কামরুন নাহার রেনু
১৩ মে, ২০২১ , ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ ; 116 Views
ভার্সিটি পাস করেই একটা চাকরি ঠিক জুটিয়ে নেবো, আর তোমাকে একা থাকতে দিবো না। সোজা কাজী অফিস। জানি আমাকে তো তোমার বাবা মা জামাই বানাবে না, চেহারার যা হাল তার উপর বাবার গাড়ি বাড়ি প্রোপার্টি কিচ্ছু নাই, কেউ দেয় নাকি এমন ছেলের হাতে তাদের ডানাকাটা পরীকে? আর শোনো, বছর ঘুরতেই আমরা বাবা মা হবো, বাচ্চা নিশ্চই খুব কাঁদুনে হবে। তুমি তো আবার ঘুম কাতুরে, আল্লায় জানে আমার গুল্টি বুড়ির কি যে হাল করো। সমস্যা নাই তুমি ঘুমিয়ে গেলেও আমি দেখে রাখবো গুল্টি বুড়িকে। আমাদের কিন্তু প্রথমে মেয়েই হবে। ওর তুল তুলে হাত দুটো দিয়ে সারাক্ষন আমাকে আদর করবে। আহ্ কি শান্তি। তুমি তো আবার আমার আদর দেখে হিংসায় জ্বলে যাবা ।আরে শোনো প্রেমিক আমি যেমনই হই না কেনো পড়া লেখাটা ঠিক রেখেছি তোমার জন্যই, তুমি আমার ট্রামের শেষ কার্ড, বাজিমাত আমি করবোই। আরেকটা কথা,-সংসার জীবনে রাগটা একটু কমাতে হবে তোমাকে । রাগলে তোমাকে ফুলন দেবী মনে হয় আমার। এত রাগলে আমি তো হাইপারে চলে যাবো, তখন তোমারই কষ্ট বাড়বে। না না আমি তোমার কষ্ট সহ্য করতে পারবো না। আর ছয় মাস গেলেই ভার্সিটি জীবনের ইতি। দিন ফুরোচ্ছে না আমার। একটা প্রাইভেট ফার্মের সাথে কথা হয়েছে শুধু রেজাল্টের অপেক্ষা। জানো স্রষ্টা জানে, তোমাকে ছাড়া একদম পঙ্গু হয়ে যাবো আমি তাই তোমাকে ঠিকই মিলিয়ে দিয়েছেন আমার সাথে। কথা গুলো এক নাগারে বলে যাচ্ছে আরিব অথচ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না তনিমা, বিষয়টা লক্ষ্য করে আরিব,বলে- ও বউ চুপ করে আছো যে? কিছু তো বলো। এমন চুপ করে থাকলে বুকের ভেতর দমের মেশিন অকেজো হয়ে যেতে চায়। শরীর খারাপ? কি হইছে কও না কেন? তনিমার সংক্ষিপ্ত উত্তর , -প্রচন্ড মাথা ধরেছে। তুমি বলো আমি শুনছি। আরিব হাত ধরে টেনে তুলে বলে-চলো গরম কফি খাওয়াবো তোমাকে সব ঠিক হয়ে যাবে। টিউশনি করে লেখাপড়া করি বলে ভেবো না তোমাকে কফি খাওয়াতে পারবো না। এই বলে পকেট থেকে পাঁচশ টাকার একটা নোট সাথে কিছু খুচরা টাকা বের করে দেখায় তনিমাকে। হাঁটতে থাকে ক্যান্টিনের দিকে। মাথাটা বাঁকিয়ে তনিমার মুখ বরাবর নিয়ে আবার প্রশ্ন করে খুব কষ্ট হচ্ছে? তনিমা মৃদু হেসে না সুচক মাথা নাড়ে। আরিব হাত দুটো উপরে তুলে বলে, -আল্লাহ্ ওর সব ব্যাথা আমারে দাও তবুও ও ভালো থাক। তনিমা আরিবের মুখের দিকে তাকায়, কিছু বলতে চেয়েও থেমে যায়। কফি সপে দু’জনে মুখোমুখি বসে কফিতে চুমুক দেয়। আরিব প্রশ্ন করে, -আচ্ছা আমার শাশুড়ির এখন কি অবস্থা জানাই হলো না। তনিমা গম্ভীর হয়ে উত্তর দেয় -ভালো না। জানোই তো ডাক্তার আশা ছেড়ে দিয়েছে। চোখ ছল ছল হয়ে যায়। কথা ঘুরিয়ে আরিব বলতে থাকে,-সব ঠিক হয়ে যাবে, আচ্ছা তোমার মাথা ব্যথা কমেছে? তনিমা উত্তর দেয় -হু।আরিব গাল ভরা হাসি দিয়ে স্রষ্টাকে শুকরিয়া জানিয়ে বলতে থাকে ইউ আর গ্রেট। তনিমা আরিব কে উদ্দেশ্য করে বলে- জানো, কখনো কখনো প্রার্থনার ঘরে ঈশ্বর ঘুমিয়ে থাকেন! তনিমার কথায় কিছু মেলাতে পারে না আরিব, ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। উঠে দাঁড়ায় তনিমা বলে -আজ ক্লাস করবো না, মা’কে খুব অসুস্থ মনে হয়েছে বাসায় যেতে চাই। আরিব মাথা নেড়ে সন্মতি জানায়, হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার ধারে এসে দাঁড়ায়, হাত ইশারায় রিকসা ডেকে তনিমাকে উঠিয়ে দেয়, রিকসা চলতে শুরু করে তনিমা বার বার পিছু ফিরে তাকায়। সাবধানে যেও আর মায়ের কি অবস্থা জানিও আমাকে কথা গুলো তনিমার উদ্দেশ্যে বলতে থাকে আরিব । এক সময় রিকসাটা দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়। তনিমার বলা কথার অর্থ মেলাতে পারে না, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আরিব অনেকট্ সময়। বাড়ি ফেরার পথে ছোট বোনের ফোন তনিমাকে – আপু বাড়ি চলে আসো মেহমান আসবে কিছুক্ষনের মধ্যে, অসহ্য মনে হয় কথা গুলো তনিমার কাছে। রোড এ্যাকসিডেন্টে গুরুতরও অবস্থায় মা, ডাক্তার আশা ছেড়ে দিয়েছে।। এদিকে বাবারও কিডনী দুটো প্রায়ই বিকল হবার পথে। দুটো মাত্র বোন, তনিমা বড় তাই এ অবস্থায় বাবা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মেয়েকে দ্রত বিয়ে দিবেন, পাত্র পক্ষ আসবে, পছন্দ করলে আজই রেজিষ্ট্রি, সব ঠিক ঠাক অথচ সকালে তনিমাকে জানানো হয়েছে বিষয়টা। কিছু মেলাতে পারে না তাই ভার্সিটিতে আরিবের কাছে ছুঁটে গেলেও আরিবের অবস্থা বিবেচনা করে কিছুই বলতে পারে না। হাজার কথার অব্যক্ত ঝড় বুকে নিয়ে ফিরে আসে বাড়িতে। শেষ বিকেল, একটা গাড়ি এসে গেটের সামনে দাঁড়ায়, চারজন মানুষ গাড়িতে, এরাই সেই অতিথী।
ছেলে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এমেরিকা প্রবাসী, ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলে তাকেও নিয়ে যাবে এমেরিকা। কথা গুলো যখন বাবা তনিমাকে বলছিলো তখন বাবাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই বাবা বলে -তোমার মায়ের অবস্থা এবং আমার অবস্থা মাথায় রেখে বড় সন্তান হিসেবে কোনো জটিলতা বাড়াবে না এটাই আশা করি। তনিমার ছবি ওরা আগেই দেখেছে, বিয়ের প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, বিয়ের ঘরোয়া প্রস্তুতি চুড়ান্ত। খুব ইচ্ছে করছে গলা ছেড়ে চিৎকার করে আরিবকে ডাকতে, কিন্তু পারছে কই। আরিবের নাম্বারে বার বার কল দিয়েই যাচ্ছে তনিমা কিন্তু বন্ধ পাচ্ছে। ঘন আঁধারে চারপাশ ছেঁয়ে আসছে তার । ফেসবুকেও নেই আরিব, কিছু মেলাতে পারে না, ইনবক্সে লিখে দেয়, – আরিব, জীবনের অংক বড়ই জটিল, ভাগ্য আমার সাথে নির্মম ভাবে উপহাস করেছে।
সে ব্যাখ্যা তোমাকে দেবার সাহস আমার নেই তাই স্বার্থপরের মতো কিছু না বলেই আজ তোমার কাছ থেকে চলে এসেছি। অনেক কথা বলবো বলে জমিয়ে রেখেছিলাম, তা আর বলা হলো কই। আর কোনো দিন হবেও না, জীবনের জটিল অংকে যতই যোগ বিয়োগ করো হিসেব মিলে না কখনোই। ভালো থেকো — গতকাল তনিমা চলে যাবার পর ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে তনিমাকে ফোন দিতে যেয়ে মোবাইলটা হাত থেকে পড়ে যায়। মনিটর সাদা হয়ে যায় কিছুতেই কাজ করছিলো না তাই মোবাইলটা সার্ভিসিংয়ে দিয়ে রুমে আসে আরিব, পরদিন সকালে ভার্সিটি যাবার পথে আগে মোমাইলটা নেয়, মোবাইল অন করেই ডাটা চালু করতেই তনিমার ম্যাসেজ ঢুকে, ম্যাসেজ পড়ে কিছুই বুঝতে পারে না আরিব, তনিমা কি বোঝাতে চেয়েছে। সারা শরীর ঘামতে থাকে। লেখা গুলো বার বার মুখস্ত পাঠের মতো পড়তে থাকে। মেলাতে পারে না কিছুই। তনিমার নাম্বারে কল দেয়,উত্তর, -দুঃখিত এই নাম্বারে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না