তাসমিন আফরোজ
২৪ মে, ২০২১ , ১১:৩৪ অপরাহ্ণ ; 642 Views
নৈসর্গিক সন্তরনের ভেতর থেকে দেখতে চাই না ফিলিস্তিনে পুড়ে যাচ্ছে অগুনতি দরজা, জানালা, নরম বালিশের খোল – পুড়ে যাচ্ছে রান্নাঘর, ভাতের থালা, টেবুনের রুটি, সতেজ সব্জি, ঝোলের তরকারি-
লকলক করে বেড়ে ওঠা আগুনের হল্কায় দামামা বাজায় তুমুল যুদ্ধ – মেশিন গান -রকেটের বিবৃতি-
গুলির ছররা’র ভীষণ বিভাস –
উন্মত্ত ক্ষুধার নিবৃত্তি সন্ধানে অনাম্নী ঈগলের দৃষ্টি ঘুরপাক খেয়ে অর্থহীন বাঁচার আকুলতা কে নিমিষেই বানিয়ে দিচ্ছে পোড়ানো ছাই-
করজোড়ে বলছি দেখতে চাই না শিশুদের গাল বেয়ে তৈরি হচ্ছে শুকনো খটখটে ধুলোজলে মেশানো কালো ধারা-
ক্রমাগত তাঁদের মুখে নেমে আসা ভীতসন্ত্রস্ত শূন্য চোখের আর্তি-
দেখতে চাই না ছিন্নভিন্ন দেহ পরে আছে বালিতে গড়াগড়ি করে –
দেখতে চাই না বেহায়া ধর্ষণের শিকারে ছেঁড়া বোরখার তলদেশ দিয়ে বেয়ে পড়া কালচে রক্তের উঁচু টিলা-
দেখতে চাই না কোন উষ্ণতা ছাড়াই পিতামাতার কাঁধে নিথর সন্তানের দেহভার-
তারপরেও দেখতে হচ্ছে খেজুর বৃক্ষের শিকড়ের ওপারেই শাদা কঙ্কাল মেখে আছে রুক্ষ বালি-
দেখতে থাকি, সফটওয়ারের ফোকাসে মনিটরের অহংকারে মুহূর্মুহু প্রতিবন্ধী হচ্ছে, অক্ষম হচ্ছে শিশুর আশ্রয়, মায়ের আদরের রুপান্তর পাথরের অবয়বে –
এবং জীবিত প্রাণেই বরণ করে নিচ্ছে মৃত্যুর বিষন্ন পরমায়ু
অগুনতি মানুষ-
দেখতে হচ্ছে স্বজন হারানোর আর্তনাদে বুক চাপড়িয়ে কাঁদছে লোটাকম্বল আর বেদনার তিক্ততা ভরে প্রাণ ভিক্ষের ঝুলি-
কেন যে আল- জাজিরা, সি,এন,এন,আর্টি,সি,এন,বি,সি আর বিবিসি অনলাইনে ছড়িয়ে দেয় এইসব না চাওয়া দিন রাত্রির ভয়ংকর ছবি –
নিষেধ আসে না জাতিসংঘের বিভিন্ন নথিপত্র থেকে –
রুদ্ধ হোক নারকীয় ঘটনা, রুদ্ধ হোক যুদ্ধ বিভীষিকা –
ওখানে নেই তো ঋকবানীর কাহিনিবিস্তার –
নেই রহমতের বৃষ্টি বিলাসের স্তুতি –
বরং আকাশের বিশালতা সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়েছে নৈরাজ্যের ক্যারাভানে বসে থাকা আরবীয় ইতিহাসের পতাকা-
হে মহাবিশ্বের সৃষ্টি কর্তা-পরমকরুণাময় খোদাতায়ালা, মহানুভব আল্লাহ্, ঈশ্বরের মঙ্গল বার্তা,চারশূল বিদগ্ধ যিশুর শুদ্ধ পত্র –
এখনো ক্যানো গুড়ো গুড়ো হয়ে ভেঙে যাচ্ছে না বর্বরোচিত হামলার অস্ত্র সম্ভার-?
এখনো ক্যানো রোদ্দুরের তেজে কারফিউ দিচ্ছে না হিংস্র মগজে বিষের জ্বালা অধিকতর?
এখনো ক্যানো ধোঁয়াশায় নিরন্ন ফটক ক্রমাগত শকুনের ঠোকরে জাহিলিয়াত যুগ থেকে ফিরে আসা ক্রুর থেকে আরও ক্রুর করে সুরমা আঁখি?
এখনো ক্যানো ওগো মাবুদ, এখনো ক্যানো বিস্ফারিত ভীরু চোখ কাপুরুষের গর্তে হচ্ছে রোজ বলি…?
ওগো আয়ুর পয়গামের খোদা, তুমি কি কানে বর্ম পড়ে আছো?
তুমি কি সপ্তম আসমানের উপরে শ্বেতাভ্র কূপে ডুবে দেখছো মানবতার খুঁটিনাটি ?
তুমি কি ফিলিস্তিনের পথে ঘাটে ঘরের কুলুঙ্গিতে আর্তচিৎকার গুলোর রক্তের মর্মরধ্বনি তুলে রাখছো মহাকাশের বুকে –
তারায় তারায় লিখে রাখছো জান্তব আক্রোশ -পাখির পালকের ওপরে গগনচুম্বী নিষ্ঠুর পদ্ধতি –
ওগো পরওয়ারদেগার – ফিলিস্তিনি কবি নজওয়ান দারবিশের মতে সব কবিরাই কি চাচীদের ভরে রাখবেন দড়িবদ্ধ থলেতে-
আপনি দেখবেন পরওয়ারদেগার, বারবার দেখবেন থলের কোণা বেয়ে ঝরে পড়ে তাদের উষ্ণ রক্তেরা গন্তব্যহীন হয় তপ্ত শিরা উপশিরা থেকে -?
ওগো ঈশ্বরের পয়গাম – আপনারা এইসব জ্বলনশীল মনন চিন্তাকে প্রভাবিত করুন শান্ত জলের বরফখণ্ড তে-
জানিনা খোদা আল- আকসা মসজিদে প্রতিদিন নামাজ হয় কিনা ধ্যানগ্রস্থ ফসফরাসে –
জানিনা আজ কতোটা পথ ভিজে গেলো রক্তাক্ত আমলে –
জানিনা খোদা,কোন কোন মায়ের গর্ভে আজও কি ব্যথার সমুদ্র উথলে উঠেছে নিখোঁজ সন্তানের পবিত্র মুখ অজর কল্পনার অরণ্যে?
কোন কোন পিতা কুজো হতে হতে রুক্ষ মরুভূমির যাবতীয় তথ্যাদি নিয়েছেন মুখে –
আজও কোন বোনের ডালিম বুকের সপ্তসুর ঢাকতে বেছে নিয়েছে আত্মবলি?
আজও কোন ভাই দায়িত্বের বাঁশীধ্বনিতে জোস্ন্যার মোলায়েম মাখতে না পেরে আকণ্ঠ মেখেছে কার্তুজের আলখেল্লা?
ওগো মাবুদ, আপনি বলুন সাধারণ মানুষের কি রুপ বদলেছে? ফিরে এসেছে কি হোমো সেপিয়েন্সের দুই হাজার সিসির স্তরের বন্য মেধা?
ওগো খোদাতায়ালা, আপনি কি হুকুম দেবেন কবি মাহমুদ দারবিশ কে… তিনি মায়ের কঙ্কাল কেটে কলম তৈরি করুন লিখতে থাকুন এইসব অনাচারের বিরুদ্ধে -লিখতে থাকুন আর যুদ্ধ নয় নেমে আসুক শান্তির কবিতা-
আপনি সাধারণ মানুষের মজ্জায় মজ্জায় কবি “ঘাসমান জাকতান” এর মতো লিখতে বলুন “ছাব্বিল আনা আরবী” –
আমি আরবীয়, পরিচয় পত্রের নম্বর “পঞ্চাশ হাজার” আট ছেলেমেয়ে – আমি দোরগোড়ায় নত হতে জানিনা পাথরের ফলকে-
তাহলে অন্তত অসুস্থ পশু’র মতো মুখ থুবড়ে পড়তে হবে না মানুষকে বালুর স্তবকে –
ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে পুরো পৃথিবী জুড়ে চলছে অকল্পনীয় প্রার্থনা,
নামাজের পূর্বে ওজুর জোরদার,
খোদা,
দোয়া ইউনুসের মাতম চলছে মুসলিম সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে –
আর একবার কিংবা একাধিক বার আপনি রক্ষা করুন হযরত ইউনুস (সাঃ) এর মতো হাজার হাজার অথবা লক্ষ লক্ষ অথবা কোটি কোটি মানুষ কে- এইসব বর্বরোচিত হামলা থেকে-
নেমে আসুন খোদা এই ভূখণ্ডের জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে-
এক তুড়িতে জেরুজালেমের রাস্তায় ভরিয়ে দিন ফুলের সমারোহ
আল আকসা মসজিদে আজ কি আযান হয়েছিলো মুয়াজ্জিনের সুমিষ্ট স্বরে?
যদি না হয়, আপনার কাছেই শুধু আবেদন করছি মহান সৃষ্টি কর্তা –
হযরত বেলাল ( আঃ) এর আযান ধ্বনি, যাতে মানুষ স্তম্ভিত হয়ে পড়ে-
মানুষের শরীর থেকে বেরিয়ে যায় অপশক্তি –
মানুষ যেনো এই অস্থির নৈরাজ্যের মধ্য থেকে বেরিয়ে পড়ে নিশ্চিন্ত আশ্রয়ের অক্ষরেখায়- আপন হাতে মাটি ফাঁক করে রাখে ভুল ভ্রান্তির অশুদ্ধ স্পর্ধা –
সব অমানবিকতা কে আপনি ভাসিয়ে দিন ধর্মান্ধতার অন্ধত্বের সাথে জর্ডান নদীর জোয়ার দিয়ে ভূমধ্যসাগরের গভীর তলদেশে-
মানুষ বেঁচে থাক কবিতার অমৃত শ্লোকে একে অপরের পাশে হাতে হাত ধরে শস্য ক্ষেত্র থেকে উৎপাদিত খাদ্যে,লোনা চন্দ্রের অববাহিকায় প্রযুক্তির সুস্থ সঠিক তত্ত্বে –
মানুষ বেঁচে থাক খোদা, বেঁচে থাক পৃথিবীর বুকে আলোর হাওয়ায়,ফুলের সৌরভে, সবুজের মোহে শান্ত জলের ঝর্ণার স্নানে …
মানুষ বেঁচে থাক খোদা, সপ্তর্ষি মন্ডলের অপার্থিব রুপ রেখা টানে…