শনিবারের চিঠি Archive - মুগ্ধতা.কম

  • #tweetlikeitsfree
  • A-
  • A-
  • A+
  • A+
  • A+
  • A+
  • AB-
  • AB+
  • AB+
  • Account Menu
  • All menu
  • B-
  • B+
  • Bangabandhu
  • Barishal
  • Chattogram
  • cv
  • Dhaka
  • Dhaka
  • Dhaka
  • Eid
  • gh
  • Hadis
  • Khulna
  • max writer
  • mugdhota2
  • Mymensingh
  • Nobel Prize
  • O-
  • O+
  • Primary menu
  • quiz
  • Rajshahi
  • Rajshashi
  • Rangpur
  • Rangpur
  • Rangpur
  • Rangpur
  • Rangpur
  • rng_porm_add
  • rng_porm_add_adil_fokir
  • rng_porm_add_rlt_art
  • rng_porm_add_rlt_art_bottom
  • rng_porm_add_rlt_art_top
  • rng_porm_add2
  • selected_add
  • square
  • Sylhet
  • Test
  • test
  • test
  • Test 2
  • user-post
  • অগ্রহায়ণ
  • অণুগল্প
  • অনুগল্প
  • অনুবাদ
  • অভিযাত্রিক
  • অমর একুশে
  • আহসান লাবিব
  • ইজরায়েল
  • ইতিহাস
  • ইতিহাস
  • ইতিহাস
  • ইদ সংখ্যা ২০২১
  • ইসলাম
  • ইসলাম
  • ঈদ ২০২২
  • ঈদ ২০২৩
  • ঈদ সংখ্যা
  • ঈদ সংখ্যা
  • ঈদ স্মৃতি
  • ঈদ-২০২০
  • একুশে ফেব্রুয়ারি
  • এস এম সাথী বেগম
  • ঐতিহ্য
  • কবিতা
  • কবিতা
  • কবিতা
  • কবিতা
  • কবিতা
  • কবিতা দ্বিতীয় অংশ
  • কবিতা প্রথম অংশ
  • কবিতা2
  • কবিতার গল্প
  • করোনার দিনগুলো ৫
  • ক্যাডেট ভর্তি
  • খেলা
  • গল্প
  • গল্প
  • গল্প
  • গুচ্ছ
  • চিঠি
  • চিরায়ত পাঠ
  • ছড়া
  • ছড়া
  • ছড়া
  • ছড়া-কবিতা
  • ছবিঘর
  • জন্মদিন
  • জন্মদিন
  • জাতীয় কবিতা পরিষদ
  • জাতীয় শিশু দিবস
  • জানা অজানা
  • জীবন-যাপন
  • টেক
  • ট্র্যাগাস
  • ডায়াবেটিস
  • তরুণ তুর্কি
  • তরুণ তুর্কি
  • তরুণ তুর্কি: ১৫ নবীনের কবিতা
  • তাসমিন আফরোজ
  • ত্যাগের গল্প
  • দারাজ
  • দূর পরবাস
  • দূর পরবাস
  • নতুনবই
  • নন-ফিকশন
  • নববর্ষ
  • নববর্ষ সংখ্যা - ১৪২৮
  • নবান্ন
  • নিবন্ধ
  • নিবন্ধ
  • নির্বাচিত ছবি
  • নির্বাচিত স্ট্যাটাস
  • নূরুল হুদা
  • নোবেল পুরষ্কার
  • পাঠ প্রতিক্রিয়া
  • পাঠকপ্রিয় লেখা
  • পাভেল রহমান
  • প্রতিষ্ঠা-বার্ষিকী
  • প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
  • প্রবন্ধ
  • প্রবন্ধ
  • প্রবন্ধ
  • প্রবন্ধ১
  • ফিলিস্তিন
  • ফিলিস্তিন
  • ফিলিস্তিন সংখ্যা
  • ফিলিস্তিন সংখ্যা
  • ফিলিস্তিনি কবিতা অনুবাদ
  • ফেসবুক
  • বই
  • বই আলোচনা
  • বইমেলা
  • বর্ষাকাহন
  • বর্ষার-কবিতা
  • বর্ষার-কবিতা1
  • বাজেট
  • বানান
  • বানান প্রতিযোগিতা
  • বাংলা
  • বাংলা একাডেমি
  • বাংলা বানান
  • বাংলাটা ঠিক আসে না
  • বাংলাবাড়ি
  • বিজয় দিবস
  • বিজয় দিবস 2022
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • বিশেষ রচনা
  • বিশেষ রচনা
  • বিশেষ সংখ্যা
  • বিশ্ব রক্তদাতা দিবস
  • ভাইভা
  • ভাষা
  • ভ্রমন-গল্প
  • মতামত
  • মতামত
  • মহাপরিচালক
  • মাতৃভাষা-দিবস
  • মুক্তগদ্য
  • মুক্তিযুদ্ধ
  • মুগ্ধতা
  • মুগ্ধতা
  • মে দিবস
  • রক্ত
  • রংপুরের কবিতা
  • রংপুরের কবিতা
  • রংপুরের কবিতা1
  • রফিকুল হক দাদুভাই
  • রসরচনা
  • শনিবারের চিঠি
  • শব্দ
  • শহিদ দিবস
  • শিক্ষা
  • শিরোনাম
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • শিশু দিবস
  • শিশু-কিশোর
  • শিশুর শাস্তি
  • শোক দিবস
  • শোক দিবস-ছড়া
  • শোক দিবস-প্রবন্ধ
  • শোক সংবাদ
  • সংবাদ
  • সংবাদ
  • সাক্ষাৎকার
  • সাক্ষাৎকার
  • সাপ্তাহিক সংখ্যা
  • সাপ্তাহিক সংখ্যা
  • সাহিত্য
  • সাহিত্য সংবাদ
  • সাহিত্য সংবাদ
  • স্টিকার কমেন্ট
  • স্বাধীনতা দিবস 2022
  • স্বাস্থ্য
  • স্বাস্থ্য বার্তা
  • স্মরণ
  • স্মরণ
  • স্মৃতিকথা
  • হাসান আজিজুল হক
  • হুমায়ূন আহমেদ
  • শনিবারের চিঠি Archive - মুগ্ধতা.কম

  • #tweetlikeitsfree
  • A-
  • A-
  • A+
  • A+
  • A+
  • A+
  • AB-
  • AB+
  • AB+
  • Account Menu
  • All menu
  • B-
  • B+
  • Bangabandhu
  • Barishal
  • Chattogram
  • cv
  • Dhaka
  • Dhaka
  • Dhaka
  • Eid
  • gh
  • Hadis
  • Khulna
  • max writer
  • mugdhota2
  • Mymensingh
  • Nobel Prize
  • O-
  • O+
  • Primary menu
  • quiz
  • Rajshahi
  • Rajshashi
  • Rangpur
  • Rangpur
  • Rangpur
  • Rangpur
  • Rangpur
  • rng_porm_add
  • rng_porm_add_adil_fokir
  • rng_porm_add_rlt_art
  • rng_porm_add_rlt_art_bottom
  • rng_porm_add_rlt_art_top
  • rng_porm_add2
  • selected_add
  • square
  • Sylhet
  • Test
  • test
  • test
  • Test 2
  • user-post
  • অগ্রহায়ণ
  • অণুগল্প
  • অনুগল্প
  • অনুবাদ
  • অভিযাত্রিক
  • অমর একুশে
  • আহসান লাবিব
  • ইজরায়েল
  • ইতিহাস
  • ইতিহাস
  • ইতিহাস
  • ইদ সংখ্যা ২০২১
  • ইসলাম
  • ইসলাম
  • ঈদ ২০২২
  • ঈদ ২০২৩
  • ঈদ সংখ্যা
  • ঈদ সংখ্যা
  • ঈদ স্মৃতি
  • ঈদ-২০২০
  • একুশে ফেব্রুয়ারি
  • এস এম সাথী বেগম
  • ঐতিহ্য
  • কবিতা
  • কবিতা
  • কবিতা
  • কবিতা
  • কবিতা
  • কবিতা দ্বিতীয় অংশ
  • কবিতা প্রথম অংশ
  • কবিতা2
  • কবিতার গল্প
  • করোনার দিনগুলো ৫
  • ক্যাডেট ভর্তি
  • খেলা
  • গল্প
  • গল্প
  • গল্প
  • গুচ্ছ
  • চিঠি
  • চিরায়ত পাঠ
  • ছড়া
  • ছড়া
  • ছড়া
  • ছড়া-কবিতা
  • ছবিঘর
  • জন্মদিন
  • জন্মদিন
  • জাতীয় কবিতা পরিষদ
  • জাতীয় শিশু দিবস
  • জানা অজানা
  • জীবন-যাপন
  • টেক
  • ট্র্যাগাস
  • ডায়াবেটিস
  • তরুণ তুর্কি
  • তরুণ তুর্কি
  • তরুণ তুর্কি: ১৫ নবীনের কবিতা
  • তাসমিন আফরোজ
  • ত্যাগের গল্প
  • দারাজ
  • দূর পরবাস
  • দূর পরবাস
  • নতুনবই
  • নন-ফিকশন
  • নববর্ষ
  • নববর্ষ সংখ্যা - ১৪২৮
  • নবান্ন
  • নিবন্ধ
  • নিবন্ধ
  • নির্বাচিত ছবি
  • নির্বাচিত স্ট্যাটাস
  • নূরুল হুদা
  • নোবেল পুরষ্কার
  • পাঠ প্রতিক্রিয়া
  • পাঠকপ্রিয় লেখা
  • পাভেল রহমান
  • প্রতিষ্ঠা-বার্ষিকী
  • প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
  • প্রবন্ধ
  • প্রবন্ধ
  • প্রবন্ধ
  • প্রবন্ধ১
  • ফিলিস্তিন
  • ফিলিস্তিন
  • ফিলিস্তিন সংখ্যা
  • ফিলিস্তিন সংখ্যা
  • ফিলিস্তিনি কবিতা অনুবাদ
  • ফেসবুক
  • বই
  • বই আলোচনা
  • বইমেলা
  • বর্ষাকাহন
  • বর্ষার-কবিতা
  • বর্ষার-কবিতা1
  • বাজেট
  • বানান
  • বানান প্রতিযোগিতা
  • বাংলা
  • বাংলা একাডেমি
  • বাংলা বানান
  • বাংলাটা ঠিক আসে না
  • বাংলাবাড়ি
  • বিজয় দিবস
  • বিজয় দিবস 2022
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • বিশেষ রচনা
  • বিশেষ রচনা
  • বিশেষ সংখ্যা
  • বিশ্ব রক্তদাতা দিবস
  • ভাইভা
  • ভাষা
  • ভ্রমন-গল্প
  • মতামত
  • মতামত
  • মহাপরিচালক
  • মাতৃভাষা-দিবস
  • মুক্তগদ্য
  • মুক্তিযুদ্ধ
  • মুগ্ধতা
  • মুগ্ধতা
  • মে দিবস
  • রক্ত
  • রংপুরের কবিতা
  • রংপুরের কবিতা
  • রংপুরের কবিতা1
  • রফিকুল হক দাদুভাই
  • রসরচনা
  • শনিবারের চিঠি
  • শব্দ
  • শহিদ দিবস
  • শিক্ষা
  • শিরোনাম
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • শিশু দিবস
  • শিশু-কিশোর
  • শিশুর শাস্তি
  • শোক দিবস
  • শোক দিবস-ছড়া
  • শোক দিবস-প্রবন্ধ
  • শোক সংবাদ
  • সংবাদ
  • সংবাদ
  • সাক্ষাৎকার
  • সাক্ষাৎকার
  • সাপ্তাহিক সংখ্যা
  • সাপ্তাহিক সংখ্যা
  • সাহিত্য
  • সাহিত্য সংবাদ
  • সাহিত্য সংবাদ
  • স্টিকার কমেন্ট
  • স্বাধীনতা দিবস 2022
  • স্বাস্থ্য
  • স্বাস্থ্য বার্তা
  • স্মরণ
  • স্মরণ
  • স্মৃতিকথা
  • হাসান আজিজুল হক
  • হুমায়ূন আহমেদ
  • রেজাউল ইসলাম হাসু

    ৩ জুন, ২০২৩ , ১০:৩৬ অপরাহ্ণ

    হাসি প্রশিক্ষণ

    শেষ কবে হেসেছি—আমাদের মনে নেই।

    মনে রাখবার মতো এমন কোনো ক্যালেন্ডারও ঘরে নেই। যার পাতায় লাল কালিতে সেই দিন তারিখটা দাগিয়ে রাখি। মনের ভেতর কেবল মেঘদূতের শব্দ খসে খসে মেঘ জমাট বাঁধে। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি ঝরে যেন সেই জমাট-মেঘের জরায়ু ছিঁড়ে ছিঁড়ে। যেন হরপ্পা সভ্যতার কোনো এক অন্ধ বেহালার সুর তার সঙ্গে মিলেমিশে নির্বিকার গড়িয়ে আসে অন্তহীন আমাদের অভিমুখে। আমরা একটা হাসি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বসে বসে এইসব বৃষ্টিদৃশ্যে হারিয়ে ফেলি আমাদের হৃৎ ও ঋতু, সুখ ও সঙ্গম। কী ঝকঝকে আর পরিচ্ছন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটা! ফাইবার কাচ বেষ্টিত অ্যালুমিনিয়ামের জানালাগুলোয় লেগে আছে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির ছটা। টাইলস করা ফ্লোর। আমাদের নিষ্প্রভ প্রতিবিম্বগুলো তাতে বারবার প্রতিফলিত হয়ে ছুঁয়ে গেছে প্রাসাদের কার্নিশঅব্দি। পুরো প্রাসাদটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলেও আমরা ঘেমে জবজবে। যেন হাজার বছর ধরে আমরা ভেজার ঝমর।

    এল অ্যালফাবেটে আসনগুলো সাজানো। প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা আসনের ব্যবস্থা আছে। একজনের আসন থেকে অন্যজনের আসনের দূরত্বও বেশখানিক। এর সুবিধাদি নিশ্চয় আছে। হয়তো পরে আমাদের এসব বিষয়ে অবগত করা হবে। আমার বাঁ পাশে একজন অসম্ভব সুন্দরী আসীনরত। অনেক স্টিচের দাগ তার ঠোঁট দুটো সাপের ন্যায় প্যাঁচিয়ে আছে মেয়েলি সৌন্দর্য খর্ব করে। ডান পাশে এক বৃদ্ধ। তার সারা মুখে ব্যান্ডেজ। আমার পেছনে একটা দশ-বারো বছরের কিশোর ছেলে। প্রাসাদে প্রবেশকালীন তার সঙ্গে আমার প্রাক-আলাপ হয়। সে একটা কফিশপে কাজ করত। তার পিঠে অসংখ্য ছড়ির দাগ। আর আমার সামনে সুসজ্জিত আলোকোজ্জ্বল একটা মঞ্চ মূর্খতায় ডুবে। ডিজিটাল ব্যানার দিয়ে ওয়েল্ডিং করা তার সমূহ শরীর। ‘হাসি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শুভ উদ্ধোধন’—বড় বড় বর্ণমালায় লেখাটা ঝলমল করে। ‘উদ্বোধন করবেন মাননীয় নগরপিতা’—আরো অতিরিক্ত একটা বাক্য আমাদের চোখে পড়ে। নগরপিতার আগমনের অপেক্ষায় ক্লাস শুরু হতে বিলম্ব হয়। দূরান্তর থেকে এখনো লোকজন আসছে। আমরা একে-অপরের দিকে কেবল নিরীহ মাছের মতো অনিমেষ তাকিয়ে থাকি। প্রাসাদের চারদিকে হাসির পোস্টার সাঁটানো। মুচকি হাসি, অট্টহাসি, মিহি হাসি, হিহি হাসি, টাসকি হাসি, ফাঁসকি হাসি—বিবিধ হাসির পোস্টারের মাঝখানে কেবল আমরা পড়ে আছি অনাথের মতো নিথর ও নিষ্প্রভ। প্রজেক্টরের স্ক্রিন ফেটে বেরিয়ে আসতে চায় মিস্টার বিনের হাস্যোজ্জ্বল মুখাবয়ব। ডায়াসে একজন লাস্যময়ী সুন্দরী দাঁড়িয়ে। একটু পরপর বিশ^খ্যাত জোকসগুলো পরিবেশন করে করে আমাদের হাসানোর কসরতে পারঙ্গম। তবু আমাদের মুখে হাসি নেই। শেষ কবে হেসেছি আমরা—তাও মনে নেই আমাদের।

    উদ্বোধনী দিন

    মাননীয় নগরপিতা হাস্যোজ্জ্বল মুখে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। আমরা করতালির বারুদ দিয়ে তাকে স্বাগত জানাই। নগরপিতা হাসি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শুভ উদ্বোধন করে বলেন, আমরা একটা নতুন মাইলফলক স্পর্শ করলাম। বাঁচতে হলে হাসির কোনো বিকল্প নেই। আপনারা প্রাণ খুলে হাসুন। আমরা হাসিহীন একটা মুখও দেখতে চাই না। প্রতিটি মুখের হাসি নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। আর আমরা সেই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছুতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছি। হাসি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তারাই হাসির প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন যারা হাসতে না পারার উপযুক্ত প্রমাণ দাখিল করতে পেরেছেন। এই প্রশিক্ষণ অব্যাহত থাকবে। আশাকরি, আপনারা এখান থেকে প্রশিক্ষিত হয়ে আপনাদের হৃৎ ও ঋতুকে জাগাতে সক্ষম হবেন, সুখ ও সঙ্গমকে উপভোগ্য করতে উন্মুখ হবেন। এই বলে নগরপিতা হাস্যোজ্জ্বল মুখে মঞ্চ থেকে নেমে আমাদের আড়াল হলে একজন হাসির প্রশিক্ষক দৌড়ে মঞ্চে এলেন। তিনি এক ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ। আমি তার ভেতর সিসিফাসের ছায়া খুঁজে পাই। তিনি খুব মহত্ত্বের সঙ্গে উচ্চারণ করেন ‘হাসো’। আমরা হাসতে চেয়েও পারি না। তিনি তার সমস্ত অভিজ্ঞতা দিয়ে আমাদের প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন।

    প্রথমে তিনি আমাদের হাসির বেসিক ধারণাগুলো শিক্ষা দেন। তিনি বলেন, হাসার জন্য সর্বপ্রথম ও প্রধান যে উপাদানটা দরকার সেটা হলো আনন্দ। আর আনন্দ হলো হাওয়াই মিঠাইর মতো। এই আছে এই নেই। আপনারা কি কখনো সেই আনন্দ উপলব্ধি করতে পেরেছেন? আমরা সমবেতভাবে না বলি। তিনি খুব সুখী ভঙ্গিতে আমাদের মনের ভেতর আনন্দ উপলব্ধি করার উপদেশ দেন। আমরা কী কারণে আনন্দ উপলব্ধি করব তার কোনো যথার্থতা খুঁজে না পেয়ে নিশ্চুপ থাকি। বৃদ্ধ লোকটা তার প্রশিক্ষণ পরিচালানার সুবিধার্থে নিজেই কৃত্রিম আনন্দ উপলব্ধি করে অট্টহাসিতে অধীর ও উন্মুখ হয়ে পড়েন। তার অট্টহাসি কাচবেষ্টিত চৌহদ্দি ধাক্কা খেয়ে পুরো প্রাসাদে প্রকম্পিত হয়। আর আমরা কেবল নীরব দর্শকের ভূমিকাটুকু পালন করে যাই। এবার লোকটা আমাদের জং ধরা ঠোঁটের ব্যায়াম করতে উপদেশ দেন। তার ধারণা আমাদের ঠোঁটগুলো না-হাসতে হাসতে অলস ও অথর্ব হয়ে গেছে। কিংবা হাসার জন্য যে এনার্জিটি দরকার তা ক্ষয়ে ফেলেছে। আমরা আমাদের ঠোঁটগুলো রাবারের মতো এদিক-ওদিক ভঙ্গি করি। কখনো-সখনো শুয়োরের মুখের মতো কোঁচকাই। আমার বাঁ পাশের মেয়েটা ঠোঁটের ব্যায়াম করতে গিয়ে ককিয়ে ওঠে। তার ঠোঁটের স্টিচ ছিঁড়ে টুপটুপ রক্তক্ষরণ শুরু হয়। আমরা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে আমাদের ঠোঁটের ব্যায়াম চালিয়ে যাই। তারপর মুখের ব্যায়াম। এভাবে আমরা হাসির বেসিক ধারণাগুলির দীক্ষা নিই।

    দ্বিতীয় দিন

    এরপর দ্বিতীয় দিনে শুরু হলো মূল ধাপ। মিরাক্কেল থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসা একজন হাসি এক্সপার্ট লাফ দিয়ে আমাদের মাঝে উপস্থিত হলে আমরা সাময়িক বিস্মিত হই। এমন কোনো হাসি নেই যে তিনি জানেন না। হাসতে হাসতেই তার হাসির পারদর্শিতা সম্পর্কে আমাদের সম্যক অবগত করেন। মুচকি হাসি, ফুচকি হাসি, অট্টহাসি, খট্টহাসি, মিহি হাসি, হিহি হাসি, টাসকি হাসি, ফাঁসকি হাসি—কী অদ্ভুতুড়ে তার হাসির প্রকার! কী হাসবার ধরন! নানাভাবে, নানা প্রকরণে তিনি তার হাসির জাদু আমাদের মাঝে ছড়িয়ে দেন। আমরা কেবল নিবদ্ধ দৃষ্টিতে দেখে যাই সেসব দৃশ্যের উড়াল ও অন্তর্জাল। আর তাকে অনুসরণ করে হাসবার হাঁসফাঁস করি। আমার পেছনের দশ-বারো বছরের কিশোর ছেলেটা হাসতে গিয়ে ছড়ির ব্যথায় ধনুকের ন্যায় কুঁকড়ে যায়। মিরাক্কেল থেকে হেসে আসা হাসি এক্সপার্ট বিদায়কালে তার কদর্য হাসির কলা ও কসরতগুলো রপ্ত করতে বলেন। একদিন আমরা নানা প্রকরণের হাসি হাসতে পারব বলে তার বিশ্বাসে সেই ব্যঞ্জনা দেখেছেন। আর তিনিও অট্টহাসির অতলে ডুবতে ডুবতে আমাদের মাঝখান থেকে বিদায় নেন। যাবার আগে ভুলবশত তিনি তার রুমালটা আমাদের মাঝে ফেলে যান। যে রুমালে লেগে আছে অজস্র অশ্রুর দাগ। যার কোনো নাম নেই, ধাম নেই।

    তৃতীয় দিন

    তৃতীয় দিনে বৃদ্ধ প্রশিক্ষক আবারও হাসতে হাসতে আমাদের মাঝে এলেন। একটা মুচকি হাসির সম্ভাষণে ক্লাস শুরু করেন। এতদিনে আমরা যা শিখেছি আজ তার মূল্যায়ন হবে। প্রথমে কে আসবেন? তিনি খুব উৎফুল্লতার সঙ্গে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দেন আমাদের মাঝে। মুহূর্তেই শাদা, কালো, চিকনা, মোটা, সুস্থ, অসুস্থ অজস্র হাত বন্দুকের নলের ন্যায় দাঁড়িয়ে ওঠে। তার মাঝখান থেকে একটা মেয়েলি হাতকে তিনি মঞ্চে আসার আহ্বান জানান। মেয়েলি হাতটা যার সে ছিল গর্ভবতী। তার পেটটা ছিল তরমুজের মতো গোল ও ওজনশীল। সে আস্তে আস্তে সেই ওজন বয়ে নিষ্প্রভ মুখে মঞ্চে ওঠে। আমরা গভীর অনুধ্যান ছুঁড়ে দিই মেয়েটির উপর। আর তাকে নিবদ্ধ দৃষ্টিতে দেখতে থাকি যে সে কীভাবে হাসে—অথবা আমাদের হাসায়। মেয়েটি নগ্ন পায়ে মঞ্চের মাঝখানে আসে। তারপর একটা দীর্ঘ দীর্ঘশ্বাসে আমাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে। তারপর সে হাসবার চেষ্টা করে। প্রথমে সে তার ঠোঁট দুটো রাবারের মতো এদিক-ওদিক ভঙ্গি করে। কিন্তু একটা হাসির পোকাও বের হয় না তার ঠোঁট ফসকে। সে খুব বিব্রতবোধ করে। এবার সে তার মুখটা শুয়োরের মুখের মতো কোঁচকায়। আর সঙ্গে সঙ্গে বমি করে দেয়। পরিচ্ছন্নকর্মীরা বমি পরিষ্কার করলে আবার ক্লাস চালু হয়। এবার আমার ডান পাশের সেই বৃদ্ধ উঠে দাঁড়ায়। যার সারা মুখে ব্যান্ডেজ। বাসের আগুনে তার মুখটা পুড়ে গেছে। প্রশিক্ষক তার পোড়া মুখ থেকে মুখ ফেরালে লোকটা তার আসনে আরো নিষ্প্রভ হয়ে ওঠে। আমরা তাকে মিথ্যে সান্ত্বনা দিই। বৃদ্ধ আমাদের মিথ্যে সান্ত্বনাকে মিথ ভেবে কোনো এক অনন্তর হাসির অপেক্ষায় থাকে। এবার আমাকে আহ্বান করা হয়। আমি জানি যে আমার হাসা খুব জরুরি। কারো জন্য না হলেও অন্তত অন্তর্গত আমির জন্য হাসাটা আমার দরকার। সন্ত্রাসীদের গুলিতে আমার ডান পা বিগত বসন্তে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে। সে এক আদিম-গাথা। আমি এক পায়ে আমাকেই বয়ে বেড়াই। যেন কোনো এক ব্যালেরিনা নাচুক আমি। স্ট্রিচের উপর ভর দিয়ে মঞ্চে উঠি। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে। আমিই যেন তাদের শেষ ভরসার ভানু। যেন দূর থেকে নেমে আসা কোনো এক নক্ষত্রের ঝকমকি আমি। অথবা ভাঙা আস্তাবল থেকে হারিয়ে যাওয়া কোনো এক হ্রেষাধ্বনি। অনেক আস্থার সঙ্গে হাসবার কসরত করতেই নির্দয় নিয়তি আমাকে ধাক্কা মারে। আমার পতনদৃশ্য দেখতে দেখতে আমাদের শেষ ভরসার সমাধিস্থ হয়ে যায়।

    এই মূল্যায়ন পরীক্ষায় আমরা অকৃতকার্য বিবেচিত হলে বৃদ্ধ রুমালে চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে যান। সেই থেকে তিনি আমাদের হাসির মতোই নিরুদ্দেশ।

    শেষ দিন

    শেষ দিনে একজন মনিটর হাস্যোজ্জ্বল মুখে আমাদের মাঝে উপস্থিত হন। আমরা তাকে আমাদের বর্ণাঢ্য দুঃখে স্বাগত জানালে কঠোর আপত্তি করে বসেন। হতাশ্বাসের জটলা ঠেলে মনিটর আমাদের বিবিধ পরামর্শ-প্রবাহে ভাসান বানান। আমরা পরিব্রাজক জলের মতো ভাসতে থাকি নামহীন, ধামহীন। প্রথমে তিনি আমাদের একটা ক্ষুদে শুভেচ্ছাবার্তা ছড়িয়ে দেন নিষ্প্রভ দৃশ্যাবলির উপর। সিলিং হাওয়ায় ঘুরতে ঘুরতে সেটা ভাঙা সম্পর্কের মতো ডানা ঝাপ্টাতে থাকে। আমাদের হাসি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আপনাদের মতো প্রশিক্ষণার্থী পেয়ে আমরা আনন্দিত। আপনারা এই কয়দিনে যেভাবে হাসিটাকে রপ্ত করেছেন তাতে আমরা বিস্মিত ও গর্বিত। আজ আপনাদের উদ্দেশ্যে দুয়েকটা পরামর্শ ছাড়া আমার আর কোনো কলা ও কসরত দেখানোর শক্তি নেই। আপনারা সবসময় মনের ভেতর আনন্দ উপলব্ধি করুন। আনন্দ উপলব্ধ না হলে আনন্দ মার্কেট থেকে আনন্দ কিনে আনুন। আজকাল অনেক কোম্পানি আনন্দ উৎপাদন করছে। সুলভ মূল্যে সেসব কেনাও যাচ্ছে। আনন্দ না থাকলে কখনো হাসতে পারবেন না। হাসতে না পারলে আপনি বাঁচতে পারবেন না। বেঁচে থাকলেও আপনার অস্তিত্ব মৃত মৃত মনে হবে। আপনি যতটুকু দেখার ঠিক ততটুকুই দেখুন। যতটুকু শোনার কেবল ততটুকুই শুনুন। যতটুকু ভাবার ঠিক ততটুকুই ভাবুন। যতটুকু বলার ঠিক ততটুকুই বলুন। এর বেশি আপনি দেখবেনও না, শুনবেনও না, ভাববেনও না, বলবেনও না। প্রয়োজন হলে আপনারা সার্কাস পার্টিতে যান। কমেডি নাটক দেখুন। হাসির বিজ্ঞাপন দেখুন। জোকসের বই পড়–ন। কিংবা নিজেই ক্লাউনের ভূমিকায় নেমে পড়–ন। দেখবেন অটোমেটিক্যালি হাসি বেরিয়ে হাসছে। অথবা জাদুঘর ঘুরে আসুন। পূর্বপুরুষদের হাসি দেখে আসুন। তারা কীভাবে হাসত—সেসব হাসির কলা ও কসরত রপ্ত করুন। মনে রাখবেন, আপনি হাসলেই আমরা হাসব। আমরা হাসিময় একটা দুনিয়া চাই। বলেই মনিটর হাসতে হাসতে মঞ্চ থেকে নেমে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। না, কোনোভাবেই আমাদের হাসি পেল না। শেষ কবে হেসেছিলাম—মনে করতে করতে আমরা হাসির সনদ-সমেত হাসি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে বিজ্ঞপ্তিহীন হয়ে যাই।

    অতঃপর

    অতঃপর কোনো এক দুপুরে আমরা আমাদের অস্তিত্ব থিয়েটারে আবিষ্কার করি। একেকজন একেক চরিত্রে কমেডি নাটকে অভিনয় করি। কিন্তু আমাদের হাসি পায় না। চ্যানেলে চ্যানেলে হাসির বিজ্ঞাপন দেখি। তবু হাসি আমাদের অধরে ধরা দেয় না। কেবল হাসার রিহার্সেল করে যাই মেঘের ভেতর ধসে যাওয়া অনার্যকাল থেকে। পৃথিবীর ঠোঁট ফসকে একটা হাসির কয়েনও বুকপকেটে ঝনঝনিয়ে ওঠে না। পৃথিবীর ঠোঁট যেন জমে হিম হয়ে গেছে। বুকের ভেতরটা যেন অদৃশ্য হিমঘর আমাদের। রক্তের ধমনিতে কেবল তিমিরের তোপধ্বনি। আজন্ম অন্ধকারে আনন্দ হাতড়ে ফেরা।

    আনন্দ কোথায় থাকে? কোন ধামে? কোন নামে? আহসান হাবীবের কবিতা থেকে তিরের মতো তেড়ে আসছে ‘আনন্দ রে আনন্দ তুই কোথায় থাকিস বল?’ আমরা মৃত ও ধ্বংসের সেতু পেরিয়ে আনন্দের অন্বেষা করি। স্মরণযোগ্য কোনো দিন তারিখ না পাওয়ায় ক্যালেন্ডারের পাতাগুলো অন্তরে অনুরণন তোলে। কোনো এক অচেনা ছুরি মোচড় দিয়ে ওঠে অনারোগ্য হৃদয়ের ভেতর। আহ্নিকগতি কোন ম-লে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের? কোনো এক নিষ্প্রভ সকালে মেঘের খামে আশাহতদের চিঠি আসে। আমরা হাসতে চাই। আমরা চিঠির উত্তর দিই। আমরাও হাসতে চাই। ক্রমে চিঠির সংখ্যা বাড়তে থাকে আমাদের। ঘোষণাহীন কোনো এক বিকেলে আমরা হাসির হদিসে বেরিয়ে পড়ি। নরম ঘাসের হৃদয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমরা আনন্দ হাতড়ে বেড়াই। ঘাসের হৃদয়ে সবুজের আনন্দ নেই। এক মুঠো আনন্দের জন্য কী নির্লিপ্তের ন্যায় তাকিয়ে আছে জলাঙ্গীর ঢেউ! ধানসিঁড়ি ডিঙিয়ে নাগাল পাই কলমিলতা গ্রাম। কুমড়ো ফুলের জঠরে হলুদের আনন্দ নেই। শঙ্খচিল শালিকের পালকে আকাশের আনন্দ নেই। শিশিরের শব্দের মতো দিগন্তব্যাপী সন্ধ্যা নামে। ফের শহুরে হাওয়ায় ফিরি। ট্রাফিক জ্যামে আটকে যায় আমাদের অভিযাত্রা। লাল সিগন্যালে অপেক্ষা আরো দীর্ঘ হয়। নাতিদীর্ঘ স্বপ্নের বুদ্বুদে বুঁদ হয়ে থাকি। আশার ফানুস উড়াই। শহরের ফটক ফসকে একটা জাদুঘর লাফিয়ে পড়ে আমাদের ভিড়ে। আমরা হুড়মুড়িয়ে হারাতে থাকি ভিড়ের গর্ভাশয়ে। কোনো এক স্বাধীনতা দিবসের রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে পিতামহ বলেছিল, ‘আমরা কোনো একদিন আনন্দ হব জাদুঘরে।’

    আমরা একটা উপায় পেয়ে অধীর ও উন্মুখ হয়ে পড়ি। জন্মান্ধ উন্মুখতায় মুখর হতে থাকে আমাদের স্বপ্ন ও আশা। এই তো পথ ও পালক—আমরা চিৎকার করতে করতে জাদুঘরে আসি। প্রাঙ্গণে অনন্তকাল ধরে নিষ্প্রভ এক ভাস্কর্যের মতো দাঁড়িয়ে আছে কোনো এক প্রহরী। হয়তোবা সেও জানে না আরো কতকাল তাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। আর আমরা বেদানার দানার মতো সমবেদনায় সংগোপনে লাল হতে হতে প্রতিটি কক্ষে প্রবেশ করি। পিতার হাসিটা হিম হয়ে তর্জনী তুলে আজও বুক পেতে দাঁড়িয়ে আছে। পৃথিবীর যাবতীয় বন্দুক এই বুকের জন্য যথেষ্ট নয়। স্বাধীনতার আনন্দে ঘুণপোকাদের কামড়ের হল্লা। কোনো বিভা নেই। কোনো আরোগ্য নেই। কেবল বিপুল বিভ্রম। কেবল পাথরে পাথর ঘষে অগ্নিগিরির ন্যায় উদ্্গত প্রস্তরকাল দেদীপ্যমান। আমরা মধ্যযুগীয় চাবুকের আঘাত পিঠে নিয়ে জাদুঘর থেকে বের হই। খঞ্জর ও ক্ষত বয়ে বেড়াই দিনের পর দিন। রাতের পর রাত কেটে যায় ল্যাম্পপোস্টের নিচে।

    শেষ কবে হেসেছি? কোন সে কালে? হয়তো হরপ্পায়। হয়তো সেন শাসনামলে। হয়তোবা পাল যুগে। আমাদের পূর্বপুরুষদের হাসি কেমন ছিল? হয়তো মাতৃস্তন্যের ন্যায় গোলগাল। হয়তো প্রিয়তমার তিল পড়া চিবুকের মতো নোনতাময়। হয়তো মধ্যযুগীয় কোনো এক চাবুকের শব্দের মতো প্রবল প্রতিশোধপরায়ণ। হয়তোবা জন্মান্ধ শব্দগুচ্ছের মতো অপার আরাধ্যময়। অনেকগুলি অনুমানের উপর আমরা হাঁটছি। আর হাঁপরের ন্যায় কেউ আমাদের অভিযাত্রায় উসকে দিচ্ছে কতগুলো অন্ধ অনুমান।

    শেষ কবে হেসেছি? আমাদের মনে পড়ে। মনে পড়ে না। আমরা মনের উপর মনে করবার জুলুম করি। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আমাদের এই জুলুম জ্বলজ্বলে পৃথিবীর সমূহ আয়নায়।

    হাসি প্রশিক্ষণ
    7 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ৩ জুন, ২০২৩ , ৯:৫৭ অপরাহ্ণ

    আওলিয়া

    আউটসোর্সিং কোম্পানির চাকুরিটা নাজমা বেগমের মন্দ যাচ্ছে না। ওর পদবি হলো সিকিউরিটি গার্ড কাম পিওন। তবে নাজমা বেগম নিরাপত্তার কাজ কিছুই করে না। সকালে অফিসে ঢুকেই চিফ স্যারের কক্ষের চেয়ার টেবিল মুছে কাগজপত্র ফাইল ঠিকঠাক করে রাখে আর দরোজার বাইরে টুলে বসে থাকবে বেলা পাঁচটা পর্যন্ত। কোনো গেস্ট এলে চা কফি বা গ্রিন টি সাথে লেক্সাস বিস্কিট যোগাড় করে সামনে দিয়ে আসবে। মাঝে মাঝে কাঁটাবনের পশ্চিমপাশের যে ভাগ্যকুল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার আছে ওখান থেকে কিছু সিঙ্গাড়া, ছানা মিষ্টি বা সমুচা অথবা মিনি চায়নিজ রেস্তোঁরা থেকে শরমা এনে দেওয়াও তারই কাজ। আরেকটি কাজ তার করতে হয় দুপুরে। লাঞ্চ শেষ করে বেল টিপলে স্যারের খাবারের প্লেট ধুয়ে টিফিন ক্যারিয়ারে ভরে রাখা। ও হ্যাঁ, স্যারের নিষেধ আছে দুপুরে খাবারের পর যেন বিশ-ত্রিশ মিনিট কেউ তার রুমে না ঢোকে। স্যার নাক ডেকে হালকা ঘুম দেন, অলসতা কাটান, ন্যাপ নেন।

    নাজমা বেগমের বেতন গেল বছর থেকে চৌদ্দ হাজারে উন্নীত হয়েছে, তাতে স্বামীর চাকুরি আর তিন সন্তানের সংসার চলে যাচ্ছে, মন্দ নয়। কিন্তু সম্প্রতি নাজমা বেগম তার জীবনে একটি বড় পরিবর্তন যোগ করে ঘরের সবাইকে অবাক করে দেয়। একদিন অফিস থেকে ফিরে স্বামীকে বলে-আমি কাল থেকে বোরকা পড়ব, হেজাব ধরব। ব্যবস্থা করো। স্বামী প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেনি বিষয়টি। যে মহিলাকে বলে বলে সাধারণ শালীনতায় ঢুকাতে পারেনি স্বামী, সে কি না বোরকা আর হিজাব পড়বে-অবিশ্বাস্য। স্বামী রহমত উল্লাহ অবাক হয়েই স্ত্রীর দিকে চোখ রেখে বলে-ফাজলামো করছো না কি সত্যি সত্যি।

    -বললামতো বোরকা কিনতে বিকেলে যাব। আমার কছে টাকা নেই তবে বেতন পেলেই তোমাকে বোরকার টাকা শোধ করে দেবো।

    রহমত উল্লাহ ভাবনায় পড়ে গেল। কোথাও কোনো সমস্যা বেঁধেছে মনে হলো। সে প্রশ্ন করে–অফিসে কোনো সমস্যা ?

    -না কোনো সমস্যা নেই কোথাও। কেন মানুষ কি পরিবর্তন করতে পারে না নিজেকে? ও হা তুমিও নামাজ পড়বে পাঁচ ওয়াক্ত। এবার রহমত উল্লাহর বিস্ময়ের শেষ থাকে না। সে তো নামাজ পড়েই, শুধু মাঝে মাঝে তাও মাসে একবার বা দুবার ফজরের নামাজ বাদ পড়ে যায়। সেটির কারণও নাজমা ভালো জানে।

    তো বোরকা আনা হলো, হিজাব পড়া হলো, অফিস চলছে যথারীতি। রহমত উল্লাহর অন্তরে এক নতুন কাঁটা প্রবেশ করে খোঁচাতে থাকে না জানি কদিন পর নাজমা বেগম হাত মোজা ও পায়ের মোজা কিনতে বলে। অবশ্য সেরকম কিছুই ঘটেনি। নীরবে সংসার করে যাচ্ছে সবাই। তিন সন্তানই বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাসে পড়ছে। নিজেরাই যেতে পারে ওরা, একসাথে বের হয় নিউ পল্টন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ওরা। নাইন সেভেন আর ছোটটি ফোর।

    মাস দুয়েক হলো নাজমা বেগমের জীবনাচার বদলে গেল। ইদানীং সে তাহাজ্জুদ নামাজ ধরেছে। ফজরের অনেক আগেই ওঠে পড়ে। যে মানুষ ফজরের পর উঠত এবং মাঝে মাঝে রহমত উল্লাহ সকালের নাস্তা মুখে না দিয়েই বিদ্যালয়ে চলে যেত সেই নাজমা নিজের, স্বামী ও ছেলেদের নাস্তা সব ঠিকঠাক করে অফিসে বের হয়। সে খুব কম কথা বলে আজকাল। তবে তার ইবাদত বন্দেগির কারিশমায় এই যে পরিবর্তন তার প্রভাব পড়ে রহমত উল্লাহ ওপরও। এখন রহমত উল্লাহর কোনো ফজরের নামাজই বাদ পড়ে না। নাজমারতো বাদ পড়ার প্রশ্নই ওঠে না।

    গেল দুবছর থেকেই ওদের সংসারের সংকট পাহাড়সম হয়ে যায় এই শহরে, তখন বাজারের তালিকা থেকে কেনাকাটার অনেক আইটেম বাদ পড়ে। অপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার বিষয়টি নাজমা নিজেই মনিটরিং করে ছোট করে দেয়। যখন বাজার খরচের কথা বলবে বা স্লিপে লিখবে কিছু তখন রহমত উল্লাহ খেয়াল করে স্ত্রী বিড়বিড় করে ঠোঁট নাড়াচাড়া করছে। হয়তো জিকির-আজকারে মশগুল থাকে।

    কিন্তু নাজমা ঠিকই টের পায় যে বাজারে আগুন লেগে আছে। নিজের চৌদ্দ হাজার আর স্বামীর বেতন দিয়েও বাসাভাড়া সন্তানদের স্কুলের বেতন আর সংসার আগের মতো চলছে না। চলছে কোনো রকম ব্রয়লার মুরগীর মতো ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে অথবা মালামাল ভরা ভ্যান গাড়ির মতো ধীরে ধীরে। জীবন যেন রাজধানীর ট্রাফিক জ্যামের মতো, জ্যামে বসে থেকেই মোবাইলে দীর্ঘ কবিতা লেখা যায়, নাস্তা সেরে নেওয়া যায় বা শিশুকালের অনেক স্মৃতি রোমন্থন করা যায়। জীবন এখন খুব স্লো চারদিকেই।

    নাজমা বেগমের নজরে বাজারের এই চড়া মূল্যের বিষয়টি আনলেও সে স্বামীকে বলে-ধৈর্য ধরো। আল্লাহ সব ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু রহমত উল্লাহ অধীর হয়ে বাজারে গেলেও অনেক দেরি করে ঘরে ফেরে কারণ সদাইপাতি যা কেনে তাতে নিজের ভেতর কোনো তৃপ্তি আসে না। তাই বাজারেই অস্থির হয়ে মাথা খাটাতে থাকে। সে এখন দেশি মুরগি না কিনে ব্রয়লার কেনে, গরুর মাংস না কিনে মাথা কেনে, খাসির মাংস না কিনে পায়া কেনে এবং হিসেব মেলাতে মেলাতে ঘেমে শেষ পর্যন্ত শোল বোয়াল রুই মাছ না নিয়ে তেলাপোয়া বা পাঙ্গাস মাছের দোকানে পায়চারি করে। অবশেষে ওই পাবদা বা তেলাপোয়া নিয়েই ঘরে ফেরে।

    নাজমা বেগম তাতেও রাগ করে না, কোনো প্রকার অনুযোগও নেই তার। মাঝে মাঝে রহমত উল্লাহ ইচ্ছে করেই স্ত্রীর মেজাজ বুঝার চেষ্টা করে। সে ফ্যান ছেড়ে বসতে চাইলে নাজমা বলে–ওই জানালার কাছে বসো বাতাস আছেতো। রহমত উল্লাহ তাই করে। জানালার কাছে বসেই নাজমার দিকে তাকিয়ে বলবে–নাজমা তুমিতো এখন আওলিয়া হয়ে গেছো। সংসারতো চলছে না। কিছু বললেই বলো ধৈর্য ধরো আল্লাহ সব ব্যবস্থা করে দেবেন। সামনে যে বাচ্চাদের ভর্তি আর বাসাভাড়া বাড়বে তখন কী হবে ?

    স্বামীর দিকে চেয়ে নাজমা বলে–একবার ভাবো দেশের কোটি কোটি মানুষ কত অসহায় জীবন চালাচ্ছে। কত মানুষের চাকুরি ব্যবসা নেই, কত মানুষের ঢাকায় থাকার ব্যবস্থা নেই। আর আমরা দু‘জনই চাকুরি করছি। হয়তো বেতন অনেক কম। তবু যেভাবে চলছি তা কি আল্লাহ করে দিচ্ছেন না ?

    আওলিয়ার একথার জবাব নেই রহমত উল্লাহর মুখে। সে বলে–আচ্চা হয়েছে হয়েছে, এবার আমাকে এককাপ চা দাও। ..চা হলো কিন্তু নাজমার জন্য চা আসেনি। –তোমার চা কোথায় ? জবাব এলো–আমি চা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।

    রহমত উল্লাহ সত্যি এবার স্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতায় নুয়ে পড়ল। তার মনে হলো যে মানসিক শক্তি সহনশীলতা ধৈর্য তার ভেতর জন্ম নিয়েছে, যে শক্তিতে ভর করে সংসার ধরে রেখেছে নাজমা, তা এই সংকটময় সময়ে সব ঘরেই প্রয়োজন। যে নারীটি এক সময় নিজের হাত খুলে চলেছে, যে বাজারে গিয়ে নিজের জন্য, স্বামীর জন্য এবং আত্বীয় স্বজনের জন্য অনেক কেনাকাটা করেছে, সেই নারীর এই পরিবর্তন তাকে অবাক না করে পারে না। আর তার পরিবর্তন তার আমল সত্যি প্রশংসা করার মতোই।

    রহমত উল্লাহ মজা করেই স্ত্রীকে একদিন ‘আওলিয়া’ বলেছিল। কিন্তু এখন বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ সে দেখতে পাচ্ছে যে নাজমা বেগমের ভেতর সত্যি এক অন্যমাত্রার ধর্মীয়বোধ ঘটছে এবং যদিও ঘরে অভাব লেগেছে কিন্তু মনের ভেতর ভিন্ন এক প্রশান্তির শীতল বাতাস বয়ে যাচ্ছে।

    গত রাতে আওলিয়া চিংড়ি মাছ স্বপ্নে দেখেছে। চিংড়ি মাছ স্বপ্নে দেখলে নাকি অর্থের সন্ধান আসে। সে আজ ভোরে আরো দুরাকাত নফল নামাজ অতিরিক্ত আদায় করে। স্বামীকে বলে তার স্বপ্নের কথা। রহমত উল্লাহ অবাক হয়। কীভাবে আওলিয়ার এই স্বপ্ন সত্যি হলো! গতকালই রহমত উল্লাহ স্কুল থেকে দু‘বছর আগের খাতা দেখার একটি বিল পেয়েছে। তেরো হাজার চারশত আশি টাকা। কিন্তু এই অর্থপ্রাপ্তির সংবাদটি সে আওলিয়াকে এখনো বলেনি। সে শুধু আওলিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।

    আওলিয়া
    5 Views

    জাকির আহমদ

    ৩ জুন, ২০২৩ , ৯:৩১ অপরাহ্ণ

    পাঠক মুগ্ধ হবেন নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি

    মজনুর রহমান যেখানে সম্পাদক, সেখানে বানান ভুল! মানা যায় না।-এই নেতিবাচক বাক্য দিয়েই শুরু করলাম। তবে এটাও একদম ঠিক যে, “মুগ্ধতা ডট কম” ইতোমধ্যেই একটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে আমাদের সাহিত্যাঙ্গনে। “শনিবারের চিঠি” আয়োজন ইতিবাচক তো বটেই। এই কারণে ইতিবাচক যে, ব্যস্ততার অজুহাতে যে আমি “পড়া” ছেড়েই দিয়েছিলাম! সেই আমাকে দিয়েই পড়িয়ে নিলো পাঁচটি কবিতা, তিনটি ছড়া, দুইটি গল্প, নন-ফিকশন ও পাঠ প্রতিক্রিয়ার মতো দুটি দীর্ঘ গদ্যসহ পুরো “শনিবারের চিঠি”! শুধু তাই নয় আমাকে দিয়েই লিখে নিতে সক্ষম হয়েছে এই ‘পাঠ প্রতিক্রিয়া’!

    তৃণলতা কুরচির ‘আবর্তন’, আকিব শিকদার এর ‘একরোখা’, আদিল ফকির এর ‘মানুষ’, আমার নিজের লেখা ‘আমার বাড়ি বলে কিছু নাই আমি উদ্বাস্তু’ এবং ময়না মনির ‘মনে পড়ছে তোমায়’ কবিতাগুলো ভালো লেগেছে।

    সোহানুর রহমান শাহীন ভাইয়ের কবিতা এবং গদ্য দুর্দান্ত তবে ছড়া লিখতেও যে তিনি সিদ্ধহস্ত।

    ছড়া ‘সাম্যের কবি নজরুল’ পাঠে তা সহযেই বোঝা যায়। এছাড়াও মজনু মিয়ার প্রিয় নজরুল এবং ফজলে রাব্বীর ওরাই স্বাধীন ছড়া দুটি ভালো লেগেছে।

    মোকাদ্দেস-এ-রাব্বী শিশুসাহিত্যে একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে ইতোমধ্যেই। তার বড়োদের লেখাতেও যে সমান দক্ষতা রয়েছে

    ঠোঁটের ভাষা গল্প পাঠে তা বোঝা যায়। নূরুন্নাহার বেগম এর ‘জীবনসুখ’ গল্পে যে গল্প বলতে চেয়েছেন সেটি পুরোনো গল্প, গল্পের যে বাঁক পরিবর্তন হয়েছে বর্তমানে লেখক সেই পথে হাঁটতে পারেননি।

    ভ্রমণ সাহিত্য নিয়ে প্রমথ রায়ের নন-ফিকশন বিভাগের লেখাটি তত্ত্ববহুল।

    নির্বাচিত স্ট্যাটাসে সরকার আমিন এর ‘তিনি কবিই ছিলেন, আমলা হতে চান নাই’ পাঠে একই সাথে আনন্দ এবং বেদনা জাগাতে সক্ষম হয়েছে। হাবীবুল্লাহ সিরাজীর ‘অনন্তে মিশে যাবার দিবস’এ তাঁকে নিয়ে লেখকের স্মৃতিচারণ নিশ্চয়ই পাঠকদের ভালো লাগবে।

    আল আমিন হোসেন এর নির্বাচিত ছবি ‘শনিবারের চিঠি’তে ভিন্নামাত্রা যোগ করেছে।

    চিরায়ত পাঠে কাজী নজরুল ইসলাম এর ‘লিচু চোর’ আবার পড়ার সুযোগ করে দিয়েছে, সেইসাথে কবির জন্মদিবস স্মরণে “মুগ্ধতা ডট কম” এর তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের এই পদ্ধতি ভালো লেগেছে।

    পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখতে গিয়ে মুহাম্মদ খালিদ সাইফুল্লাহ্ মে ভূমিকা টেনেছেন সেটি বাহুল্য বলে মনে হয়েছে।

    ‘মুগ্ধতা ডট কম’ এর ‘শনিবারের চিঠি’ নিয়মিত প্রকাশ নিঃসন্দেহে একটি একটি কঠিন কাজ! এই কঠিন কাজটি যারা করে যাচ্ছেন তাঁদের সবার জন্য ভালোবাসা।

    তবে ‘মজনুর রহমান যেখানে সম্পাদক, সেখানে বানান ভুল! মানা যায় না’। বানানের বিষয়ে আরো সতর্ক থাকতে হবে।

    ‘মুগ্ধতা ডট কম’ এর ‘শনিবারের চিঠি’তে পাঠক মুগ্ধ হবেন নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি।

    পাঠক মুগ্ধ হবেন নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি 
    12 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ৩ জুন, ২০২৩ , ৯:২৯ অপরাহ্ণ

    পৃথিবীর পিতা

    সকলের আগে যাহাকে লোকে রাজা বলিয়াছিল, তাহার নাম ছিল পৃথু। তিনি সূর্যবংশের লোক ছিলেন, তাঁহার পিতার নাম ছিল বেণ। ‘রাজা’ কিনা, যে ‘রঞ্জন’ করে অর্থাৎ খুশি রাখে। পৃথু নানারকমে প্রজাদিগকে খুশি করিয়াছিলেন, তাই সকলে মিলিয়া তাঁহাকে ‘রাজা’ নাম দিয়াছিল। পৃথুর পূর্বে লোকের দিন বড়ই কষ্টে যাইত। সেকালে গ্রাম নগর পথঘাট কিছুই ছিল না, ঝোপে জঙ্গলে, পর্বতের গুহায় সকলে বাস করিত। পৃথু তাহাদিগকে বাড়ি-ঘর বাঁধিয়া এক জায়গায় থাকিতে শিখান। আর পথ বানাইয়া চলাফেরার সুবিধা করিয়া দেন। সেই হইতে শহর বস্তির সৃষ্টি হইল। সে কালের লোকে চাষবাস করিতে জনিত না। ফলমূল খাইয়া অতি কষ্টে দিন কাটাইত।

    জমিতে কাঁকর, আকাশে মেঘ নাই; খট্‌খটে শুকনো মাটি ফাটিয়া চৌচির হইয়া আছে, তাহাতে শস্য জন্মাইতে গেলেও তাহা হয় না। প্রজারা পৃথুকে বলিল, “হে রাজা, পৃথিবী সকল শস্য খাইয়া বসিয়াছে, আমরা কেমন করিয়া বঁচিব? ক্ষুধায় বড়ই কষ্ট পাইতেছি আমাদিগকে শস্য আনিয়া দাও।”

    পৃথু বলিলেন, “বটে, পৃথিবীর এমন কাজ? শস্য সব খাইয়া বসিয়াছে? আচ্ছা এখনি ইহার সাজা দিতেছি। আন তো রে ধনুক, নিয়ে আয় তো তীর।”

    পৃথিবী ভাবিল, “মাগো, মারিয়াই ফেলে বুঝি।”

    সে প্রাণের ভয়ে গাই সাজিয়া লেজ উঁচু করিয়া ছুটিয়া পালাইতে লাগিল। কিন্তু পৃথুর বড়ই রাগ হইয়াছিল, তিনি তাহাকে কিছুতেই ছড়িলেন না। আকাশ পাতাল ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিল, ব্রহ্মলোক অবধি ছুটয়া গেল; কিছুতেই সে তাঁহাকে এড়াইতে পারিল না। তখন পৃথিবী কাঁপিতে কাঁপিতে বলিল, “দোহাই মহারাজ! আমি স্ত্রীলোক, আমাকে মারিলে আপনার পাপ হইবে।”

     পৃথু বলিলেন, “তুমি ভারি দুষ্ট। তোমাকে মারিলে অনেক উপকার হইবে। কাজেই ইহাতে পাপ নাই বরং পুণ্য আছে।”

    পৃথিবী বলিল, “প্রজাদের যে উপকার হইবে বলিতেছেন, আমি মরিলে তাহারা থাকিবে কোথায়?”

    পৃথু বলিলেন, “কেন? আমি তপস্যা করিয়া তাহদের থাকিবার জায়গা করিব।”

    পৃথিবী বলিল, “আমাকে মারিলে শস্য পাওয়া যাইবে না; শস্য পাইবার উপায় আমি বলিতেছি। সে আর এখন শস্য নাই, আমার পেটে হজম হইয়া দুধ হইয়া গিয়াছে। আমাকে দোহাইলে সেই দুধ পাইতে পারেন। কিন্তু একটি বাছুর চাই, নহিলে দুধ বাহির হইবে না। আর জমির উঁচু নিচু দূর করিয়া দিন, যেন দুধ দাঁড়াইতে পারে, গড়াইয়া না চলিয়া যায়।”

    রাজা তখনই ধনুকের আগা দিয়া জমির উপরকার টিপি সরাইয়া দিলেন। তাহাতে জমি সমান হইল, আর ঢিপি সকল এক এক জায়গায় জড় হইয়া পর্বতের সৃষ্টি হইল। সমান জমির উপরে দুধ ছড়ান যাইতে পারে। সেই বাছুর হইলেন স্বয়ম্ভূব মনু। এমন বাছুর তো আর সহজে পাওয়া যায় না, তাঁহাকে দেখিয়াই গাইয়ের বাঁট দিয়া দুধ ঝরিতে লাগিল। তখন পৃথু নিজ হাতে গাই দোহাইতে লাগিলেন। সে আশ্চর্য গাই না জানি কতই দুধ দিয়াছিল। সংসারে যত শস্য, সকলই তাহাকে দোহাইয়া পাওয়া গেল, সেই শস্য খাইয়া এখনো আমরা বাঁচিয়া আছি। শুধু তাহাই নহে, পৃথুর পরে দেব, দানো, যক্ষ, রাক্ষস প্রভৃতি সকলে আসিয়া সেই গাই দোহাইতে লাগিল। সকলেই নিজের নিজের বাসন আনিল। নিজেদের এক একটি বাছুর ঠিক করিয়া আনিল, দোহাইবার লোক অবধি আনিতে ভুলিল না। কেহ সোনার বাসনে, কেহ রূপার বাসনে, কেহ লোহার হাঁড়িতে, কেহ পাথরের বাটিতে, কেহ লাউয়ের খোলায়, কেহ পদ্মপাতায় এমনি করিয়া তাহারা কতরকমের জিনিসে যে দোহাইয়া নিল, তাহা বলিয়া শেষ করা যায় না। তথাপি দুধে কম পড়ে নাই।

    পৃথিবীও বঁচিয়া গেল। এত জিনিস যাহার কাছে পাওয়া যায়, তাহাকে কি বুদ্ধিমান লোকে মারে? কাজেই পৃথু তাহাকে ছাড়িয়া দিলেন।

    পৃথু তাহাকে প্রাণদান করিয়াছিলেন, তাই আজও পৃথিবী বাঁচিয়া আছে— আর, প্রাণ দিয়াছিলেন বলিয়াই পৃথু পৃথিবীর পিতার তুল্য হইলেন। সেইজন্যই পৃথিবীকে পৃথুর কন্যা বলা হয়, আর তাহার নাম হইয়াছে ‘পৃথিবী’ বা ‘পৃথ্বী’।

    যাহা হউক, পৃথিবীর নামের অন্যরূপ অর্থও দেখা যায়। পৃথ্বী বলিতে খুব বড়ও বুঝায়। পৃথিবী যে খুবই বড় তাহাও তো আমরা দেখিতেই পাইতেছি। সুতরাং পৃথিবী নাম যথার্থই হইয়াছে।

    [উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী (১২ই মে, ১৮৬৩ – ২০শে ডিসেম্বর, ১৯১৫) বিখ্যাত বাঙালি শিশুসাহিত্যিক, বাংলা ছাপাখানার অগ্রপথিক। তিনি একাধারে লেখক চিত্রকর, প্রকাশক, শখের জ্যোতির্বিদ, বেহালাবাদক ও সুরকার ছিলেন। সন্দেশ পত্রিকা তিনিই শুরু করেন যা পরে তার পুত্র সুকুমার রায় ও পৌত্র সত্যজিৎ রায় সম্পাদনা করেন।]

    পৃথিবীর পিতা
    6 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ৩ জুন, ২০২৩ , ৯:১৬ অপরাহ্ণ

    প্রতীক্ষা.. 

    ছোট্ট এই শব্দটাই জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য!

    দেড় যুগ ধরে প্রতীক্ষা করেছি পৃথিবীতে শান্তি নেমে আসার জন্য ..

    অপ্রত্যাশিত আঘাতের দগদগে ক্ষতগুলো শুকোনোর জন্য..

    নতুন কোনো ঝড়ে সবকিছু তছনছ না হওয়ার জন্য.. 

    বিপথগামী মানুষগুলোর নিজ পথে ফেরার জন্য… 

    বৃষ্টির মতো ভালবাসায় স্নাত হওয়ার জন্য..!

    অথচ, প্রতীক্ষার শেষ হয়নি।

    অতঃপর….

    ধ্বংসস্তুপের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবার প্রতীক্ষা..

    মৃতমানবী পরিচয়টা চিরতরে মুছে ফেলবার প্রতীক্ষা.. 

    মৃতস্বপ্নগুলো কবর ভেঙে আকাশে ওড়াবার প্রতীক্ষা…

    কিন্তু…….. 

    প্রকৃত প্রতীক্ষা হলো, 

    প্রতীক্ষার শেষ হবে, এই দুরাশা ছেড়ে দেয়ার প্রতীক্ষা

    পৃথিবীর রক্তচক্ষুর আড়ালে চলে যাবার প্রতীক্ষা 

    সমস্ত টানাপোড়েন চির অবসানের প্রতীক্ষা 

    অর্থাৎ, চূড়ান্ত মৃত্যুর জন্য অধৈর্য অপেক্ষা।

    প্রতীক্ষা..
    6 Views

    সোহানুর রহমান শাহীন

    ৩ জুন, ২০২৩ , ৯:১৪ অপরাহ্ণ

    কাঠপেন্সিল পাঠ-পেন্সিল…

    পেন্সিল আমাদের যাপিত জীবনের একটি অপরিহার্য নাম। মানুষ বেঁচে থাকে তার জীবনকর্ম আর মৌলিক চাহিদা নিয়ে। সৃষ্টির সকল কিছুই যেমন তৈরি হয়ে আছে মানুষের জন্য, আবার তৈরিও হচ্ছে বিজ্ঞান চেতনার আলোকে। লিখতে চাইছি পেন্সিল নিয়ে দুয়েক লাইন। পেন্সিল বলতে আমরা সাধারণত লেখার কাজে ব্যবহৃত কাঠপেন্সিলকে সহজে বুঝি। কিন্তু না, নারীদের ব্যবহারের জন্য পরিচিত দু’প্রকারের পেন্সিল আমাদের সামনে দণ্ডায়মান। পেন্সিল স্কার্ট এবং পেন্সিল হিল। কাঠ পেন্সিলের অধিক গুরুত্ব থাকার কারণে শুরুটা করতে চাইছি কাঠপেন্সিল দিয়ে। 

    পেন্সিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বস্তুর নাম। আমাদের শিক্ষা জীবনে প্রথম লেখার উপকরণ হিসেবে পেন্সিলের ভূমিকা অপরিসীম। বাল্যকালে একজন মা তার সন্তানকে লেখার জন্য পেন্সিলের ব্যবহার শেখান প্রথমেই। অক্ষরজ্ঞানহীন একজন বাবা সারাদিন কাজ করে বাড়ি ফেরার সময় মনে করে সন্তনের জন্য পেন্সিল কিনে নিয়ে যান। আবার একজন গ্রামীণ নারী ফেরিওলার কাছে এক সের ধান বিক্রি করে হলেও পেন্সিল কিনে দিয়ে থাকেন সন্তানের পড়া-লেখার জন্য। সদ্য লিখতে থাকা সন্তান যেন সেই পেন্সিল দিয়ে লিখতে লিখতে একদিন অনেক বড় শিক্ষিত মানুষ হতে পারে।

    সময়ের সাথে অনেক কিছু বদল হলেও পেন্সিলের পরিবর্তে আর কিছু আসেনি আমাদের হাতে। পূর্বে এবং পরে চক-শ্লেট ও ম্যাজিক শ্লেট থাকলেও কাঠপেন্সিলের আসনে আসীন হতে পারেনি আর কিছু। তবে এমন একটা সময় ছিল যখন বাঁশের কঞ্চি কলমের মতো কেটে কালির খালি দোয়াতে কাঠ পোড়ানো কয়লা গুড়া করে পানি দিয়ে গুলিয়ে কালি বানিয়ে তালপাতায় লিখত মানুষ।

    শিশুদের লেখার পাশাপাশি এই পেন্সিল খেলনা হিসেবেও ব্যবহৃত হতে দেখা যায় অনেক সময়। যেমন, পেন্সিলে কামড় বসানো, পেন্সিলের মাথায় লাগোয়া রাবারকে চকলেট মনে করে খাওয়া, আঙুলের ফাঁকে পেন্সিল নিয়ে ঘুরানোসহ বিভিন্ন কসরতে খেলা করে থাকেন তারা। ছাত্রজীবনের শুরুতেই অর্থাৎ শৈশবে আমরা চকপেন্সিল দিয়ে শ্লেটে লেখার পর হাতেখড়ির অধ্যায় শেষ করে কাগজে পেন্সিল দিয়ে লেখার অধ্যায় শুরু করি। শৈশবে লেখার জন্য কলম হিসেবে কাঠের পেন্সিলের সাথে প্রথম পরিচয় ঘটে মানুষের। কাঠপেন্সিল যে শুধু শৈশবে লেখার জন্য ব্যবহার হয় তা নয়। খাতায় রুল করা, ছবি আঁকা, হিসেবের কাজে ব্যবহার করা, অডিটে ব্যবহার ইত্যাদি। 

    অনেক কাজেই কাঠপেন্সিলের একটি বিশেষ গুণ রয়েছে যেমন, কাঠপেন্সিল দিয়ে লেখা যে কোনা অক্ষর শব্দ বা বাক্য লেখার পর ভুল হলে তা রাবার দিয়ে মুছে ফেলা যায়। কিন্তু কলম দিয়ে তা সম্ভব নয়। আর এই বিশেষ গুণটির কারণে শৈশবে লেখা শেখাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করার জন্য কাঠপেন্সিল সমাদৃত হয়ে আসছে।

    আজ থেকে পায় পাঁচ’শ বছর আগে মানুষ সর্বপ্রথম পেন্সিল তৈরি করতে শেখে, তবে সেগুলো আজকালের পেন্সিলের মতো ছিল না। একটি গ্রাফাইট খণ্ডকে সরু কতগুলো টুকরা করে তা দিয়ে লেখার কাজ চালাত তখনকার মানুষ। এভাবে অনেক দিন চালানোর পর গ্রাফাইট কেটে আরও চিকন করে তার উপর নরম কাঠের আবরণ দিয়ে নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। 

    বর্তমান আমরা যে পেন্সিল দিয়ে লিখি তা আসে খনিজ পদার্থ থেকে। কাঠপেন্সিলের কাঠের মাঝখানে যে শিস থাকে তা একপ্রকার খনিজ দ্রব্য থেকে তৈরি, যার নাম ‘গ্রাফাইট’। গ্রাফাইট একটি মৌল পদার্থ। কয়লা বা কাঠকয়লা আংগারের একটি বিশিষ্ট শ্রেণি। আংগার দুই বা ততোধিক প্রকারের থাকতে পারে। হীরা ও গ্রাফাইট আংগারের প্রকারভেদ, গ্রাফাইট হীরার মতো উজ্জ্বল নয়। গ্রাফাইটের রং ধূসর বর্ণের আর হীরার রং উজ্জ্বল। গ্রাফাইট সব দেশেই পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি গ্রাফাইট পাওয়া যায় সিংহলে। সেই গ্রাফাইট দিয়ে তৈরি হয় কাঠপেন্সিল। 

    সবচে মজার কথা হলো- গ্রাফাইটকে আগেকার মানুষ মনে করতো সিসা। তাই গ্রাফাইট দিয়ে তৈরি পেন্সিলকে লেড পেন্সিল বলা হতো। পেন্সিল ছাড়াও গ্রাফাইট নানা কাজে ব্যবহৃত হয়। তাই কৃত্রিম উপায়ে গ্রাফাইট তৈরি করতে হয়। ১৮৯৬ সালে ‘এ্যাডওয়ার্ড এ কেশন’ নামের পেন্সিলভানিয়ার একজন বৈজ্ঞানিক এই গ্রাফাইট তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এতে সহজ উপায়ে গ্রাফাইট পাওয়া যায় এবং তা দিয়ে মানুষের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হয়েছে। কৃত্রিম উপায়ে গ্রাফাইট তৈরি করতে মাত্র তিনটি দ্রব্যের প্রয়োজন হয়- বিচূর্ণ কোক, বালু এবং কাঠের গুড়া। এসব দ্রব্য একসঙ্গে মিশিয়ে বিদ্যুৎ চুলায় প্রায় চার হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসে উত্তপ্ত করণে বিশুদ্ধ গ্রাফাইট তৈরি হয়। এখন আর গ্রাফাইট কেটে কাঠপেন্সিল তৈরি হয় না। কাঠের মধ্যে যে শিস থাকে তা শুধু গ্রাফাইট নয়, গ্রাফাইকে ভালো করে গুঁড়া করে নিয়ে এর সঙ্গে পরিমাণমতো কাদামাটি মিশিয়ে ছোট ছোট ছাঁচের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। এসব ছাঁচে সরু সরু লম্বা দণ্ড তৈরি হয়, যাকে আমরা পেন্সিলের শিস বলে থাকি। গ্রাফাইটের গুড়ার সাথে কাদামাটির পরিমাণ কমিয়ে অথবা বাড়িয়ে নরম বা শক্ত উভয় প্রকার শিস তৈরি করা হয়ে থাকে। নরম শিস তৈরি করতে হলে গ্রাফাইটের গুড়ার সঙ্গে অল্প পরিমাণ কাদামাটি মেশাতে হয় এবং পরিমাণমতো উত্তাপ দিতে হয়। আর শক্ত শিস তৈরি করতে হলে কাদামাটি ও উত্তাপ দুই-ই বাড়াতে হয়। পেন্সিল তৈরির এই গ্রাফাইটটি সিংহল ছাড়াও সাইবেরিয়া, আমেরিকা ও ইতালিতে পাওয়া যায়। গ্রাফাইটকে কাঠপেন্সিলের উপযুক্ত শিস তৈরি করে সরু কাঠের দন্ডের মধ্যে প্রবেশ করালে তৈরি হয় কাঠপেন্সিল। 

    দোকান থেকে আমারা অনেকেই ‘এইচ বি’ লেখা পেন্সিল কিনে থাকি, কিন্তু এইচ বি এসেছে ইউরোপ থেকে। ইউরোপে পেন্সিলের ব্যবসা যখন শুরু হয় তখন তাতে এইচ বি লেখা হতো। ইংরেজি অক্ষর ‘এইচ’ হলো ‘ইউনেস’ এর জন্য। এইচ বি হলো ‘ব্ল্যাকনেস’ এর জন্য। অর্থাৎ এইচ বি লেখা কোনো শিস যেটি হলো গ্রাফাইট শক্ত এবং তার রং হয় কালো। নম্বরের প্রশ্নে- গ্রাফাইটের শিস বা কোর কতটা শক্ত তা নির্ধারণ করে এই নাম্বার দিয়ে। ২, ৩, ৪ এই ধরণের সংখ্যাগুলি বোঝায় পেন্সিলের কোর শিস কতটা শক্ত। নাম্বার যত বেশি কোর তত বেশি শক্ত এবং লেখা হয় হালকা। পেন্সিল সম্পর্কে আর একটি তথ্য হলো- আমেরিকায় বানানো বেশিরভাগ পেন্সিলের আবরণের রং হলুদ। এই প্রথা শুরু হয় অষ্ট্রিয়া- হাঙ্গেরিয়ান কোম্পানি এল এন্ড সি আর্ডমুল তাদের সবচে দামি কোহিনুর ব্রান্ডের পেন্সিল বাজারে ছাড়ার পর। সে সময় কোহিনুর ছাড়া অন্যান্য পেন্সিলের রং ছিল হলুদ। পরবর্তীতে অন্যান্য পেন্সিল উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো কোহিনুরের দেখাদেখি একইভাবে তাদের পেন্সিলসহ হলুদ রঙে বাজারজাত করে।

    রং মানুষের দর্শন সংক্রান্ত একটি চিরন্তন ধর্ম। আলোর বর্ণালি থেকে রঙের উৎপত্তি লাভ করে। বিভিন্ন কারণে মানুষের কাছে  রং এর পার্থক্য হয়ে থাকে। সাধারণত বলা হয়ে থাকে মৌলিক রং তিনটি, যথাক্রমে লাল, সবুজ ও নীল। বিভিন্ন ড্রইং বা লেখার ক্ষেত্রে পেন্সিল একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

    এবার পেন্সিলের নামে ভিন্ন পরিচয়। ক্লাসিক ফ্যাশনেবল পোশাক হিসেবে গণ্য করা হয় পেন্সিল স্কার্টকে, পশ্চিমা নারীদের ওয়ারড্রবে থাকা একটি অসাধারণ পোশাকের নাম পেন্সিলস্কার্ট। এটি আঁটোসাটো হওয়ায় চলাচলের সুবিধা হতে পারে বিবেচনা করে সাধারণত এই স্কার্টটির পেছনের দিকে মাঝ বরাবর সামান্য একটু অংশ চিরে দেওয়া থাকে। আবার কিছু ক্ষেত্রে চিরে দেওয়ার বদলে কিছু অংশ ভাঁজ করে দেওয়া হয়। যা আরও বেশি মার্জিত। এই ভাঁজ করার ফলে ভাঁজকৃত অংশ চাহিদা মতো প্রসারিত হয়ে সব বয়সী নারীদের চলাচলে সুবিধা সৃষ্টি করে। 

    পেন্সিল হিলের প্রসঙ্গ এলে বলা যায় আধুনিক মেয়েরা বা ফ্যাশন সচেতন মেয়েরা হিল পরে না এটা ভাবা যায়! আমি মনে করি না। হালের ফ্যাশন জগতে পেন্সিল হিল তার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে। অধিকাংশ মেয়ে বিভিন্ন পার্টি কিংবা বিয়ের অনুষ্ঠানে পেন্সিল হিলকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। পেন্সিল হিল পরলে মেয়েদের যেমন আবেদনময়ী দেখায় তেমনি তারা নিজেরাও স্বাচ্ছন্দ্য মনে করেন। পেন্সিল হিলের কারণে পুরুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ একটু বেশিই হয় তাদের দিকে। তবে পেন্সিল হিলের একটি লক্ষণীয় দিক হচ্ছে- পেন্সিল হিল বিড়ম্বনায় পড়ে অনেক মেয়ে হাঁটতে গিয়ে চিৎপটাং হয়ে পড়ে পায়ের বল্টু পর্যন্ত নড়েচড়ে যায়গা বদল করে বসেছে। আবার বিভিন্ন পার্টিতে দেখা গেছে পেন্সিল হিল পরে দুলিয়ে-খুঁড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ উল্টে পড়ে মাটির সাথে মিশে যায় এবং সেখানে হিপের রসিকতায় পার্টি বর্জন করে বিরস মুখে ফিরে যেতে হয়েছে অনেক নারীকে। 

    পেন্সিল হিল, যা মার্কিন ইংরেজিতে ‘স্পাইক হিল’ নামে পরিচিত একটি চিকন হিলের জুতা। ১৯৩০ এর দশকের শুরুর দিকে এই ধরনের জুতাকে নির্দেশ করতে ‘স্টিলেটোমা ড্যগার’- অর্থাৎ ছুরির সাদৃশ্য পাওয়া যায়। 

    এ ছাড়াও রং পেন্সিল নামে ২০১২ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হূমায়ন আহমেদ এর কিছু প্রবন্ধ নিয়ে সংকলিত গ্রন্থের নাম রং পেন্সিল। 

    তথ্য সহায়ক: ইউকিপিডিয়া।

    কাঠপেন্সিল পাঠ-পেন্সিল...
    6 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ৩ জুন, ২০২৩ , ৯:১০ অপরাহ্ণ

    মগ্ন প্রকৃতির চেনা উঠোন

    আমাকে ধারণ করো মেঘ অনুধাবিত হই এই ভূমণ্ডলের প্রতিটি কোণে।

    ধারণ করো পৃথিবী, দেখে আসি ওই অন্ধকারে যে পতঙ্গের আহার হবো

    দেখে আসি শান্ত প্রকৃতির প্রতিটি শ্বাস কত সহজে—

    বরণ করে ঘাত-প্রতিঘাত। তার আগে কথা রাখা চাই এবার ফিরিয়ে দেবে।

    ওই যে চোখগুলো পথ চেয়ে আছে তাদের জলটুকু ঝরবার আগে 

    চোখ হয়ে উঠি, জাগিয়ে দেই সুতীক্ষ্ম বোধ, অনন্য বিশ্বাসে।

    যেন তারা নিটোল জলীয়বাষ্পে ঘেরা এই প্রান্তরে

    দৈনন্দিন কোলাহল,

    কৃষকের কোটরাগত চোখের নির্লিপ্ত ঘামে

    মজুরের দীপ্তকণ্ঠে, মানবতা পিষ্টকারীর পিঠে

    তীব্র চাবুকের গতিতে দেখে আমাকেই।

    ধারণ করো শিশির মনোরম গীত তুলি প্রখ্যাত কবিদের কবিতায়

    তবু কবি বলো না, কাব্যিক সময়ের মঞ্চে তুলতে বলো না বোবা পা

    দু’হাতে তুলে দিও না ফুল ভালোবাসায়,

    এসব ভীত করে, দখলদারিত্ব হারায় অলক্ষ্যেই আরামের ক্ষণ।

    আমি কিছু নই, কিছু হতে আসিনি। খুব সাধারণ একটা

    মানুষ আমার ভেতর, সেই মানুষেরও নিয়ন্ত্রক আমি নই।

    নিতান্ত মেঠো মজুরের মতো অন্ন যোগাতে রোজ পাঠশালায়।

    এই হাতে প্রত্যহ প্রহারের শিকার হয়-

    কত কাব্যিক শব্দ, যাদের জন্য আমি চেয়েছিলাম 

    শৈশবের চারুপাঠ থেকেই যাযাবর জীবন,

    দূর মাড়িয়ে আসা চাওয়াটা মাঝে-মধ্যে ভ্রমণ বিলাসী হয়ে উঠে

    আমিও বেরিয়ে পড়ি শূন্য হাতেই, কুড়াতে প্রকৃতির সব প্রতিদান।

    আমাকে কিছুতেই কাব্যিক সময়ের মঞ্চ খোলার চাবিটা দিও না,

    যতনেও হারিয়ে যায় যতনের ধন,

    হারিয়েছে আমারও প্রাথমিক পথ।

    পেয়ে যাই তারপর নিজের দিকে তাকালে

    কবিতা নয়, মগ্ন প্রকৃতির চেনা উঠোন।

    মগ্ন প্রকৃতির চেনা উঠোন
    2 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ২৭ মে, ২০২৩ , ১২:০০ অপরাহ্ণ

    ঠোঁটের ভাষা

    লিফটের অবস্থানের স্কিনের দিকে তাকিয়ে আছি। লিফট ৫নং ফ্লোরে স্থির হয়ে আছে। লিফটের স্কিন তাই বলছে। মানে ষষ্ঠ তলা। আমাদের অফিসে ষষ্ঠতলাতে নামাজের স্থান আছে। লিফটের গেটের সাথে পুরুষদের নামাজের স্থান। আর একবারে পূর্বদিকে বামের যে রুম সেই রুমে মেয়েদের নামাজের স্থান। অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের জন্য আলাদা ভাবে নামাজের জন্য স্থান বা নামাজ ঘর নির্ধারিত করা আছে কিনা আমার জানা নেই। এটা ভেবে আমার খুব ভালো লাগে। ষষ্ঠ তলায় আমি আমরা জোহর আর আসরের নামাজ আদায় করি। কখনো কখনো দেরি হয়ে গেলে মাগরিব এর নামাজও আদায় করি। এই একটা জায়গায় গেলে আমি বা ফারহা কেউ কাউকে নক করি না। তবুও মাঝে মাঝে দেখা হয়ে যায়। যেদিন অফিস থেকে বের হতে দুজনারই দেরি হয় সেদিন তো মাগরিবের নামাজের সময় দেখা হবেই।

    ফারহা কি নামাজের জন্য ষষ্ঠ তলায় গেছে। ও আসরের নামাজ পড়ে নি এখনো। আমি নিচে দাঁড়িয়ে ফারহার আসার জন্য অপেক্ষা করছি। ফোনে টেক্সট করেছি। ওকে রিপ্লাইও এসেছে। ষষ্ঠতলা থেকে লিফট নামতে শুরু করেছে। লিফটের স্কিনে সংখ্যা দ্রæত গতিতে পরিবর্তন হচ্ছে। ৫,৪,৩,২,১ এবং জিএফ। লিফট গ্রান্ড ফ্লোরে এসে দাঁড়াতেই স্থির হয়ে গেলাম আমি।  ফারহা কি আছে এবার লিফটে?  নিজের কাছে নিজে প্রশ্ন করি। উত্তর সামনে ডিসপ্লে হচ্ছে। লিফটের দরজা খুলে গেল। স্বস্তি পেলাম। ফারহার চোখ আমার চোখে। চোখের ভাষায় একটু টেনশন টেনশন মনে হচ্ছে।  ঠোঁটের ভাষা কী? আমি ওর ঠোঁটের দিকে তাকালাম। ওর ঠোঁটটা এদিক ওদিক ঘুরলো। আমি ঠোঁটের সে নড়াচড়া ফলো করলাম। ফারহা লিফট থেকে নেমে হন হন করে আমার সামনে দিয়ে বের হয়ে গেল। হায় হায় আমি যার জন্যে অপেক্ষা করছি সে কিনা আমাকে রেখেই চলে যাচ্ছে।   আমার পাশ দিয়ে যাওয়ায় সময় ফারহা ফিসফিস করে বলল, গেটের বাইরে আসেন, গেটের বাইরে আসেন। ভাবলাম গেটের বাইরে যাবার জন্যেই তো বসে আছি। একসাথে গেলে সমস্যাটা কি। অফিস শেষে অনেকেই অফিস থেকে একসাথে বেড়াতে পারে। এতে তো দোষের কিছু নাই।

    কী আর করা একটু অপেক্ষা করে  বের হয়ে গেলাম। যেতে যেতে ফারহার ঠোঁট নিয়ে গবেষনার সাগরে ডুবে গেলাম। ফারহার ঠোঁটে ছোঁয়াচে টাইপের রোগ আছে। সেই ছোঁয়াচে রোগটা আমাকে ছুঁতে চায়। নইলে ওর সেই ঠোঁট কেন আমাকে বার বার টানে। কেন আমি ওর ঠোঁটের ভাষা পড়ার জন্য ব্যকুল হই। এইযে এখন যেমন ব্যাকুল হয়েছি। লিফট থেকে বের হওয়ার সময় ওর ঠোঁট কি বলল তা খোঁজার গবেষনায় বসে গেছি।  ও ওহ ঠোঁট নিয়ে একটা লজ্জার ঘটনা আছে। এটা কাউকে বলা হয় নাই। এটা অবশ্য বলার মতো বিষয়ও না। ঘটনাটা স্বপ্নে। স্বপ্নটা ফারহাকে নিয়ে। সেই স্বপ্ন তো লজ্জায় ফারহাকেও বলা যাবে না। অন্য মানুষকে তো নয়ই।

    আমি ফারহার ঠোঁটে বার বার আঙ্গুল ছোঁয়াচ্ছি। আমার আঙ্গুল গুলো কিলবিল কিলবিল করছে। বার বার ওর ঠোঁট নেড়ে দিচ্ছি।

    ফারহা বলল, কী হচ্ছে?

    – ঠোঁট ছুঁইতেছি। তোমার ঠোঁটে ম্যাগনেট বসানো আছে।

    – ম্যাগনেট!

    – হুম। তা না হলে তোমার ঠোঁট আমাকে কেন এত আর্কষণ করে।

    – ঠোঁটই তো আর্কষণ করবে। সেই আকর্ষন কি শুধু হাতের আঙ্গুলে গিয়ে ঠেকে যায়?

    – মানে?

    – মানে আপনার আঙ্গুলই তো আমার ঠোঁট ছুঁইতেছে। আর অন্য কিছুই তো আকর্ষণ করছে না।

    – অন্য কী আর আকর্ষণ করবে?

    – ঠোঁট ঠোঁটকে আকর্ষণ করবে। সেইরকম আকর্ষণ।

    – যেমন?

    – যেমন এইরকম – – – । কথা শেষ না করেই ফারহা আমার ঠোঁটে তার ঠোঁট লাগালো। এরপর দুই ঠোঁট তাদের আপন গতিতে নড়াচড়া শুরু করলো।

    এরই মধ্যে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। চারিদিকে অন্ধকার। আমি অন্ধকারে আর ফারহাকে খুঁজে পাই না।

    আমি খেয়াল করেছি এই স্বপ্নের পর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে আমি ফারহার ঠোঁট দেখি। না আমার ঠোঁটের সাথে মিলানোর জন্য নয়। আমি ফারহার ঠোঁট দেখি তার ঠোঁটের  ভাষা বোঝার জন্য। আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি যে ফারহা যদি দূর থেকে কারো সাথে কথা বলে। আর সেই কথা আমার কানে না আসলেও তার ঠোঁটের দিকে তাকালে আমি বলে দিতে পারি ও কি বলতেছে।

    লিফট থেকে নামার সময় শব্দ না করেও ঠোঁট দিয়ে গোপনে গোপন যে ভাষা প্রকাশ করেছে আমি তা খোঁজার চেষ্টা করছি। গভীর ভাবে ফারহার ঠোঁট গুলো নিয়ে ভাবছি। ভাবতে ভাবতে আমি ভাষা বের করে ফেললাম। মনে মনে নিজেকে শুনিয়ে নিজেই বললাম ইউরেকা। 

    ফারহা ঠোঁট নড়াচড়া করে গোপনে গোপনে যা বলেছে তা হলো এই, ‘পাগল নাকি! কোথায় দাঁড়ায় আছে! এখানে দাঁড়ায় থাকার কোন মানে হয়।’

    আমি দ্রæত বাইরে বের হয়ে এলাম। দেখলাম ফারহা উত্তর দিকের মোড়ে টং চায়ের দোকানে পাশে দাঁড়িয়ে আছে। দ্রæত পৌছেঁ গেলাম তার কাছে। কাছে যেতেই ও বলল, চলেন চলেন।

    – কোথায় যাব?

    – ক্যাপ্টেন ব্যাকোলজিতে। সেখানে গিয়ে আমরা কফি খাব। বলেই ফারহা হাঁটতে শুরু করলো।

    আজ অবশ্য আমি বাইকটা নিয়ে আসা হয় নাই। তাই ফারহার পাশাপাশি আমিও হাঁটতে থাকলাম। হাঁটতে হাঁটতে ফারহাকে কথা দিয়ে ধরে ফেললাম। বললাম, আমাকে পাগল বললেন কেন?

    – কখন?

    – লিফট থেকে বের হওয়র সময়।

    – বলিনি তো।

    – আমি তো স্পষ্ঠ শুনলাম। আপনি বললেন, ‘পাগল নাকি! কোথায় দাঁড়ায় আছে! এখানে দাঁড়ায় থাকার কোন মানে হয়।

    – এগুলো আমি বলেছি?

    আমি ভাবলাম আমার ঠোঁটের ভাষা পড়া মনে হয় সঠিক হয় নাই। তবুও জোড় গলায় বললাম, আপনি তো বললেন। আমি শুনলাম।

    –  বললে বলেছি। ওভাবে ওখানে দাঁড়ায় থাকার দরকার ছিল। আপনি তো আমার জন্য বাইরেও অপেক্ষা করতে পারতেন। পারতেন না?

    আমি কোন জবাব দেই না। ফারহা আবার বলে অফিসের মানুষরা যাতে উল্টা পাল্টা কিছু না ভাবে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকাই ভালো।

    আমি যেন শূন্যে উড়ছি। ঠোঁটের ভাষা আমি অনুবাদ করতে পেরেছি। এই ভেবে মনটা ফুরফরে লাগছে।

    ক্যাপ্টেন ব্যাকোলজি ফাস্টফুডে ফারহাকে বসিয়ে অর্ডার করার জন্য ক্যাশ কাউন্টারে দাঁড়িয়ে  আছি। অর্ডার করে ১০০০ টাকার নোট দিয়ে বাকি টাকা ফেরত নেয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। ম্যানেজারের দিকে না তাকিয়ে আমি ওখান থেকে ফারহার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছি। ফারহা বার্গারের অর্ডার দিতে বলেছিল। তাই দিয়েছি। হঠাৎ ফারহার ঠোঁট নড়ে উঠলো। আমি ফারহার ঠোঁটের ভাষা অনুবাদ করার চেষ্টা করলাম। ফারহা বলেছে, বার্গার বাদ দিয়ে স্যান্ডউইচ অর্ডার দেয়াই ভালো ছিলো। সাথে সাথে ম্যানেজারের দিকে তাকালাম। ম্যানেজার ব্যাচারা আমার বাকি টাকা হাতে নিয়ে আমাকে দেয়ার জন্য তৈরি হয়ে আছে। বললাম, মনে কিছু না নিলে অর্ডারটা একটু পরিবর্তন করতাম।

    ফারহার কাছে ফিরে এসে সামনে বসলাম। বসে বসে কী আর করি ফারহার ঠোঁট দেখি। ফারহার ঠোঁট এত সুন্দর কেন। নিচের ঠোঁটের ডান কোনে ছোট্র একটা তিল আছে। তিলটা যেন ঠোঁটটাকে আরও সুন্দর করেছে। আর বাম গালে মুখের কাছে বড় তিলটা সেইরকম রুপবতী করে তুলেছে। ফারহার রুপের মধু গোপনে গোপনে পান করি।

    খাবার রেডি। সেলফ সার্ভিস। তাই আমাকে গিয়ে আবার নিয়ে আসতে হলো। স্যান্ডউইচ দেখে সেই রকম অবাক হলো ফারহা। বলল, কি করে বুঝলেন আমি স্যান্ডউইচ চাচ্ছিলাম।

    – আপনি না স্যান্ডউইচ নিয়ে আসতে বললেন।

    – না, আমি বার্গার খেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছিলাম। সেটা তো আর জানানো হয় নাই।

    – না, কেন জানি মনে হলো আপরি স্যান্ডউইচ পছন্দ করেন।

    – যাই হোক। ভালোই হয়েছে। বলেই খেতে শুরু করলো ফারহা।

    আর আমি তো সেই রকম খুশি। আমি ঠোঁটের ভাষা পড়ে ফেলতে পারছি। আচ্ছা আমি সবার ঠোঁটের ভাষা কী অনুবাদ করতে পারব? নিজেকে প্রশ্ন করি মনে মনে। প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে থাকি।

    একটু দূর উঠতি বয়সের দুটো ছেলে মেয়ে বসে গল্প করছে। সেদিকে চোখ গেল আমার। ছেলে মেয়ে দুটো আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। আমার তাকানো দেখে মাথা নিচু করলো। ফিসফিস করে কী জানি বলল ওরা। আমি ওদের ঠোঁটের নড়াচড়া গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখলাম।

    ওদের ঠোঁটের ভাষা অনুবাদ করে ফেললাম।

    মেয়েটা বলছে,ওদের দেখে তোমার কী মনে হয়?

    ছেলেটা বলল, প্রেমিক-প্রেমিকা।

    – নাহ! ওরা প্রেম করছে ঠিকই। কিন্তু সেটা প্রেম না। পরকীয়া।

    – কেমন করে বুঝলে?

    – দেখছো না ছেলেটার মাথায় চুল নাই। টাকলু। আমি নিশ্চিত ও বিবাহিত।

    – হতেও পারে। বলল ছেলেটা।

    ওদের ঠোঁটের ভাষা অনুবাদ করতে পেরে মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমার মাথায় চুল নাই বলে আমি বিবাহিত! এটা কোন কথা! ভাবলাম অন্যের ঠোঁটের ভাষা অনুবাদ করার চেয়ে আমি ফারহার ঠোঁটের অনুবাদ করি। ফারহার ঠোঁটের দিকে আমি তাকাই। কত সুন্দর করে ও ওর ঠোঁট দিয়ে কফিতে চুমুক দিচ্ছে। 

    ঠোঁটের ভাষা
    17 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ২৭ মে, ২০২৩ , ১২:০০ অপরাহ্ণ

    জীবনসুখ 

    হন্তদন্ত হয়ে সুমনা একটানে ছিঁড়ে ফেললো খামটা। পিয়ন এসে খানিকক্ষণ আগেই দিয়ে গেল  চিঠিটা। অন্য সময় চিঠি পেলে সুমনা টেবিলের উপর থেকে কাঁচি নিয়ে যত্ন সহকারে খামের মুখটা খুলে তারপর চিঠি পড়ে। একবার নয় কয়েকবার না পড়লে শান্তি পায় না সে। কি আছে ঐ চিঠিতে ওর চোখে—মুখে চাপা উত্তেজনা।  

    সুমনা,

    তুমিতো জানো, তোমাকে নিয়ে আমার কত স্বপ্ন। স্বপ্ন নয়—প্রেম নয়—মনের ভিতর জেগে  ওঠা বোধ থেকে তোমার কাছে দু’কথা লিখছি। আজ এই সময়ে তোমাকে জানানোর প্রয়োজনীয়তা সব থেকে বেশি বলে মনে করছি। তোমার জন্য  আমি সারাজীবন পথ চেয়ে বসে থাকব।  

    শিহাব 

    শৈশবে বাবার চাকুরিসূত্রে বিভিন্ন জায়গায় কাটাতে হয়েছে সুমনাকে। সুনামগঞ্জে খেলার মাঠে একজন সুঠামদেহী যুবকের মত দেখেছে শিহাবকে সে। শরীরের ভাঁজে ভাঁজে পেশীগুলো যেমন ফোলা আর শক্ত থাকে তেমনি ছিল তার। শ্যামলা বর্ণের, মাথাভর্তি ঘনচুল, বুকের উঁচু পাঁজর, তামাটে চেহারায় পুরুষালি চলনে বলনে দারুণ ভালোলাগা কাজ করেছিল সে সময়। যখন সবে এসএসসি’র দোরগোড়ায় সুমনা। তারপর অনেক বছর।  সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী এখন সে। টেবিল টেনিসের একজন সেই রকম খেলোয়াড়।  মহাবিশ্বের এত মানুষ থাকতে চোখের মনিজুড়ে ছেয়ে আছে শিহাবের অবয়ব আর গগনবিদারী হাসি।  প্রাকটিস করার এক ফাঁকে হঠাৎ থমকে যায় সুমনা।  স্মৃতিতে ঝর ওঠে। যার কথা ওর  মনে,  নিঃসঙ্গ মনের খেলাঘরে যাকে ধরে  রেখেছে এতদিন এইতো সে। একটু এগিয়ে,  “আমি ভুল না করলে আপনি শিহাব ভাইয়া তো? কেমন আছেন?” চেনা যাচ্ছে কিনা ইত্যাকার নানা প্রশ্ন ওর মুখে ।  

    ঠিকই ধরেছেন। আমিই শিহাব। আপনি সুমনা। 

    সুমনা রীতিমতো অবাক।  আর আজ.  … !  

    সুমনাকে একরকম ঘৃণা করে চলে গেছে— যাকনা। তার উপেক্ষার ভাষা,  তার আক্রোশ হঠাৎ—ই জলে ডুবে গেল কেন৷ একটা সময় শিহাবের প্রস্তাবে রাজী হয়নি বলে কত কথাই না শুনিয়েছে। আমরা থাকব একসাথে, কে জানবে আমরা স্বামী—স্ত্রী নই। বাড়ি থেকে  আত্নীয় স্বজন সবাই জানবে আমরা যে যার মত হলে আছি, কখনো মেসে, কখনো আত্নীয় বাড়ি এভাবে যখন যেভাবে বলে কাটিয়ে দেব। চাকরির একটা বন্দোবস্ত হলে—  বৈবাহিক সম্পর্ক পাকাপোক্ত করে নিতে আমাদের আর কালক্ষেপণ হবে না।  তবুও  আমাদের সাধনা, আমাদের ভালোবাসা টিকে থাক। তোমার নিবিড় সান্নিধ্য পেতে আমি আকুল সুমনা। তুমি অমত করোনা লক্ষীটি।  

    সুমনা শিহাবকে প্রচন্ড ভালোবাসে। কিন্তু তার মানে এই নয় লিভ টুগেদার করতে হবে।  জীবন অনেক বড় পথ। সব প্রস্তাবে রাজী হলে জীবন জটিলতায় ভেসে যাবে।  অনৈতিকতা চাপা থাকে না। ক্ষুধা মিটে গেলে ভরা পেটে অনেক ভালো খাবার বিস্বাদ লাগবে। এসব জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে শিখেছে সুমনা।  ও জানে সবকিছু কিতাবে থাকে না। আত্নীয় স্বজন, বন্ধু, পরিবেশ থেকে শিখতে হয়। শেখার শেষ নেই। এইতো ক’ দিন আগে ওদের বন্ধু তন্ময়ের ভাবনায় লেখা  ছাড়া কেউ ছিল না। তন্ময় লেখাকে বলেছিল— ‘তোমাকে ছাড়া আমার জীবন অর্থহীন।  তুমি আমার প্রথম ভালোবাসার ফুল। তোমাকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকার কোনো মানে হয় না। ‘ তন্ময় আবার নাজকেও পছন্দ করে। লেখা কয়েকদিন দেখেছে ওদেরকে একই সাথে রিকসায় ঘুরতে।  

    সুমনার কাছে সব অস্পষ্টতা আস্তে—আস্তে পরিষ্কার হতে লাগলো। গোটা—গোটা অক্ষরে লেখা কথা। হঠাৎ কী হলো শিহাবের।  সুমনাদের গ্রামের বাড়ির চারপাশ খােলা চৌহদ্দির একদিকে দু’বিঘা জমি নিয়ে পুকুর। পুকুরের পাড় ঘেঁষে কলা, লেবু গাছ। থোকায় থোকায় লেবু ধরে আছে। লেবু গাছের মাথাটা লেবুর ভাড়ে যাতে নুইয়ে না পড়ে সেজন্য বাঁশের মাচা দিয়ে ঠ্যাকা দেয়া হয়েছে। বাবুই পাখি খেলা করে মাচায়। সেখানে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে, বাচ্চা দেয়।  

    সুমনা কিশোরী  বালিকার মতো ঘাসের আঁচলে মুখ লুকিয়ে শান্তি খোঁজে। বাবুই পাখির  সংসার দেখে। বাতাসের সাথে কথা সারে।  দুপুরের নিঃসঙ্গ আবহে লাল পেড়ে সাদা শাড়ি কপালে লাল টিপ ওষ্ঠে রাঙা হাসি শিহাবের ভীষন পছন্দের সাজ। বিশ্ববিদ্যালয় ছুটিতে  সুমনা বাড়িতে এলে এমন সাজে নিজেকে হরহামেশাই সাজায় ও। আশ—পাশের ভগ্নিপতিরা এমন সাজে ওকে দেখলে নানা ভঙিতে টিপ্পুনি কাটা চাই।  

    —কী ব্যাপার কোনো খবর আছে নাকি সুমনা,  আমরা কি আগামীতে খাওয়া দাওয়া পাচ্ছি কিছু?  

    —গা নাড়িয়ে বেশ করে বললো আরেকজন,  তাহলে তো আমাদের মূল্য কমলো বলে।  নতুনকে, নিয়ে নাচা-গানা হবে আমরা তখন কে কোথায়? খবর—নেয়ার কেউ থাকবে না আমাদের। কপাল চাপড়ে আমাদের বাড়ি থেকে বিদায় নিতে হবে।  

    ধমকের সুরে থামিয়ে দিয়ে বললো কেন আপনারা কি খেতে পান না না কি অযত্ন করা হয় এত রসিয়ে বানিয়ে কথা বলছেন? আচ্ছা মানলাম এখন না হোক দুদিন বাদে তোমার খবর কে রক্ষা করে দেখা যাবে। কোথায় থাকে এই মহব্বত?  

    তা, তোমার ডুবে—ডুবে জল খাওয়া শরীর  ভিজে সর্দি হয়নি তো। কথা বেশি হচ্ছে  দুলাভাই। আকাশটা অনেক বড়। চাঁদ উঠলে সবাই জানবে। আপনারা আগেই জানবেন।  

    সুমনা কথা জানে। আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। 

    শিহাব দ্রুত গতিতে হাঁটছে। বুকের ভেতর উতাল পাথাল যন্ত্রণার ঝর। তার বিশ্বাসের কপাট থেকে এক চুল নড়তে রাজি না।  আত্মবিশ্বাসে দৃপ্ত বলীয়ান সে। সুমনাকে সাথে নিয়ে পা দু’ টোকে শক্ত মাটির বুকে স্থিরভাবে রাখবে ভেবে আজ এই মুহূর্তে সুমনাকে তার খুব প্রয়োজন। সে জানেনা সুমনা কোথায়।  চিঠি লিখেও উত্তর মেলেনি। মোবাইল বন্ধ।  আসলে ও প্রচন্ড মাইন্ড করেছে। ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওর পাশে থাকার কথা ছিল।  শিহাবের পছন্দ অপছন্দ ইচ্ছা অনিচ্ছাকে সবসময় প্রাধান্য দিয়ে এসেছে। কখনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। শিহাবের শেষ খেলাটাই সে দেখতে চেয়েছিল। শিহাব তার কথা আসলে ওভাবে বলা মোটেই উচিত হয়নি। দেখা, হলে নাহয় সরি বলে নেবে। এক রাশ অভিমান আর লজ্জা এসে জমাট বেঁধেছে ওর বুকে।  

    তারপরেও শিহাব মনে করছে সুমনার সাথে তার দেখা হওয়া দরকার। বাড়ি পৌঁছে নিজ ঘরের খোলা জানালায় চোখ রাখে শিহাব।  সোনালী আলোর পরশে বাগানের হলুদ ফুলগুলো যৌবনবতী। ফুলের মৌ মৌ গন্ধ হৃদয় নাড়া দেয়।  

    নির্মল শান্তির খোঁজে পিছনের দরজা দিয়ে বারান্দায় পায়চারী করছে সে। ফোনটা বেজে উঠে শিহাবের। কল লিস্টে সুমনার নাম।  হাসবে, কাঁদবে নাকি আনন্দে চিৎকার দেবে জানেনা।  

    হ্যালো—বলার সুযোগ না দিয়েই ফোনটা ধরেই আমি সুমনা বলছি— তুমি কি একটু টি এস সি—তে আসবে?  

    হঠাৎ কথা নেই বার্তা নেই টি এস সি—র ভূত মাথায় নিয়ে ফোন!  কারণ, জিজ্ঞেস না করেই উত্তর দেয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে।  আসছি,  ওয়েট এ বিট। 

    চকিতে শিহাবের মনে পড়ে যায় আজ সুমনার জন্মদিন। ওতো বেমালুম ভুলে সারা। ওর স্মৃতির ভাঁজে—ভাঁজে অতীতের প্রথম উপলব্ধি ওর অন্তর জুড়ে। বুকের মাঝে  নিস্তরঙ্গ শান্ত যন্ত্রণাগুলো সরিয়ে বিমুগ্ধ ভালোবাসাগুলো রমনীয় শিস তোলে। সুমনা আমি আমার ভুলের  জন্য দুঃখিত। তুমি  আমাকে ক্ষমা কর সুমনা।  আমি শুধু চাই তোমার সুখ, তোমার শান্তি, তোমার আমার প্রেমময় জীবনের সার্থকতা।

    জীবনসুখ 
    6 Views

    জাকির আহমদ

    ২৭ মে, ২০২৩ , ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ

    আমার বাড়ি বলে কিছু নাই আমি উদ্বাস্তু

    মূলত আমার বাড়ি বলে কিছু নেই, থাকার জায়গাকে তো আর বাড়ি বলে না!

    বাড়ি আসলে কারোরই থাকে না, যা থাকে তা হলো থাকার জায়গা মাত্র

    আমার বাড়ি, আমার বাড়ি বলে আমরা যার কথা বলি-

    সেটা আসলেই আমার বাড়ি নয়!

    বাবার বাড়িটাকেই তো নিজের বাড়ি বলে জানতাম 

    একটা সময়ে সেই বাড়ির পরিচয়ও বদলে যায়!

    ব্যাংকে লোন নিয়ে পছন্দের সব কিছু দিয়ে তৈরি করা নিজের বাড়িটিও

    সময়মতো ঋণ শোধ করতে না পেরে নিলাম হয়ে যায়!

    মূলত আমার বাড়ি বলে কিছুই থাকে না!

    যা আছে তা থাকার জায়গা মাত্র।

    ‘আসলবাড়ি’ বলে যার কথা বলেন ধর্মীয় নেতারা

    শুনেছি সেটিও স্থায়ী নয়,

    শেষ বিচার হওয়ার আগে সেটিও একটি থাকার জায়গা মাত্র!

    আমার বাড়ি বলে কিছু নাই আমি উদ্বাস্তু
    8 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ২৭ মে, ২০২৩ , ১১:৪৩ পূর্বাহ্ণ

    মনে পড়ছে তোমায়

    আজ খুব মনে পড়ছে তোমায়

    কষ্টগুলোকে চাপা দিয়ে এড়িয়ে থাকি

    তোমার না বলা কথাগুলো শোনার অপেক্ষায়।

    আজ অনেক বেশি  ভাবাচ্ছে তোমায়

    অনুভূতির শিকড়ে তোমার স্পর্শগুলোতে

    এলোমেলো হয়েছি  বহুতল হৃদয়ের নিংড়ানো ভালবাসায়। 

    আজ ভীষণভাবে মনে পড়ছে তোমায়

    আবেগের দাড়িপাল্লায় অভিমানে ঝরে পড়ছে

    দুচোখের পাড় ঘেষে জলকণা তোমার যাতনায়।

    আজ খুব খুব খুব বেশি মনে পড়ছে তোমায় 

    সুপ্ত বারিধারা বর্ষণে ক্ষত-বিক্ষত তোমার উষ্ণতা 

    বুকে পাথরের চারদেয়ালে আবদ্ধ বেদনার কাতরতায়।

    আজ মনে পড়ছে তোমায় আকুল প্রাণে

    ভীষণ ভীষণ মনে পড়ছে প্রেম-বাতায়নে,

    অস্থির চঞ্চলতায় জড়িয়ে নিতে চায় মন

    ওহে সখা, নীরবতা ভেঙে দাও প্রেম পিয়াসীর টানে।

    মনে পড়ছে তোমায়
    14 Views

    মুহাম্মদ খালিদ সাইফুল্লাহ্

    ২৭ মে, ২০২৩ , ৯:১২ পূর্বাহ্ণ

    সত্য রে লও সহজে 

    সাহিত্য চর্চার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আলোচনা এবং সমালোচনা। আমি এসবের কোনটারই যোগ্য নই। তবে একটা দায় অনুভব করি। সেই দায় থেকে কিছু বলব। তবে গভীরে যাব না। 

    বর্তমান সময়টা সাহিত্যের জন্য খুব একটা ভালো সময় নয়, তা একটু অনুমান করলেই বুঝতে পারা যায়। যে হারে সংগঠন খোলার পসরা খুলে বসেছেন আমাদের লেখক-অলেখক বন্ধুরা তাতে করে আমার ভয় হয়। আল্লাহ না করুক লেখকরা অভিমান করে কোনদিন বা নিজ নামে সংগঠন খুলে বসেন। যে সময়ে লেখকদের মেরুদণ্ড শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকবার কথা ছিলো সে সময়ে তারা অতিরঞ্জিত তোষামোদি, সংগঠনের পদ পদবির উপর লোভ-লালসা, প্রশাসনের পদলেহন করে সরকারি চেক আর প্রাইজবন্ডের জন্য দৌড়ঝাঁপ করতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। যা পরবর্তী কয়েক যুগ সাহিত্যের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। 

    শুরুতেই বলেছি আলোচনা সমালোচনার কথা। কিন্তু আসলেই কি হচ্ছে? হচ্ছে না। আমাদের বুদ্ধদেব বসুর মতো সাহিত্য সম্পাদক – সমালোচকের অভাব। তার সম্পাদিত পত্রিকা কবিতায় একটি কবিতা প্রকাশের স্বপ্ন দেখতেন তৎকালীন কবিরা। কারণ তারা জানতেন একটি কবিতা প্রকাশিত হওয়া মানেই কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করা। আল মাহমুদ তাদেরই একজন। তিনি লিখেছেন, ” আমাদের তখনকার আড্ডাটা ছিল বিউটি রেস্তোরাঁ, বাংলাবাজারে। সেখানে গেলে আমার বন্ধু শহীদ কাদরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনি আমাকে সদ্য প্রকাশিত কবিতা পত্রিকার চৈত্র সংখ্যাটি হাতে তুলে দিয়ে বললেন, এই নাও তোমার কবিতা ছাপা হয়েছে। আমি এক ঝটকায় পত্রিকাটি হাতে তুলে নিয়ে দেখে নিলাম। জীবনানন্দ দাশ ও বুদ্ধদেব বসুর পরেই আমার কবিতা ছাপা হয়েছে। আমার তিনটি কবিতা ছাপা হওয়াতে আনন্দে আমার ফেটে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। সেদিন থেকেই আমি ভেবে নিয়েছিলাম আমি কবি হব। কবি ছাড়া আর কিছুই না। এভাবেই বসু আমাদের জীবনে এক মহান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন”।

    ঠিক এরকমটাই হওয়া উচিত একজন সাহিত্য সম্পাদকের। অপরদিকে সে-সময়ে রবীন্দ্র বলয়ের বাইরে এসে সাহিত্য চর্চা করাটা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। জীবনানন্দ দাশ যখন সাহিত্য সমালোচকদের কাছে কোনঠাসা তখন বুদ্ধদেব বসু আবিভূত হলেন ত্রাণকর্তা হিসেবে। বিশিষ্ট জীবনানন্দ দাশ গবেষক ক্লিনটন বি.সিলি বলেছেন, “প্রগতি কেবল জীবনানন্দ দাশের কবিতা ছাপেনি, বুদ্ধদেব নিজে দায়িত্ব নিয়েছিলেন জীবনানন্দের ওপর দুটি সম্পাদকীয় লেখার, যা ছিলো তাঁর ওপর লেখা প্রথম আলোচনা…”। মূলত এর পর থেকেই জীবনানন্দ জীবনানন্দ দাশ হয়ে উঠেন। আর সমকালে জীবনানন্দ দাশকে ছাড়া বাংলা কবিতা কল্পনা করা অসম্ভব।

    আমিও সেরকমটা বিশ্বাস করি আর সেই দায়বদ্ধতা থেকে নিজেকে সাহিত্য চর্চায় নিয়োজিত রেখেছি। কিন্তু সংগঠন চর্চার নামে লেখকের ফ্রেমপ্রীতি আর কপি-পেস্ট সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদকের সম্পাদনা বিরূপ প্রভাব হিসেবে কাজ করে। কিন্তু আশার কথা সাহিত্যমান ঠিক রেখে সাহিত্য চর্চা করার মতো অনেকেই রয়েছেন। মুগ্ধতা ডট কম এদেরই একজন। ভালো কিছু করার চেষ্টা তাদেরকে সবসময় তাগাদা দেয়। ‘শনিবারের চিঠি’ আয়োজন তারই বহিঃপ্রকাশ। 

    কবিতা: শুরুতে যেমনটা বলেছিলাম। একজন কবির সবচেয়ে বড় গুণ হলো নিরীক্ষা করা। লেখালেখি যদি নিরীক্ষার ভেতর দিয়ে না আসে তাহলে লেখাটা বেশিদিন টিকবে না। আমি কী লিখব আর কীভাবে লিখব এটা বুঝতে হবে।  একজন কবির জন্য এটা সুবিধা কারণ লিখতে বসার চেয়ে লেখা ধরা দেওয়ার বিষয়টা লক্ষ্য করা যায় বেশি। এখন লেখাকে আপনি কোন ফরম্যাট এ লিখবেন সেটা আপনাকে ভাবতে হবে। আপনি যদি ছড়া ছন্দ মিলিয়ে, অন্তমিল ঠিক রেখে লিখতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে ছন্দের মাত্রা, পর্ব এর সঠিক ব্যবহার করতে হবে এবং নির্ভুল অন্তমিল দিয়ে লিখতে হবে। কারণ পাঠক যখন পড়বে তখন তার কানে বাজবে লেখাগুলো। আর যিনি ছন্দটা বোঝেন তিনি পুরোটা পড়তে চাইলেও পারবেন না। এদিকে অনেকেই ভাবেন গদ্যকবিতায় কোনো ছন্দ নেই। তাদের কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলি, ছন্দ ছাড়া আমাদের জীবনে অবশিষ্ট কিছুই নেই। আমরা যে রিক্সা বা অটোয় করে যাতায়াত করি। সেই রিক্সার তিনটা চাকা যদি ছন্দ না মেনে আসত তাহলে রিক্সা মাঝরাস্তায় তার গতি বিচ্যুতি হয়ে যেত। সামনের চাকা যে বেগে চলবে পিছনের দুটি চাকাও নির্দিষ্ট একটা গতি মেনে চলবে। এই শিক্ষা আমাদের পদার্থবিজ্ঞানও দিয়েছে। আমরা সিঁড়িতে ওঠার সময় যদি দু’পায়ের ছন্দ না মিলে উঠি তাহলে পা পিছলে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তেমনিভাবেই কবিতা পড়ার সময় আমরা যদি বিচ্যুত হয়ে যাই তাহলে কবিতাটা পড়তে পারবো না এবং হৃদয়গ্রাহী হবে না। গদ্য কবিতা নিজেই  আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে। আর ছন্দের বাইরে কবিতার যে রস, অলংকার, স্যাটায়ায়, উপমা আছে এগুলো কবিতাকে পরিপূর্ণ করে তুলবে৷ আর ছড়ায় কখনো কঠিন শব্দ, যৌগিক শব্দ ব্যবহার হবে না। ছড়ার শব্দ হবে কোমল এবং নমনীয়।  তুলো ছুঁয়ে দেখলে বা কাশফুল শরীরে স্পর্শ করলে যেমন অনুভূতি হয়, ছড়াও সেরকম অনুভূতি দিবে পাঠককে। সেজন্য ছড়া খুব সহজেই আমরা মনে রাখতে পারি। 

    আমাদের আর হলোই না গান শোনা শিরোনামে রওশন রুবী’র কবিতাটি সুন্দর সুন্দর উপমায় নির্মিত। রওশন রুবীর কবিতাযাপন অনেক দিনের। তার কবিতা ভালো লেগেছে আমার। কেউ নেই কেউই শিরোনামে অনন্যা জান্নাতের এরকম কবিতা প্রায়শই চোখের সামনে আসে। কবিতায় যে অনুভূতির প্রকাশ তুলে ধরেছেন তা আমাদের পরিচিত। এতটাই পরিচিত যে একবার পড়ার পর পাঠক মনে কোনো অনুভূতি সৃষ্টি হয় না। সম্পাদক চাইলে এর থেকেও ভালো কবিতা প্রকাশ করতে পারতেন। সরকার বাবলু তার কুল ভাঙা তরী কবিতাটি পড়ে আরাম পেলাম। সরকার বাবলুর কবিতা নিয়মিত পড়ি। তিনি তার লেখার মধ্যে নতুনত্ব কিছু নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। ছন্দ নিয়ে তার পড়াশোনা তাকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করবে। ছিন্ন হলো আশা, সকল ভালোবাসা শিরোনামে জয়িতা নাসরিন নাজ কবিতাটি যদিও কবিতার অংশে প্রকাশ পেয়েছে কিন্তু কোথাও ৮+৬, কোথাও ৮+৫ এর ব্যবহার আর অন্তমিল এর কারণে এটি ছড়া অংশে প্রকাশ করা যেত। ভালোই লাগছিলো কিন্তু ছেড়েছেন আর ছিঁড়েছে শব্দ গুলো ঝামেলা করছে। ছন্দের পাশাপাশি শব্দের ব্যবহারে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সেই সাথে শব্দ যত কোমল হবে ছড়া তত মসৃণ হবে। এজন্য চাই প্রচুর পড়াশোনা। আর লেখা শেষে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া। জৈষ্ঠ্যের বৃষ্টি শিরোনামে সাজিয়া ইসলাম দিবা কবিতাটি এই সংখ্যার সবচেয়ে দুর্বল লেখা। কবিতাটি প্রকাশের মাধ্যমে দুটি দিক উন্মোচিত হয়। একটি দিক নিয়ে যায় নতুন লেখকদের সুযোগ দিয়ে উৎসাহ প্রদান। আরেকটি দিক নিয়ে যায় একটি পত্রিকা বা লিটলম্যাগ এর ভাবমূর্তি। যারা ভালো লিখেন বা ভালো লেখার চেষ্টা করেন তারা এই কবিতাটি পড়ার পর লেখা পাঠাতে অনুৎসাহিত হবেন। পত্র পত্রিকায় এমন অনেক কবিতা প্রকাশিত হয় যা সম্পাদকের দুর্বলতা প্রকাশ করে। সম্পাদককে হতে হবে একরোখা, নির্দিষ্ট গন্ডির বাইরে লেখা প্রকাশের মানসিকতা এবং নতুন লেখকদের সুযোগ। অবশ্যই যারা ভালো লিখেন। যে লেখক পরা এবং পড়া এর ব্যবহার জানেন না তার আরও বেশী পড়াশোনা করা উচিত। লেখা প্রকাশের আনন্দ যেন মলিন না করে দেয় তার ভুলভাল লেখা। 

    ছড়া: তিনটি ছড়ায় সাজানো এই অংশটি। গরম নিয়ে দুইটি ছড়া। সমসাময়িক বিষয়কে ধারণ করে লেখা। গরম শিরোনাম এ নবীর হোসেনের ছড়ার প্রথম চার লাইনে গা এর সাথে না মেলানো অদ্ভুত লেগেছে। অনেকটা জোরপূর্বক ধর্ষণের মতো। আসবি ফিরে শিরোনামে শ্যামলী বিনতে আমজাদ এর ছড়াটি ভালো লেগেছে। সুন্দর দৃশ্যপট সুন্দর শব্দ চয়নে তুলে এনেছেন। তবে পড়ার সময় বারবার আনিসুল হক এর তুই কি আমার দুঃখ হবি কবিতাটি কানে বাজছিল।  

    গল্প: শৈশবে রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের সংজ্ঞা পড়েছিলাম। এরপর সুযোগ হয়েছে অনুগল্প, পরমাণু গল্প, ১০০ শব্দের গল্প। সম্ভবত আরও রয়েছে। কথা সেটা নয়। কথা হচ্ছে গল্পকে একটি নির্দিষ্ট কাঠামোতে ফেলতে গিয়ে গল্পের যে মেজাজ থাকবার কথা ছিলো সেটা হারিয়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখা যায়। যা ছোট গল্পের জন্য ক্ষতিকর। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্রের ছোটগল্প সাহিত্যের সর্বোচ্চ উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল। এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গিয়েছিলো যে ছোটগল্প থেকে নাটক, চলচ্চিত্র তৈরি হতো। এখন সেসব উধাও। গল্পের যেমন অভাব তেমনি নাট্যকারেরও। শতকরা ১০০ জনের মধ্যে ৯০ জন লিখছেন কবিতা। ৫ জন ছড়া, ৩ জন গল্প, ২ জন উপন্যাস। ঐ ৯০ জনের মধ্যে আছে সবগুলো প্যাকেজ। মানে তাদের অনেকেই সবগুলো জায়গায় বিচরণ করছেন।

    ছায়া রোদ শিরোনামে পড়েছি কামরুন নাহার রেণুর গল্প। স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা গল্পটিকে রাঙিয়ে তুলেছে। গল্পকারকে আলাদা করে বলতে হয়নি কিছু। চরিত্রগুলো এমন সুনিপুন ভাবে ফুটিয়ে তুলছেন যেন দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভাসছে। অসুস্থ স্বামীর প্রতি ভালোবাসা গল্পটাকে পাঠক মনে জায়গা করে নিবে বলে আমার বিশ্বাস।

    আসহাদুজ্জান মিলন রচিত ‘এবং গল্পটি’ আকৃতি ছোট হলেও তিনি একটি বিষয়কে তুলে আনার চেষ্টা করেছেন। একজন পুরুষের হাঁটার গতি কিভাবে তার জীবনে প্রভাব ফেলে সেটি ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন। একজন দ্রুত গতিতে হাঁটা পুরুষের বিবাহপূর্ব জীবন এবং বিবাহের পরের জীবনের বৈচিত্র্য তুলে ধরতে চেয়েছেন। কিন্তু হাঁটার গতির মতো ঠুনকো বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেনি এই গল্পটিতে। বরং গল্পকারকে ব্যাখ্যা দিতে হয়েছে। অথচ গল্পের কাহিনী, প্রেক্ষাপট থেকে উঠে আসতে পারত চরিত্রের দ্বন্দ্বের ফলাফল। 

    এছাড়াও নন ফিকশন, নির্বাচিত স্টাটাস, নির্বাচিত ছবি ও চিরায়ত পাঠ এর মতো কিছু ভিন্নধর্মী অংশ রয়েছে যা শনিবারের চিঠি বিশেষ আয়োজনটিকে সমৃদ্ধ করেছে। 

    মুগ্ধতা ডট কম এর জন্য শুভকামনা সবসময়। আশা করছি তারা এমন একটি ওয়েব ম্যাগ হিসেবে নিজেদেরকে পরিচিতি দেবে যেখানে লেখকরা লেখা প্রকাশের অপেক্ষায় উদগ্রীব হয়ে আসবে। আর মানদণ্ড এমন হবে যেন লেখক লেখা প্রকাশ হওয়াকে স্বীকৃতি হিসেবে মেনে নিবে। 

    – মুহাম্মদ খালিদ সাইফুল্লাহ্

      কবি, সম্পাদক 

      তারুণ্যের পদাবলি

    পাঠ প্রতিক্রিয়া - সত্য রে লও সহজে 
    43 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ২৭ মে, ২০২৩ , ৯:০৯ পূর্বাহ্ণ

    লিচু চোর

    বাবুদের তাল-পুকুরে

    হাবুদের ডাল-কুকুরে

    সে কি বাস করলে তাড়া,

    বলি থাম একটু দাঁড়া।

    পুকুরের ঐ কাছে না

    লিচুর এক গাছ আছে না

    হোথা না আস্তে গিয়ে

    য়্যাব্বড় কাস্তে নিয়ে

    গাছে গো যেই চড়েছি

    ছোট এক ডাল ধরেছি,

    ও বাবা মড়াত করে

    পড়েছি সরাত জোরে।

    পড়বি পড় মালীর ঘাড়েই,

    সে ছিল গাছের আড়েই।

    ব্যাটা ভাই বড় নচ্ছার,

    ধুমাধুম গোটা দুচ্চার

    দিলে খুব কিল ও ঘুষি

    একদম জোরসে ঠুসি।

    আমিও বাগিয়ে থাপড়

    দে হাওয়া চাপিয়ে কাপড়

    লাফিয়ে ডিঙনু দেয়াল,

    দেখি এক ভিটরে শেয়াল!

    ও বাবা শেয়াল কোথা

    ভেলোটা দাড়িয়ে হোথা

    দেখে যেই আঁতকে ওঠা

    কুকুরও জাড়লে ছোটা!

    আমি কই কম্ম কাবার

    কুকুরেই করবে সাবাড়!

    ‘বাবা গো মা গো’ বলে

    পাঁচিলের ফোঁকল গলে

    ঢুকি গিয়ে বোসদের ঘরে,

    যেন প্রাণ আসলো ধড়ে!

    যাব ফের? কান মলি ভাই,

    চুরিতে আর যদি যাই!

    তবে মোর নামই মিছা!

    কুকুরের চামড়া খিঁচা

    সেকি ভাই যায় রে ভুলা-

    মালীর ঐ পিটুনিগুলা!

    কি বলিস? ফের হপ্তা!

    তৌবা-নাক খপ্তা!

    [কাজী নজরুল ইসলাম বিংশ শতাব্দীর প্রধান বাঙালি কবি ও সংগীতকার। তার মাত্র ২৩ বছরের সাহিত্যিক জীবনে সৃষ্টির যে প্রাচুর্য তা তুলনারহিত। সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও তার প্রধান পরিচয় তিনি কবি। কাজী নজরুল ইসলামের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হলো অগ্নিবীণা, সর্বহারা, বিষের বাঁশি, দোলন চাঁপা। এছাড়া শিশুতোষ রচনাতেও তিনি ছিলেন অনন্য। 

    তাঁর জন্ম: ২৪ মে, ১৮৯৯, চুরুলিয়া, ভারতে এবং মারা যান ২৯ আগস্ট, ১৯৭৬, ঢাকায়।]

    লিচু চোর
    6 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ২৭ মে, ২০২৩ , ৯:০৪ পূর্বাহ্ণ

    তিনি কবিই ছিলেন, আমলা হতে চান নাই

    ……………………….একবার কুমিল্লায় এক অনুষ্ঠানে আমাকে দাওয়াত করা হলো। আয়োজকরা বললেন, হাবীবুল্লাহ সিরাজী আসবেন। ট্রেনের টিকিট কেটে দেই? একসাথে আসুন। আমি দুষ্টুমি ছলে বললাম, আরে না না, বৃদ্ধ-বিখ্যাত কবিদের ট্রেনে এতক্ষণ সহ্য করতে পারব না। আমি আলাদা আসব। 

    তারপর সময় বহিয়া গেল।

    হাবীবুল্লাহ সিরাজী আসলেন বাংলা একাডেমিতে মহাপরিচালক হিসেবে। মহাপরিচালকের ঘরে বসল সিনিয়র কর্মকর্তাদের বৈঠক। সিরাজী ভাই, হাসতে হাসতে বললেন, সরকার আমিন, দুইঘণ্টা ট্রেনে আমাকে সহ্য করতে রাজি ছিলেন না। এখন তিনবছর সহ্য করতে হবে। প্রথমে কথাটা আমি বুঝি নাই। পরে মনে পড়ল। তার মানে কুমিল্লার আয়োজকরা সিরাজী ভাইকে কথাটা বলে দিয়েছিলেন! হায়!

    তাঁর সাথে কয়েকটা বছর কাজ করতে পেরেছি। সবসময় সম্মান ও স্নেহ দিয়ে কথা বলেছেন। একবারের জন্যও কোন কিছু বিস্বাদ লাগেনি। আমাকে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন কাজে। বলেছিলেন, সরকার অমিন দুইদিন পরে তো দেখা হবে আজিজ মার্কেটেই। আমাকে ‘স্যার’ ডাকার দরকার নাই। আমি প্রকাশ্যে মিটিংগুলোতে তাকে স্যার বা ভাই কোনোটাই ডাকি নাই। কিন্তু ফোনে সবসময়ই ভাই ডেকেছি। এই ভাই ডাকটা ছিল আন্তরিক। তিনি কবিই ছিলেন, আমলা হতে পারেননি। চানও নাই। আজ সিরাজী ভাইয়ের অনন্তে মিশে যাবার দিবস।

    তিনি কবিই ছিলেন, আমলা হতে চান নাই
    8 Views

    প্রমথ রায়

    ২৭ মে, ২০২৩ , ৯:০০ পূর্বাহ্ণ

    ভ্রমণ সাহিত্য

    ভ্রমণ প্রিয়তা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। সুপ্রাচীনকাল থেকে মানুষ নতুনের সন্ধানে এক অঞ্চল থেকে অন্য ভ্রমণ করেছে। আমরা কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের কথা জানি। ভারতীয় উপমহাদেশ সম্পর্কে চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং ও মরক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতা যেসব তথ্য লিখে গেছেন, তা এখনও আমাদের গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয়। এভাবে মানুষ যুগে যুগে এক স্থান থেকে অন্য স্থান, এক দেশ থেকে অন্য দেশ, এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে ভ্রমণ করেছে। ভ্রমণকালীন তাদের পরিলক্ষিত বিষয়গুলো যখন লেখা আকারে প্রকাশ পায়, তখন তা সাহিত্য মর্যাদা লাভ করে। ভ্রমণ সাহিত্য কখনো কখনো বাস্তবতার নিরিখে হুবহু একটি অঞ্চলের ভৌগলিক অবস্থান, জনসমষ্টি, ইতিহাস, সমাজ ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরে, আবার কখনো কল্পনার মিশেলে হয়ে ওঠে ফিকশনধর্মী রোমাঞ্চকর উপন্যাস।

    বিশ্বে প্রথম ভ্রমণ কাহিনী লিখেন গ্রীক ভূগোলবিদ ও পর্যটক পসানিয়াস দ্বিতীয় শতকে। তারও আটশ বছর পূর্বে বিখ্যাত গ্রিক কবি ভ্রমণের ওপর মহাকাব্য ‘ওডিসি’ রচনা করেন। ইংরেজি সাহিত্যে ঔপন্যাসিক জোনাথন সুইফট  ভ্রমণের ওপর বিখ্যাত উপন্যাস ‘গালিভারস ট্রাভেলস’ লিখেন।

    বাংলা সাহিত্যও ভ্রমণ সাহিত্যে বেশ সমৃদ্ধ। বাংলা সাহিত্যে যেসব ভ্রমণ কাহিনী বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে, তা হলো সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘দেশ বিদেশে’ এবং অন্নদাশঙ্কর রায়ের ‘পথে প্রবাসে’, মুহাম্মদ আব্দুল হাইয়ের ‘বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন’ এবং রবীন্দ্রনাথের ‘রাশিয়ার চিঠি’। বাংলা সাহিত্যে সম্ভবত প্রথম ভ্রমণ কাহিনী লিখেন রবীন্দ্রনাথের পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি হিমালয় ভ্রমণের উপর লিখেন। তবে এ বইটি পাঠক সমাজে ততটা সাড়া ফেলতে না পারলেও পরবর্তীতে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বড়ভাই সঞ্জীব চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পালামৌ’ বেশ সাড়া জাগায়। ‘পালামৌ’কে বলা প্রথম সার্থক ভ্রমণ কাহিনী। সঞ্জীব চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যখন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, তখন একজন ইংরেজ মিলিটারি এক দৈনিকে ‘প্যারেড বৃত্তান্ত ‘ ‘ব্যান্ডের বাদ্যচর্চা’ প্রভৃতি শিরোনামে লিখতেন।

    এসব লেখা থেকেই তিনি পালামৌ সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি ধারণা করেছিলেন পালামৌ একটি শহর। কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারেন এটি একটি পরগণা মাত্র। তাঁর নান্দনিক কলাকৌশল, চিত্রময় এবং কাব্যিককতা পালামৌর পথঘাট, প্রকৃতি ও জনজীবনকে করেছে এক অনিন্দনীয় ছবি। এই বইয়েরই বিখ্যাত বাক্য, বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। এ সময়েরই আরও দুটি ভ্রমণকাহিনী হলো দুর্গাচরণ রায়ের ‘দেবগণের মর্ত্যে আগমন ‘ ও যোগেশচন্দ্র বন্দোপাধ্যয়ের ‘পয়সার ডায়েরি ‘।

    পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথের হাতে ভ্রমণসাহিত্য পেয়েছে নতুন মাত্রা। তিনি পত্র আকারে এসব ভ্রমণ কাহিনী লিখেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য ভ্রমণ কাহিনী হলো ‘যাত্রী’ ‘রাশিয়ার চিঠি’ ‘জাভা যাত্রীর পত্র’ ‘য়ুরোপ প্রবাসী পত্র’ প্রভৃতি। পল্লীকবি জসীমউদ্দিনও বেশ কয়েকটি ভ্রমণ কাহিনী লিখেন। তিনি লিখেন ‘চলে মুসাফির’,  ‘হলদে পরীর দেশে’, ‘ জার্মানীর শহরে বন্দরে’ এবং ‘ যে দেশে মানুষ বড়’। রবীন্দ্রনাথের বড়ভাই অবনীন্দ্রনাথও ‘পথে বিপথে’ নামে একটি ভ্রমণ কাহিনী লিখেন। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে সৈয়দ মুজমবা আলীর ‘দেশ বিদেশে’ এবং অন্নদাশঙ্কর রায়ের ‘পথে প্রবাসে’। ‘দেশ বিদেশে’ বর্ণনা করা হয়েছে আফগানিস্তানের ইতিহাস ঐতিহ্য,  সমাজ-সংস্কৃতি, ধর্ম-রাজনীতি; এমনকি সেখানকার বিনোদন। কেউ আফগানিস্তান ভ্রমণ না করেও শুধুমাত্র ‘দেশ বিদেশে’ পাঠ করে আফগানিস্তান সম্পর্কে বিশদ ধারণা লাভ করতে পারবে। আর অন্নদাশঙ্কর পুরো ইউরোপকে বন্দি করেছেন এক মলাটে। ১৯২৬- ১৯২৯ আইসিএস পরীক্ষার জন্য অন্নদাশঙ্কর ইউরোপে ছিলেন। তখন তিনি চষে বেড়িয়েছেন ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানী, ইতালি, সুইজারল্যান্ড ও অষ্ট্রিয়া। এসব দেশের সমাজ ও সভ্যতাকে তুলে ধরা হয়েছে ‘পথে প্রবাসে’। তিনি এ বইয়ে তিনি ইউরোপীয় সভ্যতার সাথে ভারতীয় সভ্যতার তুলনাও করেছেন। ইংল্যান্ডের সমাজ ও সংস্কৃতির সাথে আমাদের সমাজ-সংস্কৃতির তুলনা করে ধ্বনি বিজ্ঞানী মুহাম্মদ আব্দুল হাই লিখেন ‘বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন’।

    মার্কিন আয়ওয়া শহরকে নিয়ে কবি শঙ্খ ঘোষ লিখেছেন ‘ ঘুমিয়ে পড়া অ্যালবাম’। কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার বন্ধু প্রতীম প্রেয়সী মার্গারেট ম্যাথিউর দেশ ফ্রান্স নিয়ে লিখেছেন ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’। এই ফ্রান্সকে নিয়েই কবি মোহাম্মদ রফিক লিখেছেন ‘দূরের দেশ নয়’।

    এসব ভ্রমণ কাহিনী যেমন সাহিত্যকে করে সমৃদ্ধ, তেমনি পাঠককে করে পুলকিত। পাঠক যেন এসব গ্রন্থের সওয়ার হয়ে ঘুরে বেড়ায় তামাম বিশ্ব।

    ভ্রমণ সাহিত্য
    20 Views

    সোহানুর রহমান শাহীন

    ২০ মে, ২০২৩ , ১১:০০ পূর্বাহ্ণ

    সময়ের এক ফোঁড় হোক মুগ্ধতা 

    পাঠ প্রতিক্রিয়া লেখা বরাবরই একটি দুরূহ কাজ। তবে মুগ্ধতা ডট কমের ‘শনিবারের চিঠি’ নামে যে অনবদ্য সাপ্তাহিক আয়োজনটি করছে এর আনন্দ-অনুভূতি ভিন্ন রকম। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে চালু হওয়া এই অনলাইন ম্যাগাজিনটি দিনে দিনে যথেষ্ট পরিণত হচ্ছে। লেখকদের নিয়মিত লেখা পেলে এটি আরও সমৃদ্ধ হবে নিশ্চয়ই।

    গত সংখ্যার শনিবারের চিঠিতে মোট পাঁচটি কবিতা,  তিনটি ছড়া, দুটি গল্প, একটি নন ফিকশন, ফেসবুক থেকে সংগৃহীত একটি স্ট্যাটাস এবং একটি ছবি ছাড়াও ‘চিরায়ত পাঠ’ নামে একটি অনবদ্য সংযোজন করা হয়েছে।  আমার কাছে গত সংখ্যা থেকে কিছু দুর্বল এবং কিছু সবল লেখা পাওয়া গেছে। সবল লেখাগুলো থেকে দুর্বল লেখার লেখকেরা শিখবেন-এই প্রত্যাশা করাই যায়। আর কিছু বানান ভুল চোখে পড়েছে, এগুলো নিয়ে সম্পাদকমণ্ডলী আরও সতর্ক হবেন বলে আশা করি। আজ আর বিস্তারিত না লিখে আগামী সপ্তাহে বা অন্য কোনোদিন লেখার প্রত্যাশায় রইলাম। এগিয়ে যাক মুগ্ধতা ডট কম  এবং এর লেখক ও পাঠকেরা।

    সময়ের এক ফোঁড় হোক মুগ্ধতা
    17 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ২০ মে, ২০২৩ , ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ

    বিষম ভোজ

    “অবাক কান্ড!” বল্‌লে পিসী, “এক চাঙাড়ি মেঠাই এল-

    এই ছিল সব খাটের তলায়, এক নিমিষে কোথায় গেল?”

    সত্যি বটে বললে খুড়ী, “আনলো দু’সের মিঠাই কিনে-

    হঠাৎ কোথায় উপসে গেল? ভেল্কিবাজি দুপুর দিনে?”

    “দাঁড়াও দেখি” বললে দাদা, “করছি আমি এর কিনারা-

    কোথায় গেল পটলা ট্যাঁপা – পাচ্ছিনে যে তাদের সাড়া?”

    পর্দাঘেরা আড়াল দেওয়া বারান্দাটার ঐ কোণেতে

    চল্‌ছে কি সব ফিস্ ফিসি ফিস্ শুনলে দাদা কানটি পেতে।

    পটলা ট্যাঁপা ব্যস্ত দুজন ট্প্‌টপাটপ্ মিঠাই ভোজে,

    হঠাৎ দেখে কার দুটো হাত এগিয়ে তাদের কানটি খোঁজে।

    কানের উপর প্যাঁচ্ ঘুরাতেই দু চোখ বেয়ে অশ্রু ছোটে,

    গিলবে কি ছাই মুখের মিঠাই ,কান বুঝি যায় টানের চোটে।

    পটল বাবুর হোম্‌রা গলা মিল্‌ল ট্যাঁপার চিকন সুরে

    জাগ্‌ল করুণ রাগরাগিণী বিকট তানে আকাশ জুড়ে।

    [সুকুমার রায় (Sukumar Ray) ৩০শে অক্টোবর, ১৮৮৭ সালে, কলকাতার এক ব্রাহ্ম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা ননসেন্স রাইমের পথিকৃৎ হিসেবে স্বীকৃত সুকুমার একইসাথে মজার মজার ছড়া কবিতা লিখে তাতে আবার ছবিও এঁকে দিতে পারতেন। তাঁর বিখ্যাত ছড়ার বই ‘আবোল তাবোল’ এবং গল্পের বই ‘পাগলা দাশু’।

    সুকুমার রায় ১৯২৩ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।]

    বিষম ভোজ
    10 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ২০ মে, ২০২৩ , ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ

    মায়ের ভালোবাসা আমার কাছে অত্যাচারের মতো মনে হয়।

    যেমন খুব ছোটবেলায় আম্মা আমাকে স্কুলে যেতে দিতেন না এই ভয়ে যে, আমি গাড়ি-চাপা পড়তে পারি। এজন্য ক্লাস টু-তে পড়ার আগে অলমোস্ট আমার স্কুলে যাওয়া হয় নাই। অক্ষরজ্ঞানের ক্ষেত্রে আমি তাই স্বগৃহে স্বশিক্ষিত। 

    বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আম্মা চাইতেন না আমি হলে থাকি। সে কারণে সেকেন্ড ইয়ার পর্যন্ত বাড়িতেই থেকেছি। তিনি অসম্ভব বিরক্ত ছিলেন আমার ‘বাংলা’ পড়া নিয়ে। বাংলা আবার পড়ার কী আছে! তার আরও রাগ আমার কবিতা লেখার কসরত দেখে। উনার দৃঢ় বিশ্বাস, এগুলা কবিতা হয় না। বরং আমার বন্ধু মাদলের কবিতা কিছুটা হয়।

    আম্মার ধারণা, তার সন্তানদের মধ্যে আমার বুদ্ধি বেশি। কিন্তু সবই ‘আকাইম্মা’ বুদ্ধি। সম্প্রতি তিনি আবিষ্কার করেছেন, ধর্ম বিষয়ে আমি অনেক জানি, কিন্তু খুবই কম মানি। এদিকে আমিও টের পেয়েছি, তার গোপন দুর্বলতা ও আস্থা বড় ছেলের উপর। বড় ছেলে ডাক্তার, হাজি, নামাজি, ভদ্র ও বিনয়ী। এ নিয়ে আমার দুঃখের শেষ নাই। তবে আশ্চর্যের বিষয় এই যে, বড় ছেলের সঙ্গে তিনি বেশিদিন থাকতে পারেন না। তার নাকি দম বন্ধ হয়ে আসে।

    আম্মার যে জিনিশটা আমার সবচেয়ে মজা লাগে, সেটা হলো, উনি কোনোদিন আমাকে বা আমার ভাইবোনদের মারতে পারেন নাই। খুব ছোটবেলা থেকেই দেখেছি, প্রচণ্ড ক্ষেপে গিয়ে আমাকে মারার জন্য হাত তুলেছেন ঠিকই, কিন্তু সেই হাত কাঁপতে কাঁপতে গুটিয়ে গেছে নিষ্ফল আক্রোশে। ছেলের গায়ে আঘাত করবেন তিনি! এ যে রীতিমতো পাপ। ভাবখানা এমন।

    এজন্য মায়ের শাসন আমার কাছে একটা কৌতুককর ব্যাপার। আজ এই মা দিবসে তার প্রতি আমার সকৌতুক ভালোবাসা।

    মায়ের ভালোবাসা আমার কাছে অত্যাচারের মতো মনে হয়।
    14 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ২০ মে, ২০২৩ , ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ

    প্রণতি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বেওয়ারিশ পাখিরা’( Stray Birds)।

    ‘Stray Birds’ কে কবিগুরু নিজে বলেছেন ‘খাপছাড়া’।

    ১৯১৬ সালে New York-এর The Macmillan Company  প্রকাশ করেছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ইংরেজিতে রচিত Stray birds । তিন শত বাহাত্তরটি এরকম খাপছাড়া কবিতা থেকে মাত্র আটত্রিশটি বা চল্লিশটি তিনি তাঁর জীবদ্দশায় বাংলায় তর্জমা করে গেছেন। এগুলোকে তিনি কখনও বলেছেন ‘খাপছাড়া’ ,কখনও অন্তর্ভুক্ত করেছেন  ‘ক্ষণিকা’ কাব্যে, কখনও ‘কল্পনা’ কাব্যে। একটি দৃষ্টান্ত নিম্নরূপ:

    Rest belongs to the work

             As the eyelids to the eyes.

    “বিশ্রাম কাজেরই অঙ্গ, এক সাথে গাঁথা,

     নয়নের অঙ্গ যেন নয়নের পাতা। “

    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজের করা এই অনুবাদ প্রবাদপ্রতিম হয়ে চিরকাল থাকবে, নিঃসন্দেহে ।

    আমি  একসময় চেষ্টা করেছিলাম শ তিনেক Stray Birds বা ‘খাপছাড়া’ প্রবাদ তর্জমা করতে। নিচে, ‘তারই দু চারিটি অশ্রুজল’।

    ২৫। Man is a born child,

     His power is the power of growth.

    মানুষ তো চিরশিশু,

     বেড়ে চলে বুদ্ধিতে বিবেকে;

     শারীরিক বৃদ্ধিকে সে

     জ্ঞানের বৃদ্ধিতে রাখে ঢেকে।

    ২৬। God expects answers for the flowers he sends us,

             Not for the sun and the earth

    ফুলেরই সৌন্দর্য শুধু লা-জবাব

     ঈশ্বরের কাছে;

     সূর্য আছে, মর্ত্য আছে—থাকুক্

     যেমনই আছে, আছে।

    ২৮। O Beauty, find thyself in love,

             Not in the flattery of thy mirror.

    হে সৌন্দর্য, তুমি আছো মৌলিক প্রণয়ে নিশ্চয়;

     ঝকমকী প্রতিবিম্বে স্ব-প্রকাশ সুন্দরতা নয়।

    ২৯। My heart beats her waves at the shore of the world

    And writes upon it her signature in tears with the words,

       “I love thee.”

    সাগরের বালুচরে তরঙ্গ রেখার করাঘাতে,

     আমার হৃদয় লেখে অশ্রুভরা এপিট্যাফ-

     ভালোবাসা সঁপেছি তোমাতে।

    ৩০। “Moon, for what do you wait?”

           “To salute the sun for whom I must make way.”

    চাঁদ, তুমি আছো কার প্রতীক্ষার তরে?

     সূর্যকে প্রণতি দিয়ে যাবো আমি সরে।

    ৩১। The trees come up to my window

    Like the yarning voice of the dumb earth.

    বৃক্ষেরা এগিয়ে আসে আমার জানালা পাশে

     মৃদু সমীরণে;

     বোবা পৃথিবীর গান যেন তাঁরা তুলে ধরে

       সুদুর গগনে।

    ৩২। His own mornings

             Are new surprises to God.

    বিধাতার আপন সৃষ্টি প্রতিটি প্রথম আলো, ভোর;

     প্রতিটি নতুন সূর্যোদয়, তবু,

     তারই চোখে বিস্ময়কর।

    ৩৩। Life finds its wealth by the claims of the world,

             And its worth by the claims of love.

    মানব জীবন ধন্য জগতের দাবি-দাওয়া শুনে;

     মানুষেরা মূল্য পায় পরস্পর, প্রেমের প্রসূণে।

    ৩৪। The dry river-bed finds no thanks for its past.

    শু্কনো নদীচর, তাকিয়ে আছে দূরে;

     চলছে পথচারী সড়কে, পথ ঘুরে

     ভাবছে নদীচর—বলবে কেউ কথা!

     বলে না কেউ কিছু।

     শুধুই নীরবতা।

    ৩৫। The bird wishes it were a cloud.

             The cloud wishes it were a bird.

    নদীর এপার কহে, ছাড়িয়া নিঃশ্বাস,

     ওপারেতে যত সুখ, আমার বিশ্বাস। (রবীন্দ্রকৃত অনুবাদ; এ-অনুবাদ বাঙালির হৃদয়ে গেঁথে আছে।

    চিরকাল থেকে যাবে।) ইংরেজি প্রবাদটির

    মত্কৃত তর্জমা:

    পাখি বলে, সাধ হয়—মেঘ হয়ে ভাসবো আকাশে।

    মেঘ বলে, পাখি হতে সাধ জাগে বটে,

     কিন্তু, কোথায় পাবো পাখা সে?

    ৩৬। The waterfall sings, “I find my song,

             When I find my freedom.”

    জলপ্রপাত গান গায়:

     যতক্ষণ মুক্ত আছি, আমি বেঁচে আছি।

     এবং, রয়েছি আমি গানের জলসায়।

    ৩৭। I cannot tell why this heart languishes in silence.

             It is for small needs it never asks, or knows, or remembers.

    নিভৃত নিলয়ে বসে, হৃদয়টা হা-হুতাশ করে;

     কী বেদনা—তা জানিনা।

    হয়তো তুচ্ছের জন্য; হয়তো নগন্য কিছু—

    যা কখনও স্মরণে রাখি না।

    ৩৮। Woman,

             When you move about in your household service

             Your limbs sing like a hill stream among its pebbles.

    ঘরকন্না ব্যাস্ত নারী, হাতের কংকনে তোলে

     রিনিঝিনি ধ্বনি;

    পাহাড়ের কোল বেয়ে ঝরনার নুড়ি দোলে

    রুমঝুম রনি।

    ৩৯। The sun goes to cross the Western sea,

             Leaving its last salutation to the East.

    প্রাচ্যকে জানিয়ে তার সর্বশেষ শ্রদ্ধার প্রণতি;

     সূর্য চলে পাড়ি দিয়ে পশ্চিম সাগর—দ্রুত গতি।

    ৪০। Do not blame your food 

             Because you have no appetite. 

    পেটেই তোমার যদি খিদে নাহি রয়,

     দোষটা তা হলে, তবে, খাবারের নয়।

    ৪১। The trees, like the longings of the earth,

             Stand a tip-toe to peep at the heaven.

    মর্ত্যের প্রত্যাশা ধরে বক্ষ্যমাঝে, বৃক্ষরা দাঁড়িয়ে;

    উঁকি মারে উর্ধ্বাকাশে সূর্য ছুঁ’তে, দুবাহু বাড়িয়ে।

    ৪২। You smiled and talked to me of nothing

              And I felt that for this I had been waiting long.

    তুমি কাছে এলে শুধু হেসে খেলে,

     কোনও কথা শুধালে না, প্রিয়!

     মনে মনে ভাবি—তাই আমি কবি,

     এ-প্রতীক্ষা তাই স্মরণৗয়।

    ৪৩। The fish in the water is silent,

        The animal on the earth is noisy,

        The bird in the air is singing.

        But man has in him the silence of the sea,

        The noise of the earth and the music of the air.

    মাছেরা পানিতে নিরব রয়েছে; পশুরা আওয়াজ হাঁকছে মাঠে;

     পাখিরা কুজনে মুখর হয়েছে আকাশে বাতাসে বিজন ঘাটে।

    ৪৪। The world rushes on over the strings of the lingering heart

            Making the music of sadness. 

    প্রত্যাশার তারে তারে বাজিয়ে কম্পন ধ্বনি, তান;

     ক্ষুধিত পাষাণ হৃদি এ-জগৎ. দ্রুত ধাবমান।

    ৪৫। He has made his weapons his gods.

            When his weapons win he is defeated himself.

    হাতের অস্ত্রই যদি দেবতার বরমাল্য পায়,

     অস্ত্রেরই জয় হয়, বীরবাহু বীরত্ব হারায়।

    ৪৬। God finds himself by creating.

    সৃষ্টিরই মাঝে স্রষ্টা আপন সন্ধান খুঁজে পায়;

     সৃষ্টিরই সৃজন তিনি, তার সব ভাষা, প্রার্থনায়।

    ৪৭। Shadow, with her veil drawn, follows light in secret meekness,

            With her silent steps of love.

    বিনম্র চরণ ফেলে, ছায়া চলে আলোর পশ্চাতে;

     প্রেমের নিরব ধ্বনি গুটি গুটি হাঁটে তারই সাথে।

    ৪৮। The stars are not afraid 

             To appear like fireflies.

    এই জ্বলে-এই নেভে, যায়-আসে ভীরু জোনাকিরা;

     তারারা নির্ভীক জ্বলে, ভয় ভীতি দেয় না তো পীড়া।

    ৪৯। I thank thee that I am none

    of the wheels of power

    But I am one with the living creatures that are crushed by it.

    ক্ষমতার চাকা গতিময়; আমি তার কোনও কিছু নয়।

     তুমি ধন্য, ধন্য দয়াময়।

    ক্ষমতা-চাকার তলে আজীবন পিষ্ট যারা–

     আমি সেই সদস্য নিশ্চয়।

    ৫০। .    The mind, sharp but not broad,

              Sticks at every point but does not move.

    যে-মেধা সুতীক্ষ্ণ অতি, কিন্তু নয় উদার, বিপুল;

     সে-মেধা আঠালো ভোঁতা, পড়ে থাকে স্থুল, পৃথুল।

    প্রণতি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    11 Views

    কামরুন নাহার রেনু

    ২০ মে, ২০২৩ , ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ

    ছায়া রোদ 

    ঝিম লেগে বসে আছে প্রীতম। সারাটা বিকেল নিস্তব্ধ কেটেছে আজ। চৈত্রের তপ্ত রোদেও যেন মেঘের ঘনঘটা তার পৃথিবী জুড়ে। গতকাল বৃষ্টি হয়েছিল, বাসার সামনে মাঠটায় পানি থই-থই করছে। অথচ অন্য সময় ঠিকই মেয়েকে নিয়ে কাগজের নৌকা বানিয়ে  চলে যেত মাঠে, নৌকা পানিতে ভাসিয়ে দিয়ে বলত—দেখ, কী সুন্দর পানির স্রোতে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে!  চল আমরা আজ সারা মাঠ দাপিয়ে বেড়াব, আজ আমাদের জলের সাথে সন্ধি। মেয়ের হাত ধরে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত হেঁটে চলা, কখনো মেয়ের ঝপাত—ঝপাত লাফে পানির নিত্যে হেসেই কুটি-কুটি। তারপর বাড়ি ফেরার সময় হলে বলত— আজ চল বাড়ি ফিরে অনেকগুলো নৌকা বানিয়ে জমিয়ে রাখব, আবার যখন বৃষ্টি হবে তখনি আমরা নৌকা ভাসাব মাঠে।

    মেয়ে পূর্ণ বাবার কথায় চোখ মেলে তাকায় মাঠটার দিকে, নতুন কোনো কল্পনা বুকে নিয়ে বাবার নোখ ধরে পা বাড়ায় বাড়ির উদ্দেশ্যে।

    এমনি অনেক বরষা কেটেছে তাদের বরষার গান শুনে। জলের মাঠে আনন্দের আলপনা এঁকে।

    বারান্দায় গ্রিলের ফাঁক বেয়ে আসা আকাশটাকে হাত বাড়িয়ে ছুঁতে চায়, নিঃসঙ্গ বিকেলের ঝরে পড়া পাতার মতো বুক থেকে ঝরে পড়ে কল্পনার ধারাপাত। জীবনের সুন্দর মুহূর্তগুলো এক—এক করে সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকে কুচকাওয়াজে হেঁটে যাওয়া সারিবদ্ধ মানুষের মতো।

    গতকাল ক্লিনিক থেকে বাড়ি ফিরেছে প্রীতম। দীর্ঘদিন  ক্লিনিকের বেডে শুয়ে নিজেকে আবিষ্কার করেছে প্রতিনিয়ত।

    স্ত্রী নিতার চঞ্চলতা, জগৎ ভুলানো হাসি সব কিছুর মাঝে একটা দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন চলে আসে নিজের অজান্তেই, প্রীতম বিষয়টা অনুভব করে, আর তখনই তার অনুভূতির শিকড়ে পচন ধরে। নিজের অজান্তেই চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে জল।

    জীবনের ধারাপাতে নামতার ঘরে কোথায় যেন একটা সংখ্যা বাদ পড়ে যায়, তাই সব হিসেব এলোমেলো হয়ে যায়।

    কল্পিত জীবনে—হঠাৎ এমন অপ্রত্যাশিত অসুস্থ হয়ে যাওয়া কেমন যেন এলোমেলো করে দিলো সব!  

    সব কিছুই যেন চোখের সম্মুখে জ্বলজ্বল করে উঠে প্রীতমের.  .. 

    প্রতিদিনের মতোই অফিসের কাজে ব্যস্ত প্রীতম, কন্যার রুটিন মাফিক স্কুল, স্ত্রীর গৃহকর্মে ব্যস্ততা। আফিস শেষে বিকেলে ঘুরতে বেরুবে আজ। মেয়ে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরেছে, স্ত্রী গৃহ কর্ম সেরে অপেক্ষা. ..  কিন্তু আজ একটু ভিন্ন বিষয় লক্ষ করছে নীতা।  

    প্রতিদিন প্রীতম অসংখ্যবার মেয়ের বাড়ি ফেরা, দুপুরের খাওয়া ইত্যাদি সব বিষয়ে খোঁজ নেয় অসংখ্যবার। অথচ আজ সব কিছুর মাঝেই একটা গ্যাপ। নীতা ভাবে, হয়তো অফিসে কাজের চাপ বেশি তাই খোঁজ নিচ্ছে না।

    হঠাৎ একটা ফোন আসে নীতার নাম্বারে! নীতা হিসাব মিলাতে পারে না, মেয়েকে নিয়ে ছুটে যায় ক্লিনিকে। অবচেতন ভাবে শুয়ে আছে প্রীতম। কারণ জানতে চায় নীতা। ডাক্তার জানায়, ব্রেন স্টোক করেছে। রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে, বলা—মুশকিল কি হবে।

    নীতি কিছুতেই মানতে পারে না, অবচেতন মুখটার দিকে তাকিয়ে হাজার কথা জানতে চায় কোনো উত্তর পায় না।

    সারারাত গড়িয়ে ভোর হয় চোখের পাতা ভার হয়ে আসে, শুধুই অপেক্ষা—প্রীতম চোখ মেলে তাকাবে, মেয়েকে কাছে টেনে বলবে, মাগো বাবার বুকে মাথা রাখো। বাবার জন্য কেঁদে—কেঁদে চোখগুলো কেমন ফুলিয়ে রেখেছো। এইতো, কালই বাড়ি যাব— আমরা। এবার কিন্তু তুমি আমার একটা ছবি আঁকবে, বাবা বুড়ো হলে কেমন হবে সেই ছবি। এমনি হাজারো কল্পনা ভিড় করে নীতার রাত জাগা চোখে। শুধুই অপেক্ষা, এমনি করে কেটে যায় আরো পাঁচটি রাত। প্রীতমের অবস্থা একটু উন্নতির দিকে। একটু মিট-মিট করে তাকায়। নীতার বুকে আশার প্রদীপ জ্বলে। স্বামীর মাথায় হাত বুলায়। হাত দুটো টেনে মুখে লাগায়, প্রীতমের উষ্ণতায় যেনো পৃথিবীটা রঙিন হয়ে উঠে। পরম মমতায় চুলের ভাঁজে বিলি কাটে পৃথিবীর  সবটুকু সুখ অফুরন্ত মনে  হয়।  

    দিন গড়াতে থাকে, কেটে যায় আরো পনেরোটি দিন। এখন প্রীতম কথা বলছে, কিন্তু আরো কিছু পরীক্ষা নীরিক্ষা বাকি।

    কাল ডাক্তার চেকআপ শেষে রিপোর্ট দিবে, তার পর বাড়ি ফেরা।

    নীতার কল্পনার পৃথিবী যেন তার আঙিনায় লুটোপুটি খায়। কল্পনার ডানায় ভর করে  ভেসে বেড়ায় পৃথিবীর এ-প্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। এখন শুধু কিছু সময়ের অপেক্ষা. .. 

    রাত গড়িয়ে দিন হয়, রিপোর্টগুলো ডাক্তারের হাতে। কেন যেন ডাক্তারের চোখে কোনো সন্তুষ্টির ছাপ খুঁজে পায় না। জানতে চায় নীতা, সব ঠিক আছে তো?  ডাক্তার জানায়— প্রীতমের বাঁ হাত বাঁ পা প্যারালাইসিস্ট হয়ে গেছে।

    পৃথিবীটাকে বিবর্ণ মনে হয় নীতার কাছে। স্বপ্নগুলো যেন টুকরো কাঁচের মতো ভেঙে— ভেঙে পড়ে চোখের সম্মুখে। চোখের কোণ বেয়ে কখন পানি গড়িয়ে পড়ে নিজেই জানে না। আজ তাদের বাড়ি ফেরার পালা। বাড়ি ফিরে আসে প্রীতমকে নিয়ে।

    নিজের এই অস্বাভাবিক জীবন মেনে নিতে পারে না প্রিতম। কষ্টে তার চোখ বেয়ে পানি গড়াতে থাকে। নীতা প্রীতমের চোখ মুছে দেয়।

    প্রীতম নীতাকে বলে, আমায় ক্রাচটা দিবে? একটু বারান্দায় যাব, কতদিন আকাশ দেখি না।

    নীতা প্রীতমের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়, প্রীতমের হাতটা নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে বলে, ক্রাচের কী দরকার আমার কাঁধে হাত রাখো.  … 

    ছায়া রোদ 
    15 Views

    মুগ্ধতা.কম

    ২০ মে, ২০২৩ , ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ

    এবং বিয়ে

    রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় কোনো দিকে তাকায় না সৌম্য। সে অবশ্য খুব ধীরে—ধীরে হাঁটে না। হাঁটার গতিবেগ অনেক থাকে। মাঝে—মাঝে দু’একজন ধাক্কাও খায়। ওহহ্ সরি। উত্তর শোনার অপেক্ষা করে না। ভাবখানা এমন যেন খুব তাড়া আছে তার। আসলে তার হাঁটার স্টাইলটাই এরকম। কেউ যদি তার সাথে হাঁটা শুরু করে সৌম্য খুব বিরক্ত হয়, বলে—এত ধীরে কেউ হাঁটে? 

    সৌম্যর সাথে এ—জন্যেই কেউ হাঁটতে চায় না। এতে সৌম্য রাগ করে না, অভিমানও নেই তার। খুশি হয় মনে-মনে। এই এক দ্রুত হাঁটার কারণে হয়তো তার প্রেমিকা স্থায়ী হয় না। প্রত্যেক মেয়ে চায় তার ভালোবাসার মানুষের সাথে ধীর পায়ে হাঁটবে আর গল্প করবে। 

    এ ব্যাপারে সৌম্য অপারগ। সে চেষ্টা করেও পারেনি। দ্রুত হাঁটতে—হাঁটতে কথা বলবে, এই ধরণের মেয়ে পাওয়া যাবে কি? হয়তো-বা সম্ভব না। সৌম্যর জীবনে প্রেম দৌঁড়ায় ওর হাঁটার গতির চেয়েও দ্রুত।

    সেই সৌম্য আজ ধীর গতিতে হাঁটছে। একটা খবর তার হাঁটার গতি কমিয়ে দিয়েছে। আনমনে সে হাঁটছে আর ভাবছে। এত দ্রুতগতির পুরুষের সাথে কীভাবে তাল মিলিয়ে চলবে একটা মেয়ে! সকল প্রেমিকার মতো সেও চলে যাবে না তো! মা যেহেতু বিয়ে ঠিক করেছে, বিয়ে হবে সে ব্যাপারে তার সন্দেহ নেই! কিন্তু টিকবে কি না, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে তার। 

    আচ্ছা, হাত ধরে কোন গোধূলি বেলায় পার্ক কিংবা নদীর ধারে ধীরে—ধীরে না হাঁটলে কি মেয়েরা সাথে থাকতে চায় না! কেমন যেন সব গুলিয়ে যায়। এ সময়ের মেয়েরা কেমন যেন, সামান্য কিছু অমিল হলেই সম্পর্ক ভাঙ্গে!

    সৌম্য নিজ খেয়ালে হাঁটছে। কিন্তু সে দ্রুত গতিতে হাঁটছে না। স্বাভাবিক গতিও না। অতি ধীর গতি। বিয়ে কি পুরুষ মানুষের গতি কমিয়ে দেয়? অবশ্যই না। যদি তাই হতো তাহলে সব পুরুষ বিয়ে করতো না। অবিবাহিত পুরুষের সংখ্যা দিন—দিন বাড়তো। বিয়ে মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে বিচরণ করতে সাহায্য করে। সকল পুরুষ কিংবা নারী সঠিক বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসা উচিত। জন্মের পর মায়ের কোলে। এরপর হামাগুড়ি, এরপর হাঁটা। তারপর জীবন যুদ্ধে অংশ নেওয়া। 

    সঠিক সময়ে যারা বিয়ে করে না বা করতে পারে না তারা পিছিয়ে পড়া দলে নাম লেখায়। ধীর গতিতে হাঁটলেও সৌম্য অল্প সময়ে পৌঁছে যায় তার আবাসস্থলে। বাসায় ঢুকতে বেশ কোলাহল মনে হলো। খালাতো চাচাতো ভাই বোনদের হৈচৈ শুনে বুঝতে বাকি রইলো না, তার বিয়ের সব আয়োজন বোধহয় আজই হবে। কোনোদিকে না তাকিয়ে নিজ ঘরে ঢুকে পরে সৌম্য।

    এবং বিয়ে
    29 Views

    শ্যামলী বিনতে আমজাদ

    ২০ মে, ২০২৩ , ১০:২৩ পূর্বাহ্ণ