুষ মানুষ তার শরীরের ওপর বয়ে যায়। এক নরম-গরম ভিন্ন এক উত্তেজনা টের পায়। ঘুম ভেঙে গেলে সে জীবনের নিরাপত্তা আর নির্ভরতার কথা ভাবে। সে যেন আরো নির্ভরতা চায়, নিরাপত্তার চাদরে ওম নিতে ইচ্ছে করে তার। আরও বিত্তবান হবার অজানা পাখায় ভর করে ঢাকা শহরে স্থায়ীভাবে ঠাঁই চায়। আরও অর্থের যোগান তার রক্তকোষে লালসা ধরিয়ে দেয়। এই শহরে তাকে টিকতে হবে, এখানে ভালো করে তাকে বাঁচতেই হবে কারণ গ্রামে তার কেউ নেই, জায়গাজমি, বাড়ি ঘর কিছুই। 

একদিন বাড়িওয়ালা তার বউকে সাথে নিয়ে দুপুরের সময় রাশেদার কক্ষে ঢোকে। রাশেদাকে উদ্দেশ্য করে বউটিই বলে– রাশেদা তুমি আমাগো ঘরেভি খাবার পাঠাইয়ো। আমার শইল গতরভি ভালা যাইতাচে না। মগার খালি পেটেতো থাকন যাইবো না। তুমি টাকা পইছা লইয়া চিন্তা কইরো না। আর আমরা ভাড়া নিয়াও তোমার ছাথেভি প্যারাপ্যারি করুম না। ভাড়াভি বারামু না। টেনছন নিয়ো না। আমার আব্বার বাড়িতে জরুরি কাম পড়ছে। আমি এক মাস থাকুম না। তোমার ভাইজানরে খাবার দাবার করাইও।

রাশেদা কোনো কথা বলে না। সে ভাবছে সামনে তার অন্ধকার সময়। অন্ধকার তার চারদিকে ঘেরাও করবে। তার চুপ থাকা দেখে বাড়িওয়ালা বলে- কিছু একটা কও রাশেদা। আমারে খাবার দিবা না? তোমার ঘরে আইসা খাইয়া যামু।

যেদিন এসব কথা হয় তার পরদিনই বঙ্গবাজার পুড়ে সাফ। রাশেদার ভাগ্য এক অদৃশ্য আগুন-বাতাসে পুড়ে যায়। কিন্তু এই আগুন কেউ দেখে না। সে পুড়তে থাকে, ধ্বংসস্তুপে পরিণত হতে থাকে তার পোড়া হৃদয়। তার সব কাজ খাবার সাপ্লাই বন্ধ হলে সে আরো চুপচাপ নির্বাক হয়ে ঘরের মেঝেতে পাটি বিছিয়ে শুয়ে থাকে আর ভাবে নিজের ভবিষ্যত : মা নেই বাবা নেই। একা সে কীভাবে সামাল দেবে এই শরীর আর জীবন ?

বাড়িওয়ালা দুপুরের খাবার খেতে আসে। প্রথমে রাশেদার খোঁজ নেয়। মার্কেটের সব তত্ব তালাশ করে। কিছু সময় দম নিয়ে রাশেদার শরীরের কাছে ঘেঁষে বলে–রাশেদা চিন্তা করো কে-লা ? আমি আছি। তোমার টেনছান ছব আমি নিলাম। মাগার কতা দিতে অইবো তুমি অন্য কোনোখানে যাইবা না। আমার ঘরেই থাকবা। কও রাজি আছোনি ? রাজি আছো..?

রাশেদা অনেকক্ষণ কিছু বলে না। ক‘মাস পূর্বে যখন মা জীবিত ছিলেন তখন সাহসের তীব্রতা ছিল তার ভেতর, সামান্যতম উলোটপালট কোনো কথা শুনলেই জ্বলে ওঠত। এখন তার বিশ্বাসে ফাটল এসেছে, জীবনের ভাবনাগুলোতেও। বন্যার তোড়ে যখন সবকিছু ভেসে যায় তখন বাঁচার আঁকুতিই বড়, তখন সামান্য খড়কুটো পেলেই জড়িয়ে ধরে মানুষ। রাশেদা এখন বুঝতে পারে একমাত্র সাহসই তাকে সফলতা এনে দিতে পারে, তাকে বাঁচাতে পারে। তবে ভাবনার সাথে সুষ্ঠু চিন্তার যোগসূত্র না মিললে হতাশায় পুড়তে হবে। তখন আর এই জীবনের ঘানি টেনে তার অনেকদূর যাওয়া সম্ভব হবে না।

একটু ভেবে রাশেদা এই দুর্দিনে দুঃসময়ে একটি কঠিন ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। বাড়িওয়ালার চোখের দিকে আর সামনে রাখা ভাতের মেলামাইন থালার দিকে তাকিয়ে সে জবাব দেয়-হ।

..

শাওন আসগর

প্রযত্নে: আশিকুল কাদির। সীমানা গ্রীণ হাউস-৩য় তলা # ২০৯/ক লালবাগ রোড, ঢাকা-১২১১।

মোবা: ০১৬৮২৮৮০৯৮৬  ।

গল্প - হ - শাওন আসগর
Comments Off
26 Views