সুমনের গান গাইতে ইচ্ছে করছে। ছাদ বাগানে ফুল ক্যাকটাস সবাই সুমনের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। ঘরে ভালো লাগছিল না, এসির বাতাসেও যেন মনে হচ্ছিল তাপদাহ গরমে পুড়ে যাচ্ছিল। কেন এমন হচ্ছিল সুমনের? এটা ভাবতেই ছাদে গেল। জীবনে কী চাইবার ছিল, কী পেয়েছে। সন্তানের স্বার্থে নিজের বাবা-মাকেও শহরের এই বাসায় স্থায়ীভাবে রাখা হয়নি। স্ত্রী সীমা খুব ভালো মনের মানুষ, সে একটি কলেজে পড়ায়। ছেলেটা গান শেখে, কারাত শেখে, আরবি পড়ে। এতটুকুন সময় নেই আট বছরের বাচ্চা যেন বড়দের মতো হয়ে গেছে। তারও সময় নিয়ে শিডিউল করতে হয় পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হয় অগ্রিম কর্মসূচী বানাতে হয়। গ্রাম থেকে শহরে এসে আজকে সুমন তার নিজের অবস্থান তৈরি করেছে এ অবস্থান তৈরি করতে তাকে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। পোড়াতে হয়েছে জীবনকে। যেমন পুড়ছে প্রচণ্ড গরমে ছা-পোষা মানুষগুলো, কোথাও শান্তি নেই গরম বারবার লোডশেডিং জীবন অসহ্য হয়ে গেছে। এই প্রচণ্ড গরমের ফেসবুকটা খুলতেই চোখে পড়ে তাপদাহের খবর কে কীভাবে জীবন যাপন করছে ভালো লাগে না সুমনের। মনে পড়ে যায় গ্রামে বাবা মার কথা। মা ফোন করেছিল বাবা সুমন তোমার বাবার শরীরটা ভালো নেই প্রচণ্ড গরমে শ্বাসকষ্ট বেড়েছে।
কেন আমি তো পুরো দু’মাসের ইনহেলার দিয়ে এসেছি ।
বাবা তবুও তোমার বাবা ভালো নেই অসুস্থ কিছু খেতে পারে না, চারপাশে গরম কারেন্ট থাকে না অস্থির তোমার বাবারে নিয়ে চিন্তায় আছি।
সুমন বাসায় এসে সীমাকে বলে চলো বাড়ি যাই বাবা-মাকে একটি আইপিএস কিনে দিয়ে আসি ।সীমাও খুব আন্তরিকতার সাথে বলে দেখো এখন তো আমাদের বাবুর কোচিং প্রাইভেট প্রচুর পড়া, এসময় যদি আমরা বাড়ি যাই তাহলে ওর অনেকটা ক্ষতি হবে। তার চেয়ে বরং গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে আমরা গ্রামের বাড়ি যাব। সুমন চুপ হয়ে যায় আর কথা বলতে পারে না।
একটু আগে মা ফোন দিয়ে বলেছে তোমার বাবা তো খুব অসুস্থ তুমি বাড়ি আসো। ছাদে দাঁড়িয়ে সুমনের মনে পড়ছে একদিন বাবার হাত ধরে হাঁটছিল সামনের রাস্তায় ,ইটের খোঁচা পায়ের সাথে লাগতেই উহ বলতেই বাবা আট বছরের সুমনকে ঘাড়ের উপর নিয়ে দৌড়াতে শুরু করে, বাবা তুমি ব্যথা পাইছো বাবা তুমি ব্যথা পাইছো—-।