মা, আমি ঈশ্বরকে ছুঁয়েছি !
আমি বহুবার ঈশ্বর ছুঁয়েছি!!
হামাগুড়ি দেবার সময়, যখন জলন্ত উনুনের মুখে হাত পোড়াবো বলে উদ্যত হয়েছি, তখনি, ঠিক তখনি ঈশ্বর আমার দাদু হয়ে দৌড়ে এসেছেন,
আমার হাতকে রক্ষা করেছেন।
আমি তখনি ঈশ্বরকে ছুঁয়েছি, মা!
এক পা দুপা ফেলে যখন পৃথিবীর পথে আমি পথ হাঁটার অভ্যেস করছি,
হোঁচট খাচ্ছি, পড়ে যাচ্ছি, উঠে দাঁড়াচ্ছি; এমনি করেই অদম্য ভঙ্গিতে যখন দৌড়োচ্ছি সদ্যফোটা পদ্ম ধরতে পুকুরের অথৈ জলের দিকে-
তখন, তখন পুকুর পাড়ে ঘাসকাটতে আসা সেই গরীব প্রতিবেশি ঈশ্বর হয়ে আমায় কোলে তুলে আঁকড়ে ধরেছেন পরম মমতায়!
আমি তখনও ঈশ্বরকে ছুঁয়েছি।
শৈশবের সেই বন্ধুটির কথা মনে আছে মা?!
রাগ করে কাস্তে দিয়ে যে আমায় কুপিয়েছিলো? তোমার সে কি কান্না—-! বড্ড ছিঁচকাঁদুনে তুমি!
দাদু, বাবা দৌড়ে গিয়ে কবিরাজ আনলেন। নানা গন্ধময় গাছের লেপ লাগিয়ে আমায় সারিয়ে তোলা কবিরাজ তো ঈশ্বরই ছিলেন, মা!
আমি তখন ঈশ্বরকেই ছুঁয়েছি!
তোমার বারণ সত্ত্বেও মগডালে পাখির বাসায় ছানা দেখার লোভে ডাল ভেঙে যখন মাটিতে চিৎপটাং!
সবাই আশা ছেলে দিলো! কেউ রাম নাম, কেউ আল্লাহ রসুল।
আর তুমি? তুমি আমায় বুকে জাপটে ধরে তো ঈশ্বরকেই ডেকেছিলে কায়মনে!
চুপিচুপি তিনি সাড়া দিলেন, নিথর দেহ পিঞ্জিরায় কম্পন এলো, কম্পন এলো তোমার ভূবনে।
সেদিনওতো আমায় অলক্ষে ঈশ্বরই ছুঁয়ে গেছেন!
মা, মা আমি ঈশ্বরকে ছুঁয়েছি মা.. বহুবার!
প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত অর্ধনগ্ন অসহায় যে মানুষ সামান্য অর্থের বিনিময়ে আমার মস্তকে আশির্বাদের পুস্পবর্ষায়, সে রূপেও তো ঈশ্বরই আমায় ছুঁয়ে যায়! তাই না?!
মা, আমি ঈশ্বরকে ছুঁয়েছি মা, বহুবার..বহুবার!
চঞ্চল, দুরন্ত যৌবনে যখন আমি বল্গা হরিণ। ছুটে চলাই যখন আমার নেশা। রক্তে কেবলি ঝড়ের গতি। পথ যখন আমার নিয়ন্ত্রণে, তখন হঠাৎই পথ রোধ
করে ঈশ্বর! আমি ছিটকে পড়ে যাই…হাত-পা ভাঙ্গে….কপাল বেয়ে রক্ত নামে……
লোকে লোকারণ্য… ধরাধরি করে আমায় টঙ্গে তোলে…..রক্ত মোছেন ঈশ্বর!
অ্যাম্বুলেন্সকে খবর দেয়…সাইরেনের শব্দ…. হাসপাতাল… ডাক্টার, নার্স, ওয়ার্ডবয়……
চিকিৎসা চলে।
আমাকে কাঁটাছেঁড়া করে ওটি থেকে বেরিয়ে ঈশ্বর হাসিমুখে বলেন- অল্পের জন্য বেঁচে গেছে। তবে রেস্টে থাকতে হবে, খেয়াল রাখবেন।
তুমি শূন্যে মুখ তুলে নোনাজলে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দাও বারবার!
অথচ, ঈশ্বরই আমার গতিরোধ করেছিলেন! বিপদ ঘটিয়েছিলেন, আবার সারিয়ে তোলার পথ্যও বলেছেন।
মা, আমায় ঈশ্বর ছুঁয়েছেন বহুবার।
যখনি আমি মিথ্যে বলতে চেয়েছি, আমার কন্ঠ ভারী করেছেন; যখনি লোভ করতে মন চেয়েছে, নিমোর্হ করেছেন আমায়; যখন কামনায় কষ্ট পেয়েছি, প্রশান্তির ঘুম দিয়েছেন।
ঈশ্বর আমায় আগলে রেখেছেন, মা!
কেন মা? তুমি ভুলে গেলে?!
জন্মাবার সাথে সাথে যিনি আমার ক্ষুধা জন্মের সাথে তোমার বক্ষকে অমৃত করে তুলেছিলেন সবার অলক্ষে; তিনিতো আমার ঈশ্বরই ছিলেন!
ঈশ্বর হয়ে ধাত্রীরূপে তিনিই তো আমায় তোমার কোলে দিয়ে মাতৃরূপে আলিঙ্গন করলেন।
হ্যাঁ মা,আমি ঈশ্বরকে ছুঁয়েছি বহুবার। আমার সকল সময়-অসময়ে, বিপদে-আপদে, জন্ম-জন্মান্তরে!
আবার এই যে বার্ধক্যের দিকে ধাবিত হচ্ছি নিয়তই। উনি আছেন সর্বক্ষণ, বহুরূপে, বহুগুণে।
উনি একদিন আমায় আবারো ছুঁয়ে দেবেন, ডেকে নেবেন অনন্তের দিকে, নিজের দিকে….
ঈশ্বর নিয়তই আমায় ছুঁয়ে যান।
আমি ঈশ্বরকে ছুঁয়েছি মা, আমি ঈশ্বরকে ছুঁয়েছি বহুবার,নানা রূপে, নানা গুণে!
নিজ জেলা: রংপুর
বর্তমান বসবাস: রংপুর
safurakhatun1985@gmail.com