সালমা সেতারা
২৫ মে, ২০২১ , ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ ; 1420 Views
নবী ইব্রাহীম (আঃ) এর দুজন পুত্র ছিলো। তারা যথাক্রমে বিবি সারার গর্ভে ইসহাক (আঃ) ও বিবি হাজেরার গর্ভে ইসমাইল(আঃ) । আল্লাহর আদেশে ইসমাইলকে রেখে আসলেন নজদে (মক্কায়) ও ইসহাক (আঃ)কে রেখে এলেন ফিলিস্তিনে। ইসমাইল (আঃ) এর বংশ হতেই আমাদে শেষ নবী রাসুল (সঃ)। আর ইসহাক (আঃ) এর বংশে এসেছে অনেক নবী পয়গম্বর। ইসহাক (আঃ) এর দুই পুত্র যথাক্রমে ইসমাইল ও ইয়াকুব (আঃ)।
ইয়াকুব (আঃ) ই সেই নবী যাঁর আর এক নাম ছিলো “ইসরাঈল”, এবং তারই এগারোজন পুত্র ছিলো দুই স্ত্রীর গর্ভে। প্রথম স্ত্রীর গর্ভে দুজন, একজন ইয়ুসুফ (আঃ) অপরজন বনি আমিন। ইয়ুসুফ (আঃ) যখন মিশরের বাদশাহ হলেন তখন পারস্যের ফারানে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তিনি তাঁর ভাইদেরকে মিশরে আশ্রয় দান করেন। সেখানেই তারা বংশ বিস্তার করে বনি ইসরাঈল নামে। এরাই বর্তমানে ইজরায়েল নামে পরিচিত। এদেরই নবী দাউদ(আঃ) (কিং ডেভিড) তদ্বীয় পুত্র কিং সোলায়মান (আঃ)। এদেরই রাসুল হয়ে এসেছিলেন মুসা (আঃ)। মুসা (আঃ) এদেরকেই ফেরাউনের অত্যাচার নিপীড়ন থেকে বাঁচিয়ে লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে তুর পাহাড়ের পাদদেশে এনে পুনর্বাসন করেছিলেন।
যাক এসব অনেক ঘটনা। বলে শেষ করা যাবে না। তবে এদের মূল শিকড় একই, তার মধ্য হতে দুটি শাখা বেরিয়েছে। ঐ এগারো ভাইয়ের মধ্যে একজনের নাম ছিলো “ইয়াহুদা” তার সন্তানাদিরাই ইহুদি নাম ধারণ করেছে। পরবর্তীতে ঈসা (আঃ)কে মেরে ফেলেছে ভেবে এই শাখাটিই উল্লাস করছিলো এবং যাবুর কিতাব, যা দাউদ (আঃ) এর উপর অতীর্ণ হয়েছিলো সেটাকে বদলে ফেলে নিজেদের মতো করে লিখে নিয়েছিলো। যাক সেসব কথা, আজকের মূল আলোচ্য বিষয়ে ফিরে আসি।
কোরআনে সূরা বাকারার ২৪৮ নং আয়াতে আল্লাহ বনি ইসরাঈলদের বলেন-
“তোমাদের নিকট শিঘ্রই একটি সিন্দুক আসবে। যে সিন্দুকের সাথে জড়িয়ে আছে কমছেকম ১০০ এর অধিক নবীদের ইতিহাস। তালুতের নেতৃত্বের চিহ্ন হিসেবে এসেছে এই সিন্দুক, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে।”
এ সিন্দুকের ভিতরে ছিলো আদম ও মুসা (আঃ) এর হাতের আসা পাগড়ি, হারুন ও ইব্রাহীম (আঃ) এর ব্যবহৃত জিনিসপত্র ইত্যাদি। এই সিন্দুকটি একজনের পর একজনের হাতে এসেছিল, তারপর বনি ইসরাঈলের নিকট চলে আসে। এই সিন্দুকের বরকতে ওরা প্রাণশক্তি ও হৃদয়ে প্রশান্তি পেত। ওরা সব রকম যুদ্ধে উৎসবে সবরকম বিপদে আপদে এই সিন্দুকটিকে সসম্মানে সামনে এনে রাখতো।
বনি ঈসরাঈলরা এই সম্মানিত সিন্দুক রক্ষা করার জন্য একদল স্পেশাল সৈন্যও নিয়োগ করেছিলো। আল্লাহপাকের এতো নাজ নেয়ামত এ সিন্দুকের মাধ্যমে পেয়েও তারা আল্লাহর প্রতি বিমুখ ও নাফরমানীতে লিপ্ত ছিলো। বনি ঈসরাঈলদের মধ্যে একদল ছিলো মুশরিক, তাদের নাম ছিলো আমালিকা। তারা ফিলিস্তিনে থাকতো। হকপন্থি ইসরাঈলদের সাথে আমালিকরা একযুদ্ধে এই সিন্দুকটি কেড়ে নেয়।
পরবর্তীতে মুশরিকরা তাদের শহরে এ সিন্দুক রাখতে রাখতে তাদের শহরে মহামারী দেখা দিলো। এই সেই মারাত্বক মহামারীর সূচনা হোলো যাকে আমরা প্লেগ বলে জানি। সেই প্লেগে আক্রান্ত হয়ে বহু লোক মারা গেলো। অবশেষে মুশরিক আমালিকরা সিন্দুকটিকে পর পর পাঁচটি শহরে পাঠালো, ঐ পাঁচ শহরও মহামারীতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো।
বনি ইসরাঈলরা বহু বছর এই সিন্দুকের জন্য বহু কান্নাকাটি করেছিল। সেই সময় নবী সালাম (আঃ) নামে একজন তাদের নবী ছিলেন। তিনি ইসরাঈলদের কান্নাকাটি দেখে তাদের ডেকে বললেন, তোমাদের মধ্য থেকে “তালুত “কে তোমাদের নেতা নির্বাচিত কর। তালুত ছিলো একজন ধর্মপ্রাণ ও ন্যায় পরায়ন লোক।
অতপর মুশরিকদের নিকট প্রস্তাব পাঠাও তারা যেন তোমাদের “তাবুতে সাকিনা” আবার তোমাদেরকে ফেরত দেয়। তারা নবীর এ হেন সরল কথা শুনে খুব জোর বিদ্রুপ করল।
নবীকে বললো সমস্বরে, পাগল নাকি। শত্রুপক্ষ কখনও এভাবে সিন্দুক ফেরত দেবে?
আর তালুতকেও নেতা নির্বাচিত করতে চাইলো না।
কিন্তু নবী সালাম আঃ তাদেরকে বুঝালেন যে তালুতকে তোমাদের নেতা বানালে তোমরা উপকৃত হবে। তখন আবার তাদেরই মধ্যে কতিপয় বিচক্ষণ লোক নবী সালাম আঃ কে বললো যে ঠিক আছে তোমার কথাই মেনে নিব যদি তুমি আগামীকাল সকালে আমাদের সিন্দুক ফেরত এনে দিতে পারো।
নবী আঃ বললেন, ঠিক আছে তোমাদের কথামতোই সিন্দুক এনে দেয়া হবে।
তারপর দিন সালাম আঃ এর আবেদনে আল্লাহপাক চারজন ফেরেশতার দ্বারা গরুর গাড়িতে করে সিন্দুক “তাবুতে সাকিনা” পুনরায় বনি ইসরাঈলের হাতে পৌঁছে দিলেন। কিন্তু তারা এ সিন্দুক ফিরে পাবার পর আবার আগের চরিত্রে ফিরে গিয়েছিলো। আবার যখন বনি ইসরাঈলরা অনাচারে আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হলো তখন ইরাকের পাশে বাবেল নগরীর, মতান্তরে সিরিয়ার বাদশাহ “বখতে নসর” আক্রমণ চালিয়ে বহু বহু ইহুদি ইসরাঈলীদের হত্যা করে অল্পকিছু সংখ্যক ইসরাঈলকে দায় বানিয়ে নিজের দেশে নিয়ে রাখল। তখন এই “তাবুতে সাকিনা” নামক রহমতপূর্ণ সিন্দুকটি বাদশাহ বখতে নসরের হস্তগত হয়।
তারপর থেকে এই সিন্দুকের আর কোনো খোঁজ পাওয়া য়ায় নি আজ অব্দি। এখনও ইহুদিরা সারা পৃথিবী জুড়ে খুঁজে বেড়ায় কোথায় তাদের সেই তাবুতে সাকিনা।
তাদের প্রার্থনায় এখনও তারা বলে এবং আশা রাখে একদিন তারা সেটা খুঁজে পাবে, আর পাওয়া হলেই আবার তারা সারা পৃথিবী শাসন করবে। এ জন্য তদের বিশ্বাস মাসিহুদদাজ্জালই তাদের মসিহ, তার হাতে নতুন করে বায়েত হবে আর পবিত্র হবে “রেড হেইফার” অর্থাত লাল বাছুর পুড়িয়ে সে ছাই দিয়ে গোসল কোরে পবিত্র হবে।
প্রিয় তারুণ্য,
ইসলামের ইতিহাস চর্চা করতে হবে, জানতে হবে এ বনি ইসরাঈলদের আর কী কী ঐতিহাসিক অপরাধ আছে? যা তারা করেছিল ও এখনও করছে।
কেনই বা মহান রাব্বুল আলামীনের কাছ থেকে তারা কেয়ামত পর্যন্ত অভিশপ্ত জাতিতে পরিণত হয়েছে।