ফিলিস্তিন-বাংলাদেশ সম্পর্ক

মুগ্ধতা ডেস্ক।। 

২৪ মে, ২০২১ , ৮:৩৭ অপরাহ্ণ ; 1198 Views

ফিলিস্তিন-বাংলাদেশ সম্পর্ক

বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ এবং আন্তরিক বলে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সমর্থন করে এবং ইসরায়েলের “অবৈধভাবে ফিলিস্তিন দখলের” সমাপ্তি দাবি করে থাকে। তাছাড়া, বাংলাদেশ সরকার তরুণ ফিলিস্তিনিদের বাংলাদেশে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ প্রদান করে এবং উভয় দেশ সামরিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা করে।

১৯৭১ এর পরে প্রথমদিকে অধিকাংশ আরব রাষ্ট্র সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে দ্বিধাগ্রস্থ ছিল, কিন্তু এই সম্পর্ক উষ্ণ হতে থাকে যখন ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ফিলিস্তিনকে সমর্থন করে মেডিক্যাল টিম ও ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সহায়তা করে।

১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের লাহোরে ওআইসি’র দ্বিতীয় সম্মেলনের সময় ইয়াসির আরাফাত ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে প্রথম উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের ঢাকায় প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)-এর কার্যালয় স্থাপনের অনুমতি প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও পিএলও-এর মধ্যে সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়, এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও কুটনৈতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পিএলও কর্মকর্তরা ক্রমাগতভাবে আমন্ত্রিত হয়ে থাকেন।

১৯৮০ সালে বাংলাদেশ একটি স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন করে যেখানে একজন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাকে দেখা যায়, যার পেছনে রয়েছে কাঁটাতারে ঘেরা আল-আকসা মসজিদ। সেখানে আরবি ও ইংরেজিতে ফিলিস্তিনি যোদ্ধার সাহসিকতার কথা বলা হয়েছে।

ইয়াসির আরাফাত দুইবার বাংলাদেশ সফরে আসেন। প্রথমবার ১৯৮১ সালে এবং ১৯৮৭ সালে আরেকবার। প্রতিবারই তিনি বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম, রাজনীতিবিদ ও সাধারণ জনগণের থেকে ঊষ্ণ অভ্যর্থনা পান।

আন্তর্জাতিক সামরিক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ (আইএমইটি)-এর অধীনে ১৯৮০’র দশক থেকে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে পিএলও যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক উন্নয়ন লাভ করে।

বর্তমান সম্পর্ক

বর্তমান সময়ে ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। বাংলাদেশ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ক্রমাগত ও জোরালো সমর্থক এবং ইসরায়েলের দখলদারিত্বের বিরোধীতাকারী। বাংলাদেশ সরকার ইসরায়েলের সাথে সকল প্রকার বাণিজ্য (প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ) সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং ইসরায়েলের সাথে বাংলাদেশের কোন কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশ ১৯৬৭ সালে নির্ধারিত সীমানা অনুযায়ী জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে সমর্থন করে।

বাংলাদেশ সরকার ফিলিস্তিনি ছাত্রদের বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দিয়ে থাকে।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের সাথে বাণিজ্য ও শক্তি বিষয়ক সমঝোতা স্মারক সই করে। ২০১৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাস ঢাকা সফরে আসেন।

সাম্প্রতিক গাজাবাসীর উপরে ইসরায়েলের নির্লজ্জ হামলার নিন্দা জানিয়ে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে চিঠি পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আল-আকসা মসজিদ ও শেখ জাররাহ এলাকায় ইসরায়েলের আগ্রাসী হামলার নিন্দা জানান। একইসাথে তিনি ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশ ও এর জনগণের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ইসরায়েলের হামলায় আহত ও বাস্ত্যুচ্যুতদের সহায়তায় বাংলাদেশ থেকে সাধারণ জনগণের পক্ষে ওষুধ ও নগদ অর্থ সংগ্রহ করে ফিলিস্তিন দূতাবাসের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এবারও এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ঢাকায় ফিলিস্তিনি দূতাবাস বাংলাদেশে ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্ব করে। ঢাকায় দেশটির চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স হলেন ইউসুফ এস. রমাদান।

[উইকিপিডিয়া অবলম্বনে মুহাম্মদ খালিদ সাইফুল্লাহ ]

[wpdevart_facebook_comment curent_url="http://yourdomain.com/page-url" order_type="social" title_text="Facebook Comment" title_text_color="#000000" title_text_font_size="22" title_text_font_famely="monospace" title_text_position="left" width="100%" bg_color="#d4d4d4" animation_effect="random" count_of_comments="3" ]