কবির হত্যা ও এ্যস্ট্রে

আহমেদ নাফি

১৩ মে, ২০২১ , ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ ; 688 Views

কবির হত্যা ও এ্যস্ট্রে - আহমেদ নাফি

আজ বৃহস্পতিবার! ভোর ৪ টায় কবিকে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল বেলা টং দোকানের ছোট্ট ফরহাদ কবির জন্য চা নিয়ে যায়।  জানালা দিয়েই দেয়া – নেয়া হতো চা – বিস্কুট, সিগারেট আর খোশ গল্প। মাঝে মাঝে কবি যখন ঘুমের মধ্যে থাকত তখন চায়ের কাপ জানালা দিয়ে ভেতরে রেখেই চলে যেতো ফরহাদ। অলটাইম – ই খোলা থাকত কবির জানালা!

আজ ফরহাদ হাসতে হাসতে কবিকে চা দিতে যাচ্ছিলো। কবির নামমাত্র বাড়ির জানালার কাছে যেতেই ফরহাদ তীব্র ভয়ে আঁতকে উঠলো। সে দেখলো ফ্লোরে চিত হয়ে পরে আছে কবির লাশ। চায়ের কাপ ফেলে দিয়ে ফরহাদ চিৎকার করতে  করতে রাস্তার মাঝ বরাবর দৌড়ে গেলো! জানালা থেকে প্রায় সাত – আট মিটার দূরে একটা পেয়ারা গাছ আছে। সেখানে রোমান্টিক মুডে বসে থাকা যুগল চড়ুই দু’টি ফরহাদের চিৎকার শুনে খুবই কনফিউজড হয়ে পরেছে। তাদের লিটল ব্রেইনে কিছুই ঢুকছে না। সকালের রহস্যটা বোঝার জন্য তারা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো কবির ঘরের দিকে।

মূহুর্তে লোকজনে ভরে উঠলো চারপাশ। ছোট্ট ফরহাদ অনেক বড় একটা শক খেয়েছে। পুলিশ ও এসেছে ইতিমধ্যে। ঐ এলাকার ওসি জাহিদ সাহেব খুব মনোযোগের সাথে ডেথ স্পোর্ট এনালাইসেস করছেন। কিন্তু,  সদ্য বিয়ে হওয়া কন্সট্যাবল হারুনের কাজে মন নেই।  তার বিবাহিত জীবনের বয়স মাত্র তিনদিন। এই তিনদিনে কেবল স্ত্রীর কাছে যাওয়ার সাহস কোনোমতে জুটিয়েছে সে। আর তার ই মাঝে এমন ক্রিটিকাল একটা কেছ এসে, তার ছুটির বারোটা বাজিয়ে দিল।

নেটিভ টাইলসের ফ্লোর। ফ্লোরে কবির রক্তাক্ত দেহ। দেহ থেকে ফরেন পারফিউমের সুবাস আসছে। যথাসম্ভব পারফিউমটা ম্যাড ইন ফ্রান্স। রক্ত শুকিয়ে চটচটে হয়ে গেছে। ওসি জাহিদ সাহেব হাতে গ্লোভস পরছেন আর  কন্সট্যাবল হারুনকে বলছেন কবির শার্টের বোতাম খুলতে।  আট – নয় ইঞ্চি লম্বা ও তিন – চার ইঞ্চি গভীর ক্লিভার নাইফের পনেরোটা ক্ষতর দাগ কবির শরীর জুড়ে। ফ্লোরে আরও পরে আছে ড্রিম অফ দা রেড  চ্যাম্বার বইটি আর কবির এ্যাসট্রে।

ওসি জাহিদ সাহেবকে বেশ চিন্তিত লাগছে। ডেথ স্পোর্ট থেকে তিনি কোনোই এভিডেন্স পেলেন না। শরীর থেকে আসা পারফিউমের গন্ধ থেকে তিনি ধারণা করলেন, রাতে কবির বাসায় পরিচিত কেউ এসেছিলো এবং তার সাথে কবির বাইরে কোথাও যাওয়ার কথা ছিল হয়তো।

সকাল পেড়িয়ে দুপুর হলো। আসপাশের লোকজনও কমে যেতে লাগলো ধীরে ধীরে। মেয়ে চড়ুই টা ভাবুক চোখে ছেলে চড়ূই টার দিকে তাকিয়ে আছে আর বলছে,

” আচ্ছা, আজ কবি  সকাল সকাল আমাদের গুড মর্নিং লাভলি কাপল বলল না ক্যানো? আজ কি হচ্ছে ওখানে? ”

ছেলে চড়ূইটা ম্যাটার টা বোঝার জন্য জানালার কাছে উড়ে গিয়ে বসল। মেয়ে চড়ূইটা প্রেগন্যান্ট। দৌড় – ঝাপ তার সম্পূর্ণ নিষেধ।

এদিকে কনস্ট্যাবল হারুন ওসি জাহিদ সাহেবকে কোনোমতে কনভিন্স করে ফেলেছে, বউকে নিয়ে তার মামা শশুরের বাড়িতে রাতের দাওয়াতে যাবে বলে। কবি শহরের বিত্তবানদের লিস্টে ছিলেন না। এই আর কি ক’জন মানুষ চেনেন এতটুকুই। ধীরে ধীরে ওসি জাহিদ সাহেব আর অন্যান্য স্টাফ গুলোও ক্লান্ত হয়ে পরল। ওসি জাহিদ সাহেবের মাথায় আবার অনেক টেনশন। তার হাতে গত পরশু শহরের এক বিরাট নেতার মেয়ের পালিয়ে যাওয়ার কেছ ফাইল এসেছে । এই কেছ টা তাড়াতাড়ি স্লোভ করতে পারলে তার প্রোমোশন নিশ্চিত।

প্রায় সাড়ে তিন মাস ইনভেস্টিগেশন চলল। ডেথবডির পোস্টমর্টেম হলো, কবির বাড়ি সাত থেকে আটবার তল্লাশি হলো। তার সাথে কন্টাক্ট এ থাকা সকালের ইন্টারোগেশনও সুসম্পন্ন হলো। কিন্তু কোনো ব্রেকথ্রু মিলল না। ধীরে ধীরে গা ছাড়া হয়ে গেলো কেছ টা। পরে থাকা ফাইলের স্তুপের সবার উপরে জায়গা করে নিলো কবির মাডার কেছের খয়েরী কালার ফাইল। ধীরে ধীরে সব মুছে যেতে শুরু করল। ফরহাদ এখন নরমাল আর বেশ ফুর্তিতে থাকে। চড়ূই দুটার ফ্যামিলিতে এসেছে আরেকটা বাচ্চা চড়ূই। এক ভাংড়ির দোকানে শেষ দেখা গেছে ড্রিম অফ দা রেড চেম্বার সহ কবির প্রিয় বইগুলো আর এ্যাস ট্রেটা। এ্যাস ট্রে’তে তখনও ছিলো খুনীর খাওয়া দামি সিগারেটের ফিল্টার। আর তখনও এ্যাস ট্রেতে থাকা ফিল্টারে ছাপ ছিলো কড়া লাল লিপস্টিকের!

[wpdevart_facebook_comment curent_url="http://yourdomain.com/page-url" order_type="social" title_text="Facebook Comment" title_text_color="#000000" title_text_font_size="22" title_text_font_famely="monospace" title_text_position="left" width="100%" bg_color="#d4d4d4" animation_effect="random" count_of_comments="3" ]