মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

অভিশপ্ত বাথটাব

কৃষ্ণকলি মুনা

৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ , ৩:৫৫ অপরাহ্ণ

নীরা ঘুরতে খুব পছন্দ করে, গাছপালা, নদী, সাগর, পাহাড় তাকে টানে খুব। মোট কথা প্রকৃতি প্রেমি। বাংলাদেশের অনেক জেলা তার ঘোরা হয়ে গেছে। কক্সবাজার, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি, পতেঙ্গা, সীতাকুণ্ড। সিলেট, জাফলং, বিছানাকান্দি, রাতারগুল, মাধবকুণ্ড ইত্যাদি সবই ঘোরা হয়ে গেছে। কিছুদিন আগে নীরা ইন্ডিয়াও ঘুরে এসেছে।

এবার নীরা তার কাজিন সুরাইয়া ও তার পরিবারের সাথে সিলেট গিয়েছে ঘুরতে, শহরের অদুরে চা—বাগানের ভেতরে একটা বাংলোতে তারা উঠেছে, দিনের আলোয় বাংলোটাকে বেশ লাগলো নীরার। কেমন যেন একটা পুরোনো সোঁদাগন্ধ মোহাবিষ্ট করে। কোন জমিদারের বাড়ী ছিলো মনে হয়। জমিদার বাড়ীর আদলে বাড়ীর খাম্বাগুলো, সিঁড়ির রেলিংগুলোও মান্ধাতার আমলের। সামনে কয়েক স্তরের সিড়ি, তারপর—ই সবুজ গালিচায় লাল সুড়কিবাঁধাই সরু পথ। দু’পাশে অযত্নে লালিত কিছু ফুলগাছ। লোহার খাঁজকাটা মেইন গেটটা বহু পুরোনো দিনের স্বাক্ষী হয়ে এখনো টিকে আছে।
রাতের জার্নিশেষে তারা সকাল বেলা শহরের অদুরে এই বাংলায় এসে উঠলো। পর্যটন সিজন হওয়াতে শহরের কোন হোটেলে সিট পাচ্ছিলোনা।
নীরার বেশ ভালোই লাগলো, তারা বাংলোয় গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা করে কিছুক্ষণ রেষ্ট নিয়ে ঘুরতে গেলো বাইরে। ফিরতে—ফিরতে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত প্রায়। তাদের বাংলো থেকে খাবারের হোটেলটা একটু দূরত্বে আছে। তো সুরাইয়া বললো, আমরা একেবারে রাতের খাবার খেয়েই বাংলোতে ফিরবো। নীরার এখনি খেতে ইচ্ছে করলো না, বল্লো আমি হিলজুতোটা বাংলোয় রেখে আসি আর ফ্রেস হয়ে আসি। সুরাইয়া বল্লো, তুই যা আমি এখন আর হাঁটতে পারবো না। ওকে, বলে নীরা রওনা দিলো।
শামীম ভাই সাথে আসতে চেয়েছিল, নীরা বললো থাক আমি একাই পারবো আপনি সুরাইয়াকে সঙ্গ দিন।

নীরা যতই বাংলোর দিকে এগুচ্ছে ততই তার কেমন যেন গা—ছমছম করছে, নীরা বুঝতে পারলোনা সকালেও তো এ বাড়ী টাকে বেশ ভালোই মনে হয়েছিল, তো এখন কেন এমন!
মেইন গেট খোলাই ছিলো, সিঁড়ি শেষ স্তম্ভে দারোয়ান সুলেমান মামা বসে আছে, মীরাকে আড়চোখে দেখলো, উনার তাকানোটা নীরার ভালো লাগলো না অথচ সকালেই এই সুলেমান মামাই তাদের সাদরে গ্রহণ করলেন। সকল রুমে ব্যাগ পৌঁছে দিলেন। বেশ আন্তরিক ব্যাবহার করলেন। আর এখন!
নীরা সোজা সিড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে গেলো, ২০৩ নাম্বার রুমের চাবি নীরার কাছেই ছিলো। তালা খুলে ভেতরে ঢুকে গেলো। নতুন হিলটা বড্ড অসুবিধা করছে, এটা আর ব্যবহার করবে না, ওটা খুলে দূরে ছুড়ে দিলো। তারপর টানটান শরীরে বিছানায় সটান করে শুয়ে পড়লো। ফ্যান স্পিডে ছেড়ে দিলো সারাদিন ধকল গিয়েছে প্রচুর। ঘরে নীরা একাই পিনপতন নিরবতা। নীরা চোখ বন্ধ করে রাখলো হঠাৎ পানি পড়ার কুলকুল শব্দ!! নীরা আশ্চর্য সেতো এখনো বাথরুমেই যায়নি তবে পানির শব্দ কোত্থেকে আসছে!! নীরা ভাবলো ভুল শুনছে, কিন্তু না পানি পরারশব্দ আরো জোর দার হচ্ছে, অনিচ্ছাসত্তেও নীরা বাথরুমের দরজা খুলে দেখলো, না তো সেখানে সব টেপ বন্ধ। নীরা আসস্ত হয়ে বাথরুমের দরজা বন্ধ করতে যাবে আবার পানিপড়ার শব্দ! নীরা চমকে গেলো, না কোথাও ভুল হচ্ছে নীরা বাথরুমে ঢুকে সব ট্যাপ বন্ধ করে বেসিনে হাতমুখ ধুচ্ছিলো, বাথরুমে একটা বাথটাব ছিলো বহু পুরোনো মান্ধাতার আমলের। বেসিনের আয়নায় বাথটাবটা দেখা যাচ্ছে, নীরা মুখটা ধুয়ে যেই আয়নায় তাকালো দেখলো বাথটাবে একটা নারী অর্ধমৃত হয়ে শুয়ে আছে, বাথটাব পানিতে পরিপূর্ণ। আস্তে আস্তে পানির রংটা পরিবর্তন হয়ে লাল রক্তের রং ধারণ করেছে!! নীরা আবার পানিতে চোখ ধুয়ে হাতদিয়ে চোখ কচলে পেছন ফিরে বাথটাবটা ভালো করে দেখলো, নাহ কিচ্ছু নেই। বাথটাব আগের মতই শূন্য!

নীরা আশ্চর্য হলো, ভয় পেয়ে তড়িঘড়ি বাথরুম থেকে বের হয়ে এলো। ভয়ে সে কাঁপছে—কি দেখলো সে? তাড়াতাড়ি ওড়নাটা শরীরে জড়িয়ে টেবিল থেকে ফোন আর চাবিটা নিয়ে বাইরে—বেরিয়ে গেলো। দরজা লাগিয়ে দ্রুত করিডোর ছাড়তে লাগলো কিন্তু শুনতে পেল পেছনে কেউ যেন আর্তনাদ করছে, ঘোঙ্গানির শব্দ, দমকা একটা হাওয়া করিডোরে ঘুরপাক খাচ্ছে!
নীরার চশমা ঝাপসা হয়ে আসছে, নীরা আরো জোরে পা চালালো এবং কোনমতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো।
একি সোলেমান মামা টুলে বসে নিচে ঝুকে আছে কেন? মামা, এ্যাই—মামা, আপনার শরীর কি খারাপ? আপনি ঠিক আছেন তো?
দু’মিনিট পর সুলেমান মামা মাথা তুলে বসলো, মীরার দিকে তাকালো, নীরা দেখলো সোলেমান মামার চোখ থেকে আগুন বের হচ্ছে।
নীরা দেখেই ভয়ে ছুঁটতে লাগলো মেইন গেটের দিকে। গেটের বাইরে গিয়েই হাঁপাতে— হাঁপাতে—সুরাইয়াকে ফোন দিলো তোরা কই?? সুরাইয়া, এইতো আমরা খাবার হোটেলই আছি, তোর জন্য অপেক্ষা করছি, তাতাড়ি আয়।
আসছি—বলে, নীরা সামনে এগুলো, কোনমতে নিশ্চুপ হয়ে কোনরকমে খেয়ে নিলো।

সবাই খেয়েদেয়ে হোটেলে ফিরলো, নীরা সুরাইয়া কে শক্ত করে ধরে রেখেছে, যেটা মোটেও নীরার সাথে যায় না। সে অতি চঞ্চল। এভাবে সেটে হাত ধরে হাটার পাবলিক সে নয়।
সুরাইয়া : কিরে এমন করছিস কেন, তোর কি হয়েছে??
নীরা : না, কিছুনা।
সিঁড়ি বেয়ে উঠে দেখলো সুলেমান মামা পান চিবুচ্ছে, মুখে পাতলা মিহি হাসি।
মা জননীরা আইজ বহুত ঘুরলেন। খানাদানা খাইছেন তো, নাকি ব্যাবস্থা করতে হইবো।
সুরাইয়া : না মামা, আমরা খেয়েই ফিরেছি আপনাকে আর কষ্ট করতে হবেনা।
নীরা অবাক সব স্বাভাবিক, অথচ…….

২০৩/ ২০৪ দুটো রুমই বুক করা হয়েছে, নীরা ওদের সাথে ২০৪ এ ঢুকলো, দুম করে খাটে বসে পড়লো। সবাই চেঞ্জ করলো, গোসল করলো, বারবার নীরাকে তারা দিচ্ছে গোসল সেরে ঘুমিয়ে পড়ো। নীরা নড়ছে না, বললো আমার জ্বর—জ্বর লাগছে, আমি ঘুমিয়ে পড়বো।
সুরাইয়া বললো, যাহ ২০৩—এ—মুনকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
নীরা : নাহ, বলে চিৎকার করে উঠলো।
সুরাইয়া কিরে কি হলো, নীরা নাহ ঠিক আছে যাচ্ছি বলে পা বাড়ালো, মুন চলো।
সুরাইয়ার মেয়ে মুনকে নিয়ে নীরা ২০৩—এ— চলে গেলো। সে আর বাথরুমের দিকে গেলোনা, সোজা চাদর মু্রি দিয়ে মুনকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

মাঝরাতে আবার সেই পানি পড়ার শব্দ, বাথটাব উপচে পানি পড়ার শব্দ। নীরা কানে হাত দিয়ে রইলো পানি পড়ার শব্দ বাড়তে লাগলো, সাথে গোঙ্গানির শব্দ, সেই ধমকা হাওয়া যেন বাথরুমে দরজা ভেঙে রুমের মধ্যে হওয়াটা ঘুরপাক খাচ্ছে… একটা ভৌতিক আলো জ্বলছে—নিভছে. . ..

এবং বাথরুম থেকে বেরুনো সেই দমকা হাওয়াটা ঘুরপাক খেতে—খেতে রুমের মাঝখানে একটি সুন্দরী নারীর অবয়ব ধারণ করলো।
একটু পর সজোরে একটা গুলির আওয়াজ মেয়েটি আর্তনাদ করে লুটিয়ে পড়লো, আর সারা ঘর রক্তাক্ত হয়ে পড়লো!
নীরা এসব দেখে কাঁপতে লাগলো এবং জ্ঞান হারালো, কতোক্ষন এভাবে ছিলো সে জানে না।
সকাল ৯ টায়ও অনেক ডাকাডাকিতে দরজা না খোলায় রিসিপশন থেকে ডুপ্লিকেট চাবি এনে বাইরে থেকে দরজা খুলে সুরাইয়া নীরাকে ডেকে তুললো, কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। সুরাইয়া /শামীম মিলে ওকে ধরাধরি করে উঠিয়ে বসালো এবং পানি দেয়ার জন্য বাথরুমে নিয়ে যেতে চাইলো, নীরা রাজি হলো না, কোনমতেই সে এই বাথরুমে যাবেনা।
অগত্যা সুরাইয়া বললো, তুই আমাদের রুমে আয়, নীরা রাজি হলো। খাট থেকে নেমে দরজার দিকে যাবে তখন টেবিলের নিচে চোখ গেলো দেখলো সেখানে দেয়াল লেপ্টে রক্ত লেগে আছে। নীরা আরেকবার শিউরে উঠলো!
নীরাকে মাথায় পানি দিয়ে নাস্তা করিয়ে “এইস প্লাস” খাইয়ে দেয়া হলো।
শামীম বললো, আজ তো আমাদের ছোট মামার বাড়ী দাওয়াত ছিলো, উনারা সকাল থেকে ফোন করছেন কি বলি বলতো?

সুরাইয়া : নীরার এই অবস্থা কি করে যাবে? তাছাড়া ওকে ছেড়ে কি করে যাই??

শামীম : বুঝতে পারছি, বাট আমি এতদিন পর বিদেশ থেকে এলাম মামা আমায় দেখতে চেয়েছে, বারবার বলে দিয়েছে সাথে তোমাকে এবং মুনকে নিয়ে যেতে। তারা তো মুনকে এখনো দেখেনি, তাই।

নীরা : তোরা যাহ আমি ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বো, আমার কোন অসুবিধা হবে না, জিজু ২ বছর পর দেশে এলো তাকে তোর সময় দেয়া উচিত।
আমি বোধহয় তোদের মাঝে কাবাবমে হাড্ডি হয়ে আছি।

সুরাইয়া : দেবো এক থাপ্পড়, উল্টোপাল্টা বল্লে।
তুই আছিস বলেই তো মুনকে সামলাতে পারছিস,
নয়তো রোমাঞ্চ সব ভেস্তে যেতো।

শামীম : ওকে, মাই ডিয়ার শ্যালিকা আপনার কাছে আমরা ঋণী। আজকের দিনটা আমাদের দান করুন প্লিজ। কথা দিচ্ছি কাল থেকে আপনাকে সারাদিন সময় দেবো। ওকে

নীরা : তথাস্তু জাঁহাপনা, আপনারা প্রস্থান করুন।

সুরাইয়ারা চলে গেলো ঔষধ / ফ্রুটস /স্ন্যাক্স / পানি পাশের টেবিলেই রেখে গেলো।
নীরা ঔষধের কার্যকারীতায় বেশ কিছুক্ষন ঘুমোলো, গভীর ঘুম। ঘুম থেকে জেগে নিজেকে কিছুটা হালকা লাগছে জ্বর টাও আর নেই মনে হয়। জানালার পর্দাটা সরিয়ে দেখলো মধ্যদুপুর, রোদের তেজ তেমন একটা নেই। বাংলোর ওয়াল ঘেঁষে কিছু পরগাছা জন্মেছে, শ্যাওলা পড়ে দেয়ালে সবুজ আবরণ পড়েছে। কিছু নাম না জানা পাহাড়ি ফুল ফুটে আছে, দেখতে বেশ লাগছে।
হঠাৎ দরজায় যেন ছোট একটা টোকা পড়লো,
নীরা অবাক হলো এসময় আবার কে এলো! বোধহয় সুলেমান মামা, সুরাইয়া বলে গেছে তোর কিছু লাগলে মামাকে বলিস, আমি মামাকে বলে যাবো তোর খেয়াল রাখতে।
নীরা ধীরপায়ে গিয়ে দরজা খুল্লো, সেকি কেউ নেই করিডোরের এপাশ—ওপাশ তাকালো নাহ করিডোরে দুটো শালিক ছাড়া আর কোন প্রাণের অস্তিত্ব নেই।
নীরা ভাবলো ভুল শুনেছে, দরজা ভিড়িয়ে রুমে ঢুকতে যাবে হঠাৎ চোখ পড়লো ২০৩ রুমের দরজাটা একটু খোলা! আশ্চর্য নীরা স্বরণ করলো সকালে রুম ছাড়ার সময় সুরাইয়া কি রুম লক করেনি? ও’ এত বেখেয়ালি হলো কবে?
নীরা ২০৩ এর দিকে এগিয়ে গেলো দরজাটা লক করবে বলে দরজার কাছে গেলেই আবার সেই পানির শব্দ, বাথটাব উপচে পড়া পানির শব্দ। নীরা এখন আর তেমন একটা ভয় পেলনা, বুকে সাহস সঞ্চয় করে আস্তে করে রুমে ঢুকলো, বাথরুমের দরজাটা খুললো, নাহ কোথাও কিচ্ছু নেই। এবার বেসিনের কাছে গিয়ে আয়নায় চোখ রাখলো,
নীরা দেখলো’ বাথটাবে বসে রয়েছেন সুন্দরী এক নারী। চোখে মুখে আতঙ্কের ভাব স্পষ্ট। চোখের কাজল ঘেঁটে গিয়েছে। মাথায় ক্ষত, রক্তাক্ত।
চোখ দুটি আতঙ্কগ্রস্থ। কপালে ক্ষত চিহ্ন। সেই ক্ষত বেয়ে ঝরছে রক্ত। শরীরে কাপড় নেই, বাথটাবে বসে অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে মেয়েটি!! বাথটাব রক্তে ভেসে যাচ্ছে,,, রক্তের আঠালো ভাবটা নীরার পায়ে এসে পা জড়িয়ে যাচ্ছে। নীরা নড়তে পারছে না, রক্তে পুরো বাথরুম ভেসে যাচ্ছে,
নীরা পেছন ফিরে তাকালো, হ্যা সেই মেয়েটা আতঙ্কগ্রস্ত চোখে নীরার দিকে চেয়ে আছে, মাথায় একটি ক্ষত, ক্ষত বেয়ে তাজা রক্ত বের হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ তার ডানখুলিতে গুলি করেছে!!

নীরা কথা বলতে চাইলো ‘ তুমি কে, এখানে কেন, তোমার এই অবস্থা কেন??
মেয়েটি বললো ” আমি মনি, নাজমুল আমার স্বামী, ও’ আমাকে গোপনে বিয়ে করেছে স্বীকৃতি দেয়নি।
নাজমুল আমার অনাগত সন্তানের পিতা, আমার সন্তানের স্বীকৃতি চাওয়াতে ও’ এখানে বেড়াতে এনে এই বাথটাবে আমাকে এবং আমার অনাগত সন্তানকে খুন করলো / মেরে ফেললো।
আমি তো ওকে ভালোবাসতাম কেন নাজমুল আমার সাথে এমন করলো? কেন, কেন, কেন???
মেয়েটি কথা প্রতিধ্বনিত হয়ে বিকট আওয়াজ সৃষ্টি হচ্ছে, নীরা কানে হাত দিলো।
নীরা এসব কি শুনছে, সত্যি নাকি কল্পনা তাও বুঝতে পারছেনা!
নীরা দেখলো পায়ের নিচের আঠালো পদার্থটা নীরার পা জড়িয়ে ধরে টান দিচ্ছে, মনে হচ্ছে বাথটাবের ভেতর নেয়ার চেষ্টা করছে, নীরা প্রাণপণ চেষ্টা করছে বেসিনটাকে শক্ত করে ধরে রাখতে কিন্তু পারছে না। অবশেষে নীরার চেষ্টা বিফল হলো আঠালো রক্তটা তাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো বাথটাবের ভেতরে!!

সুরাইয়া খাবার শেষ হওয়া মাত্রই ফেরার জন্য উশখুশ শুরু করেছে, বাট শামীম তার মামার কথার জালে এমন ফেঁসে গিয়েছে যে উঠতেই পারছে না। অনেকক্ষণ চোখের ইশারার পর অবশেষে বেচারা মামার মায়ার বাঁধন থেকে মুক্তি পেলেন।
সুরাইয়া তড়িঘড়ি করে করে বাংলায় ফিরে সুলেমান মামাকে কোথাও দেখতে পেলো না, সোজা দোতলায় উঠে গেলো। দরজায় টোকা দিতে যাবে দেখে দরজা একটু ভেড়ানো, অবাক হয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো, না বেডে নীরা নেই, ভাবলো বাথরুমে, নাহ বাথরুমেও নেই, তবে অসুস্থ শরীর নিয়ে মেয়েটা কোথায় গেলো?
ততক্ষনে শামীম এসে পড়েছে,
সুরাইয়া : এ্যাই নীরা রুমে নেই, বাথরুমেও না।
শামীম : হয়তো বাইরে গিয়েছে, করিডোরে কোথাও আছে।
সুরাইয়া দৌড়ে করিডোরের এপাশ—ওপাশ দেখলো, দৌড়ে রেলিঙের কিনারে গেলো, যদি নিচতলায় ওকে দেখা যায়। নাহ কাউকে দেখতে পেলো না, এমনকি সুলেমান মামাকেও না!!
সুরাইয়া দৌড়ে আবার রুমের দিকে আসলো ফোন করবে বলে, হঠাৎ তার ২০৩ নম্বর রুমের দিকে চোখ পড়লো, আরে সেই রুমের দরজা খোলা কেন? সকালে নীরাকে, মুনকে বের করেই তো দরজা চাবি দিয়ে লক করেছে, চাবি এখনো সুরাইয়ার ব্যাগে, তবে কি নীরা ওই রুমে?
তৎক্ষনাৎ সুরাইয়া দৌড়ে ২০৩ এ গিয়ে ঢুকলো, নাহ রুমে—বেডে নীরা নেই। তবে. .. ..

এবার বাথরুমে ঢুকলো, সুরাইয়া দেখলো নীরা বাথটাবের কিনারে পড়ে আছে, একটা হাত বাথটাবের ভেতরের দিকে, মনে হচ্ছে কেউ মীরাকে টেনে বাথটাবের ভেতরে নিতে চেয়েছে!
সুরাইয়া চিৎকার করে উঠলো, শামীম চিৎকার শুনে ছুটে এলো, দুজনে ধরাধরি করে নীরাকে তুললো, দেখলো নীরার মাথার ডানপাশে কিছুটা চোট পেয়েছে, কিন্তু সুরাইয়া বুঝতে পারলো না এতটুকু চোটে বাথরুম ভর্তি এত রক্ত কেন?!

নীরাকে রুমে নিয়ে ডাঃ ডাকা হলো, ডাঃ নীরাকে ছোট্ট একটা ব্যান্ডেজ দিয়ে দিলো আর বল্লো উনাকে ডিস্টার্ভ করবেন না উনি ঘুমাক। হয়তো বাথরুমে পা পিছলে পড়ে গেছে চোট তেমন একটা বেশি লাগেনি, ২/৩দিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে।
ডাঃ চলে গেলে সুলেমান মামাকে সুরাইয়া ডেকে পাঠালো, আপনি থাকতে আমার বোনের এই অবস্থা কি করে হলো? আপনাকে বলে গেছিনা ও’ অসুস্থ, ওর দিকে খেয়াল রাখবেন।
সুলেমান আমতা আমতা করে মা জননী, আমিতো বাংলোতেই ছিলাম, শুধু দুপুরে ভাত খেতে বাড়ী গিয়েছি, তাও আধঘন্টার মধ্যে ফিরে এসেছি।

রাত আটটা নাগাদ নীরার জ্ঞান ফিরলো, সুরাইয়া, শামীম হামলে পড়লো কি হয়েছিলো তোমার? এ ঘরের বাথরুম রেখে ও’ ঘরে গিয়েছিলে কেন?
শরীর বেশি খারাপ লাগছিলো, পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলে কি??
নীরা কিছু বলতে যাবে দেখে ‘ মুনের ছোট্ট মুখটা ভয়ে পানসে হয়ে আছে, তারদিকে অবাক দৃষ্টিতে নিষ্পলক চেয়ে আছে।
নাহ এই ফুলের মতো ছোট্ট শিশুটার মনে কোন ভয়ংকর কিছু দেয়া যাবেনা, সুন্দর পৃথিবীটাকে সে পবিত্রভাবে দেখুক, অপবিত্র —কুৎসিত—ভয়ংকর ভাবে নয়।
নীরা বল্লো আমি এখন কথা বলতে পারবো না, আমি এখন ঘুমোবো, সকালে কথা বলি।
সুরাইয়া ঠিক আছে বলে নীরাকে ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো। নীরা আর মুন এঘরেই ঘুমোলো। সুরাইয়া—শামীম ২০৩ রুমে চলে গেলো।

সকালে ঘুম থেকে উঠে সকলে মিলে বসে নাস্তা সারলো, নীরা চুপচাপ চা খাচ্ছে, আর কালকের ঘটনা ভাবতে চেষ্টা করছে।
সুরাইয়া হঠাৎ হাসতে—হাসতে জানিস কাল রাতে কি হয়েছে ‘তোর জিজু বললো চলো বাথটবে দুজনে মিলে গোসল করি, আমিও গেলাম দুজনে মজা করে গোসল করছি, অমনি শামীম আমার গলা টিপে ধরলো, আমি তো অবাক একি
আমি প্রাণপন চেষ্টা করেও গলাছাড়াতে পারছিলাম না। শুধু গোঙ্গাতে লাগলাম!
এরকম প্রায় ৫ মিঃ ছিলো, হঠাৎ সুলেমান মামা দরজা নক করলো, আর শামীম গলা ছেড়ে দিয়ে হাসতে লাগলো।
সুরাইয়া—আমি বল্লাম এমন করলে কেন?
বললো একটু দুষ্টুমি করলাম, তুমি কি ভেবেছো তোমাকে এখানে এই ভুতুড়ে বাড়ীতে আমি গলা টিপে মেরে রেখে যাবো?

নীরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো তোমরা কালরাতে ২০৩ রুমে ছিলে??
শামীম : হ্যা, তো কি হয়েছে তুমি কি ভাবছো হরর মুভির মতো আমি তোমার বোনকে বাথটাবে মেরে রেখে যাবো, হাহাহা…

হা..হা..হা.. শামীম ভাই এখনো হাসছে..
নীরার কাছে উনার হাসিটা কেমন যেন লাগছে, অন্য রকম, মেকি, ভৌতিক!