শনিবারের চিঠি Archive - মুগ্ধতা.কম

  • #tweetlikeitsfree
  • A-
  • A-
  • A+
  • A+
  • A+
  • A+
  • AB-
  • AB+
  • AB+
  • Account Menu
  • All menu
  • B-
  • B+
  • Bangabandhu
  • Barishal
  • Chattogram
  • cv
  • Dhaka
  • Dhaka
  • Dhaka
  • Eid
  • gh
  • Hadis
  • Khulna
  • max writer
  • mugdhota2
  • Mymensingh
  • Nobel Prize
  • O-
  • O+
  • Primary menu
  • quiz
  • Rajshahi
  • Rajshashi
  • Rangpur
  • Rangpur
  • Rangpur
  • Rangpur
  • Rangpur
  • rng_porm_add
  • rng_porm_add_adil_fokir
  • rng_porm_add_rlt_art
  • rng_porm_add_rlt_art_bottom
  • rng_porm_add_rlt_art_top
  • rng_porm_add2
  • selected_add
  • square
  • Sylhet
  • test
  • Test
  • test
  • Test 2
  • user-post
  • অগ্রহায়ণ
  • অণুগল্প
  • অনুগল্প
  • অনুবাদ
  • অনুবাদ কবিতা
  • অভিযাত্রিক
  • অমর একুশে
  • আদিল ফকির
  • আহসান লাবিব
  • ইজরায়েল
  • ইতিহাস
  • ইতিহাস
  • ইতিহাস
  • ইদ
  • ইদ
  • ইদ সংখ্যা ২০২১
  • ইসলাম
  • ইসলাম
  • ঈদ ২০২২
  • ঈদ ২০২৩
  • ঈদ সংখ্যা
  • ঈদ সংখ্যা
  • ঈদ স্মৃতি
  • ঈদ-২০২০
  • একুশে ফেব্রুয়ারি
  • এস এম খ‌লিল বাবু
  • এস এম সাথী বেগম
  • ঐতিহ্য
  • কবিতা
  • কবিতা
  • কবিতা
  • কবিতা
  • কবিতা
  • কবিতা
  • কবিতা দ্বিতীয় অংশ
  • কবিতা প্রথম অংশ
  • কবিতা2
  • কবিতার গল্প
  • করোনার দিনগুলো ৫
  • ক্যাডেট ভর্তি
  • খেলা
  • গল্প
  • গল্প
  • গল্প
  • গল্প
  • গুচ্ছ
  • চিঠি
  • চিরায়ত পাঠ
  • ছড়া
  • ছড়া
  • ছড়া
  • ছড়া
  • ছড়া-কবিতা
  • ছড়া-গল্প
  • ছবিঘর
  • জগলুল হায়দা
  • জন্মদিন
  • জন্মদিন
  • জাতীয় কবিতা পরিষদ
  • জাতীয় শিশু দিবস
  • জানা অজানা
  • জীবন-যাপন
  • টেক
  • ট্র্যাগাস
  • ডায়াবেটিস
  • তরুণ তুর্কি
  • তরুণ তুর্কি
  • তরুণ তুর্কি: ১৫ নবীনের কবিতা
  • তাসমিন আফরোজ
  • তৃণলতা কুরচি
  • ত্যাগের গল্প
  • দারাজ
  • দূর পরবাস
  • দূর পরবাস
  • দেবব্রত সিংহ
  • নজরুল মৃধা
  • নতুনবই
  • নন-ফিকশন
  • নববর্ষ
  • নববর্ষ সংখ্যা - ১৪২৮
  • নবান্ন
  • নিবন্ধ
  • নিবন্ধ
  • নির্বাচিত ছবি
  • নির্বাচিত স্ট্যাটাস
  • নূরুল হুদা
  • নোবেল পুরষ্কার
  • পাঠ প্রতিক্রিয়া
  • পাঠকপ্রিয় লেখা
  • পাভেল রহমান
  • প্রতিষ্ঠা-বার্ষিকী
  • প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
  • প্রবন্ধ
  • প্রবন্ধ
  • প্রবন্ধ
  • প্রবন্ধ
  • প্রবন্ধ
  • প্রবন্ধ১
  • ফিলিস্তিন
  • ফিলিস্তিন
  • ফিলিস্তিন সংখ্যা
  • ফিলিস্তিন সংখ্যা
  • ফিলিস্তিনি কবিতা অনুবাদ
  • ফেসবুক
  • বই
  • বই আলোচনা
  • বইমেলা
  • বর্ষাকাহন
  • বর্ষার-কবিতা
  • বর্ষার-কবিতা1
  • বাজেট
  • বানান
  • বানান প্রতিযোগিতা
  • বাংলা
  • বাংলা একাডেমি
  • বাংলা বানান
  • বাংলাটা ঠিক আসে না
  • বাংলাবাড়ি
  • বিজয় দিবস
  • বিজয় দিবস 2022
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • বিশেষ রচনা
  • বিশেষ রচনা
  • বিশেষ সংখ্যা
  • বিশ্ব রক্তদাতা দিবস
  • ভাইভা
  • ভাষা
  • ভ্রমন-গল্প
  • মতামত
  • মতামত
  • মহাপরিচালক
  • মাতৃভাষা-দিবস
  • মিনহাজ উদ্দিন শপথ
  • মুক্তগদ্য
  • মুক্তিযুদ্ধ
  • মুগ্ধতা
  • মুগ্ধতা
  • মূল রচনা
  • মে দিবস
  • রক্ত
  • রংপুরের কবিতা
  • রংপুরের কবিতা
  • রংপুরের কবিতা1
  • রফিকুল হক দাদুভাই
  • রস-রচনা
  • রসরচনা
  • রাইয়ান অভির
  • রূপকথা
  • শনিবারের চিঠি
  • শব্দ
  • শিক্ষা
  • শিরোনাম
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • শিশু দিবস
  • শিশু-কিশোর
  • শিশুর শাস্তি
  • শোক দিবস
  • শোক দিবস-ছড়া
  • শোক দিবস-প্রবন্ধ
  • শোক সংবাদ
  • সংবাদ
  • সংবাদ
  • সাক্ষাৎকার
  • সাক্ষাৎকার
  • সাপ্তাহিক সংখ্যা
  • সাপ্তাহিক সংখ্যা
  • সাহিত্য
  • সাহিত্য সংবাদ
  • সাহিত্য সংবাদ
  • সাহিত্য সংবাদ
  • স্টিকার কমেন্ট
  • স্বাধীনতা দিবস 2022
  • স্বাস্থ্য
  • স্বাস্থ্য বার্তা
  • স্মরণ
  • স্মরণ
  • স্মৃতিকথা
  • স্মৃতিকথা
  • হাসান আজিজুল হক
  • হুমায়ূন আহমেদ
  • শনিবারের চিঠি Archive - মুগ্ধতা.কম

  • #tweetlikeitsfree
  • A-
  • A-
  • A+
  • A+
  • A+
  • A+
  • AB-
  • AB+
  • AB+
  • Account Menu
  • All menu
  • B-
  • B+
  • Bangabandhu
  • Barishal
  • Chattogram
  • cv
  • Dhaka
  • Dhaka
  • Dhaka
  • Eid
  • gh
  • Hadis
  • Khulna
  • max writer
  • mugdhota2
  • Mymensingh
  • Nobel Prize
  • O-
  • O+
  • Primary menu
  • quiz
  • Rajshahi
  • Rajshashi
  • Rangpur
  • Rangpur
  • Rangpur
  • Rangpur
  • Rangpur
  • rng_porm_add
  • rng_porm_add_adil_fokir
  • rng_porm_add_rlt_art
  • rng_porm_add_rlt_art_bottom
  • rng_porm_add_rlt_art_top
  • rng_porm_add2
  • selected_add
  • square
  • Sylhet
  • test
  • Test
  • test
  • Test 2
  • user-post
  • অগ্রহায়ণ
  • অণুগল্প
  • অনুগল্প
  • অনুবাদ
  • অনুবাদ কবিতা
  • অভিযাত্রিক
  • অমর একুশে
  • আদিল ফকির
  • আহসান লাবিব
  • ইজরায়েল
  • ইতিহাস
  • ইতিহাস
  • ইতিহাস
  • ইদ
  • ইদ
  • ইদ সংখ্যা ২০২১
  • ইসলাম
  • ইসলাম
  • ঈদ ২০২২
  • ঈদ ২০২৩
  • ঈদ সংখ্যা
  • ঈদ সংখ্যা
  • ঈদ স্মৃতি
  • ঈদ-২০২০
  • একুশে ফেব্রুয়ারি
  • এস এম খ‌লিল বাবু
  • এস এম সাথী বেগম
  • ঐতিহ্য
  • কবিতা
  • কবিতা
  • কবিতা
  • কবিতা
  • কবিতা
  • কবিতা
  • কবিতা দ্বিতীয় অংশ
  • কবিতা প্রথম অংশ
  • কবিতা2
  • কবিতার গল্প
  • করোনার দিনগুলো ৫
  • ক্যাডেট ভর্তি
  • খেলা
  • গল্প
  • গল্প
  • গল্প
  • গল্প
  • গুচ্ছ
  • চিঠি
  • চিরায়ত পাঠ
  • ছড়া
  • ছড়া
  • ছড়া
  • ছড়া
  • ছড়া-কবিতা
  • ছড়া-গল্প
  • ছবিঘর
  • জগলুল হায়দা
  • জন্মদিন
  • জন্মদিন
  • জাতীয় কবিতা পরিষদ
  • জাতীয় শিশু দিবস
  • জানা অজানা
  • জীবন-যাপন
  • টেক
  • ট্র্যাগাস
  • ডায়াবেটিস
  • তরুণ তুর্কি
  • তরুণ তুর্কি
  • তরুণ তুর্কি: ১৫ নবীনের কবিতা
  • তাসমিন আফরোজ
  • তৃণলতা কুরচি
  • ত্যাগের গল্প
  • দারাজ
  • দূর পরবাস
  • দূর পরবাস
  • দেবব্রত সিংহ
  • নজরুল মৃধা
  • নতুনবই
  • নন-ফিকশন
  • নববর্ষ
  • নববর্ষ সংখ্যা - ১৪২৮
  • নবান্ন
  • নিবন্ধ
  • নিবন্ধ
  • নির্বাচিত ছবি
  • নির্বাচিত স্ট্যাটাস
  • নূরুল হুদা
  • নোবেল পুরষ্কার
  • পাঠ প্রতিক্রিয়া
  • পাঠকপ্রিয় লেখা
  • পাভেল রহমান
  • প্রতিষ্ঠা-বার্ষিকী
  • প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
  • প্রবন্ধ
  • প্রবন্ধ
  • প্রবন্ধ
  • প্রবন্ধ
  • প্রবন্ধ
  • প্রবন্ধ১
  • ফিলিস্তিন
  • ফিলিস্তিন
  • ফিলিস্তিন সংখ্যা
  • ফিলিস্তিন সংখ্যা
  • ফিলিস্তিনি কবিতা অনুবাদ
  • ফেসবুক
  • বই
  • বই আলোচনা
  • বইমেলা
  • বর্ষাকাহন
  • বর্ষার-কবিতা
  • বর্ষার-কবিতা1
  • বাজেট
  • বানান
  • বানান প্রতিযোগিতা
  • বাংলা
  • বাংলা একাডেমি
  • বাংলা বানান
  • বাংলাটা ঠিক আসে না
  • বাংলাবাড়ি
  • বিজয় দিবস
  • বিজয় দিবস 2022
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • বিশেষ রচনা
  • বিশেষ রচনা
  • বিশেষ সংখ্যা
  • বিশ্ব রক্তদাতা দিবস
  • ভাইভা
  • ভাষা
  • ভ্রমন-গল্প
  • মতামত
  • মতামত
  • মহাপরিচালক
  • মাতৃভাষা-দিবস
  • মিনহাজ উদ্দিন শপথ
  • মুক্তগদ্য
  • মুক্তিযুদ্ধ
  • মুগ্ধতা
  • মুগ্ধতা
  • মূল রচনা
  • মে দিবস
  • রক্ত
  • রংপুরের কবিতা
  • রংপুরের কবিতা
  • রংপুরের কবিতা1
  • রফিকুল হক দাদুভাই
  • রস-রচনা
  • রসরচনা
  • রাইয়ান অভির
  • রূপকথা
  • শনিবারের চিঠি
  • শব্দ
  • শিক্ষা
  • শিরোনাম
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • শিশু দিবস
  • শিশু-কিশোর
  • শিশুর শাস্তি
  • শোক দিবস
  • শোক দিবস-ছড়া
  • শোক দিবস-প্রবন্ধ
  • শোক সংবাদ
  • সংবাদ
  • সংবাদ
  • সাক্ষাৎকার
  • সাক্ষাৎকার
  • সাপ্তাহিক সংখ্যা
  • সাপ্তাহিক সংখ্যা
  • সাহিত্য
  • সাহিত্য সংবাদ
  • সাহিত্য সংবাদ
  • সাহিত্য সংবাদ
  • স্টিকার কমেন্ট
  • স্বাধীনতা দিবস 2022
  • স্বাস্থ্য
  • স্বাস্থ্য বার্তা
  • স্মরণ
  • স্মরণ
  • স্মৃতিকথা
  • স্মৃতিকথা
  • হাসান আজিজুল হক
  • হুমায়ূন আহমেদ
  • মুগ্ধতা.কম

    ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ , ৭:৩৫ অপরাহ্ণ

    “স্বাধীনবাংলা সাহিত্য পরিষদ গুণীজন সম্মাননা – ২০২৩” পেলেন কবি আকিব শিকদার

    খবর বিজ্ঞপ্তি:

    সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য “স্বাধীনবাংলা সাহিত্য পরিষদ গুণীজন সম্মাননা – ২০২৩” পেলেন কবি আকিব শিকদার। স্বাধীন বাংলা সাহিত্য‌ পরিষদের ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন উপলক্ষে গুণীজন সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকাস্থ কেন্দ্রীয় কচিকাঁচা মিলনায়তনে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রায় ৪০০ কবি, সাহিত্যকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ।
    অনুষ্টান শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও গীতা পাঠ করে জাতীয় সংগীত এর প্রতি সকলে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন

    আলমগীর জুয়েল উপদেষ্টা স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেলিনা হোসেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও সভাপতি বাংলা একাডেমি,রেজাউদ্দিন স্টালিন বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি ও টেলিভিশন ব্যাক্তিত্ব, অনুষ্টানটি উদ্বোধন করেন আসলাম সানী বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত ছড়াকার,প্রধান আলোচক হিসেবে ছিলেন শামিম রুমি টিটন লেখক সংগীতজ্ঞ ও গবেষক, বিশেষ আলোচক এবি এম সোহেল রশিদ কবি ও অভিনেতা,স্বাগত বক্তব্য দেন মাসুম মুহতাদী কথাসাহিত্যিক, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নজরুল বাঙালী প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশ কবি পরিষদ, মোসলে উদ্দিন পরিচালক প্রিয়জন সাহিত্য পরিষদ, ড. শরিফ সাকি আইন বিশেষজ্ঞ, কবি তাহেরা খাতুন প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশ কালচারাল কল্যাণ পরিষদ,ইশতিয়াক আহমেদ পরিচালক কবি ও কবিতার ভূবন,আবু তাহের সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ কালচারাল কল্যাণ পরিষদ, অধ্যাপক ইউনুস মোল্লা বিশিষ্ট কবি ও সংগঠক কলকাতা ভারত, এস এম আশিক বিল্লাহ চেয়ারম্যান ডোমোক্রেটিক পার্টি বাংলাদেশ, ফারুক জাহাঙ্গীর কবি ও ছড়াকার,স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন নুরুল হুদা নূরী সিনিয়র সহ সভাপতি স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ, হাসিনা মমতাজ অতিরিক্ত পরিচালক বাংলাদেশ ব্যাংক, কৃষিবিদ আনন্দ চন্দ্র দাস যুগ্ম মহাপরিচালক বিএডিসি,আতিক হেলাল বিশিষ্ট ছড়াকার, অধ্যক্ষ মোঃ মতলব হোসেন কবি ও লেখক, অনিক রহমান বুলবুল কবি ও কথা কথাসাহিত্যিক, রুস্তম আলী সভাপতি শতরুপা সাহিত্য পরিষদ,মোহাম্মদ রেজাউল করিম মুন্না চেয়ারম্যান লিজেন্ড ইন্টারন্যাশনাল।

    0 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ , ৭:৩৫ অপরাহ্ণ

    ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী

    এ কাহিনি অভিজিৎ সেনের। কিছুটা কিছুটা জেনেছি তাঁর ডায়েরি থেকে। আমি তাঁর মুখেই শুনেছি।

    অনেক নাম এবং জায়গাগুলিও বদলাতে হবে। সংশ্লিষ্ট পাত্র-পাত্রীরা অনেকেই বেঁচে আছেন। এখনও। অভিজিৎ সেন গোপনীয়তার তোয়াক্কা করতেন না। কিন্তু আমি কেন খামোকা ফ্যাসাদে পড়তে যাব।

    অভিজিৎ সেন নিজেই আমাকে বলেছিলেন, যদি পারিস আমার জীবনের এই ঘটনাটা লিখিস। তাতে লোকশিক্ষা হবে।

    কাহিনির শুরু বম্বে মেলের ফার্স্ট ক্লাসের কামরায়।

    তার আগে বলে নিই, বিখ্যাত অভিজিৎ সেন আমাদের কাছে অভিদা। আমার চেয়ে বয়েসে অন্তত পনেরো বছরের বড়। বেশ সুঠাম, তেজি চেহারা। অনেকদিন পর্যন্ত যৌবন ধরে রেখেছিলেন।

    আমার সঙ্গে পরিচয় পাড়ার ছেলে হওয়ার সুবাদে। তখন উত্তর কলকাতার রাজবল্লভ পাড়ায় থাকি। কিছু কিছু বাড়ির সামনের রকে আড্ডার আসর বসাবার রেওয়াজ ছিল। এখন সেইসব আচ্ছা রক ছেড়ে বৈঠকখানায় স্থানান্তরিত হয়েছে, রকগুলো ভেঙে হয়েছে দোকানঘর। কিন্তু রকের আড্ডা আর বৈঠকখানার আড্ডার চরিত্রের তফাত আছে। রকের আড্ডায় রাস্তা দিয়ে। যেতে-যেতে যে-কোনও লোক ভিড়ে যেতে পারে। যার যখন ইচ্ছে উঠে গেল, আবার নতুন কেউ এসে বসল।

    বিভিন্ন রকে বিভিন্ন বয়সিদের আড্ডা। কোনওটা বুড়োদের কোনওটা মাঝবয়েসিদের, আর কোনওটা ছেলে-ছোকরাদের।

    কোনওটাতেই মেয়েদের যোগ দেওয়ার অধিকার ছিল না। ইংল্যান্ডে বা আমেরিকাতেও অনেক ক্লাবে মেয়েদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। আমাদের কলকাতাতেও এখনও অনেক ক্লাবে মেয়েরা মেম্বার হতে পারে না।

    পাড়ার রকে গোঁফ গজাবার আগে কোনও ছেলে বসতে চাইলে তাকে ধমকে বিদায় করে দেওয়া হত। আমার তখন সদ্য গোঁফ গজিয়েছে।

    প্রত্যেক পাড়াতেই গর্ব করার মতন কয়েকজন লোক থাকে। আমাদের ওই পাড়ায় যেমন নুটুদা আর অভিদা। নুটুদা ক্রিকেট খেলোয়াড়, রঞ্জি ট্রফিতে দুবার চান্স পেয়েছিল। ওয়ান ডে ক্রিকেট চালু হওয়ার আগে ক্রিকেট খেলোয়াড়দের এত রমরমা ছিল না, শীতকাল ছাড়া অন্যসময়। তাদের নাম শোনা যেত না। কিন্তু অভিদার নাম প্রায় সারা বছরই দেখা যেত খবরের কাগজে। গায়ক হিসেবে নাম ছাড়াবার পর ততদিনে মুম্বই থেকে তাঁকে ডাকাডাকি করছে। নমিতা সিংহ নামে একজন ফিলমের অভিনেত্রীকেও এ-পাড়ার মেয়ে বলে গণ্য করা হত। যদিও নমিতা সিংহ মাত্র সাড়ে চার মাস একটা ভাড়া বাড়িতে ছিল, তারপর চলে যায় নিউ আলিপুরে। তবু রাজবল্লভ পাড়া তার ওপর দাবি ছাড়বে না।

    এ-পাড়ায় অভিদাদের তিন পুরুষের পুরোনো বাড়ি। যৌথ পরিবার, অনেক নারী-পুরুষে জমজমাট। বাড়ির মধ্যে একটা ছোট মন্দির, তার মধ্যে রাধাকৃষ্ণের যুগল বিগ্রহ, সকাল-সন্ধে আরতি হত, সেই ঘণ্টাধ্বনি শুনে আমরা সময় বুঝে নিতাম। সন্ধ্যারতির সময়ই আমাদের আড্ডা ভেঙে বাড়িতে ফিরে পড়তে বসতে হত।

    মুম্বই বাড়ি দেওয়ার পরেও অভিদা মাঝে-মাঝেই কলকাতায় আসতেন। তখন তিনি টালিগঞ্জে নিজস্ব একটা ফ্ল্যাট নিয়েছেন বটে, কিন্তু দু-চারদিন এ-পাড়ায় পৈতৃক বাড়িতে কাটিয়ে যেতেন। অন্তত যতদিন তাঁর মা বেঁচেছিলেন।

    অত বিখ্যাত মানুষ, খবরের কাগজে ছবি বেরোয়, অথচ অহঙ্কার ছিল না একেবারে। ক্রিকেট খেলোয়াড় নুটুদা বরং কলার উচিয়ে গম্ভীরভাবে হেঁটে যেতেন রাস্তা দিয়ে, বিশেষ কাউকে পাত্তা দিতেন না। কিন্তু অভিদা মিশতেন সব বয়েসিদের সঙ্গে।

    আমাদের রকের আড্ডায় সাহিত্য-শিল্প-সিনেমা-পরনিন্দা-পরচর্চা সবই চলে। কথায়-কথায় রাজা-উজির মারি। অল্প বয়েসে সব কিছুতেই আঘাত করার একটা প্রবণতা থাকে। আধুনিক গায়ক-গায়িকাদের আমরা নস্যাৎ করে দিতাম, অভিদাকেও বড় গায়ক মনে করতাম না। তবে গলার আওয়াজ জোরালো, আধুনিক গান না গেয়ে তাঁর ক্লাসিকাল গানে টিকে থাকা উচিত ছিল।

    আমরা মুগ্ধ ছিলাম অভিদার ব্যক্তিত্বে।

    বয়েসের অনেক তফাত থাকলেও আমাদের মতন অর্বাচীনদের আড্ডায় তিনি এসে বসতেন মাঝে-মাঝে। অমন বিখ্যাত হয়েও পোশাকের কোনও আড়ম্বর ছিল না, পাজামা আর গেঞ্জি পরে রাস্তার ধারে বসতে দ্বিধা করতেন না। চওড়া বুক, ফরসা রং, তখনও পর্যন্ত একটাও চুল পাকেনি, চোখে পড়ার মতন চেহারা।

    হাতে সবসময় সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটার। অকৃপণ সিগারেট বিলোতেন। আমরা প্রথম প্রথম সঙ্কোচ বোধ করতাম, তিনি হাসি মুখে বলতেন, নে, নে অত লজ্জা কীসের। আমি ষোলো বছর বয়েস থেকেই বিড়ি টানতে শিখেছি।

    উলটোদিকে নিবারণদার চায়ের দোকান। অভিদা হাঁক দিয়ে বলতেন, নেবাদা, এখানে এক রাউন্ড চা দিয়ে যাও। ঠিক আধঘণ্টা অন্তর চা দিয়ে যাবে।

    তারপর আমাদের জিগ্যেস করতেন, এ পাড়ার লেটেস্ট খবর কী বল! কেউ কারুর বউকে নিয়ে ভাগেনি? ওই কোণের বাড়িটায় নতুন ভাড়াটে এসেছে, দুটো ডবগা-ডবগা ছুঁড়িকে দেখলুম, তোরা কেউ প্রেম করিসনি?

    উত্তর কলকাতায় সেসময়ে মুখের ভাষায়, শালা, মাগি বেজন্মা এইসব শব্দ অনায়াসে মিশে থাকত। কেউ খুব আদর করে তার বন্ধুকে ডাকত। এই শুয়োরের বাচ্চা এদিকে আয়।

    একদিনের কথা মনে আছে। আমার বন্ধু মানস বরাবরই পেটরোগা। কথা বলতে-বলতে হঠাৎ বাথরুমের দিকে ছুটত। তার মা তারকেশ্বরে পুজো দিয়ে মন্ত্র পড়া ফুলপাতা মুড়ে একটা বড় রুপোর মাদুলি বানিয়ে দিয়েছিলেন। সেটা সবসময় তাকে গলায় পরে থাকতে হত। সেদিন রুপোর মাদুলিটা তার জামার বাইরে বেরিয়ে পড়েছে, সেটা দেখে অভিদা জিগ্যেস করলেন, এটা কী রে?

    মানস তারকেশ্বর,, পেট খারাপ এইসব বলতেই অভিদা ঝুঁকে এসে হ্যাঁচকা টানে সেটা ছিঁড়ে নিলেন।

    তারপর ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখতে-দেখতে বললেন, এতে সত্যি কাজ হয়?

    মানস বলল, অনেকটা কমেছে।

    অভিদা বললেন, ভালো কথা, আমাদের বাড়িতে নেপু নামে একটা বাচ্চা চাকর আছে, সেটা যখন-তখন পেটব্যথায় ছটপট করে। তাকে পরিয়ে দেব, যদি তার সারে…তোর মাকে বলিস তোর জন্য আর-একটা গড়িয়ে দিতে।

    মানস কাঁচুমাচু হয়ে গেল। তাদের বাড়ির অবস্থা সচ্ছল, ওইটুকু রুপোর জন্য কিছু যায় আসে না, কিন্তু মন্ত্রঃপূত মাদুলি কি অন্যকে দেওয়া যায়? বাড়িতে খুব বকাবকি করবে।

    অভিদা কিন্তু মাদুলিটা ফেরত দিলেন না। তাঁর এই ব্যবহারটা খুব অদ্ভুত লেগেছিল।

    যাই হোক, এবার আসল গল্পে আসা যাক।

    সেদিন আমার বম্বে মেল ধরার কথা। হাওড়া ব্রিজে দারুণ জ্যাম, ট্যাক্সি আর নড়েচড়ে না। আমার কাছে শুধু একটা বড় ব্যাগ ছিল, একসময়ে ট্যাক্সি থেকে নেমে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে দৌড়তে দৌড়তে প্ল্যাটফর্মে যখন পৌঁছলাম, তখন ট্রেন নড়াচড়া শুরু করেছে।

    হুড়মুড় করে উঠে পড়ে, আমার কিউবিকল খুঁজে ভেতরে ঢুকে দেখলাম, তলার একদিকের বাঙ্কে বসে আছে দুজন যাত্রী, অন্য বাঙ্কে পাতলা চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে আর-একজন।

    সবে কলির সন্ধে, এসময় কারও শুয়ে থাকার কথা নয়। হয়তো লোকটি অসুস্থ, তাই ভালো করে লক্ষ করিনি। ব্যাগটা সিটের তলায় রেখে, অন্য দুজনের পাশে বসার পর দেখি, সেই শুয়ে থাকা ব্যক্তিটি আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মুখে খোঁচা-খোঁচা দাড়ি, মাথায় সামান্য টাক, চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা।

    সিগারেট দেশলাই পকেটে নেই, ব্যাগে ভরা আছে। আবার ব্যাগটা টেনে বার করে, সিগারেট দেশলাই নিয়ে একটা জ্বালাবার পর দেখি, তখনও শুয়ে থাকা যাত্রীটি চোখ ফেরায়নি। অন্য। দুজন দক্ষিণ ভারতীয়, তারা গল্প করছে নিজেদের ভাষায়।

    কয়েক মুহূর্ত পরে সেই লোকটি বলল, তুই সুনীল না?

    সঙ্গে-সঙ্গে গলার আওয়াজে চেনা গেল। অভিদা।

    আশ্চর্য, আমি অভিদাকে চিনতে পারিনি, আর উনি আমাকে মনে রেখেছেন?

    এর মধ্যে কেটে গেছে প্রায় বছরদশেক। আমি রাজবল্লভ পাড়া ছেড়ে চলে গেছি দমদম। অভিদার ছবি নিয়মিত পত্রপত্রিকায় দেখি, অনেক খবর থাকে তাঁর সম্পর্কে। এখন তিনি আর শুধু গায়ক নন, অনেক হিন্দি ফিলমের সার্থক সুরকার।

    আগে চশমা পরতেন না। মাথা ভরতি চুল ছিল। অভিজিৎ সেনের মতন একজন বিখ্যাত ব্যক্তি এরকম খোঁচা-খোঁচা দাড়ি নিয়ে ট্রেনে যাচ্ছেন, এটাও কি ভাবা যায়? সবাই খানিকটা সাজগোজ করে। আর ফিলম সংক্রান্ত লোকজনদের কিছুটা ঝলমলে উকট পোশাক পরাই রেওয়াজ।

    অভিদা জনপ্রিয়তার শিখরে, তাঁর কথা তো আমি জানবই। কিন্তু আমার নামটা তিনি দশ বছর পরেও মনে রেখেছেন, স্মৃতিশক্তি খুব প্রখর, তা মানতেই হবে।

    প্রাথমিক উচ্ছাসের পর অভিদা জিগ্যেস করলেন, তুই এখন কী করছিস রে সুনীল? সাকসেসফুল হয়েছিস তো বোঝাই যাচ্ছে, ট্রেনে ফার্স্টক্লাসে ট্রাভল করছিস। চাকরি, না বিজনেস?

    না, নিজের পয়সায় টিকিট কেটে ফার্স্টক্লাসে যাওয়ার মতন অবস্থা আমার হয়নি। তখন পর্যন্ত আমি শুধু কবিতাই লিখি। কবিতা লিখে কিছু নামটাম হলে টাকা পয়সার দিক থেকে কোনও সুবিধে হয় না বটে, তবে বিভিন্ন জায়গা থেকে কবি সম্মেলন বা সাহিত্যবাসরে আমন্ত্রণ পাওয়া যায়, গল্প-উপন্যাস লেখকরা বরং এদিক থেকে খানিকটা বঞ্চিত। আমি ভ্রমণ-ক্ষ্যাপা, দূরের কোনও জায়গা থেকে ডাক পেলেই ছুটে যাই।

    আমার গন্তব্য মুম্বই নয়, আমেদাবাদ। একটি গুজরাতি প্রতিষ্ঠান আমন্ত্রণ পাঠিয়েছে। তারাই ফার্স্টক্লাসের টিকিট কেটে দিয়েছে। মুম্বইতে এক রাত্রি বাস করে পরদিন আমেদাবাদের ট্রেন ধরতে হবে।

    একটু পরে জিগ্যেস করলাম, অভিদা, তোমার শরীর খারাপ নাকি? এখন থেকেই শুয়ে পড়েছ?

    অভিদা বললেন, দুদিন ধরে গা-টা ম্যাজম্যাজ করছে। তা ছাড়া পায়ের যা অবস্থা বসতে গেলে পা-টা একেবারে সোজা সামনে মেলে থাকতে হয়। সেটা ভালো দেখায় না।

    তলার দিকে চাদরটা একটু সরালেন অভিদা। তাঁর একটা পায়ের অনেকখানি প্লাস্টার করা। খুব নতুন নয়, তার ওপরে কিছু মানুষের সই রয়েছে।

    কোনও মানুষের পা ভাঙা দেখলেই কৌতূহল হয়, কী করে ভাঙল?

    অভিদা হাসতে-হাসতে বললেন, ভগবান ভেঙে দিয়েছে।

    সবসময় ঠাট্টা-মস্করা করা অভিদার স্বভাব। এটা কী ধরনের মস্করা? আমি বললাম, ভগবান। নিজে এসে ভেঙে দিলেন? তুমি তাঁকে দেখতে পেয়েছিলে?

    অভিদা বললেন, নারে, দেখতে পাইনি। পেছন দিকে ছিল। ওই যে কথা আছে না, ঠিক দুক্কুর বেলা, ভূতে মারে ঠেলা, সেই রকমই। ভূতের বদলে ভগবান আমায় পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ফেলে দিল।

    আমার চোখে তখনও কৌতূহল দেখে অভিদা বললেন, তোকে ব্যপারটা পরে বলব। এখন একটা কাজ কর তো, তোকে যখন পাওয়াই গেছে, একটু খাঁটিয়ে নিই। এই বাঙ্কটার তলায় দ্যাখ আমার বড় ব্যাগটার পাশে একটা শান্তিনিকেতনি ঝোলা আছে, সেটা ওপরে নিয়ে আয়।

    সেই ঝোলাটার মধ্যে একটা স্কচ হুইস্কির বোতল। লুকোবার কোনও চেষ্টাই নেই, ওপরের দিকটা বেরিয়ে আছে। একটা জলের ফ্লাক্স, আর একটি কাচের গেলাস।

    অভিজিৎ সেনের জীবনযাত্রার কাহিনিও সুবিদিত।

    ইচ্ছে করলে হয়তো ফিলমের নায়কও হতে পারতেন। কিন্তু অত আলো ও ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে বারবার এককথা বলা তাঁর পছন্দ নয় বলে, কয়েকজন পরিচালক আগ্রহ দেখালেও অভিদা রাজি হননি। কিন্তু তাঁর অনেক কীর্তি-কাহিনি অনেক নায়ক-নায়িকাকেও হার মানিয়ে দেয়।

    মুম্বইতে পাকাঁপাকি যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর সঙ্গে এক উঠতি অভিনেত্রীর বিয়ে হয়। সে বিয়ে ভেঙেও যায় দেড় বছরের মধ্যে। তারপর আর বিয়ে করেননি, গুজব ছড়িয়েছে নানা রকম। কিছুদিন স্মিতা পাটিলের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়েছিল। কোনও একটা পার্টিতে মদ খেয়ে নাকি মারামারি করেছিলেন, রাজ বব্বরের সঙ্গে। এক গায়িকাকে নিয়ে চলে গিয়েছিলেন ইউরোপ। এই তো কিছুদিন আগে মদ খেয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে পুণে শহরে এক ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে তাঁর ঝগড়া হয়, অভিদা মাথা গরম করে সেই পুলিশকে চড় মেরে বসেছিলেন। সেজন্য আদালতে গিয়ে তাঁকে জরিমানাও দিতে হয়েছে।

    এসবই আমার কাগজে পড়া বা লোকমুখে শোনা। হয়তো এর বাইরেও আরও অনেক কিছু ঘটেছে। হিন্দি ফিলম আমি প্রায় দেখিই না। অভিদার গাওয়া বা সুর দেওয়া অনেক গানই আমার শোনা হয়নি। তবে পুজো প্যান্ডেলের অনেক গান বাধ্য হয়ে শুনতে হয়, হঠাৎ অভিদার গলায় আওয়াজ চিনতে পারলে মন দিই। মানুষটিকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি বলেই। অভিদা বাংলা গানও কিছু-কিছু রেকর্ড করেছে, সেগুলো বিশেষ সুবিধের না, অন্তত আমার রুচির সঙ্গে মেলে না।

    তবে, এরই মধ্যে একটা ভাটিয়ালি খুবই ভালো লেগেছিল। স্বীকার করতেই হবে, এরকম দরাজ গলা এখন আর কারও নেই।

    অভিদা জিগ্যেস করলেন, তোর কাছে গেলাস আছে?

    আমি বললাম, না তো।

    —এই তো মুশকিলে ফেললি। মোটে একটা গেলাস এনেছি। ঠিক আছে, ফ্লাস্কের ঢাকনাটা ব্যবহার করা যাবে। এসব খাস-টাস তো?

    —যদি একটু প্রসাদ দাও।

    —প্রসাদ কণিকা মাত্র। একটুই পাবি, বেশি না। আগে আমারটা ঢাল। মুম্বইতে কোথায় রাত কাটাবি?

    —দাদারে একটা ছোটখাটো হোটেল চিনি।

    —মুম্বইতে যাচ্ছিস, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করিসনি কেন?

    —তুমি বিখ্যাত লোক, আমাদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তা ছাড়া অনেকদিন যোগাযোগ নেই।

    অভিদা অন্য সহযাত্রীদের দিকে গেলাস তুলে জিগ্যেস করলেন, ডু ইউ মাইন্ড?

    দুজনেই ভদ্রতা করে বললেন, নো নো নো।

    অভিদা আবার বললেন, উড ইউ লাইক টু জয়েন আস? দেখা গেল, দক্ষিণ ভারতীয় দুজনই সাত্বিক প্রকৃতির। মদ স্পর্শ করে না। তবে আমাদের ব্যাপারে আপত্তি নেই।

    অভিদা আমাকে বাংলায় বললেন, এত লম্বা জার্নি, মদ না খেয়ে লোকে কী করে যায়, আমি বুঝতেই পারি না। তোর কাছে বোতল আছে?

    –না।

    —সঙ্গে রাখিস না? তার মানে এখনও নেশা ধরেনি।

    —আমি শুধু অন্য কেউ খাওয়ালে খাই।

    —ওইভাবেই শুরু হয়। নেশাখোর হবি কিনা এখন থেকে ঠিক কর। যদি না হতে চাস, এখন থেকেই আর ঠুবি না। আর নয় তো আমার মতন অবস্থা হবে।

    —তুমি রোজ খাও?

    —রোজ খাদ্য খেতে হয় না? আমার খাদ্যের সঙ্গে পানীয়ও লাগে। আগে মা-র কাছে গেলে খেতাম না। এবার মা-র কাছেও পারমিশান নিয়ে নিয়েছি। মুম্বইতে খুব কাজ ছিল, মাকে। দেখতেই কলকাতায় এসেছিলাম তিন দিনের জন্য।

    —তোমার মা…এখন ভালো আছেন?

    —আমাকে দেখেই তো ভালো হয়ে গেলেন। প্লেনে এসেছিলাম, কিন্তু এই পা নিয়ে বেশিক্ষণ বসে থাকতে বেশ ব্যথা লাগে। তাই ফেরার সময় মনে হল, ট্রেনই ভালো।

    —টিকিট পেলে কী করে? অনেকদিন আগে তো কাটতে হয়।

    —কত দালাল আছে। আমার ভক্তও তো আছে রে। তারা জোগাড় করে দেয়। তুই আমার গান শুনিস?

    —তেমন শোনা হয়নি। একটি ভাটিয়ালি খুব ভালো লেগেছিল। এইরকম গান আরও বেশি গাও না কেন?

    —ওতে কি আর পয়সা আসে? এখন ফিলমে ঝিং চ্যাক ঝিং চ্যাক ছাড়া চলে না। ফাস্টবিট। লাউড। সারা পৃথিবীতে প্রায় একরকম। আমার টাকার দরকার, তাই ওই সব চ্যাংড়া গান গাই। আমরা নাকি রাজা রাজবল্লভের বংশ, তুই জানিস?

    —ও-পাড়ায় থাকতে শুনেছি।

    —সত্যি কি না কে জানে! বাবা-টাবাদের কাছে শুনেছি। হয়তো লতায়-পাতায় কিছু একটা একটা সম্পর্ক ছিল। সে যাই হোক, সাহেবদের পা চেটে আমাদের কোনও পূর্বপুরুষ টাকা করেছিল অনেক। কলসির জল গড়াতে-গড়াতে শেষ হয়ে গেছে। এখন আর কিছু নেই। ওই যে অত বড় বাড়ি, তার চোদ্দোজন শরিক। তবু বনেদিয়ানাটা রয়ে গেছে। দেখিসনি, আমার বাবা-কাকারা কুচোনো ধুতি আর গিলে করা পাঞ্জাবি ছাড়া পরত না। সব ফোতো কাপ্তেন! পেটে ভাত নেই, মুখে পান। অল্প বয়েস থেকেই আমি বুঝেছিলুম, ওসব নকলিবাজি আমার দ্বারা পোষাবে না। আমার টাকা চাই, আমি ভোগী লোক, আমার অনেক টাকা দরকার। চাকরি-বাকরি করা আমার দ্বারা পোষাত না। নেহাত গলাটা আছে, তাই গান গেয়ে টাকা পাই।

    —তুমি কারও কাছে গান শেখোনি?

    —কার কাছে শিখব? ধৈর্য ছিল না। মহম্মদ রফি-কে নকল করতাম। রফি সাহেব আমার গুরু। দূর থেকে, মানে আমি একলব্য শিষ্য। দু-একটা পাড়ার জলসায় গান গেয়ে বেশ হাততালি। পেতাম। ব্যস, বুঝে গেলুম, এই লাইনটাই ধরতে হবে। প্রথম দিকে স্রেফ বড়-বড় গায়কদের নকল করে পপুলার হয়েছি। মুম্বইতে আসার পর হেমন্তবাবু আমায় খুব সাহায্য করেছিলেন। উনিই প্রথম বলেছিলেন, যথেষ্ট হয়েছে, এবার নিজের গলাটা খোলো!

    —তোমার গলাটা সত্যিই ভালো।

    —তুই প্রশংসা করছিস? গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না। মুম্বইতে নাম করেছি বটে, কলকাতার লোক এখন আর আমায় তেমন পছন্দ করে না জানি! তুই কবিতা-টবিতা লিখিস বললি, আমি কিছুই পড়িনি। একসময় খুব পড়ার নেশা ছিল, এখন আর বিশেষ সময় পাই না। তুই গান লিখিস না? দে, দু-চারখানা গান লিখে দে। হিন্দিতে ট্রানস্লেট করে কোনও ফিলমে লাগিয়ে দেব। তুই কিছু পয়সা পাবি।

    —না, অভিদা, গান লেখার ক্ষমতা আমার নেই। আমি দুর্বোধ্য আধুনিক কবিতা লিখি, যা অনেক লোকই বোঝে না।

    —কেন, ওরকম লিখিস কেন?

    —কেউ-কেউ তো খেয়াল তারানাও গায়, অনেকে বোঝে না।

    —হুঁ!

    এর মধ্যে আমাদের রাত্তিরের খাবার এসে গেল। আমি ঢাকনা খুলে হাত দেওয়ার আগেই অভিদা ধমক দিয়ে বললেন, রেখে দে। আগে মালের নেশা না জমলে কেউ খায় নাকি?

    ফ্লাস্কের ঢাকনায় আমি একটুখানি নিয়ে বসে আছি, অভিদা প্রায় আধবোতল উড়িয়ে দিলেন। তাতেও কথা একটু জড়ায়নি, মাথা ঠিক আছে।

    পায়ের ওপর থেকে চাদরটা সরে গেছে। ডান পায়ের গোড়ালি থেকে ঊরু পর্যন্ত মোটা প্লাস্টার। আমি ঝুঁকে পড়ে তার ওপর নাম সইগুলো পড়বার চেষ্টা করলাম। মাত্র তিন চারটে নামই চেনা, দিলীপকুমার, নাসিরুদ্দিন শাহ, শাবানা আজমি, আশা ভোঁসলে আরও অনেক নাম আছে।

    অভিদা বললেন, তুই বুঝি ভাবছিস, আমি ফাঁট দেখাবার জন্য ওই সব হিরো-হিরোইনদের নাম সই করিয়েছি? কদিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল, তখন অনেকে দেখতে এসেছে, নিজেরাই সই করেছে। গুড উইশ করার মতন। সুরকারদের সবাই খাতির করে, গান হিট হওয়ার ওপর ছবি হিট হওয়া নির্ভর করে অনেকখানি। তবে এগুলো আমি মুছিনি ইচ্ছে করে, কলকাতায় আমার ভাইপো-ভাগ্নিরা দেখে মজা পাবে বলে। এখন মুছে ফেললেই হয়।

    অভিদা হাতের গেলাস দিয়ে সেই নামগুলোর ওপর ঘষতে লাগলেন।

    আমি আবার জিগ্যেস করলাম, তুমি সিঁড়ি দিয়ে পড়ে গিয়েছিলে?

    অভিদা বললেন, হ্যাঁ, তবে মদ খেয়ে গড়াইনি। দিনের বেলা, সুস্থ অবস্থায়। তখন বললুম না, ভগবান আমায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। ভগবান সবসময় আমার পেছন-পেছন ঘোরে। হয়তো, এই কামরাতেও অদৃশ্য হয়ে ঘাপটি মেরে বসে আছে।

    এটাকে মাতালের প্রলাপ মনে করে মুখ ফেরাতেই অভিদা হা-হা করে হেসে উঠলেন।

    তারপর আমার একটা হাত ধরে টেনে বললেন, বিশ্বাস করলি না তো? আমি পাগল না, মাতালও হইনি। তবে শোন, তোকে গোড়া থেকে ঘটনাটা বলি। তবে, যতদিন না আমি অনুমতি দেব, তুই আর কারওকে বলতে পারবি না। তাতে রাজি আছিস?

    আমি মাথা ঝোঁকালাম।

    অভিদা এক বিচিত্র কাহিনি বলতে শুরু করলেন।

    সেটা অভিদার জবানিতেই শোনা যাক।

    [সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায়। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি কলকাতায় চলে আসেন। ১৯৫৩ সাল থেকে তিনি কৃত্তিবাস নামে একটি কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ একা এবং কয়েকজন এবং ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম উপন্যাস আত্মপ্রকাশ প্রকাশিত হয়। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হল আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি, যুগলবন্দী (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), হঠাৎ নীরার জন্য, রাত্রির রঁদেভূ, শ্যামবাজারের মোড়ের আড্ডা, অর্ধেক জীবন, অরণ্যের দিনরাত্রি, অর্জুন, প্রথম আলো, সেই সময়, পূর্ব পশ্চিম, ভানু ও রাণু, মনের মানুষ ইত্যাদি। শিশুসাহিত্যে তিনি “কাকাবাবু-সন্তু” নামে এক জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজের রচয়িতা। মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত তিনি ভারতের জাতীয় সাহিত্য প্রতিষ্ঠান সাহিত্য আকাদেমি ও পশ্চিমবঙ্গ শিশুকিশোর আকাদেমির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।]

    0 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ , ৭:২৯ অপরাহ্ণ

    গ্যাদা এবং গণতন্ত্র

    আশির দশকে গোটা বিশ্বে বিশেষ করে বাংলাদেশের ন্যায় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনের জন্য উঠে পড়ে লাগলো৷ যেভাবেই হোক জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন করতে হবে৷ এ জন্য বড় বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হলো৷ সকল মিডিয়ায় এমনকি সরকারী প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরির কাজ পুরোদমে চালু করা হলো৷ ফল পেতে খুব দেরী হলো না৷ জনগণ সাড়া দিতে থাকলো৷ মূলত দুই শ্রেণির লোকের একাত্বতা অভিভূত করবার মতো৷ একটি শ্রেণি হলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠী৷ যারা দুইয়ের অধিক সন্তান নেয়ার পর কিছু আর্থিক মুনাফার লোভে স্থায়ী বন্ধ্যাত্বকরণ কার্যক্রমে নিজের অন্তর্ভূক্ত করলো৷ আর অন্যটি হলো সমাজের শিক্ষিত, বিচক্ষণ ও নাগরিক সমাজ৷ যারা নিজেরাই স্বতস্ফুর্তভাবে নিজেদের নাগরিক দায়িত্ব পালন করতে থাকলো৷

    এদিকে আশির দশকে কৃষি ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা থেকে শিল্প নির্ভর সমাজে আমাদের যাত্রার ফলে ভৌত অবকাঠামো, নতুন নতুন পেশার সামাজিকিকরণ ও লাইফ স্টাইল পরিবর্তিত হতে থাকলো৷ পাশাপাশি আকাশ আগ্রাসন আর রাতারাতি ধনী হওয়ার নির্লজ্জ রেসের দৌড়৷ ফলে নাগরিক সমাজ তাদের সন্তানদের করে ফেললো “ব্রয়লার মুরগি”তে৷ যারা নিত্য বেড়ে উঠতে থাকলো ফ্ল্যাট নামক একটি আধুনিক কয়েদখানায়৷ বিজ্ঞানের জিনগত তথ্য অনুসারে নাগরিক সমাজের নিকট থেকে আরো মেধাবী প্রজন্ম পাওয়ার পথ হয়ে গেলো সংকুচিত৷ আবার তথাকথিত সীমাবদ্ধ গন্ডির ভেতর লালিত হতে থাকলো আগামীর ভবিষ্যৎ৷ পিতা-মাতার অধরা স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য এরা হয়ে গেল মানুষরুপী গিনিপিগ৷ নিজস্ব ইচ্ছে, স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবার সক্ষমতা আর শ্রেণি বিভাজনের শিক্ষায় এরা হয়ে উঠতে থাকলো এক পরনির্ভরশীল এক আজব প্রাণি৷ এরা এমন এক প্রজন্মে পরিণত হলো যে বাদল দিনের এক ফোঁটা বৃষ্টির পানি, গ্রীস্মের রৌদ্রাত্তাপ কিংবা শীতের হিমেল বাতাশ এদেরকে অসুস্থ্য করে ফেলে৷ এরা প্রতিবাদ নয় পলায়ন করতে শিখেছে৷

    অন্যদিকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তাদের বংশ বিস্তার রোধ না করে বরং বহু বিবাহ, বাল্য বিবাহ আর সন্তান জন্মদানের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে নির্বিকার৷ এদেরকে দোষারোপ করে লাভ নেই৷ কেননা এরা সমাজের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী৷ ব্যতিক্রম ছাড়া বলা যায় বিজ্ঞানের জিনগত তথ্য অনুসারে এ সমাজের নিকট থেকেও সে ধরণের প্রজন্ম পাওয়ার পথ হয়ে গেলো উম্মুক্ত৷ তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গ্যাদার সন্তানেরা আরো অসংখ্য গ্যাদা হয়ে ছড়িয়ে পড়লো সমাজে-দেশে৷ শ্রেণি বৈষম্য দৃশ্যমান হলো প্রকটভাবে৷ কিন্ত একটা জায়গায় তারা সুবিধাভোগী নাগরিক সমাজের সমতূল্য৷ সেটি হলো ভোট৷ নির্বাচন৷ সকলের ভোটের মূল্য সমান৷ যদিও ষোড়শ শতকে জে.এস মিল একটা থিউরি দিয়েছিলেন যে, “নাগরিকদের একাধিক ভোট দেয়ার ক্ষমতার কথা৷” কিন্ত তা ধোপে টেকেনি৷ ফলশ্রুতিতে নাগরিক সমাজ আর গ্যাদা একই ক্ষমতার অধিকারী রয়ে গেল৷ করবার কিছু না থাকলেও সমাজ বুঝতে পারলো জন্ম নিয়ন্ত্রনের কূফল৷ এদিকে দেশের সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা ও রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য নির্বাচনের বিকল্প নেই৷ তাই নির্বাচন এলে সবচেয়ে বেশি আন্দোলিত করে এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে৷ পচে যাওয়া, দলছুট নেতৃত্বের ছদ্মবেশি, সাম্প্রদায়িক চেতনাবোধ আর মুখরোচক গল্পে এরা আকৃষ্ট হয় সহজেই৷ নতুবা কিছুটা নতুন স্বপ্নের মোহে ও তাৎক্ষণিক আর্থিক মুনাফায় নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে ফেলে সহজেই৷ চাই সেটা প্রাচ্যে কিংবা পাশ্চাত্যে৷ দৃশ্যপট প্রায় একই৷ তবে দুঃখজনকভাবে “দক্ষিণ এশিয়ায়” এর প্রভাব সবচেয়ে মারাত্মক৷ আর এজন্য এসব দেশে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা প্রকট৷ এবং এই বিভাজনকে খুব সহজেই কাজে লাগায় মিষ্টভাষী পচে যাওয়া নেতৃত্ব৷ ফলশ্রুতিতে দেখা যায় গ্যাদাদের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে কিছু গ্যাদা৷ নির্বাচিত গ্যাদারাই ক্ষমতায় আরোহণ করে মনে করেন তিনি ব্যতিত সমাজের সকলেই গ্যাদা৷ তখন আর বিভাজিত হয় না কে নাগরিক সমাজ আর কেইবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী৷ সকলে মিলে মিশে একাকার৷ যেন সাম্যবাদী গ্যাদা সমাজ! তখন সম্মিলিতভাবে একটি গান প্যারোডি হিসেবে মনে করে৷ “আমরা সবাই গ্যাদা৷ আমাদেরই গ্যাদার রাজত্বে৷” এটাই বোধ হয় Beautiness of democracy.

    0 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ , ৭:২৬ অপরাহ্ণ

    স্পেসশিপ

    ডায়ালাইসিস চলছে! পাশাপাশি দুটো বেড, এক বেডে বিহান অন্য বেডে হাজি সাহেবের স্ত্রী শরীফা খাতুন। খুব কষ্ট হচ্ছে টাকা সংগ্রহ করতে। হাসপাতালে পৌঁছাতে দেরি হলো, বিহানের চোখে অভিমান। মাথায় হাতটা রাখতেই, চোখের দিকে তাকাল। অদ্ভুত!! ছোট্ট শরীরটা এখন দৃষ্টির ভাষা বোঝে। দু’ চোখে প্রশ্ন দেখেই সে বলল, ” তুমি দেরি করেছো বলেই মন খারাপ “। আচমকাই ধাক্কা খেলাম দু জন! শরীফা খাতুনের ছেলেমেয়েরা কাঁদছে! ডাক্তার দৌড়ে এলেন। স্যালাইনের সিরিঞ্জ খুলে ফেলা হলো। আত্মীয় -স্বজনরা দৌড়াদৌড়ি করছেন, মৃতদেহ নিয়ে যেতে হবে। বিহানের চোখে একদিকে প্রশ্ন আর একদিকে বিভ্রান্তি কাজ করছে। ছোট্ট মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরলাম। ছটফট করতে লাগলো ভীতু কবুতরি বুকটা! মাথাটা তুলে প্রশ্ন করলো ” দিদা কি এখন অন্যগ্রহে চলে যাবে? ” অবাক হলেও মাথা নাড়তে হলো। কণ্ঠে দুঃশ্চিন্তা ঝরে পড়ছে, প্রশ্ন করল, “বাইরে অনেক বৃষ্টি! এর মাঝে এলিয়েনরা কী করে স্পেসশিপ নিয়ে আসবে? ” আচমকাই আনন্দিত কণ্ঠে প্রশ্ন করলো ” বলোতো মা আমার জন্য কবে স্পেসশিপ আসবে? “

    0 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ , ৭:১২ অপরাহ্ণ

    ধরাবাঁধা গোলক ধাঁধায়

    কে আছে এমন, কারে শুধাবো,
    নির্বিকার চিত্তে কোন তালে চলবো
    আশার প্রদিপ জ্বালাবার সুযোগ নাই
    মুহুর মুহুর স্বাধের মরণ খবর পাই।

    আনন্দে কষ্টভারে আকাশসম হয়েছে মন।
    জানি না কতদূর! হবে কিনা নিবিড় আয়োজন।
    মহাজনি সেজে নাটকিতে, বধির সুখের আভায়।
    আশায় চিন্তায় চেতনায় পড়েছি গোলকধাঁধায়।

    সময় আছে কার! শক্তি প্রয়োগ মেলা ভার।
    সঞ্চারিত শক্তি কেবল দয়াময়ের করুণা।
    তিলে-তিলে টিকে রাখা নিয়ম নীতির বাঁধ।
    সে বাঁধ ভাঙ্গার চেষ্টায় মত্ত ঠেকে যাওয়া সময়।

    করুণা কামীর পানে চাও হে করুণাময়।
    শক্তি দাও, বিশ্বাস বাড়াও, ভরিয়ে দাও হাত,
    সচল করিও প্রাণ, সর্ব শক্তিমত্তার গুণে।
    হারিতে নয়, পারিতেই হবে শ্রেষ্ঠ সৃষ্ট গুণে।

    0 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ , ৯:৪১ অপরাহ্ণ

    অতঃপর ষোল বৎসর

    অতঃপর ষোল বৎসর কাটিয়া গিয়াছে।

    কালপুরুষের পলকপাতে শতাব্দী অতীত হয়; কিন্তু ক্ষুদ্রায়ু মানুষের জীবনে ষোল বৎসর অকিঞ্চিৎকর নয়।

    মগধে এই সময়ের মধ্যে বহু পরিবর্তন ঘটিয়া গিয়াছে। পূবাধ্যায়বর্ণিত ঘটনার পর পাটলিপুত্রের নাগরিকবৃন্দ ত্ৰয়োদশ বর্ষ মহারাজ চণ্ডের দোর্দণ্ড শাসন সহা করিয়াছিল; তাহার পর একদিন তাহারা সদলবলে ক্ষিপ্ত হইয়া উঠিল। জনগণ যখন ক্ষিপ্ত হইয়া উঠে, তখন তাহারা বিবেচনা করিয়া কাজ করে না—এ ক্ষেত্রেও তাহারা বিবেচনা করিল না। ক্রোধান্ধ মৌমাছির পাল যদি একটা মহিষকে আক্রমণ করে, তাহা হইলে দৃশ্যটা যেরূপ হয়, এই মৎস্যন্যায়ের ব্যাপারটাও প্রায় তদ্রুপ হইল।

    গর্জমান চণ্ডকে সিংহাসন হইতে টানিয়া নামাইয়া বিদ্ৰোহ-নায়কেরা প্ৰথমে তাহার। মণিবন্ধ পর্যন্ত হস্ত কাটিয়া ফেলিল। মহারাজ চণ্ডকে এক কোপে শেষ করিয়া ফেলিলে চলিবে না, অন্য বিবেচনা না থাকিলেও এ বিবেচনা বিদ্রোহীদের ছিল। মহারাজ এত দিন ধরিয়া যাহা অগণিত প্রজাপুঞ্জকে দুই হস্তে বিতরণ করিয়াছেন, তাহাই তাহারা প্রত্যাৰ্পণ করিতে আসিয়াছে। এই প্রতাপািণক্রিয়া এক মুহূর্তে হয় না।

    অতঃপর চিণ্ডের পদদ্বয় জঙ্ঘাগ্ৰন্থি হইতে কাটিয়া লওয়া হইল। কিন্তু তাহাতেও প্রতিহিংসাপিপাসু জনতার তৃপ্তি হইল না। এভাবে চলিলে বড় শীঘ্ৰ মৃত্যু উপস্থিত হইবে—তাহা বাঞ্ছনীয় নয়। মৃত্যু তো নিস্কৃতি। সুতরাং জননায়করা মহারাজের বিখণ্ডিত রক্তাঞ্ছত দেহ ঘিরিয়া মন্ত্রণা করিতে বসিল। হিংসা-পরিচালিত জনতা চিরদিনই নিষ্ঠুর, সেকালে বুঝি তাহাদের নিষ্ঠুরতার অন্ত ছিল না।

    একজন নাসিকাহীন শৌণ্ডিক উত্তম পরামর্শ দিল। চণ্ডকে হত্যা করিয়া কাজ নাই, বরঞ্চ তাহাকে জীবিত রাখিবার চেষ্টাই করা হউক। তারপর এই অবস্থায় তাহাকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করিয়া প্রকাশ্য সর্বজনগম্য স্থানে বধিয়া রাখা হউক। নাগরিকরা প্রত্যহ ইহাকে দেখিবে, ইহার গাত্রে নিষ্ঠীবন ত্যাগ করিবে! চণ্ডের এই জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত দেখিয়া ভবিষ্যৎ রাজারাও যথেষ্ট শিক্ষালাভ করিতে পরিবে।

    সকলে মহোল্লাসে এই প্ৰস্তাব সমর্থনা করিল। প্ৰস্তাব কার্যে পরিণত হইতেও বিলম্ব হইল না।

    তারপর মগধবাসীর রক্ত কথঞ্চিৎ কবোষ্ণ হইলে তাহারা নূতন রাজা নিবাচন করিতে বসিল। শিশুনাগবংশেরই দূর-সম্পর্কিত সৌম্যাকান্তি এক যুবা—নাম সেনজিৎ—মৃগয়া পক্ষিপালন ও সূরা আস্বাদন করিয়া সুখে ও তৃপ্তিতে কালযাপন করিতেছিল, রাজা হইবার দুরাকাঙক্ষা তাহার ছিল না—সকলে তাহাকে ধরিয়া সিংহাসনে বসাইয়া দিল। সেনজিৎ অতিশয় নিরহঙ্কার সরলচিত্ত ও ক্রীড়াকৌতুকপ্রিয় যুবা; নারীজাতি ভিন্ন জগতে তাহার শত্রু ছিল না; তাই নাগরিকগণ সকলেই তাহাকে ভালবাসিত। সেনজিৎ প্রথমটা রাজা হইতে আপত্তি করিল; কিন্তু তাহার বন্ধুমণ্ডলীকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ দেখিয়া সে দীর্ঘশ্বাস মোচনপূর্বক সিংহাসনে গিয়া বসিল। একজন ভীমকান্তি কৃষ্ণকায় নাগরিক স্বহস্তে নিজ অঙ্গুলি কাটিয়া তাহার ললাটে রক্ত-তিলক পরাইয়া দিল।

    সেনজিৎ করুণবচনে বলিল—যুদ্ধ করিবার প্রয়োজন হইলে যুদ্ধ করিব, কিন্তু আমাকে রাজ্য শাসন বা বংশরক্ষা করিতে বলিও না।

    তাহাই হইল। কয়েকজন বিচক্ষণ মন্ত্রী রাজ্যভার গ্রহণ করিলেন; মহারাজ সেনজিৎ পূর্ববৎ মৃগয়াদির চাচা করিয়া ও বটুকভট্টের সহিত রসালাপ করিয়া দিন কটাইতে লাগিল। নানা কারণে কাশী কৌশল লিচ্ছবি তখন যুদ্ধ করিতে উৎসুক ছিল না; ভিতরে যাহাই থাকুক, বাহিরে একটা মৌখিক মৈত্রী দেখা যাইতেছিল,—তাই মহারাজকে বর্ম-চৰ্ম পরিধান করিয়া শৌর্য প্রদর্শন করিতে হইল না। ওদিকে রাজ-অবরোধও শূন্য পড়িয়া রহিল। কাঞ্চুকী মহাশয় ছাড়া রাজ্যে আর কাহারও মনে খেদ রহিল না।

    মগধের অবস্থা যখন এইরূপ, তখন লিচ্ছবি রাজ্যের রাজধানী বৈশালীতেও ভিতরে ভিতরে অনেক কিছু ঘটিতেছিল। মহামনীষী কৌটিল্য তখনও জন্মগ্রহণ করেন নাই, কিন্তু তাই বলিয়া রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কূটনীতির অভাব ছিল না। বৈশালীতে বাহ্য মিত্রতার অন্তরালে গোপনে গোপনে মগধের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলিতেছিল।

    শিবমিশ্র বৈশালীতে সাদরে গৃহীত হইয়াছিলেন। লিচ্ছবিদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত—রাজা নাই। রাজার পরিবর্তে নিবাচিত নায়কগণ রাজ্য শাসন করেন। শিবমিশ্রেীর কাহিনী শুনিয়া তাহারা তাঁহাকে সসম্মানে মন্ত্রণাদাতা সচিবের পদ প্ৰদান করিলেন।

    কেবল শিবমিশ্রের নামটি ঈষৎ পরিবর্তিত হইয়া গেল। তাঁহার গণ্ডের শৃগালদংশনক্ষত শুকাইয়াছিল বটে, কিন্তু ক্ষত শুকাইলেও দাগ থাকিয়া যায়। তাঁহার মুখখানা শৃগালের মতো হইয়া গিয়াছিল। জনসাধারণ তাঁহাকে শিবমিশ্র বলিয়া ডাকিতে লাগিল। শিবমিশ্র তিক্ত হাসিলেন, কিন্তু আপত্তি করিলেন না। শৃগালের সহিত তুলনায় যে ধূর্ততার ইঙ্গিত আছে, তাহা তাঁহার অরুচিকর হইল না; ঐ নামই প্ৰতিষ্ঠা লাভ করিল।

    দিনে দিনে বৈশালীতে শিবামিশ্রের প্রতিপত্তি বাড়িতে লাগিল। ওদিকে তাঁহার গৃহে সেই শ্মশানলব্ধ অগ্নিকণা সাগিকের যত্নে বধিত হইয়া উঠিতে লাগিল।

    চণ্ড ও মোরিকার কন্যা উস্কাকে একমাত্র অগ্নির সহিত তুলনা করা যাইতে পারে। যতই তাহার বয়স বাড়িতে লাগিল, জ্বলন্ত বহ্নির মতো রূপের সঙ্গে সঙ্গে ততই তাহার দুর্জয় দুর্বশ প্রকৃতি পরিস্ফুট হইতে আরম্ভ করিল। শিবমিশ্র তাহাকে নানা বিদ্যা শিক্ষা দিলেন, কিন্তু তাহার প্রকৃতির উগ্রতা প্রশমিত করিবার চেষ্টা করিলেন না। মনে মনে বলিলেন—শিশুনাগবংশের এই বিষযাকণ্টক দিয়াই শিশুনাগ্যবংশের উচ্ছেদ করিব।

    তীক্ষ্ণ-মেধাবিনী উল্কা চতুঃষষ্টি কলা হইতে আরম্ভ করিয়া ধনুর্বিদ্যা, অসিবিদ্যা পর্যন্ত সমস্ত অবলীলাক্রমে শিখিয়া ফেলিল। কেবল নিজ উদ্দাম প্রকৃতি সংযত করিতে শিখিল না।

    মগধের প্রজাবিদ্রোহের সংবাদ যেদিন বৈশালীতে পৌঁছিল, সেদিন শিবমিশ্র গূঢ় হাস্য করিলেন। এই বিদ্রোহে তাঁহার কতখানি হাত ছিল, কেহ জানিত না। কিন্তু কিছু দিন পরে যখন আবার সংবাদ আসিল যে, শিশুনাগবংশেরই আর একজন যুবা রাজ্যাভিষিক্ত হইয়াছে, তখন তাঁহার মুখ অন্ধকার হইল। এই শিশুনাগবিংশ যেন সৰ্পবংশেরই মতো-কিছুতেই নিঃশেষ হইতে চায় না।

    তারপর আরও কয়েক বৎসর কাটিল; শিবমিশ্র উল্কার দিকে চাহিয়া প্ৰতীক্ষা করিতে লাগিলেন।

    যেদিন উল্কার বয়স ষোড়শ বৎসর পূর্ণ হইল, সেই দিন শিবমিশ্র তাহাকে কাছে ডাকিয়া বলিলেন—বৎসে, তুমি আমার কন্যা নহ। তোমার জীবন-বৃত্তান্ত বলিতে চাহি, উপবেশন করব।

    ভাবলেশহীন কণ্ঠে শিবামিশ্র বলিতে লাগিলেন, উল্কা করলগ্নকপোলে বসিয়া সম্পূর্ণ কাহিনী শুনিল; তাহার স্থির চক্ষু নিমেষের জন্য শিবামিশ্রের মুখ হইতে নড়িল না। কাহিনী সমাপ্ত করিয়া শিবমিশ্র বলিলেন—প্ৰতিহিংসা-সাধনের জন্য তোমায় ষোড়শ বর্ষ পালন করিয়াছি। চণ্ড নাই, কিন্তু শিশুনাগবিংশ অদ্যাপি সন্দপেৰ্শ বিরাজ করিতেছে। সময় উপস্থিত—তোমার মাতা মোরিকা ও পালক পিতা শিবামিশ্রেীর প্রতি অত্যাচারের প্রতিশোধ গ্রহণ কর।

    কি করিতে হইবে।

    শিশুনাগবিংশকে উচ্ছেদ করিতে হইবে।

    পন্থা নির্দেশ করিয়া দিন।

    শুন, পূর্বেই বলিয়াছি, তুমি বিষকন্যা; তোমার উগ্র অলোকসামান্য রূপ তাহার নিদর্শন। পুরুষ তোমার প্রতি আকৃষ্ট হইবে, পতঙ্গ যেমন অগ্নিশিখার দিকে আকৃষ্ট হয়। তুমি যে পুরুষের কণ্ঠালগ্ন হইবে তাহাকেই মরিতে হইবে। এখন তোমার কর্তব্য বুঝিয়াছ? মগধের সহিত বর্তমানে লিচ্ছবিদেশের মিত্রভাব চলিতেছে, এ সময়ে অকারণে যুদ্ধঘোষণা করিলে রাষ্ট্রীয় ধনক্ষয় জনক্ষয় হইবে, বিশেষত যুদ্ধের ফলাফল অনিশ্চিত। মগধবাসীরা নূতন রাজার শাসনে সুখে সঙ্ঘবদ্ধভাবে আছে—ব্রাজ্যে অসন্তোষ নাই। এরূপ সময় রাজ্যে রাজ্যে যুদ্ধ বাধানো সমীচীন নয়। কিন্তু শিশুনাগবংশকে মগধ হইতে মুছিয়া ফেলিতে হইবে, তাই এই পন্থা অবলম্বন করিয়াছি। বর্তমান রাজা সেনজিৎ ব্যাসনপ্রিয় যুবা, শুনিয়াছি রাজকার্যে তাহার মতি নাই—সৰ্ব্বপ্রথম তাহাকে অপসারিত করিতে হইবে। —পরিবে?

    উল্কা হাসিল। যাবক-রক্ত অধরে দশনদুতি সৌদামিনীর মতো ঝলসিয়া উঠিল। তাহার সেই হাসি দেখিয়া শিবামিশ্রেীর মনে আর কোনও সংশয় রহিল না।

    তিনি বলিলেন—এখন সভায় কি স্থির হইয়াছে, বলিতেছি। মগধে কিছু দিন যাবৎ বৈশালীর প্রতিভা কেহ নাই, কিন্তু মিত্ররাজ্যে প্রতিনিধি থাকাই বিধি, না থাকিলে সৌহার্দোর অভাব সূচনা করে। এজন্য সঙ্কল্প হইয়াছে, তুমি লিচ্ছবি-রাষ্ট্রের প্রতিভূস্বরূপ পাটলিপুত্রে গিয়া বাস করিবে। প্রতিভাকে সর্বদা রাজ-সন্নিধানে যাইতে হয়, সুতরাং রাজার সহিত দেখা-সাক্ষাতে কোনও বাধা থাকিবে না। অতঃপর তোমার সুযোগ।

    উল্কা উঠিয়া দাঁড়াইল, বলিল—ভাল। কিন্তু আমি নারী, এজন্য কোনও বাধা হইবে না?

    শিবমিশ্র বলিলেন—বৃজির গণরাজ্যে নারী-পুরুষে প্ৰভেদ নাই, সকলের কক্ষা সমান।

    কবে যাইতে হইবে?

    আগামী কল্য তোমার যাত্রার ব্যবস্থা হইয়াছে। তোমার সঙ্গে দশ জন পুরুষ পার্শ্বচর থাকিবে, এতদ্ব্যতীত সখী পরিচারিকা তোমার অভিরুচিমত লাইতে পার।

    উল্কা শিবামিশ্রের সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইল, অকম্পিত স্বরে বলিল—পিতা, আপনার ইচ্ছা পূর্ণ করিব। যে দুগ্রহের অভিসম্পাত লইয়া আমি জন্মিয়াছি, তাহা আমার জননীর নিষ্ঠুর হত্যার প্ৰতিশোধ লইয়া সার্থক হইবে। আপনি যে আমাকে কন্যার ন্যায় পালন করিয়াছেন, সে ঋণও এই অভিশপ্ত দেহ দিয়া প্ৰতিশোধ করিব।

    শিবামিশ্রেীর কণ্ঠ ঈষৎ কম্পিত হইল, তিনি গম্ভীর স্বরে বলিলেন—কন্যা, আশীর্বাদ করিতেছি, লব্ধকমা হইয়া আমার ক্ৰোড়ে প্রত্যাগমন কর। দধীচির মতো তোমার কীর্তি পুরাণে অবিনশ্বর হইয়া থাকিবে।

    পাটলিপুত্রের উপকণ্ঠে রাজার মৃগয়া-কানন। উল্কা ভাগীরথী উত্তীর্ণ হইয়া, এই বহু যোজন ব্যাপী অটবীর ভিতর দিয়া অশ্বারোহণে চলিয়াছিল। তাহার সঙ্গী কেহ ছিল না, সঙ্গী সহচরদিগকে সে রাজপথ দিয়া প্রেরণ করিয়া দিয়া একাকী বনপথ অবলম্বন করিয়াছিল, পুরুষ রক্ষীরা ইহাতে সসম্রমে ঈষৎ আপত্তি করিয়াছিল। কিন্তু উল্কা তীব্ৰ অধীর স্বরে নিজ আদেশ জ্ঞাপন করিয়া বলিয়াছিল—আমি আত্মরক্ষা করিতে সমর্থ। তোমরা নগরতোরণে পৌঁছিয়া আমার জন্য প্ৰতীক্ষা করিবে। আমি একাকী চিন্তা করিতে চাই।

    স্থির আচপল দৃষ্টি সম্মুখে রাখিয়া উল্কা অশ্বপৃষ্ঠে বসিয়া ছিল, অশ্বও তাড়নার অভাবে ময়ুরসঞ্চারী গতিতে চলিয়াছিল; পাছে আরোহিণীর চিন্তাজাল ছিন্ন হইয়া যায় এই ভয়ে যেন গতিছন্দ অটুট রাখিয়া চলিতেছিল! শস্পের উপর অশ্বের খুরধ্বনিও অস্পষ্ট হইয়া গিয়াছিল।

    ছায়া-চিত্রিত বনের ভিতর দিয়া কৃষ্ণ বাহনের পৃষ্ঠে যেন সঞ্চারিণী আলোকলতা চলিয়াছে—বনের ছায়ান্ধকার ক্ষণে ক্ষণে উদ্ভাসিত হইয়া উঠিতেছে। উল্কার বক্ষে লৌহজালিক, পার্শ্বে তরবারি, কটিতে ছুরিকা, পৃষ্ঠে সংসপিত কৃষ্ণ বেণী; কৰ্ণে মাণিক্যের অবতংস অঙ্গারবৎ জ্বলিতেছে। এই অপূর্ব বেশে উল্কার রূপ যেন আরও উন্মাদকর হইয়া উঠিয়াছে।

    কাননপথ অর্ধেক অতিক্রান্ত হইবার পর সহসা পশ্চাতে দ্রুত-অস্পষ্ট অশ্বখুরধ্বনি শুনিয়া উল্কার চমক ভাঙ্গিল। সে পিছু ফিরিয়া দেখিল, একজন শূলধারী অশ্বারোহী সবেগে অশ্ব চালাইয়া ছুটিয়া আসিতেছে; তাহার কেশের মধ্যে কঙ্কপত্র, পরিধানে শবরের বেশ। উস্কাকে ফিরিতে দেখিয়া সে ভল্ল উত্তোলন করিয়া সগর্জনে হাঁকিল—দাঁড়াও।

    উল্কা দাঁড়াইল। ক্ষণেক পরে অশ্বারোহী তাহার পার্শ্বে আসিয়া কৰ্কশ স্বরে বলিল—কে তুই?—রাজার মৃগয়া-কাননের ভিতর দিয়া বিনা অনুমতিতে চলিয়াছিস? তোর কি প্রাণের ভয় নাই? এই পর্যন্ত বলিয়া পুরুষ সবিস্ময়ে থামিয়া গিয়া বলিল—এ কী! এ যে নারী!

    উল্কা অধরোষ্ঠ ঈষৎ সঙ্কুচিত করিয়া বলিল—নারীই বটে! তুমি কে?

    পুরুষ ভল্ল নামাইল। তাহার কৃষ্ণবর্ণ মুখে ধীরে ধীরে হাসি ফুটিয়া উঠিল, চোখে লালসার তীক্ষ্ণ আলোক দেখা দিল। সে কণ্ঠস্বর মধুর করিয়া বলিল—আমি এই বনের রক্ষী। সুন্দরি, এই পথহীন বনে একাকিনী চলিয়াছ, তোমার কি দিগভ্ৰান্ত হইবার ভয় নাই?

    উল্কা উত্তর দিল না; বল্গার ইঙ্গিতে অশ্বকে পুনর্বার সম্মুখদিকে চালিত করিল।

    রক্ষী সনির্বন্ধ স্বরে বলিল—তুমি কি পাটলিপুত্ৰ যাইবে? চল, আমি তোমাকে কানন পার করিয়া দিয়া আসি! বলিয়া সে নিজ অশ্ব চালিত করিল।

    উল্কা এবারও উত্তর দিল না, অবজ্ঞাস্ফুরিত-নেত্রে একবার তাহার দিকে চাহিল মাত্র। কিন্তু রক্ষী কেবল নেত্ৰাঘাতে প্ৰতিহত হইবার পাত্র নয়, সে লুব্ধ নয়নে উল্কার সর্বাঙ্গ দেখিতে দেখিতে তাহার পাশে পাশে চলিল।

    ক্ৰমে দুই অশ্বের ব্যবধান কমিয়া আসিতে লাগিল। উল্কা অপাঙ্গ-দৃষ্টিতে দেখিল, কিন্তু কিছু বলিল না।

    রক্ষী আবার মধু-ঢালা সুরে বলিল—সুন্দরি, তুমি কোথা হইতে আসিতেছ? তোমার এরূপ কন্দৰ্প-বিজয়ী বেশ কেন?

    উল্কা বিরস-স্বরে বলিল—সে সংবাদে তোমার প্রয়োজন নাই।

    রক্ষী অধর দংশন করিল; এ নারী যেমন রূপসী, তেমনই মদগর্বিতা! ভাল, তাহার মদগৰ্ব্ব লাঘব করিতে হইবে; এ বনের অধীশ্বর কে তাহা জানাইয়া দিতে হইবে।

    রক্ষী আরও নিকটে সরিয়া আসিয়া হস্তপ্রসারণপূর্বক উষ্কার হাত ধরিল। উল্কার দুই চক্ষু জ্বলিয়া উঠিল, সে হাত ছাড়াইয়া লইয়া সৰ্প-তর্জনের মতো শীৎকার করিয়া বলিল—আমাকে স্পর্শ করিও না—অনাৰ্য।

    রক্ষীর মুখ আরও কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করিল। সম্পূর্ণ অনার্য না হইলেও সে আর্য-অনার্যের মিশ্রণজাত অম্বষ্ঠ বটে, তাই এই হীনতা-জ্ঞাপক সম্বোধন তাহাকে অঙ্কুশের মতো বিদ্ধ করিল। দন্তে দন্ত ঘর্ষণ করিয়া সে বলিল—অনাৰ্য্য! ভাল, আজ এই অনার্যের হাত হইতে তোমাকে কে রক্ষা করে দেখি—বলিয়া বাহু দ্বারা কটি বেষ্টন করিয়া উল্কাকে আকর্ষণ করিল।

    উল্কার মুখে বিষ-তীক্ষ্ণ হাসি ক্ষণেকের জন্য দেখা দিল।

    আমি বিষকন্যা—আমাকে স্পর্শ করিলে মরিতে হয়। বলিয়া সে রক্ষীর পঞ্জরে ছুরিকা বিদ্ধ করিয়া দিল, তারপর উচ্চৈঃস্বরে হাসিতে হাসিতে বায়ুবেগে অশ্ব ছুটাইয়া দিল।

    পাটলিপুত্রের দুৰ্গতোরণে যখন উল্কা পৌঁছিল, তখন বেলা দ্বিপ্রহর। শান্তির সময় দিবাভাগে তোরণে প্রহরী থাকে না, নাগরিকগণও মধ্যাহ্নের খর রৌদ্রতাপে স্ব স্ব গৃহচ্ছায়া আশ্রয় করিয়াছে; তাই তোরণ জনশূন্য। কেবল উষ্কার পথশ্ৰান্ত সহচরীগণ উৎকণ্ঠিতভাবে অপেক্ষা করিতেছে।

    উল্কা উন্নত তোরণ-সম্মুখে ক্ষণেক দাঁড়াইল। একবার উত্তরে দূর-প্রসারিত শূল-কণ্টকিত শ্মশানভূমির দিকে দৃষ্টি ফিরাইল, তারপর নিবদ্ধ ওষ্ঠাধরে তোরণ-প্রবেশ করিল।

    কিন্তু তোরণ উত্তীর্ণ হইয়া কয়েক পদ যাইতে না যাইতে আবার তাহার গতি রুদ্ধ হইল। সহসা পার্শ্ব হইতে বিকৃতকণ্ঠে কে চিৎকার করিয়া উঠিল—জল! জল! জল দাও!

    রুক্ষ উগ্ৰকণ্ঠের এই প্রার্থনা কানে যাইতেই উল্কা অশ্বের মুখ ফিরাইল। দেখিল, তোরণপার্শ্বস্থ প্রাচীরগাত্র হইতে লৌহবলয়-সংলগ্ন স্কুল শৃঙ্খল বুলিতেছে, শৃঙ্খলের প্রান্ত এক নিরাকার বীভৎস মূর্তির কটিতে আবদ্ধ। মূর্তির করপত্র নাই, পদদ্বয়ও জঙ্ঘা সন্ধি হইতে বিচ্ছিন্ন—জটাবদ্ধ দীর্ঘ কেশে মুখ প্রায় আবৃত। সে তপ্ত পাষাণ-চত্বরের উপর কৃষ্ণকায় কুম্ভীরের মতো পড়িয়া আছে এবং লেলিহা রসনায় অদূরস্থ জলকুণ্ডের দিকে তাকাইয়া মাঝে মাঝে চিৎকার করিয়া উঠিতেছে—জল! জল। মাধ্যন্দিন সূৰ্যতাপে তাহার রোমশ দেহ হইতে স্বেদ নির্গত হইয়া চত্বর সিক্ত করিয়া দিতেছে।

    উল্কা উদাসীনভাবে সেই দিকে চাহিয়া রহিল, তাহার মনে করুণার উদ্রেক হইল না। শুধু সে মনে মনে ভাবিল—এই মগধবাসীরা দেখিতেছি নিষ্ঠুরতায় অতিশয় নিপুণ।

    শৃঙ্খলিত ব্যক্তি জন-সমাগম দেখিয়া জানুতে ভর দিয়া উঠিল, রক্তিম চক্ষে চাহিয়া বন্য জন্তুর মতো গর্জন করিল—জলি! জল দাও!

    উল্কা একজন সহচরকে ইঙ্গিত করিল; সে জলকুণ্ড হইতে জল আনিয়া তাহাকে পান করাইল। শৃঙ্খলিত ব্যক্তি উত্তপ্ত মরুভূমির মতো জল শুষিয়া লইল। তারপর তৃষ্ণা নিবারিত হইলে অবশিষ্ট জল সর্বাঙ্গ মাখিয়া লইল।

    উল্কা জিজ্ঞাসা করিল—কোন অপরাধে তোমার এরূপ দণ্ড হইয়াছে?

    গত তিন বৎসর ধরিয়া বন্দী প্রতিনিয়ত বিদ্যুপকারী নাগরিকদের নিকট এই একই প্রশ্ন শুনিয়া আসিতেছে। সে উত্তর দিল না—হিংস্ৰদূষ্টিতে উল্কার দিকে তাকাইয়া পিছু ফিরিয়া বসিল।

    উল্কা পুনরায় জিজ্ঞাসা করিল—কে তোমার এরূপ অবস্থা করিয়াছে? শিশুনাগবংশের রাজা?

    শ্বাপদের মতো তীক্ষ্ণ দন্ত বাহির করিয়া বন্দী ফিরিয়া চাহিল। তাহার ভঙ্গি দেখিয়া মনে হইল, একবার মুক্তি পাইলে সে উল্কাকে দুই বাহুতে পিষিয়া মারিয়া ফেলিবে। উল্কা যে তাঁহাকে এইমাত্র পিপাসার পানীয় দিয়াছে, সে জন্য তাহার কিছুমাত্র কৃতজ্ঞতা নাই।

    সে বিকৃত মুখে দন্ত ঘর্ষণ করিয়া বলিল—পথের কুকুর সব, দূর হইয়া যা। লজ্জা নাই? একদিন আমি তোদের পদতলে পিষ্ট করিয়াছি, আবার যেদিন এই শৃঙ্খল ছিড়িব, সেদিন আবার পদদলিত করিব। এখন পলায়ন কর-আমার সম্মুখ হইতে দূর হ।

    উল্কার চোখের দৃষ্টি সহসা তীব্ৰ হইয়া উঠিল; সে অশ্বাপূষ্ঠে ঝুঁকিয়া জিজ্ঞাসা করিল—কে তুমি? তোমার নাম কি?

    ক্ষিপ্তপ্রায় বন্দী দুই বাহু দ্বারা নিজ বক্ষে আঘাত করিতে করিতে বলিল—কে আমি? কে আমি? তুই জানিস না? মিথ্যাবাদিনি, আমাকে কে না জানে? আমি চণ্ড—আমি মহারাজ চণ্ড! তোর প্রভু। তোর দণ্ডমুণ্ডের অধীশ্বর! বুঝিলি? আমি মগধের নায্য অধিপতি মহারাজ চণ্ড।

    উল্কা ক্ষণকালের জন্য যেন পাষাণে পরিণত হইয়া গেল। তারপর তাহার সমস্ত দেহ কম্পিত হইতে লাগিল, ঘন ঘন নিশ্বাস বহিল, নাসা স্ফুরিত হইতে লাগিল। তাহার এই পরিবর্তন বন্দীরও লক্ষ্যগোচর হইল, উন্মত্ত প্ৰলাপ বকিতে বকিতে সে সহসা থামিয়া গিয়া নিষ্পলক নেত্ৰে চাহিয়া রহিল।

    উল্কা কথঞ্চিৎ আত্মসম্বরণ করিয়া সহচরদের দিকে ফিরিল, ধীরস্বরে কহিল—তোমরা ঐ পিপ্পলীবৃক্ষতলে গিয়া আমার প্রতীক্ষা কর, আমি এখনই যাইতেছি।

    সহচরীগণ প্ৰস্থান করিল।

    তখন উল্কা অশ্ব হইতে অবতরণ করিয়া বন্দীর সম্মুখীন হইল। চত্বরের উপর উঠিয়া একাগ্ৰদূষ্টিতে বন্দীর মুখ নিরীক্ষণ করিতে করিতে বলিল—তুমিই ভূতপূর্ব রাজা চণ্ড।

    চণ্ড সবেগে মাথা নাড়িয়া বলিল—ভূতপূর্ব নয়—আমিই রাজা। আমি যত দিন আছি, তত দিন মগধে অন্য রাজা নাই।

    তোমাকে তবে প্ৰজারা হত্যা করে নাই?

    আমাকে হত্যা করিতে পারে, এত শক্তি কাহার?

    রক্তহীন অধরে উল্কা জিজ্ঞাসা করিল—মহারাজ চণ্ড, মোরিকা নামী জনৈকা দাসীর কথা মনে পড়ে?

    চণ্ডের জীবনে বহুশত মোরিকা ক্রীড়াপুত্তলীর মতো যাতায়াত করিয়াছে, দাসী মোরিকার কথা তাহার মনে পড়িল না।

    উল্কা তখন জিজ্ঞাসা করিল—মোরিকার এক বিষকন্যা জন্মিয়াছিল, মনে পড়ে?

    এবার চণ্ডের চক্ষুতে স্মৃতির আলো ফুটিল, সে হিংস্ৰহাস্যে দন্ত নিষ্ক্রান্ত করিয়া বলিল—মনে পড়ে, সেই বিষকন্যাকে শ্মশানে প্রোথিত করাইয়াছিলাম। শিবমিশ্রকেও শ্মশানের শৃগালে ভক্ষণ করিয়াছিল। অতীত নৃশংসতার স্মৃতির মধ্যেই এখন চণ্ডের একমাত্র আনন্দ ছিল।

    উল্কা অনুচ্চ কণ্ঠে বলিল—সে বিষকন্যা মরে নাই, শিবমিশ্রকেও শৃগালে ভক্ষণ করে নাই। মহারাজ, নিজের কন্যাকে চিনিতে পারিতেছেন না?

    চণ্ড চমকিত হইয়া মুণ্ড ফিরাইল।।

    উল্কা তাহার কাছে গিয়া কৰ্ণকুহরে বলিল—আমিই সেই বিষকন্যা। মহারাজ, শিশুনাগবংশের চিরন্তন রীতি স্মরণ আছে কি? এ বংশের রক্ত যাহার দেহে আছে, সেই পিতৃহন্ত হইবে। —তাই বহুদূর হইতে বংশের প্রথা পালন করিতে আসিয়াছি।

    চণ্ড কথা কহিবার অবকাশ পাইল না। উদ্যতফণা সৰ্প যেমন বিদ্যুদ্বেগে দংশন করে, তেমনই উল্কার ছুরিকা চণ্ডের কণ্ঠে প্ৰবেশ করিল। সে উর্ধর্বমুখ হইয়া পড়িয়া গেল, তাহার প্রকাণ্ড দেহ মৃত্যু-যন্ত্রণায় ধড়ফড় করিতে লাগিল। দুইবার সে বাক্য-নিঃসরণের চেষ্টা করিল। কিন্তু বাক্যস্ফুর্তি হইল না—মুখ দিয়া গাঢ় রক্ত নিৰ্গলিত হইয়া পড়িল। শেষে কয়েকবার পদপ্রক্ষেপ করিয়া চণ্ডের দেহ স্থির হইল।

    উল্কা কটিলগ্ন হস্তে দাঁড়াইয়া দেখিল। তারপর ধীরপদে গিয়া নিজ অশ্বে আরোহণ করিল, আর পিছু ফিরিয়া তাকাইল না। তাহার ছুরিকা চণ্ডের কণ্ঠে আমূল বিদ্ধ হইয়া রহিল। নির্জন তোরণপার্শ্বে মধ্যাহ্ন-রৌদ্রে ষোল বৎসরের পুরাতন নাট্যের শেষ অঙ্কে যে দ্রুত অভিনয় হইয়া গেল, জনপূর্ণ পাটলিপুত্রের কেহ তাহা দেখিল না।

    এইরূপে শোণিতপঙ্কে দুই হস্ত রঞ্জিত করিয়া মগধের বিষকন্যা আবার মগধের মহাস্থানীয়ে পদাপণ করিল।

    0 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ , ৪:০১ অপরাহ্ণ

    সাহিত্য সংবাদ

    অভিযাত্রিকের ২৩০২ তম সাপ্তাহিক সাহিত্য আসর অনুষ্ঠিত-

    ১ সেপ্টেম্বর/২০২৩, শুক্রবার বিকেল ৪.০০ টায় অভিযাত্রিক সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংসদের ২৩০২ তম সাপ্তাহিক সাহিত্য আসর অভিযাত্রিক সভাপতি রানা মাসুদ – এর সভাপতিত্বে সংগঠন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। আজকের এ আসর জাতীয় কবি, সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিবেদন করা হয়।

    আসরে ছড়াকার সাঈদ সাহেদুল ইসলাম-এর প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় লেখা পাঠ করেন তৈয়বুর রহমান বাবু, মাহমুদ ইলাহী মন্ডল, বিমলেন্দু রায়, জাহিদ হোসেন, জাকির আহমেদ, ফারহান শাহীল লিয়ন, জোসেফ আখতার, রোমানুর রহমান রোমান, মৃনাল রায় প্রমুখ । আসরের লেখাগুলো নিয়ে আলোচনা করেন কবি তৈয়বুর রহমান বাবু।

    পরিশেষে সভাপতির সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আসর শেষ করা হয়।

    রংপুর সাহিত্য – সংস্কৃতি পরিষদের সাহিত্য বৈঠক অনুষ্ঠিত

    রংপুর সাহিত্য – সংস্কৃতি পরিষদের ১১১৮- তম সাহিত্য বৈঠক ১লা সেপ্টেম্বর ২০২৩ শুক্রবার সন্ধ্যায় পরিষদ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সাহিত্য বৈঠকটি প্রখ্যাত তবলা বাদক সদ্যপ্রয়াত সুবিরেশ দাশগুপ্ত বাঘা- কে নিবেদন করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পরিষদ সভাপতি হাসনা হেনা বেগম রোজী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ, লালন ও স্মৃতিচারণমূলক কাজ করবার উপর গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, কবি ও লেখক কালী রঞ্জন বর্মণ। তিনি রাজবংশী ভাষা নিয়ে কাজ করবারও তাগিদ দেন। আত্মস্মৃতিমূলক গ্রন্থ ” বলা না বলা কথা “র পান্ডুলিপি থেকে আলোচনা করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আব্দুস সোবহান। সাহিত্যালোচনায় আরো অংশ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, পরিষদ উপদেষ্টা সুশান্ত চন্দ্র খাঁ, এড. মাসুম হাসান। স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি খন্দকার মাহফুজার রহমান,এড.মাসুম হাসান, সুফি জাহিদ হোসেন, আফজাল হোসেন, মাহমুদ ইলাহী মন্ডল। কবিতা আবৃত্তিতে অংশ নেন,বাচিক শিল্পী আব্দুল কুদ্দুস,মামুন উর রশিদ, মেসবাউর রহমান, মুহিব্বুল ইসলাম মুন, আফরোজা বেগম, ডা. সমর্পিতা ঘোষ, রায়ান ওয়াসিক ঋদ্ধ। অণু গল্প পাঠ করেন নুর উন নবী। বিশিষ্ট তবলা বাদক সুবিরেশ দাশগুপ্ত বাঘাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন পুষ্পজিৎ রায়। পঠিত লেখাগুলো নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা করেন পরিষদের সাবেক সভাপতি, লেখক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ডা.মফিজুল ইসলাম মান্টুু। অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, নাট্যকর্মী সুধারঞ্জন বর্মণ, কবি মমতাজুর রহমান বাবু, বাচিক শিল্পী মেহেদী মাসুদ। সঞ্চালনায় ছিলেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মামুন উর রশিদ।

    0 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ , ৪:০১ অপরাহ্ণ

    আনন্দ

    আনন্দের জন্যই মানুষ সবকিছু করে ফ্রয়েড যেটাকে pleasure principle বলেন। এমনকি অন্যের জন্য ত্যাগ, ভালোবাসা, উৎসর্গ সবকিছুর পিছনে এই তাড়নাই কাজ করে। শুধু তাই নয়, মানুষ যে নিজেকে দুঃখী, বিষণ্ন দেখাতে পছন্দ করে তাতেও একধরণের আনন্দ পায়। দুঃখের গভীরে মানুষ লীন হয়ে এক অনুপম সৌন্দর্যের সন্ধান পায়। রবীন্দ্রনাথ জগতের অসুন্দর, সুন্দর, বিরহ, বিষাদকে আলাদাভাবে দেখেননি। সবকিছুকে সুন্দর ও আনন্দের দৃষ্টিতেই দেখেছেন। বিরহও একধরণের সুন্দর আনন্দ। এমনকি ভয় থেকেও আনন্দ পায় মানুষ। মূলতঃ ভয়, কান্না, হাসি–এই মৌলিক আবেগকে প্রশমিত করে মন তৃপ্তি পায়।

    কিন্তু reality principle কিংবা বিভিন্নরকম সামাজিক ট্যাবু মানুষকে একটা গন্ডির মধ্যে রাখতে চায়। এই অবদমনের ফলে ভেতরে ভেতরে মানুষ অন্তর্দ্বন্দে ভুগে।

    তবুও মনকে তো বন্দী রাখা যায় না। সে চরিতার্থ করেই চেতনে কিংবা অবচেতনে, বাস্তবে কিংবা শিল্পে।

    0 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ , ৩:৫৫ অপরাহ্ণ

    হাগ

    প্রতিদিন ছেলেকে স্কুলে দিয়ে অফিসে যাই। সে ক্লাস টু তে পড়ে। বোধহয় ইউরোপের প্রায় সবকটি স্কুলের নিয়ম এমন— ক্লাসের প্রবেশ মুখে সুন্দরী এক ম্যাডাম দাঁড়িয়ে থাকবেন। তার পাশে থাকবে একটা বোর্ড, যে বোর্ডে দেওয়া থাকবে বিভিন্ন সংকেতের ছবি। বেশিরভাগ সংকেত হলো— ড্যান্স, হ্যান্ডশেক, হাগ, কিস, স্যালুট, আরও কত কী। বাচ্চারা যার যার পছন্দমতো একটা সংকেতে থাপ্পড় মারে। সঙ্গে সঙ্গে ম্যাডামও সেই সংকেত অনুযায়ী সেটা কর‍তে উদ্বুদ্ধ হোন। বাচ্চারাও আনন্দের সহিত সেই কাজটা করে ক্লাস রুমে প্রবেশ করে। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখি। বেশ মজাই লাগে। ইশ, এমন যদি আমাদের দেশেও হতো, কত না ভালো হতো। বাচ্চারা হেসে খেলে শিক্ষা নিতো।

    আজ বউকে নিয়ে শপিংয়ে যাবার কথা। ভাবছি, বাচ্চাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে তারপর সোজা শপিংয়ে চলে যাবো। দেখতে পাচ্ছি সে রেডি হচ্ছে। তারপরও তাড়া দিচ্ছি। মেয়ে মানুষকে তাড়া দেয়া পুরুষের নৈতিক দায়িত্ব। নইলে কেয়ামত কাছাকাছি চলে আসবে, তাদের রেডি হওয়া আর হবে না।

    ছেলেকে স্কুলের গেইটে নামিয়ে দিলাম। বউ উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে ছেলে কী করে? সে হাগ সংকেতে থাপ্পড় মারলো। হাগ করার সুবিধার্থে ম্যাডাম একটু নিচু হলেন। বিষয়টা দেখে আমিও উঁকি দিলাম। আসলে উঁকি দিইনি, উঁকি দিতে বাধ্য হয়েছি। এভাবে নিচু হবার কী দরকার! দেখলাম, ছেলেটা ম্যাডামকে জড়িয়ে ধরছে। ছাড়তে চাচ্ছে না। ওমা, কিসও দিয়ে দিছে। কিস দিয়ে দিছে দৌড়। এটাতো নিয়ম বিরোধী। যেকোনো একটা করা উচিত। বউ দেখি অবাক দৃষ্টিতে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি তাকে বললাম, ‘দেখছো, তোমার পোলার কারবারটা?’
    সে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, ‘দেখলাম। এ-ও বুঝলাম, সবি রক্তের দোষ।’

    রক্তের দোষ বলে বউ আমাকে যত খোঁচা দিক, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি খোঁচাকে মধু দিয়ে হজম করা লোক। তার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় তুর্কিশ এয়ারলাইনসে। তার মতো আগুন সুন্দরী আমার পাশে দীর্ঘ দশ ঘণ্টা বসে থাকবে, বিষয়টা মেনে নিতে পারছি না। এমন অসহ্য আগুন সুন্দরীর সঙ্গে কথা বলতে যেয়েও থেমে যাচ্ছি। কীভাবে কথা বলা উচিত তা-ও বুঝতেছি না। পেঁচার মতো বাঁকা চোখে তাকে মিটমিট করে দেখতেছি। বিষয়টা সে লক্ষ্য করছে। তারে যত দেখছি তত সত্তরটা হুরের আশা ছেড়ে দিচ্ছি। হুরের সঙ্গে তারে কল্পনা করার মধ্যেই হঠাৎ করে প্লেন ঝাঁকুনি দেওয়া শুরু করলো। এমন ঝাঁকুনি যে, মনে হচ্ছে ত্রিশ হাজার ফিট উপর থেকে এখুনি প্লেন মাটিতে আছড়ে পড়বে। প্রায় সবাই ভয় পেয়ে আল্লাহ, আল্লাহ শুরু করে দিয়েছে। আমি তাকিয়ে দেখলাম আমার হাতটা আর আমার দখলে নেই। পাশের সুন্দরী তুমুল ভয় পেয়ে আমার হাতটা শক্ত করে তার বুকে চেপে ধরেছে। আমি কী করবো বুঝতেছি না। ভাবলাম, বিমান জাহান্নামে যাক, এমন সুযোগ মিস করা যায় না। ঝাঁকুনির তাল বুঝে তারে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। মুখে আল্লাহ, আল্লাহ জঁপলাম আর মনে শান্তি, শান্তি বললাম। সে-ও জড়িয়ে ধরছে শক্ত করে। চিৎকার করে কাঁদতেছে। এই বুঝি শেষ। আমিও চিৎকার করছি কিন্তু কাঁদছি না, কান্নার ভং ধরছি। দীর্ঘদিনের প্লেন ভ্রমণের অবিজ্ঞতায় এতটুকু নিশ্চিত হয়েছি যে, টারবুল্যান্স বা ঝাঁকুনি হলো একটা সাধারণ ব্যাপার। এর ফলে বিমান দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভবনা নাই বললেই চলে। টারবুল্যান্স হলো বায়ুর এক অনিয়মিত প্রবাহ যা, বাতাসের ঘূর্ণমান এবং উল্লম্ব স্রোতের মিশ্রনে হঠাৎ তৈরি হতে পারে। এর ফলে হঠাৎই বিমানে এক বা একাধিকবার মারাত্মক ঝাঁকুনি লাগতে পারে।

    ঝাঁকুনি থেমে গেছে। প্লেন তার আপন গতিতে ছুটছে। সে কানে কানে আস্তে আস্তে আমাকে ডাকছে, ‘এই যে, শুনছেন? আমাকে ছাড়ুন প্লিজ।’

    আমি শুনেও না শোনার ভান করে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে জোরেশোরে বলে উঠলাম, ‘আল্লাহ, আল্লাহ।’
    সে অনেকটা বিরক্তি নিয়ে আমার মাথাটা ধরে সোজা করে সিটে বসালো। আমি বলে উঠলাম, ‘আমরা মরিনি?’
    সে বললো, ‘না, আল্লাহর রহমতে এ যাত্রায় বেঁচে গেছি।’

    আমি আবারও থ্যাংকস গড বলে তাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম। পানিবিহীন কান্দনের সহিত বলতে লাগলাম, ‘তুমি দয়ালু, তুমি রহমান। আজ যদি মরে যেতাম আমার কী হতো? এখনো বিয়ে করিনি! আবার আমার জীবন ফিরিয়ে দিয়েছো, তোমার শুকরিয়া কেমনে আদায় করি, হে মাবুদ।’

    আগুন সুন্দরী এবার মহাবিরক্ত হয়ে বললো, ‘ছাড়ুন তো, কী শুরু করলেন! আমি কিন্তু সিনক্রিয়েট করবো।’
    কোনো ধরণের কথা না বলে আলিফের মতো চুপচাপ সিটে বসে পড়লাম। সে বাঁকা চোখে কিছুক্ষণ পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমি মাথা নিচু করে চুপিচুপি বললাম, ‘প্রথমবার তো প্লেন চড়তেছি। তাই একটু ভয় পেয়ে গেছিলাম। চাইলে আপনি আমার বুকে হাত দিয়ে দেখতে পারেন। এখনো বুকটা ধড়ফড় করে কাঁপতেছে।
    সে বললো, ‘আপনার সমস্যা কোথায় আমি বুঝে গেছি। নেকামি আর করতে হবে না। আমার বাপ আসবেন আমাকে রিসিভ করতে। চাইলে আপনার সমস্যার কথা উনাকে বিনয়ের সহিত বলতে পারেন। আশা করি সঠিক সমাধান পাবেন।’

    0 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ , ৩:৫৫ অপরাহ্ণ

    অভিশপ্ত বাথটাব

    নীরা ঘুরতে খুব পছন্দ করে, গাছপালা, নদী, সাগর, পাহাড় তাকে টানে খুব। মোট কথা প্রকৃতি প্রেমি। বাংলাদেশের অনেক জেলা তার ঘোরা হয়ে গেছে। কক্সবাজার, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি, পতেঙ্গা, সীতাকুণ্ড। সিলেট, জাফলং, বিছানাকান্দি, রাতারগুল, মাধবকুণ্ড ইত্যাদি সবই ঘোরা হয়ে গেছে। কিছুদিন আগে নীরা ইন্ডিয়াও ঘুরে এসেছে।

    এবার নীরা তার কাজিন সুরাইয়া ও তার পরিবারের সাথে সিলেট গিয়েছে ঘুরতে, শহরের অদুরে চা—বাগানের ভেতরে একটা বাংলোতে তারা উঠেছে, দিনের আলোয় বাংলোটাকে বেশ লাগলো নীরার। কেমন যেন একটা পুরোনো সোঁদাগন্ধ মোহাবিষ্ট করে। কোন জমিদারের বাড়ী ছিলো মনে হয়। জমিদার বাড়ীর আদলে বাড়ীর খাম্বাগুলো, সিঁড়ির রেলিংগুলোও মান্ধাতার আমলের। সামনে কয়েক স্তরের সিড়ি, তারপর—ই সবুজ গালিচায় লাল সুড়কিবাঁধাই সরু পথ। দু’পাশে অযত্নে লালিত কিছু ফুলগাছ। লোহার খাঁজকাটা মেইন গেটটা বহু পুরোনো দিনের স্বাক্ষী হয়ে এখনো টিকে আছে।
    রাতের জার্নিশেষে তারা সকাল বেলা শহরের অদুরে এই বাংলায় এসে উঠলো। পর্যটন সিজন হওয়াতে শহরের কোন হোটেলে সিট পাচ্ছিলোনা।
    নীরার বেশ ভালোই লাগলো, তারা বাংলোয় গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা করে কিছুক্ষণ রেষ্ট নিয়ে ঘুরতে গেলো বাইরে। ফিরতে—ফিরতে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত প্রায়। তাদের বাংলো থেকে খাবারের হোটেলটা একটু দূরত্বে আছে। তো সুরাইয়া বললো, আমরা একেবারে রাতের খাবার খেয়েই বাংলোতে ফিরবো। নীরার এখনি খেতে ইচ্ছে করলো না, বল্লো আমি হিলজুতোটা বাংলোয় রেখে আসি আর ফ্রেস হয়ে আসি। সুরাইয়া বল্লো, তুই যা আমি এখন আর হাঁটতে পারবো না। ওকে, বলে নীরা রওনা দিলো।
    শামীম ভাই সাথে আসতে চেয়েছিল, নীরা বললো থাক আমি একাই পারবো আপনি সুরাইয়াকে সঙ্গ দিন।

    নীরা যতই বাংলোর দিকে এগুচ্ছে ততই তার কেমন যেন গা—ছমছম করছে, নীরা বুঝতে পারলোনা সকালেও তো এ বাড়ী টাকে বেশ ভালোই মনে হয়েছিল, তো এখন কেন এমন!
    মেইন গেট খোলাই ছিলো, সিঁড়ি শেষ স্তম্ভে দারোয়ান সুলেমান মামা বসে আছে, মীরাকে আড়চোখে দেখলো, উনার তাকানোটা নীরার ভালো লাগলো না অথচ সকালেই এই সুলেমান মামাই তাদের সাদরে গ্রহণ করলেন। সকল রুমে ব্যাগ পৌঁছে দিলেন। বেশ আন্তরিক ব্যাবহার করলেন। আর এখন!
    নীরা সোজা সিড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে গেলো, ২০৩ নাম্বার রুমের চাবি নীরার কাছেই ছিলো। তালা খুলে ভেতরে ঢুকে গেলো। নতুন হিলটা বড্ড অসুবিধা করছে, এটা আর ব্যবহার করবে না, ওটা খুলে দূরে ছুড়ে দিলো। তারপর টানটান শরীরে বিছানায় সটান করে শুয়ে পড়লো। ফ্যান স্পিডে ছেড়ে দিলো সারাদিন ধকল গিয়েছে প্রচুর। ঘরে নীরা একাই পিনপতন নিরবতা। নীরা চোখ বন্ধ করে রাখলো হঠাৎ পানি পড়ার কুলকুল শব্দ!! নীরা আশ্চর্য সেতো এখনো বাথরুমেই যায়নি তবে পানির শব্দ কোত্থেকে আসছে!! নীরা ভাবলো ভুল শুনছে, কিন্তু না পানি পরারশব্দ আরো জোর দার হচ্ছে, অনিচ্ছাসত্তেও নীরা বাথরুমের দরজা খুলে দেখলো, না তো সেখানে সব টেপ বন্ধ। নীরা আসস্ত হয়ে বাথরুমের দরজা বন্ধ করতে যাবে আবার পানিপড়ার শব্দ! নীরা চমকে গেলো, না কোথাও ভুল হচ্ছে নীরা বাথরুমে ঢুকে সব ট্যাপ বন্ধ করে বেসিনে হাতমুখ ধুচ্ছিলো, বাথরুমে একটা বাথটাব ছিলো বহু পুরোনো মান্ধাতার আমলের। বেসিনের আয়নায় বাথটাবটা দেখা যাচ্ছে, নীরা মুখটা ধুয়ে যেই আয়নায় তাকালো দেখলো বাথটাবে একটা নারী অর্ধমৃত হয়ে শুয়ে আছে, বাথটাব পানিতে পরিপূর্ণ। আস্তে আস্তে পানির রংটা পরিবর্তন হয়ে লাল রক্তের রং ধারণ করেছে!! নীরা আবার পানিতে চোখ ধুয়ে হাতদিয়ে চোখ কচলে পেছন ফিরে বাথটাবটা ভালো করে দেখলো, নাহ কিচ্ছু নেই। বাথটাব আগের মতই শূন্য!

    নীরা আশ্চর্য হলো, ভয় পেয়ে তড়িঘড়ি বাথরুম থেকে বের হয়ে এলো। ভয়ে সে কাঁপছে—কি দেখলো সে? তাড়াতাড়ি ওড়নাটা শরীরে জড়িয়ে টেবিল থেকে ফোন আর চাবিটা নিয়ে বাইরে—বেরিয়ে গেলো। দরজা লাগিয়ে দ্রুত করিডোর ছাড়তে লাগলো কিন্তু শুনতে পেল পেছনে কেউ যেন আর্তনাদ করছে, ঘোঙ্গানির শব্দ, দমকা একটা হাওয়া করিডোরে ঘুরপাক খাচ্ছে!
    নীরার চশমা ঝাপসা হয়ে আসছে, নীরা আরো জোরে পা চালালো এবং কোনমতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো।
    একি সোলেমান মামা টুলে বসে নিচে ঝুকে আছে কেন? মামা, এ্যাই—মামা, আপনার শরীর কি খারাপ? আপনি ঠিক আছেন তো?
    দু’মিনিট পর সুলেমান মামা মাথা তুলে বসলো, মীরার দিকে তাকালো, নীরা দেখলো সোলেমান মামার চোখ থেকে আগুন বের হচ্ছে।
    নীরা দেখেই ভয়ে ছুঁটতে লাগলো মেইন গেটের দিকে। গেটের বাইরে গিয়েই হাঁপাতে— হাঁপাতে—সুরাইয়াকে ফোন দিলো তোরা কই?? সুরাইয়া, এইতো আমরা খাবার হোটেলই আছি, তোর জন্য অপেক্ষা করছি, তাতাড়ি আয়।
    আসছি—বলে, নীরা সামনে এগুলো, কোনমতে নিশ্চুপ হয়ে কোনরকমে খেয়ে নিলো।

    সবাই খেয়েদেয়ে হোটেলে ফিরলো, নীরা সুরাইয়া কে শক্ত করে ধরে রেখেছে, যেটা মোটেও নীরার সাথে যায় না। সে অতি চঞ্চল। এভাবে সেটে হাত ধরে হাটার পাবলিক সে নয়।
    সুরাইয়া : কিরে এমন করছিস কেন, তোর কি হয়েছে??
    নীরা : না, কিছুনা।
    সিঁড়ি বেয়ে উঠে দেখলো সুলেমান মামা পান চিবুচ্ছে, মুখে পাতলা মিহি হাসি।
    মা জননীরা আইজ বহুত ঘুরলেন। খানাদানা খাইছেন তো, নাকি ব্যাবস্থা করতে হইবো।
    সুরাইয়া : না মামা, আমরা খেয়েই ফিরেছি আপনাকে আর কষ্ট করতে হবেনা।
    নীরা অবাক সব স্বাভাবিক, অথচ…….

    ২০৩/ ২০৪ দুটো রুমই বুক করা হয়েছে, নীরা ওদের সাথে ২০৪ এ ঢুকলো, দুম করে খাটে বসে পড়লো। সবাই চেঞ্জ করলো, গোসল করলো, বারবার নীরাকে তারা দিচ্ছে গোসল সেরে ঘুমিয়ে পড়ো। নীরা নড়ছে না, বললো আমার জ্বর—জ্বর লাগছে, আমি ঘুমিয়ে পড়বো।
    সুরাইয়া বললো, যাহ ২০৩—এ—মুনকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
    নীরা : নাহ, বলে চিৎকার করে উঠলো।
    সুরাইয়া কিরে কি হলো, নীরা নাহ ঠিক আছে যাচ্ছি বলে পা বাড়ালো, মুন চলো।
    সুরাইয়ার মেয়ে মুনকে নিয়ে নীরা ২০৩—এ— চলে গেলো। সে আর বাথরুমের দিকে গেলোনা, সোজা চাদর মু্রি দিয়ে মুনকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

    মাঝরাতে আবার সেই পানি পড়ার শব্দ, বাথটাব উপচে পানি পড়ার শব্দ। নীরা কানে হাত দিয়ে রইলো পানি পড়ার শব্দ বাড়তে লাগলো, সাথে গোঙ্গানির শব্দ, সেই ধমকা হাওয়া যেন বাথরুমে দরজা ভেঙে রুমের মধ্যে হওয়াটা ঘুরপাক খাচ্ছে… একটা ভৌতিক আলো জ্বলছে—নিভছে. . ..

    এবং বাথরুম থেকে বেরুনো সেই দমকা হাওয়াটা ঘুরপাক খেতে—খেতে রুমের মাঝখানে একটি সুন্দরী নারীর অবয়ব ধারণ করলো।
    একটু পর সজোরে একটা গুলির আওয়াজ মেয়েটি আর্তনাদ করে লুটিয়ে পড়লো, আর সারা ঘর রক্তাক্ত হয়ে পড়লো!
    নীরা এসব দেখে কাঁপতে লাগলো এবং জ্ঞান হারালো, কতোক্ষন এভাবে ছিলো সে জানে না।
    সকাল ৯ টায়ও অনেক ডাকাডাকিতে দরজা না খোলায় রিসিপশন থেকে ডুপ্লিকেট চাবি এনে বাইরে থেকে দরজা খুলে সুরাইয়া নীরাকে ডেকে তুললো, কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। সুরাইয়া /শামীম মিলে ওকে ধরাধরি করে উঠিয়ে বসালো এবং পানি দেয়ার জন্য বাথরুমে নিয়ে যেতে চাইলো, নীরা রাজি হলো না, কোনমতেই সে এই বাথরুমে যাবেনা।
    অগত্যা সুরাইয়া বললো, তুই আমাদের রুমে আয়, নীরা রাজি হলো। খাট থেকে নেমে দরজার দিকে যাবে তখন টেবিলের নিচে চোখ গেলো দেখলো সেখানে দেয়াল লেপ্টে রক্ত লেগে আছে। নীরা আরেকবার শিউরে উঠলো!
    নীরাকে মাথায় পানি দিয়ে নাস্তা করিয়ে “এইস প্লাস” খাইয়ে দেয়া হলো।
    শামীম বললো, আজ তো আমাদের ছোট মামার বাড়ী দাওয়াত ছিলো, উনারা সকাল থেকে ফোন করছেন কি বলি বলতো?

    সুরাইয়া : নীরার এই অবস্থা কি করে যাবে? তাছাড়া ওকে ছেড়ে কি করে যাই??

    শামীম : বুঝতে পারছি, বাট আমি এতদিন পর বিদেশ থেকে এলাম মামা আমায় দেখতে চেয়েছে, বারবার বলে দিয়েছে সাথে তোমাকে এবং মুনকে নিয়ে যেতে। তারা তো মুনকে এখনো দেখেনি, তাই।

    নীরা : তোরা যাহ আমি ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বো, আমার কোন অসুবিধা হবে না, জিজু ২ বছর পর দেশে এলো তাকে তোর সময় দেয়া উচিত।
    আমি বোধহয় তোদের মাঝে কাবাবমে হাড্ডি হয়ে আছি।

    সুরাইয়া : দেবো এক থাপ্পড়, উল্টোপাল্টা বল্লে।
    তুই আছিস বলেই তো মুনকে সামলাতে পারছিস,
    নয়তো রোমাঞ্চ সব ভেস্তে যেতো।

    শামীম : ওকে, মাই ডিয়ার শ্যালিকা আপনার কাছে আমরা ঋণী। আজকের দিনটা আমাদের দান করুন প্লিজ। কথা দিচ্ছি কাল থেকে আপনাকে সারাদিন সময় দেবো। ওকে

    নীরা : তথাস্তু জাঁহাপনা, আপনারা প্রস্থান করুন।

    সুরাইয়ারা চলে গেলো ঔষধ / ফ্রুটস /স্ন্যাক্স / পানি পাশের টেবিলেই রেখে গেলো।
    নীরা ঔষধের কার্যকারীতায় বেশ কিছুক্ষন ঘুমোলো, গভীর ঘুম। ঘুম থেকে জেগে নিজেকে কিছুটা হালকা লাগছে জ্বর টাও আর নেই মনে হয়। জানালার পর্দাটা সরিয়ে দেখলো মধ্যদুপুর, রোদের তেজ তেমন একটা নেই। বাংলোর ওয়াল ঘেঁষে কিছু পরগাছা জন্মেছে, শ্যাওলা পড়ে দেয়ালে সবুজ আবরণ পড়েছে। কিছু নাম না জানা পাহাড়ি ফুল ফুটে আছে, দেখতে বেশ লাগছে।
    হঠাৎ দরজায় যেন ছোট একটা টোকা পড়লো,
    নীরা অবাক হলো এসময় আবার কে এলো! বোধহয় সুলেমান মামা, সুরাইয়া বলে গেছে তোর কিছু লাগলে মামাকে বলিস, আমি মামাকে বলে যাবো তোর খেয়াল রাখতে।
    নীরা ধীরপায়ে গিয়ে দরজা খুল্লো, সেকি কেউ নেই করিডোরের এপাশ—ওপাশ তাকালো নাহ করিডোরে দুটো শালিক ছাড়া আর কোন প্রাণের অস্তিত্ব নেই।
    নীরা ভাবলো ভুল শুনেছে, দরজা ভিড়িয়ে রুমে ঢুকতে যাবে হঠাৎ চোখ পড়লো ২০৩ রুমের দরজাটা একটু খোলা! আশ্চর্য নীরা স্বরণ করলো সকালে রুম ছাড়ার সময় সুরাইয়া কি রুম লক করেনি? ও’ এত বেখেয়ালি হলো কবে?
    নীরা ২০৩ এর দিকে এগিয়ে গেলো দরজাটা লক করবে বলে দরজার কাছে গেলেই আবার সেই পানির শব্দ, বাথটাব উপচে পড়া পানির শব্দ। নীরা এখন আর তেমন একটা ভয় পেলনা, বুকে সাহস সঞ্চয় করে আস্তে করে রুমে ঢুকলো, বাথরুমের দরজাটা খুললো, নাহ কোথাও কিচ্ছু নেই। এবার বেসিনের কাছে গিয়ে আয়নায় চোখ রাখলো,
    নীরা দেখলো’ বাথটাবে বসে রয়েছেন সুন্দরী এক নারী। চোখে মুখে আতঙ্কের ভাব স্পষ্ট। চোখের কাজল ঘেঁটে গিয়েছে। মাথায় ক্ষত, রক্তাক্ত।
    চোখ দুটি আতঙ্কগ্রস্থ। কপালে ক্ষত চিহ্ন। সেই ক্ষত বেয়ে ঝরছে রক্ত। শরীরে কাপড় নেই, বাথটাবে বসে অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে মেয়েটি!! বাথটাব রক্তে ভেসে যাচ্ছে,,, রক্তের আঠালো ভাবটা নীরার পায়ে এসে পা জড়িয়ে যাচ্ছে। নীরা নড়তে পারছে না, রক্তে পুরো বাথরুম ভেসে যাচ্ছে,
    নীরা পেছন ফিরে তাকালো, হ্যা সেই মেয়েটা আতঙ্কগ্রস্ত চোখে নীরার দিকে চেয়ে আছে, মাথায় একটি ক্ষত, ক্ষত বেয়ে তাজা রক্ত বের হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ তার ডানখুলিতে গুলি করেছে!!

    নীরা কথা বলতে চাইলো ‘ তুমি কে, এখানে কেন, তোমার এই অবস্থা কেন??
    মেয়েটি বললো ” আমি মনি, নাজমুল আমার স্বামী, ও’ আমাকে গোপনে বিয়ে করেছে স্বীকৃতি দেয়নি।
    নাজমুল আমার অনাগত সন্তানের পিতা, আমার সন্তানের স্বীকৃতি চাওয়াতে ও’ এখানে বেড়াতে এনে এই বাথটাবে আমাকে এবং আমার অনাগত সন্তানকে খুন করলো / মেরে ফেললো।
    আমি তো ওকে ভালোবাসতাম কেন নাজমুল আমার সাথে এমন করলো? কেন, কেন, কেন???
    মেয়েটি কথা প্রতিধ্বনিত হয়ে বিকট আওয়াজ সৃষ্টি হচ্ছে, নীরা কানে হাত দিলো।
    নীরা এসব কি শুনছে, সত্যি নাকি কল্পনা তাও বুঝতে পারছেনা!
    নীরা দেখলো পায়ের নিচের আঠালো পদার্থটা নীরার পা জড়িয়ে ধরে টান দিচ্ছে, মনে হচ্ছে বাথটাবের ভেতর নেয়ার চেষ্টা করছে, নীরা প্রাণপণ চেষ্টা করছে বেসিনটাকে শক্ত করে ধরে রাখতে কিন্তু পারছে না। অবশেষে নীরার চেষ্টা বিফল হলো আঠালো রক্তটা তাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো বাথটাবের ভেতরে!!

    সুরাইয়া খাবার শেষ হওয়া মাত্রই ফেরার জন্য উশখুশ শুরু করেছে, বাট শামীম তার মামার কথার জালে এমন ফেঁসে গিয়েছে যে উঠতেই পারছে না। অনেকক্ষণ চোখের ইশারার পর অবশেষে বেচারা মামার মায়ার বাঁধন থেকে মুক্তি পেলেন।
    সুরাইয়া তড়িঘড়ি করে করে বাংলায় ফিরে সুলেমান মামাকে কোথাও দেখতে পেলো না, সোজা দোতলায় উঠে গেলো। দরজায় টোকা দিতে যাবে দেখে দরজা একটু ভেড়ানো, অবাক হয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো, না বেডে নীরা নেই, ভাবলো বাথরুমে, নাহ বাথরুমেও নেই, তবে অসুস্থ শরীর নিয়ে মেয়েটা কোথায় গেলো?
    ততক্ষনে শামীম এসে পড়েছে,
    সুরাইয়া : এ্যাই নীরা রুমে নেই, বাথরুমেও না।
    শামীম : হয়তো বাইরে গিয়েছে, করিডোরে কোথাও আছে।
    সুরাইয়া দৌড়ে করিডোরের এপাশ—ওপাশ দেখলো, দৌড়ে রেলিঙের কিনারে গেলো, যদি নিচতলায় ওকে দেখা যায়। নাহ কাউকে দেখতে পেলো না, এমনকি সুলেমান মামাকেও না!!
    সুরাইয়া দৌড়ে আবার রুমের দিকে আসলো ফোন করবে বলে, হঠাৎ তার ২০৩ নম্বর রুমের দিকে চোখ পড়লো, আরে সেই রুমের দরজা খোলা কেন? সকালে নীরাকে, মুনকে বের করেই তো দরজা চাবি দিয়ে লক করেছে, চাবি এখনো সুরাইয়ার ব্যাগে, তবে কি নীরা ওই রুমে?
    তৎক্ষনাৎ সুরাইয়া দৌড়ে ২০৩ এ গিয়ে ঢুকলো, নাহ রুমে—বেডে নীরা নেই। তবে. .. ..

    এবার বাথরুমে ঢুকলো, সুরাইয়া দেখলো নীরা বাথটাবের কিনারে পড়ে আছে, একটা হাত বাথটাবের ভেতরের দিকে, মনে হচ্ছে কেউ মীরাকে টেনে বাথটাবের ভেতরে নিতে চেয়েছে!
    সুরাইয়া চিৎকার করে উঠলো, শামীম চিৎকার শুনে ছুটে এলো, দুজনে ধরাধরি করে নীরাকে তুললো, দেখলো নীরার মাথার ডানপাশে কিছুটা চোট পেয়েছে, কিন্তু সুরাইয়া বুঝতে পারলো না এতটুকু চোটে বাথরুম ভর্তি এত রক্ত কেন?!

    নীরাকে রুমে নিয়ে ডাঃ ডাকা হলো, ডাঃ নীরাকে ছোট্ট একটা ব্যান্ডেজ দিয়ে দিলো আর বল্লো উনাকে ডিস্টার্ভ করবেন না উনি ঘুমাক। হয়তো বাথরুমে পা পিছলে পড়ে গেছে চোট তেমন একটা বেশি লাগেনি, ২/৩দিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে।
    ডাঃ চলে গেলে সুলেমান মামাকে সুরাইয়া ডেকে পাঠালো, আপনি থাকতে আমার বোনের এই অবস্থা কি করে হলো? আপনাকে বলে গেছিনা ও’ অসুস্থ, ওর দিকে খেয়াল রাখবেন।
    সুলেমান আমতা আমতা করে মা জননী, আমিতো বাংলোতেই ছিলাম, শুধু দুপুরে ভাত খেতে বাড়ী গিয়েছি, তাও আধঘন্টার মধ্যে ফিরে এসেছি।

    রাত আটটা নাগাদ নীরার জ্ঞান ফিরলো, সুরাইয়া, শামীম হামলে পড়লো কি হয়েছিলো তোমার? এ ঘরের বাথরুম রেখে ও’ ঘরে গিয়েছিলে কেন?
    শরীর বেশি খারাপ লাগছিলো, পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলে কি??
    নীরা কিছু বলতে যাবে দেখে ‘ মুনের ছোট্ট মুখটা ভয়ে পানসে হয়ে আছে, তারদিকে অবাক দৃষ্টিতে নিষ্পলক চেয়ে আছে।
    নাহ এই ফুলের মতো ছোট্ট শিশুটার মনে কোন ভয়ংকর কিছু দেয়া যাবেনা, সুন্দর পৃথিবীটাকে সে পবিত্রভাবে দেখুক, অপবিত্র —কুৎসিত—ভয়ংকর ভাবে নয়।
    নীরা বল্লো আমি এখন কথা বলতে পারবো না, আমি এখন ঘুমোবো, সকালে কথা বলি।
    সুরাইয়া ঠিক আছে বলে নীরাকে ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো। নীরা আর মুন এঘরেই ঘুমোলো। সুরাইয়া—শামীম ২০৩ রুমে চলে গেলো।

    সকালে ঘুম থেকে উঠে সকলে মিলে বসে নাস্তা সারলো, নীরা চুপচাপ চা খাচ্ছে, আর কালকের ঘটনা ভাবতে চেষ্টা করছে।
    সুরাইয়া হঠাৎ হাসতে—হাসতে জানিস কাল রাতে কি হয়েছে ‘তোর জিজু বললো চলো বাথটবে দুজনে মিলে গোসল করি, আমিও গেলাম দুজনে মজা করে গোসল করছি, অমনি শামীম আমার গলা টিপে ধরলো, আমি তো অবাক একি
    আমি প্রাণপন চেষ্টা করেও গলাছাড়াতে পারছিলাম না। শুধু গোঙ্গাতে লাগলাম!
    এরকম প্রায় ৫ মিঃ ছিলো, হঠাৎ সুলেমান মামা দরজা নক করলো, আর শামীম গলা ছেড়ে দিয়ে হাসতে লাগলো।
    সুরাইয়া—আমি বল্লাম এমন করলে কেন?
    বললো একটু দুষ্টুমি করলাম, তুমি কি ভেবেছো তোমাকে এখানে এই ভুতুড়ে বাড়ীতে আমি গলা টিপে মেরে রেখে যাবো?

    নীরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো তোমরা কালরাতে ২০৩ রুমে ছিলে??
    শামীম : হ্যা, তো কি হয়েছে তুমি কি ভাবছো হরর মুভির মতো আমি তোমার বোনকে বাথটাবে মেরে রেখে যাবো, হাহাহা…

    হা..হা..হা.. শামীম ভাই এখনো হাসছে..
    নীরার কাছে উনার হাসিটা কেমন যেন লাগছে, অন্য রকম, মেকি, ভৌতিক!

    0 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ , ১২:৫৯ অপরাহ্ণ

    মনে নেই না, মেনে নেই

    অনেক কিছুই মেনে নিচ্ছি
    তাই বলে আবার ভেবো না
    মনে নিচ্ছি
    মন থেকে নিচ্ছি
    মনের ভেতরে নিচ্ছি।

    মেনে নেওয়া আর মনে নেওয়া
    কখনোই এক নয়
    হ্যাঁ, এটা বলতেই পারো,
    ‘মেনেতো নিচ্ছো।’

    হুম, তা আমি অকপটে
    দ্বিধাহীনচিত্তে স্বীকার করি
    আমার ইমানের জোর কম
    হয়তো গায়ের জোরও কম
    কত কত ফুল ফোটে প্রকৃতিতে
    কিন্তু আমি মুখ ফুটে বলতে পারি না
    নজরুলের মতো লিখতে পারি না
    আমার বুকের ভেতরের
    হাহাকারের কথাগুলো।

    কিন্তু ঐ যে বললাম,
    মেনে নিচ্ছি তবে মনে নিচ্ছি না।

    নরম স্বরে, অকপটে
    সরলতা ও গাম্ভীর্য বজায় রেখে
    ষোলআনা ভদ্রতার সাথে
    জ্বী জনাব, জ্বী স্যার, জ্বী হুজুর
    বলে মেনেই নিচ্ছি।

    জানি, আমি অধম
    মেনেই নিচ্ছি
    মেনেই নিচ্ছি
    মেনেই নিচ্ছি
    কিন্তু তুমি নরাধম
    এতটুকু বুঝতে পারো না?
    মনে নিচ্ছি না
    মনে নিচ্ছি না
    মনে নিচ্ছি না।

    এটাই বা কম কীসে।

    হয়তো আমি প্রতিবাদী নই
    বিপ্লবী নই
    জাগরণের অগ্রদূত নই
    তবে
    তোমার চাপিয়ে দেওয়া তন্ত্র মন্ত্র
    আমাকে বশ করে না
    কেবল অবশ করে।

    তোমার শোষণ
    স্বৈরাচারতন্ত্রের যাঁতাকলে
    আমি রাজপথের মতো
    কেবলই পিষ্ট হচ্ছি
    তবু তুমি বেহায়া বেশরম
    মেনে নেওয়া আর মনে নেওয়া বোঝো না।

    আমি মনে নেই না, মেনে নেই
    বলো, কেমন করে মনে নেবো
    যেখানে কোনো ভালোবাসা নেই।

    0 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ২৬ আগস্ট, ২০২৩ , ১১:৩২ অপরাহ্ণ

    মুগ্ধতা.কম

    ২৬ আগস্ট, ২০২৩ , ১১:২৩ অপরাহ্ণ

    বীরপুত্রের কবিতা

    আমি তোমার পুত্র লাগি যদি
    ডেকো আমায় ‘রে যাদুকাটা নদী।’

    তোমার গলে হিরার মালা হবো
    সারাজীবন কোলেতে চেপে রবো।

    কাজল কালো মুচকি হাসি রূপে
    মাঝ বিলেতে রইব ফুটে ফুল;
    চাইলে হবো খোঁপায় বসা ব্যাঙ
    বৃষ্টি ছুঁয়ে গাইব ঘ্যাঙ ঘ্যাঙ।

    বাথান মানে দূর রাজ্য এক
    রুই মাছের চোখের মত শাদা
    আয়না মানে নদীর পানি জানি
    টলায়মান গগন বুকে পুষি।

    ষাঁড়ের পিঠে ভীষণ দূরে যাই
    শাপলাফলে ক্ষুধা খানিক মেটে
    রৌদ্র যদি সোনার বেশে ঝরে
    পথেই পাবো যমজ কোনো ভাই।

    লালচে গাভীর দুগ্ধ চুরি করে
    পোহাবো রাত সজাগ টেনে ভোরে।

    ভাবো আমায় বন্য যদি আর
    করতে চাও ত্যাজ্য মত কিছু
    পুত্র আমি বীরের মত রাগী
    আমি কি আর ছাড়বো তোর পিছু;

    0 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ২৬ আগস্ট, ২০২৩ , ১১:২৩ অপরাহ্ণ

    মুগ্ধতা.কম

    ২৬ আগস্ট, ২০২৩ , ১১:২২ অপরাহ্ণ

    আমার সুখ ভাবনার পাখি

    চিরজীবন যৌবনরাঙা ভাবি
    নাগাল পাইনি তোমার বুকের ভেতর
    চলতে গিয়ে হোঁচট খেলে তুমি
    আমার বুকে ব্যথা বাড়ে তত।

    বাড়বাড়ন্ত সাদা হচ্ছে মাথা
    কঞ্চি নাকটা বাঁশের মতো হলো
    মুখটা তোমার ঝুলে গেছে অনেক
    সুখটা যদি পেতে মনের মতো!

    শাড়ি পরো ঢিলেঢালা কুঁচি
    পেটিকোটে দাগ লেগেছে কিছু
    স্লীভলেসে লাগতো বড় দারুণ
    এখন তোমায় মায়ার চোখে দেখি।

    আমার ছায়া তোমার করে ভাবি
    মনে মনে কথা বলি কত
    ভালবাসি বাধা দিতে পারো
    কথায় আমায় কে আটকাবে বলো।

    যতন করে বুকের ভেতর পুষি
    সুখ হাতরাই আমার মতো করে
    কেউবা তোমায় দুঃখ দিছে হাজার
    শুনে তখন দগ্ধ হয়ে মরি।

    ছেঁটে ছেঁটে চুলটা করো ছোট
    এবার না হয় পা—টা একটু বাড়াও
    শক্ত করে বুকে গুঁজে রাখো
    উদ্বাহুতে জড়িয়ে তো ধরো।

    কলঙ্ক সব আমার করে নেবো
    তোমার কাছে আমার অনেক ঋণ
    এত যখন ভাবতে দিছো আমায়
    সেইসুখ আর কে বা দিতো বলো।

    0 Views

    মুগ্ধতা প্রতিবেদক

    ২৬ আগস্ট, ২০২৩ , ১:২২ অপরাহ্ণ

    রংপুর সাহিত্য – সংস্কৃতি পরিষদের সাহিত্য বৈঠক অনুষ্ঠিত

    রংপুর সাহিত্য – সংস্কৃতি পরিষদের ১১১৬ – তম সাহিত্য বৈঠক ২৫শে আগস্ট ২০২৩ শুক্রবার সন্ধ্যায় পরিষদ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ও পঠিত লেখাগুলো নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা করেন পরিষদের সাবেক সভাপতি, লেখক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ডা. মফিজুল ইসলাম মান্টু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিষদের বর্তমান সভাপতি হাসনা হেনা বেগম রোজী। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ” সোনার তরী “কবিতা আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক,আবৃত্তি প্রশিক্ষক প্রফেসর মোহাম্মদ শাহ আলম। নিজের লেখা কবিতা পাঠ করেন কবি এ এস এম হাবিবুর রহমান, গোলাম রব্বানী, আফজাল হোসেন, সুফি জাহিদ হোসেন। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিক শিল্পী আব্দুল কুদ্দুস, আব্দুছ ছালাম ও মেহেদী মাসুদ। ছড়া পাঠ করেন, ছড়াকার আফরোজা বেগম ও মাহাবুবা লাভীন। নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ডা. মফিজুল ইসলাম মান্টু ও বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী সুফি জাহিদ হোসেন। বৈঠকে আর্থসামাজিক পত্রিকা ” পূর্বা ” এর জানুয়ারি ‘২৩ সহ দুটি সংখ্যার পাঠ উন্মোচন করা হয়। পত্রিকাটির সম্পাদকীয় পাঠ করে শোনান প্রফেসর মোহাম্মদ শাহ আলম। পত্রিকার মান্যবর সম্পাদক একেএম শামসুদ্দিন ঢাকা থেকে রংপুর সাহিত্য – সংস্কৃতি পরিষদের জন্য ডা. মফিজুল ইসলাম মান্টুর কাছে যে কপি পাঠান তাও হস্তান্তর করা হয়। ২৭শে আগস্ট ২০২৩ রবিবার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিকেল ৫ টায় পরিষদ কার্যালয়ে যে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, তাতে যোগ দেবার জন্যে সকলকে আমন্ত্রণ জানান সভাপতি ও সম্পাদক। সাহিত্য বৈঠকটির সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মামুন উর রশিদ।

    0 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ২৬ আগস্ট, ২০২৩ , ১:১২ অপরাহ্ণ

    রাজবন্দীর জবানবন্দী

    রাজবন্দীর জবানবন্দী – ১

    আমার উপর অভিযোগ, আমি রাজবিদ্রোহী! তাই আমি রাজকারাগারে বন্দি এবং রাজদ্বারে অভিযুক্ত।

    একধারে রাজার মুকুট; আরধারে ধূমকেতুর শিখা। একজন রাজা, হাতে রাজদণ্ড; আরজন সত্য, হাতে ন্যায়দণ্ড। রাজার পক্ষে রাজার নিযুক্ত রাজবেতনভোগী, রাজকর্মচারী। আমার পক্ষে – সকল রাজার রাজা, সকল বিচারকের বিচারক, আদি অনন্তকাল ধরে সত্য – জাগ্রত ভগবান।

    আমার বিচারককে কেহ নিযুক্ত করে নাই। এ মহাবিচারকের দৃষ্টিতে রাজা-প্রজা, ধনী-নির্ধন, সুখী-দুঃখী সকলে সমান। এঁর সিংহাসনে রাজার মুকুট আর ভিখারির একতারা পাশাপাশি স্থান পায়। এঁর আইন – ন্যায়, ধর্ম। সে আইন কোনো বিজেতা মানব কোনো বিজিত বিশিষ্ট জাতির জন্য তৈরি করে নাই। সে আইন বিশ্ব-মানবের সত্য-উপলব্ধি হতে সৃষ্ট; সে আইন সর্বজনীন সত্যের, সে আইন সার্বভৌমিক ভগবানের। রাজার পক্ষে – পরমাণু পরিমাণ খণ্ড-সৃষ্টি; আমার পক্ষে – আদি অন্তহীন অখণ্ড স্রষ্টা।

    রাজার পেছনে ক্ষুদ্র, আমার পেছনে – রুদ্র। রাজার পক্ষে যিনি, তাঁর লক্ষ্য স্বার্থ, লাভ অর্থ; আমার পক্ষে যিনি, তাঁর লক্ষ্য সত্য, লাভ পরমানন্দ।

    রাজার বাণী বুদ্‌বুদ্, আমার বাণী সীমাহারা সমুদ্র।

    আমি কবি, অপ্রকাশ সত্যকে প্রকাশ করবার জন্য, অমূর্ত সৃষ্টিকে মূর্তি দানের জন্য ভগবান কর্তৃক প্রেরিত। কবির কণ্ঠে ভগবান সাড়া দেন। আমার বাণী সত্যের প্রকাশিকা, ভগবানের বাণী। সে বাণী রাজবিচারে রাজদ্রোহী হতে পারে, কিন্তু ন্যায়বিচারে সে বাণী ন্যায়-দ্রোহী নয়, সত্য-দ্রোহী নয়। সে বাণী রাজদ্বারে দণ্ডিত হতে পারে, কিন্তু ধর্মের আলোকে, ন্যায়ের দুয়ারে তাহা নিরপরাধ, নিষ্কলুষ, অম্লান, অনির্বাণ, সত্য-স্বরূপ।

    সত্য স্বয়ং প্রকাশ। তাহাকে কোনো রক্ত-আঁখি রাজদণ্ড নিরোধ করতে পারে না। আমি সেই চিরন্তন স্বয়ম্-প্রকাশের বীণা, যে বীণায় চির-সত্যের বাণী ধ্বনিত হয়েছিল। আমি ভগবানের হাতের বীণা। বীণা ভাঙলেও ভাঙতে পারে, কিন্তু ভগবানকে ভাঙবে কে? একথা ধ্রুব সত্য যে, সত্য আছে, ভগবান আছেন – চিরকাল ধরে আছে এবং চিরকাল ধরে থাকবে। যে আজ সত্যের বাণীকে রুদ্ধ করেছে, সত্যের বীণাকে মূক করতে চাচ্ছে, সে-ও তাঁরই এই ক্ষুদ্রাদপি ক্ষুদ্র সৃষ্ট অণু। তাঁরই ইঙ্গিতে-আভাসে, ইচ্ছায় সে আজ আছে, কাল হয়তো থাকবে না। নির্বোধ মানুষের অহংকারের আর অন্ত নাই; সে যাহার সৃষ্টি, তাহাকেই সে বন্দি করতে চায়, শাস্তি দিতে চায়। কিন্তু অহংকার একদিন চোখের জলে ডুববেই ডুববে।

    যাক, আমি বলছিলাম, আমি সত্যপ্রকাশের যন্ত্র। সে যন্ত্রকে অপর কোনো নির্মম শক্তি অবরুদ্ধ করলেও করতে পারে, ধ্বংস করলেও করতে পারে; কিন্তু সে-যন্ত্র যিনি বাজান, সে-বীণায় যিনি রুদ্র-বাণী ফোটান, তাঁকে অবরুদ্ধ করবে কে? সে-বিধাতাকে বিনাশ করবে কে? আমি মরব, কিন্তু আমার বিধাতা অমর। আমি মরব, রাজাও মরবে, কেননা আমার মতন অনেক রাজবিদ্রোহী মরেছে, আবার এমনই অভিযোগ-আনয়নকারী বহু রাজাও মরেছে, কিন্তু কোনো কালে কোনো কারণেই সত্যের প্রকাশ নিরুদ্ধ হয়নি – তার বাণী মরেনি। সে আজও তেমনই করে নিজেকে প্রকাশ করেছে এবং চিরকাল ধরে করবে। আমার এই শাসন-নিরুদ্ধ বাণী আবার অন্যের কণ্ঠে ফুটে উঠবে। আমার হাতের বাঁশি কেড়ে নিলেই সে বাঁশির সুরের মৃত্যু হবে না; কেননা আমি আর এক বাঁশি নিয়ে বা তৈরী করে তাতে সেই সুর ফোটাতে পারি। সুর আমার বাঁশির নয়, সুর আমার মনে এবং আমার বাঁশি সৃষ্টির কৌশলে। অতএব দোষ বাঁশিরও নয় সুরেরও নয়; দোষ আমার, যে বাজায়; তেমনই যে বাণী আমার কণ্ঠ দিয়ে নির্গত হয়েছে, তার জন্য দায়ী আমি নই। দোষ আমারও নয়, আমার বাণীরও নয়; দোষ তাঁর – যিনি আমার কণ্ঠে তাঁর বাণী বাজান। সুতরাং রাজবিদ্রোহী আমিও নই; প্রধান রাজবিদ্রোহী সেই বাণী-বাদক ভগবান। তাঁকে শাস্তি দিবার মতো রাজশক্তি বা দ্বিতীয় ভগবান নাই। তাঁহাকে বন্দি করবার মতো পুলিশ বা কারাগার আজও সৃষ্টি হয় নাই।

    রাজার নিযুক্ত রাজ-অনুবাদক রাজভাষায় সে-বাণীর শুধু ভাষাকে অনুবাদ করেছে, তাঁর প্রাণকে অনুবাদ করেনি। তাঁর সত্যকে অনুবাদ করতে পারেনি। তার অনুবাদে রাজানুগত্য ফুটে উঠেছে, কেননা, তার উদ্দেশ্য রাজাকে সন্তুষ্ট করা, আর আমার লেখায় ফুটে উঠেছে সত্য, তেজ আর প্রাণঙ কেননা আমার উদ্দেশ্য ভগবানকে পূজা করা; উৎপীড়িত আর্ত বিশ্ববাসীর পক্ষে আমি সত্য-বারি, ভগবানের আঁখিজল! আমি রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করি নাই, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছি।

    আমি জানি এবং দেখেছি – আজ এই আদালতে আসামির কাঠগড়ায় একা আমি দাঁড়িয়ে নেই, আমার পশ্চাতে স্বয়ং সত্যসুন্দর ভগবানও দাঁড়িয়ে। যুগে যুগে তিনি এমনই নীরবে তাঁর রাজবন্দি সত্য-সৈনিকের পশ্চাতে এসে দণ্ডায়মান হন। রাজ-নিযুক্ত বিচারক সত্য-বিচারক হতে পারে না। এমনই বিচার প্রহসন করে যেদিন খ্রিস্টকে ক্রুশে বিদ্ধ করা হল, গান্ধিকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হল, সেদিনও ভগবান এমনই নীরবে এসে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁহাদের পশ্চাতে। বিচারক কিন্তু তাঁকে দেখতে পায়নি, তার আর ভগবানের মধ্যে তখন সম্রাট দাঁড়িয়েছিলেন, সম্রাটের ভয়ে তার বিবেক, তার দৃষ্টি অন্ধ হয়ে গেছিল। নইলে সে তার এই বিচারাসনে ভয়ে বিস্ময়ে থরথর করে কেঁপে উঠত, নীল হয়ে যেত, তার বিচারাসন সমেত সে পুড়ে ছাই হয়ে যেত।

    বিচারক জানে আমি যা বলেছি, যা লিখেছি তা ভগবানের চোখে অন্যায় নয়, ন্যায়ের এজলাসে মিথ্যা নয়। কিন্তু হয়তো সে শাস্তি দেবে, কেননা সে সত্যের নয়, সে রাজার। সে ন্যায়ের নয়, সে আইনের। সে স্বাধীন নয়, সে রাজভৃত্য। তবু জিজ্ঞাসা করছি, এই যে বিচারাসন – এ কার? রাজার না ধর্মের? এই যে বিচারক, এর বিচারের জবাবদিহি করতে হয় রাজাকে, না তার অন্তরের আসনে প্রতিষ্ঠিত বিবেককে, সত্যকে, ভগবানকে? এই বিচারককে কে পুরস্কৃত করে? – রাজা না ভগবান? অর্থ না আত্মপ্রসাদ?

    রাজবন্দীর জবানবন্দী – ২

    শুনেছি, আমার বিচারক একজন কবি। শুনে আনন্দিত হয়েছি। বিদ্রোহী কবির বিচার বিচারক কবির নিকট। কিন্তু বেলাশেষের শেষ-খেয়া এ প্রবীণ বিচারককে হাতছানি দিচ্ছে, আর রক্ত-উষার নব-শঙ্খ আমার অনাগত বিপুলতাকে অভ্যর্থনা করছে; তাকে ডাকছে মরণ, আমায় ডাকছে জীবন; তাই আমাদের উভয়ের অস্ত-তারা আর উদয়-তারার মিলন হবে কিনা বলতে পারি না। না, আবার বাজে কথা বললাম।

    আজ ভারত পরাধীন। তার অধিবাসীবৃন্দ দাস। এটা নির্জলা সত্য। কিন্তু দাসকে দাস বললে, অন্যায়কে অন্যায় বললে এ রাজত্বে তা হবে রাজদ্রোহ। এ তো ন্যায়ের শাসন হতে পারে না, এই যে জোর করে সত্যকে মিথ্যা, অন্যায়কে ন্যায়, দিনকে রাত বলানো – এ কি সত্য সহ্য করতে পারে? এ শাসন কি চিরস্থায়ী হতে পারে? এতদিন হয়েছিল, হয়তো সত্য উদাসীন ছিল বলে। কিন্তু আজ সত্য জেগেছে, তা চক্ষুষ্মান জাগ্রত-আত্মা মাত্রই বিশেষরূপে জানতে পেরেছে। এই অন্যায় শাসন-ক্লিষ্ট বন্দি সত্যের পীড়িত ক্রন্দন আমার কণ্ঠে ফুটে উঠেছিল বলেই কি আমি রাজদ্রোহী? এ ক্রন্দন কি একা আমার? না – এ আমার কণ্ঠে ওই উৎপীড়িত নিখিল-নীরব ক্রন্দসীর সম্মিলিত সরব প্রকাশ? আমি জানি, আমার কণ্ঠের ওই প্রলয়-হুংকার একা আমার নয়, সে যে নিখিল আর্তপীড়িত আত্মার যন্ত্রণা-চিৎকার। আমায় ভয় দেখিয়ে মেরে এ ক্রন্দন থামানো যাবে না! হঠাৎ কখন আমার কণ্ঠের এই হারা-বাণীই তাদের আরেক জনের কণ্ঠে গর্জন করে উঠবে।

    আজ ভারত পরাধীন না হয়ে যদি ইংলন্ডই ভারতের অধীন হত এবং নিরস্ত্রীকৃত উৎপীড়িত ইংলন্ড-অধিবাসীবৃন্দ স্বীয় জন্মভূমি উদ্ধার করবার জন্য বর্তমান ভারতবাসীর মতো অধীর হয়ে উঠত, আর ঠিক সেই সময় আমি হতুম এমনই বিচারক এবং আমার মতোই রাজদ্রোহ-অপরাধে ধৃত হয়ে এই বিচারক আমার সম্মুখে বিচারার্থ নীত হতেন, তাহলে সেই সময় এই বিচারক আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে যা বলতেন, আমি তো তাই এবং তেমনি করেই বলছি!

    আমি পরম আত্মবিশ্বাসী! তাই যা অন্যায় বলে বুঝেছি, তাকে অন্যায় বলেছি, অত্যাচারকে অত্যাচার বলেছি, মিথ্যাকে মিথ্যা বলেছি, – কাহারও তোষামোদ করি নাই, প্রশংসার এবং প্রসাদের লোভে কাহারও পিছনে পোঁ ধরি নাই, – আমি শুধু রাজার অন্যায়ের বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ করি নাই – সমাজের, জাতির, দেশের বিরুদ্ধে আমার সত্য-তরবারির তীব্র আক্রমণ সমান বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে, – তার জন্য ঘরের-বাইরের বিদ্রুপ, অপমান, লাঞ্ছনা, আঘাত আমার উপর পর্যাপ্ত পরিমাণে বর্ষিত হয়েছে, কিন্তু কোনো কিছুর ভয়েই নিজের সত্যকে, আপন ভগবানকে হীন করি নাই, লাভ-লোভের বশবর্তী হয়ে আত্ম-উপলব্ধিকে বিক্রয় করি নাই, নিজের সাধনালব্ধ বিপুল আত্মপ্রসাদকে খাটো করি নাই, কেননা আমি যে ভগবানের প্রিয়, সত্যের হাতের বীণা; আমি যে কবি, আমার আত্মা যে সত্যদ্রষ্টা ঋষির আত্মা। আমি অজানা অসীম পূর্ণতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছি। এ আমার অহংকার নয়, আত্ম-উপলব্ধির আত্মবিশ্বাসের চেতনালব্ধ সহজ সত্যের সরল স্বীকারোক্তি। আমি অন্ধ-বিশ্বাসে, লাভের লোভে, রাজভয় বা লোকভয়ে মিথ্যাকে স্বীকার করতে পারি না, অত্যাচারকে মেনে নিতে পারি না। তাহলে যে আমার দেবতা আমায় ত্যাগ করে যাবে। আমার এই দেহ-মন্দির জাগ্রত দেবতার আসন বলেই তো লোকে এ-মন্দিরকে পূজা করে, শ্রদ্ধা দেখায়, কিন্তু দেবতা বিদায় নিলে এ শূন্য মন্দিরের আর থাকবে কি? একে শুধাবে কে? তাই আমার কণ্ঠে কাল-ভৈরবের প্রলয়তূর্য বেজে উঠেছিল, আমার হাতে ধূমকেতুর অগ্নি-নিশান দুলে উঠেছিল, সে সর্বনাশা নিশানপুচ্ছে মন্দিরের দেবতা নট-নারায়ণ-রূপ ধরে ধ্বংস-নাচন নেচেছিলেন। এ ধ্বংস-নৃত্য নব সৃষ্টির পূর্ব-সূচনা। তাই আমি নির্মম নির্ভীক উন্নত শিরে সে নিশান ধরেছিলাম, তাঁর তূর্য বাজিয়েছিলাম। অনাগত অবশ্যম্ভাবী মহারুদ্রের তীব্র আহ্বান আমি শুনেছিলাম, তাঁর রক্ত-আঁখির হুকুম আমি ইঙ্গিতে বুঝেছিলাম। আমি তখনই বুঝেছিলাম, আমি সত্য রক্ষার, ন্যায়-উদ্ধারের বিশ্ব-প্রলয় বাহিনীর লাল সৈনিক। বাংলার শ্যাম শ্মশানের মায়ানিদ্রিত ভূমিতে আমায় তিনি পাঠিয়েছিলেন অগ্রদূত তূর্যবাদক করে। আমি সামান্য সৈনিক, যতটুকু ক্ষমতা ছিল তা দিয়ে তাঁর আদেশ পালন করেছি। তিনি জানতেন, প্রথম আঘাত আমার বুকেই বাজবে, তাই আমি একবার প্রলয় ঘোষণার সর্বপ্রথম আঘাতপ্রাপ্ত সৈনিক মনে করে নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করেছি! কারাগার-মুক্ত হয়ে আমি আবার যখন আঘাত-চিহ্নিত বুকে, লাঞ্ছনা-রক্ত ললাটে, তাঁর মরণ-বাঁচা চরণমূলে গিয়ে লুটিয়ে পড়ব, তখন তাঁর সকরুণ প্রসাদ চাওয়ার মৃত্যুঞ্জয় সঞ্জীবনী আমায় শ্রান্ত, আমায় সঞ্জীবিত, অনুপ্রাণিত করে তুলবে। সেদিন নতুন আদেশ মাথায় করে নতুন প্রেরণায় উদ্‌বুদ্ধ আমি, আবার তাঁর তরবারি-ছায়াতলে গিয়ে দণ্ডায়মান হব। সেই আজও-না-আসা রক্ত-উষার আশা, আনন্দ, আমার কারাবাসকে – অমৃতের পুত্র আমি, হাসি-গানের কলোচ্ছ্বাসে স্বর্গ করে তুলবে। চিরশিশু প্রাণের উচ্ছল আনন্দের পরশমণি দিয়ে নির্যাতিত লোহাকে মণিকাঞ্চনে পরিণত করবার শক্তি ভগবান আমায় না চাইতেই দিয়েছেন! আমার ভয় নাই, দুঃখ নাই; কেননা ভগবান আমার সাথে আছেন। আমার অসমাপ্ত কর্তব্য অন্যের দ্বারা সমাপ্ত হবে। সত্যের প্রকাশ-ক্রিয়া নিরুদ্ধ হবে না। আমার হাতের ধূমকেতু এবার ভগবানের হাতের অগ্নি-মশাল হয়ে অন্যায়-অত্যাচারকে দগ্ধ করবে। আমার বহ্নি-এরোপ্লেনের সারথি হবে এবার স্বয়ং রুদ্র ভগবান। অতএব, মাভৈঃ! ভয় নাই।

    কারাগারে আমার বন্দিনী মায়ের আঁধার-শান্ত কোল ও অকৃতী পুত্রকে ডাক দিয়েছে, পরাধীনা অনাথিনি জননীর বুকে এ হতভাগ্যের স্থান হবে কিনা জানি না, যদি হয় বিচারককে অশ্রু-সিক্ত ধন্যবাদ দিব। আবার বলছি, আমার ভয় নাই, দুঃখ নাই। আমি ‘অমৃতস্য পুত্রঃ’। আমি জানি –

    ওই অত্যাচারীর সত্য পীড়ন

    আছে, তার আছে ক্ষয়;

    সেই সত্য আমার ভাগ্য-বিধাতা

    যার হাতে শুধু রয়।

    প্রেসিডেন্সি জেল, কলিকাতা

    ৭ জানুয়ারি, ১৯২৩।

    রবিবার – দুপুর

    [কাজী নজরুল ইসলাম (২৪ মে ১৮৯৯ – ২৯ আগস্ট ১৯৭৬; ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ – ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) বিংশ শতাব্দীর প্রধান বাঙালি কবি ও সংগীতকার। তার মাত্র ২৩ বছরের সাহিত্যিক জীবনে সৃষ্টির যে প্রাচুর্য তা তুলনারহিত। সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও তার প্রধান পরিচয় তিনি কবি। রাজবন্দীর জবানবন্দী কাজী নজরুল ইসলাম লিখিত একটি বিখ্যাত প্রবন্ধ। নজরূল সম্পাদিত অর্ধ-সাপ্তাহিক ধূমকেতু ১৯২৩ সালে ব্রিটিশ সরকার নিষিদ্ধ করে। সেই পত্রিকায় প্রকাশিত নজরুলের কবিতা আনন্দময়ীর আগমনে ও নিষিদ্ধ হয়। নজরুলকে জেলে আটক করে রাখার পর তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি লিখিতভাবে আদালতে উপস্থাপন করেন চার পৃষ্ঠার বক্তব্য।]

    0 Views