পোড়া কপাল 

মাসুম মোরশেদ

১৩ মে, ২০২১ , ২:৪৭ পূর্বাহ্ণ ; 958 Views

পোড়া কপাল - মাসুম মোরশেদ

এক.

ধরি, মেয়েটির নাম এক্স।নাদুস-নুদুস শ্যামলা চেহারা।শেপ-সাইজ সুন্দর।কথা বলে অল্পস্বল্প।কারও সাথেপাছে নেই।একদম নির্মোহ স্বভাবের।বিড়ালের মতো হাঁটে।কোন সাড়াশব্দ হয় না।কোনদিন তার কাশির শব্দও শুনিনি।কাশি হলে বোধহয় সে বালিশে মুখ গুঁজে কাশে।কেউ কোনদিন তার কোন দোষ দেখেছে বলে মনে হয় না।তবে তার দোষ আমি যেটা জানি, তা হল পাঠ্যবই ছাড়া দুনিয়ার কিছু সে চিনে না।পড়ার টেবিলে বইয়ে মুখ গুঁজে বুজে থাকে।এমনকি টিভি দেখতেও বই নিয়ে বসে।এটা তার পক্ষে সম্ভব।

হানিফ সংকেতের ইত্যাদিতে নানা-নাতির পর্ব।সবাই হাসতে হাসতে একাকার।সে নির্লিপ্ত।আজব মেয়ে।আমাদের টিভি খারাপ হওয়ায় মাসহ তাদের বাড়িতে দেখতে গিয়ে তাকে ফলো করে তার কাণ্ড দেখেছি।তাকে বলতে চেয়েও বলতে পারিনি কিসে তার কতশত দু:খ, কেন সে এমন অসহায়ভাবে থাকে, চলে।কিন্তু সাহস করে বলতে পারিনি।

সে আমার এক বছরের জুনিয়র।

সে ফার্স্ট ইয়ার, এখানকার কলেজে।

আমি সেকেন্ড ইয়ার, এইচএসসি দিব শহরের কলেজ থেকে।

একদম পাশাপাশি বাড়ি আমাদের।

মুখোমুখি গেট।

এ বাড়ির মহিলা-ও বাড়ির মহিলাদের নিয়মিত এবাড়ি-ওবাড়ি যাতায়াত আছে ।মহিলা বলতে আমার মা, তার মা আর তার এক ভাবী।দরকারে বা খোশগল্পে যাতায়াত।সময় কাটানো আরকি!তো সেই পাশের বাড়ির এক্স-কে আমার খুব ভাল লাগে।ইনিয়ে-বিনিয়ে টুকটাক কথা বলার চেষ্টা করি।কিন্তু পাত্তা দেয় না সে। দায়সারা গোছের জবাব দেয়।

যদি বলি, খাওয়া-দাওয়া হল ?

:হুম।

ব্যস, এটাই।ভদ্রতা বশত বলবে না সে, আপনি খেলেন?

বা আজকে চাচী কি রান্না করেছে?

যেচে কোনদিনও কথা বলেনি সে।আবার অহংকার ভাববেন না কেউ।সে এমনই।আর এজন্যই তাকে ভাল লাগে কিনা জানি না।

পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় এক্স-র সাথে দুয়েকবার দেখা হয় দিনে।যেন রাতেও দেখা হয় সেজন্য ওর ছোট ভাইকে কায়দা কৌশলে বন্ধু বানালাম।

ধরি, তার সেই ভাইয়ের নাম জেড।

জেড এবার এসএসসি দিবে।সে আগে ছিল পাড়াত ভাই, এখন বন্ধুুর মতো, কিন্তু বন্ধু নয়।সে ছাত্র হিসেবে একদম নিরস।তার সামনে ভুলভাল ইংরেজি বাক্য বলি ফটরফটর করে যেন সে বাড়িতে এক্স-র সামনে আমার প্রসঙ্গ তুলে বলতে পারে আমি ছাত্র হিসেবে বাঘমারা।

বাকিসব চুনোপুঁটি, ইন্দুর, বিড়াল।

জেড গণিতের সরল অঙ্ক বুঝে না।বলি, চল্ , তোদের পড়ার ঘরে বসে দু’মিনিটে তুড়ি বাজিয়ে শিখিয়ে দিবো।একদম সোজা অঙ্ক।বুঝিয়ে দিলে পানির মতো মনে হবে।জলবৎ তরলং।ডাজিন্ট ম্যাটার।সে গদগদ হয়ে তাদের বাড়িতে এক্স-র পড়ার টেবিলে আমাকে নিয়ে যায়।খেয়াল করলাম, এক্স তখন বাংলা বই পড়ছিল।জেড একটা চেয়ার টেনে দিয়ে পাশে টেবিলে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায়।আমি চেয়ারে বসি ঠিক কিন্তু তপ্ত উনুন মনে হয় চেয়ারটাকে।আড়ষ্ট হয়ে আড়চোখে এক্স-কে দেখি।আমার বুকের ভেতর পেণ্ডুলামের ঠকাস ঠকাস শুনতে পাই।গ্রামের জুম্মার ভেতর থেকে বড়সড় দেয়াল ঘড়িতে বারটার ঘণ্টা বাজে যেমন।ভয় হচ্ছে, সেকি আমার বুকের সে শব্দ শুনতে পাচ্ছে ?তার পাশে বসে নিজেকে সম্রাট শাহজাহান মনে হচ্ছে।আমার মমতাজ আমার একদম পাশে, খুব কাছে।ইচ্ছে করলে হাত ছুঁতে পারি, তার পায়ে পা দিয়ে ঠেস দিতে পারি।কিন্তু ঐ ভাবনা পর্যন্ত।

বাস্তবে তা সম্ভব নয়।

অসম্ভব।

এই অসম্ভব শব্দটা কানে বারবার বাজে।

মন থেকে কানে।

প্রতিধ্বনিত হয়।

খসখস করে একটা সরল অঙ্ক জেড-কে বোঝাতে চেষ্টা করি, মানে জেড কতটুকু বুঝল, কতটুকু শিখল তা না ভেবে এক্স-র দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারলাম কিনা তাই আড়চোখে খেয়াল করি।

এখানে ধরে নিন, আমার নাম ওয়াই।

জেড এতক্ষণ হু হুম হ্যাঁ বলে অঙ্ক বুঝছিল।এবার মুখ খুলল।

তার এক্স আপাকে ইঙ্গিত করে বলল সে, দেখছিস, আপা, ওয়াই আমাকে মাত্র দু’মিনিটে কঠিন একটা সরল অঙ্ক কত সুন্দর করে বুঝিয়ে দিল।আর কখনও আমার ভুল হবে না, আপা।ওয়াই কিন্তু হেব্বি ইংরেজি জানে।ইংরেজি ছাড়া কথাই বলে না।তার কাছ থেকে টুকটাক ইংরেজি শিখছি ঘুরতে ফিরতে।

এক্স: এই গাধা, ওয়াই কিরে? ওয়াই কি? বল, ওয়াই ভাই।বড়ভাই বা ভাইজান।তোর সিনিয়র তিনি।তিনি এবার ইন্টারমিডিয়েট দিবেন।তুই এসএসসি।লম্বায় বড় বলে তুই তার নাম ধরে বলবি?

চোখমুখ চটকিয়ে সে তার ভাইকে থ্রেটিং করে বলল।

আহা, কী সম্মান!মনটা ভরে গেল।আনন্দে বুকের ভেতর একটা টেনিস বলটা দাপাদাপি করে।আমার হবু বৌয়ের  আর হবু শ্বশুরবাড়িতে আমার একটা অবস্থান তবে তৈরি হল।

রাতটা গেল এপাশ ওপাশ করে।কত কি ভেবে ভেবে।তার একদম কাছাকাছি বসার আমেজ, আবেশ।

দুই.

গাধা জেড এখন তুই-তোকারি করে নিয়মিত।কিচ্ছু বলতে পারি না।যদি চটে যায়।তার মেজাজ একরোখা।সব বন্ধু বান্ধব থেকে সরে এসেছি।কাউকে পাত্তা দিই না, বাল্যবন্ধু, শ্রেণীবন্ধু সবাইকে ছেড়ে, ভুলে সারাদিন সারাসময় জেডের সাথে মিশছি।সেও তার খালাত বোনকে ভালবাসে।তার সে ভালবাসার গাঁজাখুরি গল্প শুনতে শুনতে বমি আসে।এক্স-র জন্য কিছু বলি না।এক্স-কে পেলে এ শালার পাছায় লাত্থি দিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দিব।কাল সে আমার কাছে রঙিন প্যাডে চিঠি লিখে এনেছে।লিখেছে:

প্রাণের জানু,

তারপর যত আজেবাজে কথা।চিঠিতো নয় চটিগল্প যেন।তাতে সেন্ট মেখেছে।ফুলের পাপড়ি রেখে সুন্দর করে ভাঁজ করেছে।বলল, আজ সকালে তার সে খালাতো বোনের সাথে একাকী পেয়ে কোলাকুলি করেছে সে।শালার যা অবস্থা, পারলে পরীক্ষায় না বসে বিয়ের পিড়িতে বসে।কী আর করার, এক্স-র জন্য সব সহ্য করছি।দায়িত্বশীল হবু দুলাভাই হিসেবে তাকে বোঝাই, এটা তোর লেখাপড়া করার বয়স।ভবিষ্যত তৈরির বয়স।লেখাপড়া শেষ কর, আমি তোদের বিয়ে দিব।আর মনে মনে বলি, শালা, তোর কপালে অনেক দু:খ আছে।তোকে ভিক্ষে করে খেতে হবে।বদমাশ একটা।কৈ রে, আমি তো তোর বোনরে ভালবাসি, কোনদিনতো টাচও করার সুযোগ নিই না।কত পবিত্র আমার ভালবাসা।যদিও তা একপেশে।

তিন.

আস্তে আস্তে তাদের বাড়িতে যাতায়াতটা বাড়ল।চাচীও জেড-র ব্যাপারে আমার ওপর ভরসা করতে লাগলেন।প্রায় তিনি বলেন, বাবা, ওয়াই, ওকে একটু বোঝাও।বুদ্ধিসুদ্ধি কম ওর।লেখাপড়ে শিখে মানুষ হতে না পারলে ওর বাবা খুব কষ্ট পাবে।ভাইয়েরা কদ্দিন ওকে দেখবে, বল?

বলি, চাচী চিন্তা করবেন না।আমি নিয়মিত তাকে শেখাচ্ছি, বোঝাচ্ছি।নিশ্চয় পরীক্ষায় ভাল করবে সে। এপাশে আমার দিক থেকে ভালবাসা বাড়তে লাগল।বুকের বা পাশে চিনচিন করে।একটা ভাল্লাগা কাজ করে।অন্যপাশের কী অবস্থা বুঝি না।কোন রেসপন্স নেই।হয়ত বোঝে, হয়ত বোঝে না।

দীর্ঘদিন মনে মনে পুষে রাখি সে ভালবাসা।হঠাৎ “আশিকী” নামে একটা হিন্দি সিনেমা ভিসিআরে দেখে মনটা তোলপাড় হল।থামতে পারি না।বুকের ভেতর আবেগ উথলে উঠছে।সিদ্ধান্ত নিলাম এক্স-কে বলতে হবে যে করেই হোক “তোমাকে ভালবাসি”।

তো সুযোগ খুঁজি।কিন্তু সুযোগ পেলেও বলতে পারি না।গা কাঁপে থরথর করে।বুকের ভেতর দ্রিম দ্রিম হাতুরী পেটা শব্দ হয়।সিদ্ধান্ত নিলাম চিঠি দিব।হাফ দিস্তা কাগজ নষ্ট করে একটা চিঠি দাঁড় করালাম।

সেটি চুপচুপ করে পড়ি,

বারবার পড়ি।

হ্যাঁ, ঠিক আছে।প্যাণ্টের পকেটে রেখে বারবার হাত ঢুকিয়ে দেখি, আছে কি নেই!

পরেরদিন সুযোগ বুঝে ওর বাংলা বইয়ে ঢুকিয়ে দিলাম।সারাদিন ভয়ে বাড়ি থেকে বের হই না।সবাই বুঝি দেখেছে।সবাই বুঝি জেনেছে।বুকের ভেতর ঢিপঢিপ শব্দ।সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকি।কখনও মনে হয় এক্স বোধহয় বাড়ির সবাইকে বলেছে।এই বুঝি তার বাড়ির লোকরা লাঠি নিয়ে মারতে আসে।কান খাঁড়া করে শোনার চেষ্টা করি।বারবার বাথরুমে যাই।মাথা চাড়া দিয়ে তাদের বাড়ি দেখার চেষ্টা করি।না, কোন শব্দ নাই।জেডও নেই কেন জানি।শালা আজ একবারও খোঁজ করতে আসল না।আমি ভয়ে মরি আর তার পাত্তা নেই।নিশ্চয় সে তার খালার বাড়ি গেছে।

খুব কঠিন দিন গেল একটা।

পরেরদিন শালা জেড-র দেখা পেলাম।কোন হেলদোল নেই।বুঝলাম, সমস্যা নেই কোন।তবে কি সে চিঠি পায়নি নাকি পড়ে রেখে দিয়েছে নাকি ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে?আমার ভালবাসা সেকি গ্রহন করেছে, নাকি করেনি?

এটা ওটা কত কি ভাবি।

কখনও ভয়ে মরি তো কখনও আনন্দে  পুলকিত হই।দু:খ তাড়াতে সারাদিন গুণগুণ করে গান গাই।মাথার চুল টানি।শার্টের বোতাম খোলা রেখে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে দিন পার করি।

চার.

চিঠির ব্যাপারে কিছু বুঝলাম না।আবার দেখা হয়।ওদের বাড়িও যাই।কিন্তু কিছু বুঝে উঠতে পারি না।এবার সিদ্ধান্ত নিলাম সরাসরি বলব।শীঘ্রই সুযোগও হল।সে বাঁধের রাস্তায় একা একা কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছে।আমিও বাইসাইকেলে বাঁধের রাস্তায় আসছি।

পথে হল দেখা।

সাইকেল থেকে নেমে তার কাছাকাছি হয়ে বললাম, কেমন আছো?

এক্স: ভাল।আপনি?

ভাল।বলে, এদিক সেদিক দেখে তাকে সাহস করে বললাম, এক্স, একমিনিট থামো।

সে থামল।

আর আমার দম বন্ধ হল।

বাতাসে অক্সিজেনের বড় অভাব দেখা দিল।ঠোঁট মুখ শুকিয়ে কাঠ।

মরে যাচ্ছি মনে হচ্ছে।

এক্স: বলুন, ওয়াই ভাই, কি বলবেন?সে ওড়না ঠিক করতে করতে বলল।

ওড়না সরলে তার বুকে দেখি পাথর।

ঠোঁট চেটে হরহর ফরফর করে বললাম তাকে, এক্স, তোমাকে একটা চিঠি দিয়েছিলাম, পড়েছো নিশ্চয়?

তার দিক থেকে কোন উত্তর নাই।

শোন, তোমাকে আমার খুব ভাল লাগে।তোমাকে আমি ভালবাসি।

পাত্তা দিল না সে।হনহন করে হাঁটতে লাগল।আবার তার সামনে দাঁড়ালাম।

না, সে কোন উত্তর দিচ্ছে না।বুকের পাথরগুলো মুখে এসেছে। তার চোখ,মুখ কঠিন।কোন অনুভূতি নেই।

হনহন করে চলে গেল সে।

না, এ মুখ তাকে দেখাবো না।ছি, ছি, ছি, যার জন্য দিন মাটি, ঘুম নষ্ট, পড়াশোনা লাটে উঠেছে-সেই কিনা কোন পাত্তা দিল না?ভেবে কিনারা পাই না কী করব।

নির্ঘুম রাত।

নিত্য বিছানায় এপাশ-ওপাশ।

শেষে সিদ্ধান্ত নিলাম আর একবার ট্রাই করব যা হয় হোক।

এটাই শেষ।

কিন্তু হাঁদা গাধা জেড-র জন্য বলতেই পারি না।সারাক্ষণ লেপ্টে থাকে শালা।যাক, সিদ্ধান্ত নিলাম ওর কলেজে গিয়ে বলব।তো পরেরদিন এক্স-র কলেজে গেলাম।চেনাশোনা এর ওর চোখ ফাঁকি দিয়ে, কারও কারও সাথে ভাব করে আশায় আশায় ঘুরছি।এভাবে অনেক ঘোরাঘুরি করে সময় সুযোগ মিলল।ডাকলাম, এই এক্স, এক্স!

সে কাছে আসল।

কাঁপতে কাঁপতে বললাম, কোন রেসপন্স পেলাম না।বাধ্য হয়ে এখানে দেখা করতে এসেছি।প্লিজ মাইণ্ড কর না।এতদিনে নিশ্চয় জেনেছো, বুঝেছো তোমাকে আমার খুব পছন্দ, সত্যিই তোমাকে আমি ভালবাসি।কিন্তু তোমার দিক থেকে কোন সাড়া পাই না।

তুমি কিছুই বল।

প্লিজ কিছু বল।

হ্যাঁ বল, প্লিজ।

আপনি এখানে আসা আপনি ঠিক করেননি।অনেকেই দেখছে।কে কি ভাবে।বাড়ি পর্যন্ত খবর যাবে। মরা গলায় আরও বলল সে, বুঝি সব।কিন্তু ওয়াই ভাই, আমার পক্ষে এটা অসম্ভব।

তাই কোন জবাব দিইনি।

:কেন অসম্ভব?বল, শুনি?

:কারন, আমি আপনাকে সেভাবে ভাবি না।

:মানে?

:আপনাকে ভাই ভাবি।

বললাম, নিজেরতো নই।

আমি পড়ে যাব বোধহয়।পায়ের তলায় মাটি নেই।

বলল সে, নিজের মতো ভাবি।সেই ছোটবেলা থেকে তাই ভেবে বড় হচ্ছি।অযথা আমাকে ভেবে কষ্ট পাবেন না।ভুল বুঝবেন না।

বলে সে হনহন করে চলে যায় তার কমন রুমের দিকে।

আমার বুকের ভেতরের টেনিস বলটা থেমে যায়।ঘড়ির পেণ্ডুলামটা আর ঠকাস ঠকাস করে না।

[wpdevart_facebook_comment curent_url="http://yourdomain.com/page-url" order_type="social" title_text="Facebook Comment" title_text_color="#000000" title_text_font_size="22" title_text_font_famely="monospace" title_text_position="left" width="100%" bg_color="#d4d4d4" animation_effect="random" count_of_comments="3" ]