বায়েজিদ বোস্তামী
১৩ মে, ২০২১ , ২:০৫ পূর্বাহ্ণ ; 681 Views
“এবার বাড়িতে আসবি না বাবা” এমন আকুতির পত্র পড়েই মুহিতের মন গলে যায় চোখে অশ্রু ভরে ওঠে।
গ্রাম থেকে তার মা চিঠি লিখেছেন, সে যেন এবার ঈদটা তাদের সাথে পালন করে।
মুহিত শহরে থাকে প্রায় ৭ বছর হলো।এতো বছরে মাত্র দু-একবার পরিবারের সাথে ঈদ পালন করেছে সে।অভাবের সংসার যত দায়িত্ব ওর ঘাড়ে।
নিজে বাড়ি না আসলেও মাসে মাসে মাইনেটা ঠিকি বাড়িতে পৌঁছে যায়।
সে একটা ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি করে।সেখানে ছুটি নেই বললেই চলে।আর যাও দু- একদিন থাকে ওটাও অফিসের কাজের জন্যই দিতে হয় বাসায় বসে।বাড়িতে আসার ফুসরত খুব কম।
কিন্তু এবার মায়ের চিঠি পাওয়ার পর থেকে সে ছটফট করছে বাড়িতে ফেরার জন্য।কতদিন চেনা মুখগুলো দেখা হয় না।আর গ্রামের মেঠো পথ,মাঠ বন আর নদী।
ঈদের আর বেশি দিন দেরি নেই।সপ্তাহ দু-এক রয়েছে প্রায়।রোজার ঈদ একটু বেশিই আনন্দ সবার মনে।এক মাসের রোজার মুক্তি মিলবে সাথে গুনাহ্ও মাফ হবে আল্লাহ্ চাইলে।
মুহিত সময় নষ্ট না করে অফিসের “বসের” কাছে ধরনা দেয়।এবার ১০দিনের ছুটি চাই তার।”বস” প্রথমে নারাজ কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না।পরে মায়ের কথা শুনে তার হৃদয়ও নরম হয়।
মায়ের কথায় যেন পাষাণেরও মন গলে।
এদিকে ঈদের দিন ঘনিয়ে আসছে।ঈদের আমেজ যেন লেগে গেছে সবার প্রাণে।পৃথিবীটা কেমন মুখর হয়ে উঠেছে,সবার ভেতরে আনন্দের ছাপ।
অনেকেই গ্রাম ছেড়ে শহরে থাকে।এদিক – ওদিক থেকে বাড়ি যাওয়ার খবর আসে মুহিতের কানেও।তার মধ্যেও একটা চঞ্চল ভাব কোন কাজেই মন দিতে পারছে না সে ভাল মত।
অবশেষে তার কাঙ্ক্ষিত সময় আসে।সে ঈদের একদিন আগে রওনা দেয় বাড়ির পথে।যেন যুদ্ধ জয় করে ঘরে ফিরছে বিজয়ী বেশে।
ওইদিকে পথ চেয়ে আছেন মা।বাবার মনও পুলকিত ছোট বাচ্চার মত ছটফট করছে।ছেলে আজ বাড়ি ফিরবে তার।ভাই বোনো তীর্থের কাকের মত হয়ে আছে।এতোদিন পর ভাইকে কাছে পাবে তারা।
মুহিত ভোরের ট্রেনে রওনা হয়েছিল। বাড়ি আসতে রাত হবে তার।অনেক দূরের পথ গ্রামটা তাদের অজপাড়া গাঁয়ে।
সে ট্রেনে বসেই কল্পনা করে নেয় মনে মনে এবার ঈদে কি কি করবে সে।
সে চোখ বুজে মায়ের মুখ দেখে।আব্বা শুয়ে আছেন বারান্দায় জাজিমে।ছোট বোনটা উঠোনে খেলছে মাটির হাড়ি পাতিল দিয়ে।আর ভাইটার হাতে লাল রং এর ঘুড়ি।মনে পড়ে বন্ধু আব্দুল্লাহর কথা।আর স্কুল জীবনের সেই শেফালির কথা।এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে মুহিত এক সময়।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়। ঘুম ভেঙে যায় তার।আরর ঘণ্টা ২ এর পথ।তারপর বাড়ি ফিরবে সে।
গোধূলীবেলা সন্ধ্যার আকাশ।ডুবে যাচ্ছে সূর্যটা।বাতাসের সাথে ফিরছে বলাকারা।জানালার ফাঁক দিয়ে দেখছে মুহিত।আর বাড়ি ফেরার আনন্দটা অনুভব করছে সে।
রাত ৭ টা হবে তখন। থেমে যায় ট্রেনের ইঞ্জিন। ট্রেনের বাইরে থেকে জানালায় আসছে মানুষের শোরগোল।মুহিত লাফিয়ে ওঠে তারপর ব্যাগ কাঁধে চঞ্চল পায়ে এগিয়ে যায় ট্রেনের দরজার দিকে।
ট্রেন থেকে নেমেই এক স্বস্তির শ্বাস ফেলে সে।তারপর চেনা পথটা ধরে হাটতে থাকে নিজের ঘরের দিকে নিজের জননীর দিকে।